What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other সালমান শাহকে নিয়ে কিছু কথা (1 Viewer)

SoundTrack

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
530
Messages
13,427
Credits
283,140
Recipe pizza
Loudspeaker
izcvJ2o.jpg


আমাদের সিনেমায় সালমান শাহ অতীত – যেমন অতীত জাফর ইকবাল, সোহেল চৌধুরী, জসীম এবং মান্না। সবাই-ই সময়ের আগে আমাদের সিনেমা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দশ বছরের কম সময়ের মধ্যে তাদের সেই চলে যাওয়া আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রির জন্য কত বড় ধাক্কা ছিল সেটা আমরা বর্তমানে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাদের হারানোর ফলে আমাদের চলচ্চিত্র এক বিশাল ভক্তশ্রেনীর মধ্যে যে হাহাকার তৈরি হয়েছিল সেই ভক্তশ্রেণীর মন ভরার জন্য বিকল্প তৈরি আমাদের জন্য এখনো সম্ভব হয়নি।

তবে চেষ্টার কোন কমতি করছিনা আমরা।

ব্লগে ফেসবুকে অনেকদিন ধরেই একদল মানুষকে বলতে শুনি – আহ! আমাদের নায়ক ছিল একখান। সে থাকলে কতকিছু হয়ে যেত। অনেক বদলে যেত আমাদের সিনেমা। তার মত নায়ক কোথায়? সে থাকলে হয়ত তার মুভি দেখতে হলেও সিনেমা হলে যাইতাম।

আসলেই কি তেমন কিছু? সালমান যখন মুভিতে অভিনয় শুরু করে তখন এদের অনেকেরই মাত্র পৃথিবীতে আগমন হয়েছে। অথবা বছর দুই-তিনেক-পাঁচেক হয়েছে তাদের এই ধরায় আগমনের। তাদের যখন মুভি দেখার বয়স হয়েছে তার বহু আগেই সালমান ওপারে চলে গিয়েছে। তার মানে কি দাড়ায়? তাদের সিনেমা হলে না যাওয়া, বাংলা মুভি না দেখা, সব একজন মৃত মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

যদি সালমান শাহ বেঁচে থাকত তাহলে আপনাদের উদ্দেশ্যে কি বলত বলে মনে করেন? তিনি কি এ কথা বলতো, ‘শুধু আমার মুভি দেখবেন, আর কারো মুভি দেখবেন না’? জীবনেও এমন কথা বলতোনা সে।

আমি যদি বলি -‘জাফর ইকবাল ছিল নায়ক, সে যখন নাই, তখন এই সালমান সানিদের মুভি কি দেখব? সে ছিল নায়ক, সবদিক থেকে যোগ্য একজন নায়ক ইত্যাদি ইত্যাদি’ – তখন কেমন দাড়াবে? সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখা যখন শুরু করেছি তার কিছুদিন আগেই সে পরপারে চলে গিয়েছে। তার দুয়েকটা মুভি পরে আমাদের এলাকাতে চালানোতে তার মুভি সিনেমা হলে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ভিসিআরে আর টিভিতেই তার বেশিরভাগ মুভি দেখেছি।

সালমানের মুভি টিভিতে দেখে আফসোস করে অন্যদের মুভি দেখবেন না, সিনেমা হলে যাবেন না, সেটা কোন জ্ঞানীলোকের লক্ষণ না! এরকম হলে জাফর ইকবালের পরে আর কেউ রোমান্টিক ইমেজ নিয়ে দাড়ানোর সুযোগ পেতোনা।

কিন্তু সালমান দাড়িয়েছিল কারন সে বাংলা মুভি পাগল দর্শক পেয়েছে, আমাদের পেয়েছিল। যদি বর্তমান ভার্চুয়াল সালমান ফ্যানদের মত মানে আপনাদের মত দর্শক থাকত তখন সালমানেরও আজকে সালমান শাহ হওয়া হতোনা সম্ভবত!

yy4plTx.jpg


আমরা সিনেমা হলে গিয়ে সালমানের মুভি দেখেছি। ওমর সানির মুভি দেখেছি। যে সপ্তাহে ‘গরিবের রানী’ দেখেছি সেই একই সপ্তাহে ‘স্বপ্নের পৃথিবী‘ও দেখেছি। আমাদের এই সিনেমাপ্রীতির কারনেই পরিচালকেরা তাদের মুভি একই সপ্তাহে রিলিজ দেয়ার সাহস পেত।

আপনি হয়ত সালমান শাহ আর ওমর সানির সেই যুগ দেখেন নি। তাই এভাবে বলতে পারছেন অথবা বলছেন।

আমাদের হাইস্কুল জীবনের শুরু থেকেই তারা সিনেমা শুরু করেছিল। আমরা দলবেধে তাদের সিনেমা দেখতে সিনেমাহলে ছুটে যেতাম। প্রথমে শুধু কেয়ামত থেকে কেয়ামতের জন্য সালমানের প্রতি অনেকের ভালোলাগা জন্ম নিতে পারে কিন্তু আমার তখনও তার প্রতি ভালোলাগার জন্ম হয়নি। তাকে ভাল লাগতে শুরু করেছিল অন্তরে অন্তরে মুভি দেখার পর থেকে।

বিক্ষোভ মুভিতে প্রতিবাদী ছাত্র আর এই ঘর এই সংসার মুভিতে তার অভিনয় আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। তুমি আমার মুভিতে তার অভিনয় যথেষ্ট পরিমান ভালোলাগা বাড়িয়ে দিয়েছিল বলতে পারি। আর দেনমোহরের মৌসুমি-সালমানকে কে ভুলতে পারবে? ‘শুধু একবার’ গানের কথা এবং সুর শুনলে এখনো শিহরিত হই আমি। ইউটিউবে এই গান কতবার শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই। কন্যাদানে মোছওয়ালা সালমানকে তেমন ভালো লাগেনাই। স্নেহতে ভালো লেগেছিল। প্রেমযুদ্ধ ভাল লেগেছিল মুভির গানের কারনে।

এই ঘর এই সংসারে বৃষ্টি ছিল, প্রেমযুদ্ধতে ছিল লিমা। শাবনাজের সাথে করা আঞ্জুমান আর শাবনাজ সাবরিনার সাথে করা আশা ভালোবাসাও ভাল না লাগার কোন কারন ছিলনা।

তবে সালমান এর ষ্টাইল শুরু হয়েছিল ৯৫ তে। প্রিয়জন আর তোমাকে চাই ছবিতে। এ যেন নয়া সালমান শাহ। চুলের ষ্টাইল থেকে সিনেমায় তার গাড়ির ষ্টাইল ও ছিল নতুন। তারপরে বিচার হবে, মহামিলনেও সেই ধারা বজায় রেখেছিল। স্বপ্নের পৃথিবী মুভিতে তার অভিনয়ের সাথে তার গেটাপের পরিবর্তন আমাদের এই সুপারষ্টারের আসন পাকাপোক্ত করে ফেলেছিল। আর স্বপ্নের নায়কের সেই গোল চশমা আর লম্বা চুলের সালমান স্বপ্নের নায়ক হওয়ার আগেই এই স্বপ্নের ভুবন ছেড়ে চলে যাওয়া আমাদের জন্য ভাল রকমের ক্ষতি ই করে দিয়ে গিয়েছিল।

সে সময়ে জসীম, মান্না, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল আর এদের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর সানি তো ছিলই। নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের অনেক কিছুই তার মধ্যে ছিল। যার কারনে একটা আলাদা দর্শকশ্রেণী সে তৈরি করতে পেরেছিল। মুভি হিট হবে কি ফ্লপ সেটা হয়ত রিলিজের পরের ব্যাপার কিন্তু সালমান শাহ’র মুভিতে গানগুলো চমৎকার থাকবে এটা আমরা মুভি রিলিজের আগেই বুঝতে পারতাম বেশ।

শাবনুরের সাথে তার অনেক গুঞ্জন চালু ছিল সে সময়ে। তেমন গুঞ্জন তো মৌসুমি-ওমরসানির ও ছিল। সেসবে খুব বেশী সময় অথবা মনোযোগ দেওয়া হয়ে উঠেনি। তারকাদের পারসোনাল লাইফ নিয়েও তেমনভাবে আগ্রহী ছিলাম না। বিনোদন পত্রিকাগুলো তখনো অনেক চটকদার নিউজ করত তাদের নামে।

হঠাৎ একদিন বিকেলে খবরটা শুনি। সন্ধ্যার পরে বিশ্বাস করতে বাধ্য হই আমাদের সালমান আসলেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি তার ভক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার খারাপ লাগা কমেনি তাতে একটুও।

এরপরের কয়েকদিন তো পত্রিকা জুড়ে সালমান আর সালমান। থাক সেসব কথা – তার মুভি নিয়েই বরং কথা বলি।

5eiRCeT.jpg


কিছুদন পরে রিলিজ হল সত্যের মৃত্যু নেই। মধুমিতায় কোন টিকেট নেই প্রথমদিন সকাল থেকেই। মঙ্গলবার গিয়ে টিকেট পেয়েছিলাম। তারপর মুক্তি পেল জীবন সংসার আর মায়ের অধিকার। এসব মুভি আসলে আফসোস বাড়িয়ে দিয়েছিল। সালমান যখন অভিনয়ে পাক্কা হয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই কোন অভিমানে সে চলে গেল আমাদের ছেড়ে – বুঝতে পারছিলাম না।

চাওয়া থেকে পাওয়াতে তার চশমার আর ক্যাপের যে বাহার দেখেছিলাম। জোনাকিতে মর্নিং শো দেখে এসে দুপুরে খেয়ে দেয়ে অভিসারে গিয়েছিলাম ৩.৩০ এর শো দেখতে। আর গান এর কথা আলাদা করে কি বলব। প্রত্যেকটা গান ই ছিল অসাধারন!

শুধু তুমি মুভির শেষের দিকের কিছু অংশ সালমান পুরা করে যেতে পারেনি। চাওয়া থেকে পাওয়া মুভির খুব অল্প অংশ নির্মান বাকী ছিল। খুব বেশী বুঝা যায় নি সালমানে অভাব। আনন্দ অশ্রু, প্রেম পিয়াসি করে সে অনেকের বুকের ভিতর আগুন-ই জ্বালিয়ে দিয়েছিল বলা যায়। দুটো মুভিই সে শেষ করে যেতে পারেনি।

যদি সে থাকত? যদি সে তার মুভিগুলোর কাজ সম্পূর্ন করে যেতে পারত?

তারপরের যেসব মুভিতে সে সাইন করেছিল প্রত্যেকটা মুভিই তাকে মহানায়ক বানানোর পথে একধাপ করে এগিয়ে নিয়ে যেত শুধু – আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি। জাফর ইকবালের পরে আরেকজন এভারগ্রীন নায়ক পেতে পারতাম আমরা।

সালমান হয়ত আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার মুভিগুলোকে আমরা সে সময়ের দর্শকেরা আপন করে নিয়েছিলাম। বর্তমান দর্শকদেরও দায়িত্ব আছে। নতুনদের আপন করে নিতে হবে। ভাল মুভিকে উৎসাহ দিতে হবে। আমাদের সিনেমাহলে নিয়মিত যেতে হবে।

আরেকটা সালমান শাহ না আসলেও সালমানের মত অনেককেই আমাদের এখানে আসার রাস্তাটা আমাদেরকেই করে দিতে হবে। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য শুভকামনা সবসময়। মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে একদিন আমরা দাড়াবোই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top