স্বাধীনতা দর্শন
মানুষ স্বাধীন সত্তা হিসাবেই জন্মগ্রহণ করে। সে স্বাধীনভাবেই হাসে-কাঁদে ও চলাফেরা করে। যার যা স্বভাব ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেন, সে সেই স্বভাব ও বুদ্ধিমত্তা নিয়েই চলে। কিন্তু যখন সে বড় হয় এবং তার কথা ও কর্ম সমাজে প্রভাব ফেলে, তখন স্বভাবতই তার সবকিছুতে একটা নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়। সে আর মুক্ত বিহঙ্গের মত চলতে পারে না। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ তাকে মার্জিত করে ও সমাজে তাকে সম্মানিত করে। এই নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হ'লেই সে হয় স্বেচ্ছাচারী এবং সমাজে হয় অসম্মানিত। ফলে শৈশবের স্বেচ্ছাচারিতা গ্রহণযোগ্য ও উপভোগ্য হ'লেও পরিণত বয়সে তা হয় অগ্রহণযোগ্য। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য। স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বাধীনতার পার্থক্য এখানেই।
মানুষের এই স্বাধীনতা তার চিন্তা ও চেতনায়, কথায় ও কর্মে, পরিবারে ও সমাজে এবং পৃথিবীর সর্বত্র। যুগে যুগে মানুষের উক্ত স্বাধীন চেতনা যখনই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তখনই সে ফুঁসে উঠেছে। এটা যখন ব্যাপক রূপ নিয়েছে, তখনই রাষ্ট্র বিভক্ত হয়েছে। উপমহাদেশ সহ পৃথিবীতে যেখানেই মুক্তি সংগ্রাম হয়েছে, সব জায়গায় চেতনা ছিল একটাই- যুলুম থেকে বাঁচা এবং নিজেদের জান-মাল ও ইযযতের স্বাধীনতা রক্ষা করা। স্বাধীনতার মূল দর্শন এখানেই। এই দর্শন কি বাস্তবতার মুখ দেখেছে? যাদের চেষ্টায় ও যাদের রক্তে এদেশ দু'বার স্বাধীন হয়েছে, তাদের সে স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? নাকি নৈরাশ্যের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।