সিরিজ: "Sacred games"
সিজন : 01
রিলিজ ডেট : 6 july,2018
কাস্টিং: নাওয়াজ উদ্দীন সিদ্দীকি,সাইফ আলী খান,জিতেন্দ্রা যোশী,রাধিকা আপ্টে ।
ডিরেক্টর:আনুরাগ ক্যাশপ,ভিক্রামাদিতিয়্যা মোটওয়ানে।
পার্সোনাল রেটিং : ৯/১০
আইডিএম্বি রেটিং :৯.৫/১০ (প্রায় ৪,০০০ ভোট পড়ছে )
কয়দিন আগেই "লাস্ট স্টোরিস" নামক সিরিজ দিয়ে পুরো ইন্ডিয়াসহ সাবকন্টি মেন্টে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলো নেটফ্লিক্স। সেই ধারাবাহিকতায় তারা নিয়ে আসলো ভিক্রাম চান্দার ২০০৬ সালে প্রকাশিত প্রায় ৯০০ পেজের বই "সিক্রেট গেমসের" উপর ভিত্তি করে বানানো নতুন সিরিজ এর প্রথম সিজন। বইয়ের নাম যা ছিলো সিরিজের নামও সেম। মূলত, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশে নেটফ্লিক্স এর শেষ কয়েকবছরে বিশাল সংখ্যক দর্শক বাড়ার কারণেই তাদের এই উদ্যোগ।
গল্পটা শুরু হয় প্রায় ১৫৮ মার্ডার করা গ্যাংস্টার গাণেশ গায়তোন্ডে দীর্ঘদিন পলাতক থাকে হঠাৎ করে একদিন পুলিশ অফিসার সারতাজকে ফোন দিয়ে বলে তোমার কাছে ২৫ দিন সময় আছে পারলে নিজের শহরকে বাচাও। কিন্ত সারতাজ অনেক লো-প্রোফাইল পুলিশ অফিসার ছিলো তার কাছেই ক্যানো ফোনটা আসলো জানতে হলে পুরো সিরিজটা দেখতে হবে। গল্পটা মূলত একজন গ্যাংস্টারের পুরা লাইফ কভার করছে কিন্ত রিভার্স গিয়ারে বৃদ্ধ বয়স থেকে শুরু করছে স্টোরি। সিরিজের খালি প্রথম এপিসোডের কিছু মুহূর্তেই সাইফ,নাওয়াজ দুইজনকে একসাথে দেখতে পারবেন। বাকিসময় তারা পুরাপুরি আলাদাভাবে গল্পে থাকবে। এই কারণেই সিরিজের নাওয়াজের পার্ট ডিরেক্ট করছে আনুরাগ ক্যাশপ আর সাইফের পার্টে ছিলো ভিক্রাম। নাওয়াজের পার্টগুলা এরজন্য অনেক বেটার লাগবে স্ক্রিন টাইমিংও বেশী তার। নাওয়াজ নিজের লাইফের গল্পটাই একজন স্টোরি টেলারের মত পুরা সিরিজে ন্যারেট করতে থাকে অন্যদিকে সাইফ ব্যস্ত হয়ে পরে ২৫ দিন পর কি হবে এই রহস্য উদ্ধারে তার সাথে যোগ দেয় "র" এজেন্ট রাধিকা আপ্টে।
নাওয়াজ উদ্দীন সিদ্দিকীর নিজেকে প্রমাণ করার কিছু ছিলোনা। গ্যাংস্টার ভিত্তিক কাজে তার চেয়ে ভালো বলিউডে এই মুহূর্তে কেউ নাই আর যে এতো রিয়্যালস্টিকভাবে পর্দায় চরিত্রটাকে তুলে ধরতে পারতো । কিন্ত এইখানে সাইফও অনেক ভালো কাজ করছে কিন্ত নাওয়াজের পাওয়ার এতো বেশী ছিলো যে নেইমার যেমন মেসির ছায়ায় পড়ে গেছিলো এইখানেও সেইভাবে সাইফ নাওয়াজের ছায়ায় পড়ে গেছে । প্রতিটা এপিসোডই নাওয়াজ ৭ মিনিট স্ক্রিনে থাকলে পরের ৫ মিনিট সাইফ আর বাকিরা এইভাবে শ্যুট করছে কিন্ত দর্শক হিসেবে আপনি প্রতি সীনেই চাবেন নাওয়াজ থাকুক আর একজন এক্টর হিসেবে এইটাই নাওয়াজ সিদ্দিকীর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। পুরা সিরিজটার সব আলো ওয়ান ম্যান শোর মত নাওয়াজ একাই কেড়ে নিছে। নাওয়াজের লাইফের সেরা ৫ টা কাজের মধ্যে এইটা থাকবে মাস্ট । সাইফ আলী খানকে আমরা রোমান্টিক,চকলেটবয়, ফ্রেন্ডলি, মাঝে মাঝে একশন হিরো হিসেব দেখে অভ্যস্ত কিন্ত এইখানে পাঞ্জাবী কপের চরিত্রে অভিনয় করা তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো । তার এই কাজের জন্য ওয়েট গেইন করার পাশা পাশি মাসেল বিল্ডাপ করা লাগছে। তার ডেডিকেশনে কোন কমতি ছিলোনা কিন্ত নবাব সাইফ আলী খানের মুখে "র" ইন্ডিয়ান গালিগুলা শুনতে ভালো লাগেনায় তার জায়গায় রাণদীপ হুদা,মানোজ বাজপায়ীকে নিলে আরো ভালো হইত নাওয়াজের সাথে কাটায় কাটায় টক্কর দিতে পারতো। কিন্ত সাইফের এক্টিং একবারে খারাপ ছিলোনা আস্তে আস্তে ক্যারেক্টার বিল্ডাপ করছে পরে স্পিড বাড়ছে। সাইফের সাথে থাকা কন্সটেবল কাট্রেকার রোলে অভিনয় করা জিতেন্দ্র যোশী এইসব রোলে বরাবরই ভালো করে সিরিজে কমেডি সীন খুব বেশী ছিলো যেইকয়টা ছিলো তারই বেশী ছিলো। তার কমিক টাইমিং অনেক ভালো ছিলো জোড় করে হাসানোর ট্রাই করেনায়। রাধিকা আপ্টে ডিসেপয়েন্ট করছে "র" এজেন্ট হিসেবে আরো ভালো করার সুযোগ ছিলো কিন্ত তার সাথে আসলে এই রোলটা যায়নায়। কিন্ত সিরিজের পিলার হিসেবে কাজ করছে ছোট ছোট সাইড রোলগুলা যারা সিরিজের পিলার হিসেবে কাজ করে সিরিজটাকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। ছোট ছোট প্রায় ২০-২৫ টা ক্যারেক্টার ছিলো সবাইর কাজ অনেক ভালো ছিলো। প্রথম এপিসোডের ৩০ মিনিটের পরেই সিরিজটার সাথে আপনি ইনভলভ হইতে স্টার্ট করবেন। ফাস্ট স্ক্রিনপ্লে,হাই লেভেলের ডায়লগ,পারফেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনাকে সিরিজ টার প্রতি চুম্বকের মত আকর্ষিত করে রাখবে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। দুই-একটা জায়গায় নাওয়াজের ন্যাচারাল ইমোশনাল এক্টিং আপনার চোখে দুই-এক ফোটা পানি নিয়া আসতে পারে শেষের দিকে। সিরিজ শেষে নাওয়াজের ফ্যান না হইলেও তার অভিনয়ের ফ্যান হইতে আপনাকে বাধ্য করবে।
আনুরাগ ক্যাশপ কি মাপের মাল সবাই জানেন যাদের গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ব্ল্যাক ফ্রাইডে,আগলি দেখা হইছে। সে বোম্বে ভেলভেটের মত জঘন্য ছবিও বানাইছে কিন্ত মানুষ আজীবন তাকে গ্যাংস অফ ওয়াসিপুরের আনুরাগ ক্যাশপ হিসেবেই সব সময় মনে রাখবে। এতোদিন সেন্সরবোর্ডে প্যারায় সে পুরোপুরি
ভাবে সবকিছু দেখাইতে পারেনায় কিন্ত এইখানে সে মনের আশা মিটাইয়া সব দেখাইছে। কি নাই এই সিরিজে খুন,কাটাকাটি,"র" লেভেলের ইন্ডিয়ান গালি, সেক্স,ন্যুডিটি,ট্রান্সজেন্ডারের সাথে গ্যাংস্টারের প্রেম,বিট্রেয়ারগিরি সবকিছু ওপেনলি দেখাইছে এইখানে স্ক্রিপ্টের ডিমান্ড অনুযায়ী। তাছাড়াও,বাবরি মসজিদ হামলা,হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা,মুম্বাই বোম্ব ব্লাস্ট ইভেন ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে প্রেসিডেন্ট রাজীব গান্ধীকেও ধুইয়া দিছে এই সিরিজে।এইগুলার সবকিছুই যুক্তিযুক্ত লাগছে যা দেখাইছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মুখে গালি না শুনলেও এইখানে নবাব সাইফ আলী খানের মুখে গালি শুনতে পারবেন যা সিরিজের অন্যতম আকর্ষন। কিন্ত নাওয়াজ উদ্দীন সিদ্দিকীকে প্রায় ন্যুড অবস্থায় অবশ্যই আপনি দেখতে চাবেন না কিন্ত ডিরেক্টর এই কাজটাও করছে । ইভেন সে ট্রান্স জেন্ডারকেও ন্যুড দেখাইছে এই সীনটা ইমোশনাল হইলেও বমি আসতে পারে তাই, টাইনা বাদ দিয়া দেইখেন যারা বাদ দিতে চান। তবে, আনুরাগ ক্যাশপ বরাবরের মত ক্যারেক্টারের পর ক্যারেক্টার ধিমধাম কইরা মাইরা ফালাইছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা ছিলো সপ্তম এপিসোডের শেষে মৃত্যুটা । নিজেকে একসময় ঈশ্বর মনে করা গাণেশ গায়তোন্ডের কপালে কি হইলো তাও জনাতে পারবেন এই সিজনেই। আনুরাগ ক্যাশপ "গেমস অফ থ্রোন্স" বানাইলে সে সব ক্যারেক্টার মাইরা ৩ সিজনেই খেলা শেষ কইরা দিতো। ইভেন প্রথম সিজনে কিছু মেইন ক্যারেক্টারও মাইরা দিছে কিন্ত সাথে সাথে গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর খ্যাত শক্তিশালী এক্টর পাঙ্কাজ ত্রিপাঠীর ক্যারেক্টার এরসাথে আরো কিছু এক্সট্রা ক্যারেক্টার সিজন কাপাইতে আসবে তারও ইঙ্গিত দিছে।
সবকিছু মিলিয়ে সিরিজটা গ্যাংস্টার,থ্রিলার লাভারদের জন্য মনপ্রাণ ভরানোর মত একটা সিরিজ। ৮ এপিসোডের সিরিজটার প্রতি এপিসোড গড়ে ৪৫ মিনিট। শেষ করতে প্রায় ৬.৩০ ঘন্টার মত লাগবে। সিরিজটা এতো জোস যে আমি গতকালকে দুপুর ২ টায় দেখতে বসে ৭ টা পর্যন্ত টানা দেখছি ৫ ঘন্টা । পরে ইংল্যান্ড-সুইডেন সেমিফাইনাল হাফটাইম দেখার পর দেখতেছি সিরিজটা শেষ করার জন্য মনের ভিতর খোচাইতেছে তাই আবার ৯-১১ টার পর্যন্ত দেখে কালকেই শেষ করে ফেলছি। আপনার ক্ষেত্রেও একি পরিস্থিতির সৃস্টি হবে বলে আশা করা যায় ।
এখন কথা হইলো ভুলেও টিভিতে নেটফ্লিক্স চালাইয়া এইটা দেখবেন না আর রুমে পিছিতে দেখলেও দরজা লাগাইয়া নিবেন। একা নিরিবিলি বসে না দেখলে ইজ্জত ফিনিশ। নারীবাদী,দুর্বল হৃদয়ের মানুষ,সুশীল,মামাস বয়দের এই সিরিজ না দেখাই ভালো হবে কারণ এতো ভায়োলেন্স,হাতকাটা,মাথা থেতলানো,রগকাটা, গলাকাটা,রক্ত,সেক্স,ন্যুডিটি সবাই নিতে পারেনা দুই একজায়গায় বমি আসতে পারে যারা এইসব দেখে অভ্যস্ত না তাদের ক্ষেত্রে।মেয়েদেরকে নাওয়াজ সিদ্দিকী আইসা ভোগ্যপণ্যের মত ন্যুড কইরা প্রতি এপিসোডেই ইউজ করতেছে এই ব্যাপারগুলাও নিতে পারবেনা সবাই এদের না দেখাই ভালো হবে এইটা। কিন্ত যাদের নারকোস,গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর,শ্যুট আউট ওয়াডালা,লোখান্ড ওয়ালা, ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই ভালো লাগছে আর যারা একটু "রাফ" আর "র" জিনিস পছন্দ করেন তাদের জন্য এইটা মাস্টওয়াচ একটা সিরিজ। সিরিজের শেষে মারাত্মক একটা টুইস্ট রেখে টানাটান উত্তেজনায় সিজন ০১ শেষ করছে। এরপর কি হবে জানার জন্য দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষা করতে হবে যা খুবই কস্টকর হবে আপনার জন্য। কিন্ত খুশীর খবর ভবিষ্যতেও আনুরাগ ক্যাশপ নেটফ্লিক্সের সাথে আরো অনেক কাজ করবে আমরাও অনেক ভালো কন্টেন্ট পাবো।
যাদের নেটফ্লিক্স একাউন্ট আছে তারা নেটফ্লিক্স থেকে আর যাদের নাই তারা তাদের গরীবের নেটফ্লিক্স টরেন্ট থেকে নামিয়ে দেখে নিয়েন প্রতিটা সীন আর মোমেন্ট ইঞ্জয় করবেন ১০০% গ্যারান্টি ❤