জন্মভিটায় স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য
২০১৯ সালের জুলাইয়ের কোনো একদিন। আমি আছি কলকাতা শহরের পথে-প্রান্তরে। সঙ্গে আছে মা আর মামি। সেই সকালবেলা বের হয়েছি মামার সিঁথির মোড়ের বাসা থেকে। ঘুরে বেড়াচ্ছি নন্দনকানন থেকে প্রিন্সেপ ঘাট। ঘুরতে ঘুরতে আমরা চলে এলাম ৩নং গৌরমোহন স্ট্রিটে, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটায়।
১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি এই বাড়িতেই স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব ও প্রথম যৌবনে বিবেকানন্দ এই বাড়িতেই থেকেছেন। নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা যুবকের জীবনের গল্প কমবেশি সবাই জানেন। মহান এই বাঙালি যুগে যুগে আসমুদ্রহিমাচল জ্ঞানের চক্ষু খুলে জাগ্রত করে চলেছেন। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের মঞ্চে জ্ঞানের আলোয় তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। শিকাগোর সেই ধর্মসভার গল্প অনেকেরই জানা। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা, সমস্যায় বুক চিতিয়ে লড়া, সমাজের সবাইকে এক করে দেখার অনুপ্রেরণা এই মহান বাঙালির কাছ থেকেই পাওয়া।
শৈশব ও প্রথম যৌবনে বিবেকানন্দ এই বাড়িতেই থেকেছেন
গত দিনও এসেছিলাম বেলাশেষে। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটায় অবস্থিত জাদুঘরটি বন্ধ ছিল। তাই আজ আগেই এসে উপস্থিত আমরা। এখনো জাদুঘরের প্রবেশদ্বার খোলেনি, কারণ, এখনো ঘড়ির কাঁটায় কলকাতা সময় সাড়ে ১২টা বাজেনি। এই সুযোগে জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়েই কিছু ছবি তুললাম। ঠিক সাড়ে ১২টায় জাদুঘরের প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হলো। ভেতরে ঢোকার পরই চোখে পড়ল বড় বড় অক্ষরে লেখা নিষেধাজ্ঞা, ‘ছবি তোলা নিষেধ’। দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এত সুন্দর জায়গায় এলাম কিন্তু ছবি তুলতে পারব না!
পরে এই ভেবে নিজেকে প্রবোধ দিলাম, ছবি তোলা না হোক, এই মহাপুরুষের জন্মভিটায় পা দেওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার! যা হোক, আমরা পদব্রজে এগিয়ে চললাম। ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি কক্ষে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি।
এখানে কর্তৃপক্ষ শতভাগ চেষ্টা করেছেন স্বামীজির শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরার জন্য। দেখা পেলাম শিবমন্দিরের। কথিত আছে, শিবের উপাসনা করতেন স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদায়িনী মা ভুবনেশ্বরী দেবী। অন্য রকম পরিবেশ, চারপাশে ধূপকাঠির মোহনীয় সুবাস। নেই কোনো কোলাহল।
আমরা কিছু সময় বসে প্রার্থনা করলাম। এরপর এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। প্রতিটি স্থানে স্বামীজির স্মৃতি জীবন্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। দেখা পেলাম দুর্গা মন্দিরের, সেখানে প্রতিবছর দুর্গাপূজা হয়। আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন এই তীর্থস্থান ঘুরে দেখার জন্য। প্রতিটি দেয়ালে আছে স্বামীজির বাণীসংবলিত বোর্ড। দেখতে দেখতে কীভাবে যে সময় পার করে দিলাম, টেরই পেলাম না।
এবার বিদায় নেওয়ার পালা। আমরা ফিরে চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে।
* লেখক: সুমন্ত গুপ্ত