শত শত বছর ধরে ব্যবসা করে আসা কিছু খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও করোনা অতিমারির কারণে বেকায়দায় পড়েছে। তবে দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাসহ নানা দুঃসময় সামাল দিয়ে টিকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েও শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যায়নি। করোনার করালগ্রাস সামলে টিকে রয়েছে এমন চার খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এই উপস্থাপনা।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে শত শত বছরের পুরোনো কিছু খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ঐতিহ্যবাহী খুচরা বিক্রেতাদের জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময় নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এ রকম কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা কীভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে?
কোভিড–১৯ অতিমারির কারণে ক্রেতা-ভোক্তার পদচারণ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় দু–চার শতাব্দী প্রাচীন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও অন্যদের মতো বেশ বেকায়দায় পড়েছে। দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাসহ নানা দুঃসময় সামাল দিয়ে টিকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েও শেষ পর্যন্ত টিকে যাচ্ছে। করোনার করালগ্রাসের মধ্যেও টিকে রয়েছে, এমন চারটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিবিসি সম্প্রতি তাদের বিগত ১৮ মাসের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছে।
প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ড: ব্যবসায়ের জিম্মাদার
লন্ডনের সবচেয়ে পুরোনো ফুড শপ বা খাবারের দোকান প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ড, যেটি ১৭৪২ সালে অলডিচ মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে। ওই সময়ে লন্ডনে ধনী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই সুযোগ ধরতে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টএন্ডের জারমিন স্ট্রিটের কাছে একটি শাখা খোলে। সেখানে এখনো অবশ্য একটি দোকান রয়েছে তাদের।
বর্তমানে লন্ডনে দুটি ও বাথে একটি দোকান আছে প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডের। তিনটি দোকানই করোনার সময়ে ব্যবসায়ে ভালো করেছে। এই ব্যবসা সম্পর্কে ২৭৯ বছরের পুরোনো খুচরা বিক্রেতা প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডের ব্যবস্থাপক হিরো হার্স্ট বলেন, লকডাউন অনেক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে সরাসরি বিক্রি কমেছে। তবে অনলাইনে চাহিদা বেড়েছে, যা আমরা মেটাতে পেরেছি।’ অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু ভালো ফল পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালের শিক্ষা থেকে ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবসা করতে হবে, সেই দীক্ষা পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লন্ডনে রেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত গ্রোসারি শপ অর্থাৎ মুদি ব্যবসা করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক হিরো হার্শ বলেন, ‘এটি ছোট ব্যবসা বটে, তবে পারিবারিক মালিকানাধীন হওয়ায় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। আমরা সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যবসা করছি। আমরা ব্যবসায়ের জিম্মাদার।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারস: ঐতিহ্যের সাড়ে তিন শ বছর
১৬৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড হলো হাতে তৈরি হ্যাট। ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ইংলিশ ফ্ল্যাগ অফিসার ও অনেক যুদ্ধে জয়ী অ্যাডমিরাল লর্ড নেলসন; ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ও হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক, অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি, লেখিকা, আলোকচিত্রী জ্যাকুলিন কেনেডির মতো তারকা ব্যক্তিত্বরা এই প্রতিষ্ঠানের হ্যাট পরতেন।
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারসের ডেপুটি চেয়ারম্যান রজার স্টিফেনসন বলেন, ‘আমরা মন্দা ও মহামন্দা, দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও টিকে গিয়েছিলাম। অথচ আমাদের পুরো ব্যবসায়ের ইতিহাসে একমাত্র করোনাজনিত লকডাউনের পরিস্থিতিতেই ব্যবসা গুটিয়ে রাখতে হয়েছে।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারস বিয়ে ও গার্ডেন পার্টির পোশাক সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়া রয়্যাল অ্যাসকোট বা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আসরে ব্যবহৃত পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রি করে, যে অনুষ্ঠানে খোদ ব্রিটেনের রানিও উপস্থিত থাকেন। শুধু ঘোড়দৌড় উপলক্ষেই কোম্পানিটির মোট বার্ষিক বিক্রির ২৫ শতাংশ হয়ে থাকে। করোনার কারণে মানুষের বাইরে যাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকায় বিয়ে ও গার্ডেন পার্টির আয়োজন যখন বন্ধ হয়, তখন কোম্পানিটির ব্যবসায়ে প্রভাব পড়ে। আর গত বছর পাঁচ দিনের রয়্যাল অ্যাসকোট তো আয়োজন করা হয় আবদ্ধ পরিবেশে।
রজার স্টিফেনসন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাসহ পূর্বপুরুষেরা কীভাবে ব্যবসা এগিয়ে নিয়েছেন, সেদিকে লক্ষ রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি সবার জন্যই ভীতিকর একটি সময়। কিন্তু আমি মনে করি, এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমাদের এগোতে হবে। যাহোক, ওয়েবসাইট খুলে ডিজিটাল উপায়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারসের সপ্তম প্রজন্ম স্টিফেনসন জানান, করোনা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তাঁদের প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ৩৪৫ বছর ধরে এই কোম্পানির ভালো উপায়ে ভালো মানের পণ্য বিক্রি করার নিয়মে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
হেনরি পুল অ্যান্ড কোং: ব্ল্যাক-টাইর আঁতুড়ঘর
মিলিটারি ইউনিফর্ম বা সামরিক পোশাক তৈরির টেইলর বা দর্জিঘর হিসেবে ১৮০৬ সালে যাত্রা শুরু হয় হ্যানরি পুল অ্যান্ড কোম্পানির। তবে পরবর্তীকালে আধুনিক ব্ল্যাক-টাইর আঁতুড়ঘর হিসেবে এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পুরুষের পোশাক তৈরির ফরমাশ নেওয়ার এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এটি।
২১৫ বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হেনরি পুল অ্যন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইমন কুন্ডি জানান, ‘গত ১৮ মাস তাঁদের টেইলারিং বা দজি৴ ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে খারাপ গেছে। যুদ্ধের সময়েও আমাদের কাছে অনেক গ্রাহক এসেছিলেন। কিন্তু করোনা অতিমারির সময়ে সব মার্কেট বন্ধ করতে হয়েছে।’
করোনাকালে এই কোম্পানির বিক্রি কমে ২০ শতাংশে নেমে যায়। অনলাইনে কিছু বেচাবিক্রি হয়েছে। সাইমন কুন্ডি বলেন, ‘রিমোট তথা বাসায় থেকে জুমের সাহায্যে কোনো স্যুট ফিটিং হলো কি না, তা পরখ করা যায় না। এটি অনেকটা এ রকম—ডাক্তার কোনো রোগীকে সুই-সুতা দিয়ে বললেন, এভাবে সেলাই করতে হয়। দাঁত তুলতে যেমন ডেন্টিস্ট মানে দন্ত চিকিৎসকের সামনে থাকতে হয়, তেমনি আমাদের ব্যবসায়ের জন্যও গ্রাহকের উপস্থিত থাকা দরকার।’
হেনরি পুল অ্যান্ড কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তবে এখনো সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করতে পারছে তারা। কিন্তু বৈশ্বিক বাজার এখনো স্থবির। অবশ্য এ নিয়ে তারা আশাবাদী।
ময়সিস স্টিভেনস: ফুলের সৌরভ ছড়ায়
লন্ডনের ফুল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ময়সিস স্টিভেনসের যাত্রা শুরু ১৮৭৬ সালে। এটিই লন্ডনের ফুল বিক্রির সবচেয়ে পুরোনো প্রতিষ্ঠান, যারা ডাচেস অব কেমব্রিজসহ ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ের উৎসব এবং লন্ডনজুড়ে হোটেলগুলোতে ফুল সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু ১৪৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি করোনার করালগ্রাসে বড় হোঁচট খেয়ে বসে।
বিক্রি ৯০ শতাংশ কমার তথ্য জানিয়ে ময়সিস স্টিভেনসের পরিচালন ব্যবস্থাপক গেম্মা কাভানাঘ বলেন, কোম্পানির আয়ের বড় একটা অংশ আসত বিয়ের অনুষ্ঠানের ফুল বিক্রি থেকে। কিন্তু করোনায় এই আয় শূন্যের কোঠায় চলে গেছে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফার্স্ট স্যাটারডে জব হিসেবে ফুল বিক্রিকেই বেছে নেন গেম্মা কাভানাঘ। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে এ ধরনের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যসম্পন্ন কোম্পানিতে কাজ করছি।’
গেম্মা কাভানাঘ আরও বলেন, ‘ক্রেতারা প্রতিদিনই আমাদের হেড অফিসে কল করেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেন। আমাদের সব কটি দোকানই জনগণের জন্য ফুল কেনার কেন্দ্র। ফলে ফুল বিক্রি টিকে থাকবে।’
[FA]pen[/FA] লেখক: এ টি এম ইসহাক | সূত্র: বিবিসি
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে শত শত বছরের পুরোনো কিছু খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ঐতিহ্যবাহী খুচরা বিক্রেতাদের জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময় নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এ রকম কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা কীভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে?
কোভিড–১৯ অতিমারির কারণে ক্রেতা-ভোক্তার পদচারণ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় দু–চার শতাব্দী প্রাচীন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও অন্যদের মতো বেশ বেকায়দায় পড়েছে। দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাসহ নানা দুঃসময় সামাল দিয়ে টিকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েও শেষ পর্যন্ত টিকে যাচ্ছে। করোনার করালগ্রাসের মধ্যেও টিকে রয়েছে, এমন চারটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিবিসি সম্প্রতি তাদের বিগত ১৮ মাসের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছে।
প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ড: ব্যবসায়ের জিম্মাদার
লন্ডনের সবচেয়ে পুরোনো ফুড শপ বা খাবারের দোকান প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ড, যেটি ১৭৪২ সালে অলডিচ মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে। ওই সময়ে লন্ডনে ধনী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই সুযোগ ধরতে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টএন্ডের জারমিন স্ট্রিটের কাছে একটি শাখা খোলে। সেখানে এখনো অবশ্য একটি দোকান রয়েছে তাদের।
বর্তমানে লন্ডনে দুটি ও বাথে একটি দোকান আছে প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডের। তিনটি দোকানই করোনার সময়ে ব্যবসায়ে ভালো করেছে। এই ব্যবসা সম্পর্কে ২৭৯ বছরের পুরোনো খুচরা বিক্রেতা প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডের ব্যবস্থাপক হিরো হার্স্ট বলেন, লকডাউন অনেক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে সরাসরি বিক্রি কমেছে। তবে অনলাইনে চাহিদা বেড়েছে, যা আমরা মেটাতে পেরেছি।’ অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু ভালো ফল পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালের শিক্ষা থেকে ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবসা করতে হবে, সেই দীক্ষা পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লন্ডনে রেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে প্যাক্সটন অ্যান্ড হোয়াইটফিল্ডকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত গ্রোসারি শপ অর্থাৎ মুদি ব্যবসা করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক হিরো হার্শ বলেন, ‘এটি ছোট ব্যবসা বটে, তবে পারিবারিক মালিকানাধীন হওয়ায় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। আমরা সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যবসা করছি। আমরা ব্যবসায়ের জিম্মাদার।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারস: ঐতিহ্যের সাড়ে তিন শ বছর
১৬৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড হলো হাতে তৈরি হ্যাট। ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ইংলিশ ফ্ল্যাগ অফিসার ও অনেক যুদ্ধে জয়ী অ্যাডমিরাল লর্ড নেলসন; ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ও হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক, অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি, লেখিকা, আলোকচিত্রী জ্যাকুলিন কেনেডির মতো তারকা ব্যক্তিত্বরা এই প্রতিষ্ঠানের হ্যাট পরতেন।
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারসের ডেপুটি চেয়ারম্যান রজার স্টিফেনসন বলেন, ‘আমরা মন্দা ও মহামন্দা, দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও টিকে গিয়েছিলাম। অথচ আমাদের পুরো ব্যবসায়ের ইতিহাসে একমাত্র করোনাজনিত লকডাউনের পরিস্থিতিতেই ব্যবসা গুটিয়ে রাখতে হয়েছে।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারস বিয়ে ও গার্ডেন পার্টির পোশাক সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়া রয়্যাল অ্যাসকোট বা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আসরে ব্যবহৃত পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রি করে, যে অনুষ্ঠানে খোদ ব্রিটেনের রানিও উপস্থিত থাকেন। শুধু ঘোড়দৌড় উপলক্ষেই কোম্পানিটির মোট বার্ষিক বিক্রির ২৫ শতাংশ হয়ে থাকে। করোনার কারণে মানুষের বাইরে যাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকায় বিয়ে ও গার্ডেন পার্টির আয়োজন যখন বন্ধ হয়, তখন কোম্পানিটির ব্যবসায়ে প্রভাব পড়ে। আর গত বছর পাঁচ দিনের রয়্যাল অ্যাসকোট তো আয়োজন করা হয় আবদ্ধ পরিবেশে।
রজার স্টিফেনসন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাসহ পূর্বপুরুষেরা কীভাবে ব্যবসা এগিয়ে নিয়েছেন, সেদিকে লক্ষ রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি সবার জন্যই ভীতিকর একটি সময়। কিন্তু আমি মনে করি, এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমাদের এগোতে হবে। যাহোক, ওয়েবসাইট খুলে ডিজিটাল উপায়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’
লক অ্যান্ড কোং হ্যাটারসের সপ্তম প্রজন্ম স্টিফেনসন জানান, করোনা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তাঁদের প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ৩৪৫ বছর ধরে এই কোম্পানির ভালো উপায়ে ভালো মানের পণ্য বিক্রি করার নিয়মে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
হেনরি পুল অ্যান্ড কোং: ব্ল্যাক-টাইর আঁতুড়ঘর
মিলিটারি ইউনিফর্ম বা সামরিক পোশাক তৈরির টেইলর বা দর্জিঘর হিসেবে ১৮০৬ সালে যাত্রা শুরু হয় হ্যানরি পুল অ্যান্ড কোম্পানির। তবে পরবর্তীকালে আধুনিক ব্ল্যাক-টাইর আঁতুড়ঘর হিসেবে এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পুরুষের পোশাক তৈরির ফরমাশ নেওয়ার এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এটি।
২১৫ বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হেনরি পুল অ্যন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইমন কুন্ডি জানান, ‘গত ১৮ মাস তাঁদের টেইলারিং বা দজি৴ ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে খারাপ গেছে। যুদ্ধের সময়েও আমাদের কাছে অনেক গ্রাহক এসেছিলেন। কিন্তু করোনা অতিমারির সময়ে সব মার্কেট বন্ধ করতে হয়েছে।’
করোনাকালে এই কোম্পানির বিক্রি কমে ২০ শতাংশে নেমে যায়। অনলাইনে কিছু বেচাবিক্রি হয়েছে। সাইমন কুন্ডি বলেন, ‘রিমোট তথা বাসায় থেকে জুমের সাহায্যে কোনো স্যুট ফিটিং হলো কি না, তা পরখ করা যায় না। এটি অনেকটা এ রকম—ডাক্তার কোনো রোগীকে সুই-সুতা দিয়ে বললেন, এভাবে সেলাই করতে হয়। দাঁত তুলতে যেমন ডেন্টিস্ট মানে দন্ত চিকিৎসকের সামনে থাকতে হয়, তেমনি আমাদের ব্যবসায়ের জন্যও গ্রাহকের উপস্থিত থাকা দরকার।’
হেনরি পুল অ্যান্ড কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তবে এখনো সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করতে পারছে তারা। কিন্তু বৈশ্বিক বাজার এখনো স্থবির। অবশ্য এ নিয়ে তারা আশাবাদী।
ময়সিস স্টিভেনস: ফুলের সৌরভ ছড়ায়
লন্ডনের ফুল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ময়সিস স্টিভেনসের যাত্রা শুরু ১৮৭৬ সালে। এটিই লন্ডনের ফুল বিক্রির সবচেয়ে পুরোনো প্রতিষ্ঠান, যারা ডাচেস অব কেমব্রিজসহ ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ের উৎসব এবং লন্ডনজুড়ে হোটেলগুলোতে ফুল সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু ১৪৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি করোনার করালগ্রাসে বড় হোঁচট খেয়ে বসে।
বিক্রি ৯০ শতাংশ কমার তথ্য জানিয়ে ময়সিস স্টিভেনসের পরিচালন ব্যবস্থাপক গেম্মা কাভানাঘ বলেন, কোম্পানির আয়ের বড় একটা অংশ আসত বিয়ের অনুষ্ঠানের ফুল বিক্রি থেকে। কিন্তু করোনায় এই আয় শূন্যের কোঠায় চলে গেছে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফার্স্ট স্যাটারডে জব হিসেবে ফুল বিক্রিকেই বেছে নেন গেম্মা কাভানাঘ। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে এ ধরনের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যসম্পন্ন কোম্পানিতে কাজ করছি।’
গেম্মা কাভানাঘ আরও বলেন, ‘ক্রেতারা প্রতিদিনই আমাদের হেড অফিসে কল করেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেন। আমাদের সব কটি দোকানই জনগণের জন্য ফুল কেনার কেন্দ্র। ফলে ফুল বিক্রি টিকে থাকবে।’
[FA]pen[/FA] লেখক: এ টি এম ইসহাক | সূত্র: বিবিসি