প্রখ্যাত শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য একবার বাউল শাহ আবদুল করিমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "মানুষ আপনার গান বিকৃত সুরে গায়। আপনার সুর ছাড়া অন্য সুরে গায়। অনেকে আপনার নামটা পর্যন্ত বলে না। এসব দেখতে আপনার খারাপ লাগে না?"
শাহ আবদুল করিম বললেন, "কথা বোঝা গেলেই হইল। আমার আর কিচ্ছু দরকার নাই।"
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য আশ্চর্য হয়ে বললেন, "আপনার সৃষ্টি, আপনার গান। মানুষ আপনার সামনে বিকৃত করে গাইবে। আপনি কিছুই মনে করবেন না। এটা কোনো কথা, এটার কোনো অর্থ আছে!"
জবাবে শাহ আবদুল করিম বললেন, "তুমি তো গান গাও, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো। ধরো, তোমাকে একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হলো। হাজার হাজার চেয়ার রাখা আছে, কিন্তু গান শুনতে কোনো মানুষ আসেনি। শুধু সামনের সারিতে একটা মানুষ বসে আছে। গাইতে পারবে?" কালিকাপ্রসাদ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন, "না, পারব না।"
শাহ আবদুল করিম হেসে বললেন, "আমি পারব। কারণ আমার গানটার ভেতর দিয়ে আমি একটা আদর্শকে প্রচার করতে চাই, সেটা একজন মানুষের কাছে হলেও। সুর না থাকুক, নাম না থাকুক, সেই আদর্শটা থাকলেই হলো। আর কিছু দরকার নাই৷ সেজন্যই বললাম শুধু গানের কথা বোঝা গেলেই আমি খুশি।"
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য জানতে চাইলেন, "সেই আদর্শটা কী?"
শাহ আবদুল করিম আবার হেসে বললেন, "একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে।"
বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের একটি এলাকা দিরাই। সেই দিরাইয়ের উজানধল নামক গ্রামে আজ থেকে শতাধিকবর্ষ পূর্বে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শাহ আবদুল করিম। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র আর ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন, দেখেছেন অর্থনৈতিক বৈষম্য। পরিবারের হাল ধরতে রাখাল বালকের চাকরি নেন। কিন্তু তার ছিলো গানের প্রতি, সুরের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক। কালনী নদীর পাড়ে বসে একসময় তাই গান লিখতে আর সুরে সুরে গাইতে শুরু করেন। এভাবে গাইতে গাইতেই হয়ে ওঠেন ভাটি-বাংলার অন্যতম বাউল ও গণমানুষের কণ্ঠস্বর।
মাত্র আট দিন ব্রিটিশদের পরিচালিত নৈশ বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গুজব রটানো হলো বিদ্যালয়ের ছাত্রদের ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। সেই আশঙ্কায় সকল ছাত্রের সাথে সাথে তিনিও ছাড়লেন বিদ্যালয়। কিন্তু নিজের চেষ্টা আর সাধনায় কাজ চালানোর মতো পড়াশোনা ঠিকই শিখেছিলেন তিনি। সেই পড়াশোনা আর জীবনের বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে রচনা করে ফেলেন প্রায় দেড় হাজার গান। যার অনেকগুলোই এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক এই বাউল গানের মধ্যেও করেছেন সাম্য ও মানবাধিকারের চর্চা। পুরোপুরি নির্লোভ মানুষটি কখনো টাকার নেশায় মশগুল হননি। সারাজীবন অভাব-অনটন ও কষ্টে-সৃষ্টে কাটালেও নির্লোভ ছিলেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। তার গান গেয়ে কতজন কতভাবে টাকা কামিয়েছে, কতজন তাকে কেন্দ্র করে কত ধরনের ব্যবসা করেছে, কিন্তু তিনি এসব জেনেও ছিলেন নির্বিকার। তাকে তার গানের অ্যালবাম থেকে প্রাপ্ত সোয়া তিন লাখ টাকা দেয়া হলে তিনি নিতে চাননি। বলেছিলেন, এত টাকা তার দরকার নেই, তাকে যে সম্মান দেওয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট। এমন নির্লোভ মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া সত্যি বিরল!
শাহ আবদুল করিম বললেন, "কথা বোঝা গেলেই হইল। আমার আর কিচ্ছু দরকার নাই।"
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য আশ্চর্য হয়ে বললেন, "আপনার সৃষ্টি, আপনার গান। মানুষ আপনার সামনে বিকৃত করে গাইবে। আপনি কিছুই মনে করবেন না। এটা কোনো কথা, এটার কোনো অর্থ আছে!"
জবাবে শাহ আবদুল করিম বললেন, "তুমি তো গান গাও, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো। ধরো, তোমাকে একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হলো। হাজার হাজার চেয়ার রাখা আছে, কিন্তু গান শুনতে কোনো মানুষ আসেনি। শুধু সামনের সারিতে একটা মানুষ বসে আছে। গাইতে পারবে?" কালিকাপ্রসাদ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন, "না, পারব না।"
শাহ আবদুল করিম হেসে বললেন, "আমি পারব। কারণ আমার গানটার ভেতর দিয়ে আমি একটা আদর্শকে প্রচার করতে চাই, সেটা একজন মানুষের কাছে হলেও। সুর না থাকুক, নাম না থাকুক, সেই আদর্শটা থাকলেই হলো। আর কিছু দরকার নাই৷ সেজন্যই বললাম শুধু গানের কথা বোঝা গেলেই আমি খুশি।"
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য জানতে চাইলেন, "সেই আদর্শটা কী?"
শাহ আবদুল করিম আবার হেসে বললেন, "একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে।"
বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের একটি এলাকা দিরাই। সেই দিরাইয়ের উজানধল নামক গ্রামে আজ থেকে শতাধিকবর্ষ পূর্বে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শাহ আবদুল করিম। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র আর ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন, দেখেছেন অর্থনৈতিক বৈষম্য। পরিবারের হাল ধরতে রাখাল বালকের চাকরি নেন। কিন্তু তার ছিলো গানের প্রতি, সুরের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক। কালনী নদীর পাড়ে বসে একসময় তাই গান লিখতে আর সুরে সুরে গাইতে শুরু করেন। এভাবে গাইতে গাইতেই হয়ে ওঠেন ভাটি-বাংলার অন্যতম বাউল ও গণমানুষের কণ্ঠস্বর।
মাত্র আট দিন ব্রিটিশদের পরিচালিত নৈশ বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গুজব রটানো হলো বিদ্যালয়ের ছাত্রদের ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। সেই আশঙ্কায় সকল ছাত্রের সাথে সাথে তিনিও ছাড়লেন বিদ্যালয়। কিন্তু নিজের চেষ্টা আর সাধনায় কাজ চালানোর মতো পড়াশোনা ঠিকই শিখেছিলেন তিনি। সেই পড়াশোনা আর জীবনের বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে রচনা করে ফেলেন প্রায় দেড় হাজার গান। যার অনেকগুলোই এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক এই বাউল গানের মধ্যেও করেছেন সাম্য ও মানবাধিকারের চর্চা। পুরোপুরি নির্লোভ মানুষটি কখনো টাকার নেশায় মশগুল হননি। সারাজীবন অভাব-অনটন ও কষ্টে-সৃষ্টে কাটালেও নির্লোভ ছিলেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। তার গান গেয়ে কতজন কতভাবে টাকা কামিয়েছে, কতজন তাকে কেন্দ্র করে কত ধরনের ব্যবসা করেছে, কিন্তু তিনি এসব জেনেও ছিলেন নির্বিকার। তাকে তার গানের অ্যালবাম থেকে প্রাপ্ত সোয়া তিন লাখ টাকা দেয়া হলে তিনি নিতে চাননি। বলেছিলেন, এত টাকা তার দরকার নেই, তাকে যে সম্মান দেওয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট। এমন নির্লোভ মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া সত্যি বিরল!