আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আর ৩ জুন ছিল বাইসাইকেল দিবস। এই দুই দিবসের আগে তিন তরুণ বাইসাইকেলে চেপে দেশভ্রমণে বেরিয়েছিলেন পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে। ঢাকা থেকে শুরু করে এ যাত্রায় তাঁরা ১৭ দিন কাটিয়েছেন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলার কুফল সম্পর্কে জানিয়েছেন, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করেছেন পর্যটকসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের। দলটির তিন সদস্যের একজন সঞ্চিতা বর্মন শুনিয়েছেন তাঁদের ভ্রমণের গল্প।
করোনাকালে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছিল না, কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য মনটা রীতিমতো ছটফট করছিল। সিদ্ধান্ত নিই, ঈদের সময়টা বাইরে কোথাও কাটাব। দেশজুড়ে লকডাউন হলেও বাহন যেহেতু সাইকেল, তাই কোথাও যাওয়া সময়সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়। পরিকল্পনা আঁটলাম—কোন পথে যাব, কোথায় বিরতি নেব, কোথায় রাতে থাকব। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার হামহাম জলপ্রপাতের পথটি বেশ পছন্দের। এখানে যাওয়ার বাড়তি সুবিধা হলো, স্থানীয় কলাবনপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছিলাম শ্রীমঙ্গল পৌঁছানোর।
প্রথম থেকে পরিকল্পনার সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সাইফ নামেই বেশি পরিচিত। এরপর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন রাফি নূর। রাফি ও আমি পড়ছি ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে সাংবাদিকতা নিয়ে। সাইফ নবীন উদ্যোক্তা। দুজনের সঙ্গে সাইক্লিং সূত্রেই পরিচয়।
তিন সাইক্লিস্ট—রাফি নূর, সঞ্চিতা বর্মন ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
গত ১৪ মে আমি আর সাইফ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পরদিন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেন রাফি নূর। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দু-এক দিন একসঙ্গে কাটানোর পর শুরু হলো আমাদের তিনজনের সাইকেলযাত্রা। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার আনাচকানাচে ঘুরে ময়মনসিংহে এসে যে যাত্রা শেষ হলো ৩০ মে। রাফি নূর ও সাইফ ফিরলেন ঢাকায়, আমি চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরে। ১৭ দিনের ভ্রমণে পথে পথে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। তারই কয়েকটা বলছি এখানে।
হামহামে পরিচ্ছন্নতা অভিযান
হামহামে আবর্জনার স্তূপ
কোথাও ঘুরতে গেলে ইদানীং যে জিনিস বেশি নজরে পড়ে, তা হচ্ছে যত্রতত্র ফেলে রাখা প্লাস্টিকসামগ্রী। ঘুরতে গেলে প্লাস্টিকের স্তূপ দেখেই মন খারাপ হয়, মুখ ভার করে বসে থাকি। এবারের সাইকেলযাত্রায় যখন শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাই, তখন সাইফ প্রস্তাব রাখল, হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়ার পথটা পরিষ্কারের দায়িত্ব কেন নিজেরা নিচ্ছি না। আমরা তিনজন মাত্র মানুষ, কীই–বা করতে পারব! সাইফ বলল, ‘একটা প্লাস্টিকও ট্রেইল থেকে যদি সরাতে পারি, ব্যাপারটা যেমন আনন্দের হবে, তেমনি পরিবেশের জন্যও ভালো হবে।’
এই ভেবে কলাবনপাড়া থেকে আমরা বস্তা নিয়ে যাই। জলপ্রপাতের সামনে এবং ট্রেইলের একটা বিশ্রামের জায়গায় পরিষ্কার করে আমরা প্রায় চার ব্যাগ আবর্জনা কুড়াই। এসব আবর্জনার মধ্যে কী নেই—প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ানটাইম থালা, বিস্কুট, ওরস্যালাইনের প্যাকেটসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্য। আবর্জনাগুলো আমরা পুড়িয়েও ফেলি।
ঋণের টাকায় বৃক্ষরোপণ
রতন মিয়ার সঙ্গে রাফি ও সাইফ
বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে যখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ঠিক তখন সীমান্তের কোল ঘেঁষে মায়ার টানে প্রকৃতি সাজাতে ব্যস্ত একজন মানুষ। নাম তাঁর মো. রতন মিয়া। একটা সময় বাবার সঙ্গে রতনেরা দুই ভাই কাজ করতেন সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটের চুনাপাথর খনি প্রকল্পে। এখন সেই কাজ নেই। কিন্তু এই জায়গার মায়া ছাড়তে পারেননি রতন। শহীদ সিরাজ লেকের (নীলাদ্রি লেক) পাশেই টংদোকান দিয়েছেন। ঋণ করেছিলেন দোকানের জন্য। তবে হ্রদ আর টিলাগুলোর পাশে লাগিয়েছেন ১০০টি গাছের চারা। যেগুলোর মধ্যে ৮০টির বেশি টিকে গেছে। বেশির ভাগই বকুলগাছ, কয়েকটি রেইনট্রি। ঋণ পরিশোধ করে আবার ঋণ করবেন। তখন রোপণ করবেন কৃষ্ণচূড়াগাছের চারা।
বিছানাকান্দির পথে, সিলেট
এখানেই শেষ নয়, এই নিয়ে তাঁর আরও অনেক স্বপ্ন আছে। তিনি শুধু গাছই লাগাচ্ছেন না, জায়গাটির সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে দোকানের সামনে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছেন। নিজে রোজ জায়গা পরিষ্কার করে রাখেন। এত দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে গিয়েছি জেনে চায়ের দামও নিতে চাচ্ছিলেন না। পরে জোর করেই সেটা দিতে হয়েছে তাঁকে।
ঝড় এল ঝড়
২০ মের কথা। রাতে থাকার ঝামেলায় পড়লাম জাফলং গিয়ে। করোনার কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দর্শনীয় এই স্থানের অনেক হোটেলই বন্ধ। স্থানীয় মামা বাজারে যে কয়েকটি হোটেল খোলা ছিল, সেগুলোর ভাড়া এত বেশি চাওয়া হচ্ছিল যে আমাদের পক্ষে তা মেটানো সম্ভব ছিল না।
তখন সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা। অন্ধকার নেমে আসছে। তাঁবু সঙ্গে আছে, কিন্তু তাঁবু পাতার মতো নিরাপদ জায়গা আছে কি না, আমাদের ধারণা নেই। বাধ্য হয়ে জাফলং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইব্রাহিমের শরণাপন্ন হই। সেদিনই পরিচয় তাঁর সঙ্গে।
বোনের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করলেন ইব্রাহিম। রাধানগরের সেই বাসার উদ্দেশে রাতের বাজার নিয়ে আমরা পথ ধরলাম। যখন জাফলং ব্রিজ পার হয়েছি, তখনই পড়লাম ঝড়ের কবলে। পরিস্থিতি এতই জটিল হলো যে এগোতেই পারছিলাম না। এর মধ্যে একটা মজার অভিজ্ঞতা হলো, আমার হাতে বাজার থেকে কেনা যে মুরগি ছিল, হঠাৎ দেখি সেটি নেই। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু করি, ‘মুরগি পড়ে গেছে, মুরগি পড়ে গেছে।’ ঘুরে গিয়ে সেই মুরগি অবশ্য খুঁজে পেয়েছি!
একটি দুর্ঘটনা
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি থেকে বিজয়পুরে যাচ্ছিলাম। হাজং মাতা শহীদ রাশিমনি স্মৃতিসৌধ পার হয়েছি সবে, দূর থেকে দেখি রাস্তায় একটা মোটরবাইক পড়ে আছে। পাশে মানুষও অনেক। বুঝেই নিলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত কাছে গিয়ে দেখি, এক শিশু গুরুতর আহত। লোকজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলাবলি করছিল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছিল না। সাইফ আর রাফি নূর সাইকেল রাস্তার পাশে ফেলে বাচ্চাটাকে ধরল। আমার ব্যাগে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স থেকে স্যাভলন, তুলা, ব্যান্ডেজ বের করে ওদের হাতে দিই। জখমের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জানলাম, বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে সে কোথাও যাচ্ছিল, কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটল মজার কাণ্ড, ফার্স্ট এইড বক্স দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা কেউ বিশ্বাসই করতে চাচ্ছিল না আমরা পর্যটক!
বই ছিল ব্যাগে
বই–বেলা!
ঘর থেকে বেরিয়েছি মানেই সঙ্গে বই থাকা চাই। সারা দিন সাইকেল চালিয়ে সময় মেলে না তেমন। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর পর বই পড়ার মতো শক্তিও থাকে না। তবু বই থাকা চাই। এবারও সঙ্গে ছিল বই। ফুরসত পেলেই হ্যামক টানিয়ে বই হাতে বসতাম আমরা।
* সঞ্চিতা বর্মন, ঢাকা
করোনাকালে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছিল না, কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য মনটা রীতিমতো ছটফট করছিল। সিদ্ধান্ত নিই, ঈদের সময়টা বাইরে কোথাও কাটাব। দেশজুড়ে লকডাউন হলেও বাহন যেহেতু সাইকেল, তাই কোথাও যাওয়া সময়সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়। পরিকল্পনা আঁটলাম—কোন পথে যাব, কোথায় বিরতি নেব, কোথায় রাতে থাকব। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার হামহাম জলপ্রপাতের পথটি বেশ পছন্দের। এখানে যাওয়ার বাড়তি সুবিধা হলো, স্থানীয় কলাবনপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছিলাম শ্রীমঙ্গল পৌঁছানোর।
প্রথম থেকে পরিকল্পনার সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সাইফ নামেই বেশি পরিচিত। এরপর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন রাফি নূর। রাফি ও আমি পড়ছি ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে সাংবাদিকতা নিয়ে। সাইফ নবীন উদ্যোক্তা। দুজনের সঙ্গে সাইক্লিং সূত্রেই পরিচয়।
তিন সাইক্লিস্ট—রাফি নূর, সঞ্চিতা বর্মন ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
গত ১৪ মে আমি আর সাইফ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পরদিন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেন রাফি নূর। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দু-এক দিন একসঙ্গে কাটানোর পর শুরু হলো আমাদের তিনজনের সাইকেলযাত্রা। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার আনাচকানাচে ঘুরে ময়মনসিংহে এসে যে যাত্রা শেষ হলো ৩০ মে। রাফি নূর ও সাইফ ফিরলেন ঢাকায়, আমি চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরে। ১৭ দিনের ভ্রমণে পথে পথে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। তারই কয়েকটা বলছি এখানে।
হামহামে পরিচ্ছন্নতা অভিযান
হামহামে আবর্জনার স্তূপ
কোথাও ঘুরতে গেলে ইদানীং যে জিনিস বেশি নজরে পড়ে, তা হচ্ছে যত্রতত্র ফেলে রাখা প্লাস্টিকসামগ্রী। ঘুরতে গেলে প্লাস্টিকের স্তূপ দেখেই মন খারাপ হয়, মুখ ভার করে বসে থাকি। এবারের সাইকেলযাত্রায় যখন শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাই, তখন সাইফ প্রস্তাব রাখল, হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়ার পথটা পরিষ্কারের দায়িত্ব কেন নিজেরা নিচ্ছি না। আমরা তিনজন মাত্র মানুষ, কীই–বা করতে পারব! সাইফ বলল, ‘একটা প্লাস্টিকও ট্রেইল থেকে যদি সরাতে পারি, ব্যাপারটা যেমন আনন্দের হবে, তেমনি পরিবেশের জন্যও ভালো হবে।’
এই ভেবে কলাবনপাড়া থেকে আমরা বস্তা নিয়ে যাই। জলপ্রপাতের সামনে এবং ট্রেইলের একটা বিশ্রামের জায়গায় পরিষ্কার করে আমরা প্রায় চার ব্যাগ আবর্জনা কুড়াই। এসব আবর্জনার মধ্যে কী নেই—প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ানটাইম থালা, বিস্কুট, ওরস্যালাইনের প্যাকেটসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্য। আবর্জনাগুলো আমরা পুড়িয়েও ফেলি।
ঋণের টাকায় বৃক্ষরোপণ
রতন মিয়ার সঙ্গে রাফি ও সাইফ
বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে যখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ঠিক তখন সীমান্তের কোল ঘেঁষে মায়ার টানে প্রকৃতি সাজাতে ব্যস্ত একজন মানুষ। নাম তাঁর মো. রতন মিয়া। একটা সময় বাবার সঙ্গে রতনেরা দুই ভাই কাজ করতেন সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটের চুনাপাথর খনি প্রকল্পে। এখন সেই কাজ নেই। কিন্তু এই জায়গার মায়া ছাড়তে পারেননি রতন। শহীদ সিরাজ লেকের (নীলাদ্রি লেক) পাশেই টংদোকান দিয়েছেন। ঋণ করেছিলেন দোকানের জন্য। তবে হ্রদ আর টিলাগুলোর পাশে লাগিয়েছেন ১০০টি গাছের চারা। যেগুলোর মধ্যে ৮০টির বেশি টিকে গেছে। বেশির ভাগই বকুলগাছ, কয়েকটি রেইনট্রি। ঋণ পরিশোধ করে আবার ঋণ করবেন। তখন রোপণ করবেন কৃষ্ণচূড়াগাছের চারা।
বিছানাকান্দির পথে, সিলেট
এখানেই শেষ নয়, এই নিয়ে তাঁর আরও অনেক স্বপ্ন আছে। তিনি শুধু গাছই লাগাচ্ছেন না, জায়গাটির সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে দোকানের সামনে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছেন। নিজে রোজ জায়গা পরিষ্কার করে রাখেন। এত দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে গিয়েছি জেনে চায়ের দামও নিতে চাচ্ছিলেন না। পরে জোর করেই সেটা দিতে হয়েছে তাঁকে।
ঝড় এল ঝড়
২০ মের কথা। রাতে থাকার ঝামেলায় পড়লাম জাফলং গিয়ে। করোনার কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দর্শনীয় এই স্থানের অনেক হোটেলই বন্ধ। স্থানীয় মামা বাজারে যে কয়েকটি হোটেল খোলা ছিল, সেগুলোর ভাড়া এত বেশি চাওয়া হচ্ছিল যে আমাদের পক্ষে তা মেটানো সম্ভব ছিল না।
তখন সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা। অন্ধকার নেমে আসছে। তাঁবু সঙ্গে আছে, কিন্তু তাঁবু পাতার মতো নিরাপদ জায়গা আছে কি না, আমাদের ধারণা নেই। বাধ্য হয়ে জাফলং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইব্রাহিমের শরণাপন্ন হই। সেদিনই পরিচয় তাঁর সঙ্গে।
বোনের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করলেন ইব্রাহিম। রাধানগরের সেই বাসার উদ্দেশে রাতের বাজার নিয়ে আমরা পথ ধরলাম। যখন জাফলং ব্রিজ পার হয়েছি, তখনই পড়লাম ঝড়ের কবলে। পরিস্থিতি এতই জটিল হলো যে এগোতেই পারছিলাম না। এর মধ্যে একটা মজার অভিজ্ঞতা হলো, আমার হাতে বাজার থেকে কেনা যে মুরগি ছিল, হঠাৎ দেখি সেটি নেই। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু করি, ‘মুরগি পড়ে গেছে, মুরগি পড়ে গেছে।’ ঘুরে গিয়ে সেই মুরগি অবশ্য খুঁজে পেয়েছি!
একটি দুর্ঘটনা
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি থেকে বিজয়পুরে যাচ্ছিলাম। হাজং মাতা শহীদ রাশিমনি স্মৃতিসৌধ পার হয়েছি সবে, দূর থেকে দেখি রাস্তায় একটা মোটরবাইক পড়ে আছে। পাশে মানুষও অনেক। বুঝেই নিলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত কাছে গিয়ে দেখি, এক শিশু গুরুতর আহত। লোকজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলাবলি করছিল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছিল না। সাইফ আর রাফি নূর সাইকেল রাস্তার পাশে ফেলে বাচ্চাটাকে ধরল। আমার ব্যাগে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স থেকে স্যাভলন, তুলা, ব্যান্ডেজ বের করে ওদের হাতে দিই। জখমের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জানলাম, বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে সে কোথাও যাচ্ছিল, কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটল মজার কাণ্ড, ফার্স্ট এইড বক্স দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা কেউ বিশ্বাসই করতে চাচ্ছিল না আমরা পর্যটক!
বই ছিল ব্যাগে
বই–বেলা!
ঘর থেকে বেরিয়েছি মানেই সঙ্গে বই থাকা চাই। সারা দিন সাইকেল চালিয়ে সময় মেলে না তেমন। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর পর বই পড়ার মতো শক্তিও থাকে না। তবু বই থাকা চাই। এবারও সঙ্গে ছিল বই। ফুরসত পেলেই হ্যামক টানিয়ে বই হাতে বসতাম আমরা।
* সঞ্চিতা বর্মন, ঢাকা