জয়া আহসান সফল মডেল ও অভিনেত্রী। দেশের পাশাপাশি ভারতেও সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়টি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মা শিক্ষিকা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জয়া সবার বড়। অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকায় দক্ষতা রয়েছে জয়া আহসানের। নাটকের পাশাপাশি ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক।
ক্যারিয়ারে নিজের অর্জন বলতে জয়া জানান, ‘ছিটেফোঁটা কোনো অর্জন আমার ঝুলিতে যদি এসে থাকে, তাহলে আমি তার কারণ বলব, আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। এটাই আমাদের বড় অর্জন। স্বাধীন দেশের নাগরিক না হলে অভিনয় নিয়ে আমার যে লড়াই, সেটা আমি করতে পারতাম না। যখন আমি পেছনের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার যাত্রার পথটাকে অলীক বলে মনে হয়। অভিনয়ের অ, আ, ক, খ না জেনেই আমি ঘটনাক্রমে একদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেলাম, আমার ভেতরের যে আগুন ছিল, সেটা অভিনয় জাগিয়ে দিয়েছে। সেই আলোর পথ ধরেই আমি এগিয়েছি।
আমি যখন শুরু করি, তখন বাংলাদেশের অভিনয়জীবনটা ছিল অসম্ভব অনিশ্চিত আর দুর্গম। তখনো কিন্তু আমি অভিনয়টাকেই আঁকড়ে ধরে ছিলাম। কারণ, আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, এটাই আমি পারব। আমি দেখেছি, নিজের সত্যটা যদি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকা যায়, তাহলে বন্ধুর পথচলাটাও সত্যিই কঠিন কিছু নয়।’
জয়া আহসান, ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
তরুণদের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে জয়া আহসান জানান, ‘শুধু তরুণ কেন, আমার কারও জন্যই কোনো পরামর্শ নেই। কারণ, এখানে অন্য কারও তৈরি রাস্তায় বা পেছনে হেঁটে চললে আপনি তো তার পেছনেই পড়ে থাকবেন। আপনার নিজের পথটা আপনাকেই তৈরি করতে হবে। নিজের স্বপ্ন, নিজের জেদ, নিজের অধ্যবসায় দিয়ে নতুন পথ তৈরি করতে হবে। নিজের সত্য পথটায় একবার চলতে শুরু করলে কারও সাধ্য নেই আপনাকে আটকানোর।’
‘অভিনয় করতে এসে আমি কোনো কিছুকে বাধা হিসেবে দেখিনি। সবটাই আমার অভিজ্ঞতা। সবটাই আমাকে গড়ে তুলেছে মানুষ হিসেবে, নয়তো শিল্পী হিসেবে। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে ভালো-খারাপ। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে যদি না আসতাম, আজকে আমার যতটুকু সাফল্যই থাকুক না কেন, তা আমি পেতাম না। শিল্প জীবনের বাইরে আলাদা করে কোথাও থাকে না। শিল্প জীবনের ভেতরের থাকে’—এমনটাই জানান জয়া আহসান।
জয়া আহসান, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
জয়া আহসানের সাফল্যের গোপন রহস্য কী? এ বিষয় জয়ার সরল স্বীকারোক্তি, ‘সত্যি কথা বলতে আমার কোনো সাফল্য আছে কি না, জানি না। আমি জানার খুব প্রয়োজনও মনে করি না। কারণ, শিল্পজগতে সফলতা নামে কোনো বিষয়ই নেই। সফলতা হলো একটা গন্তব্য। কিন্তু শিল্পে তো কোনো তৈরি হওয়া পথ বা রাস্তা থাকে না। তাহলে সেই পথের কোনো গন্তব্যও নেই। এখানে যেটা আছে, সেটা হলো অবিরাম পথচলা। সফলতা হলো একার। সবাইকে পেছনে ফেলে একাই এগিয়ে যাওয়া। মানে একাই সবকিছু নিয়ে নেওয়া। সার্থকতার অনুভূতি হলো, সবাইকে জড়িয়ে থাকো। এর মধ্যে আছে একটা শান্তি। আমি যে অভিনয়ে এসেছি, এর মস্ত বড় একটা কারণ হলো, আমি এর মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই। আর আমি নিজের মধ্যে পাই একটা গভীর প্রশান্তি। অনেক বড় সফলতা কিন্তু আমাকে এটা না–ও এনে নিতে পারত। যার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই, একটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তেমন মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি। এটা একটা অসাধারণ বিষয়। একটা ছোট্ট মানবজীবনে আর কতটাই পাওয়ার থাকতে পারে।’