ভাইরাল হেপাটাইটিস বিশ্বজুড়ে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যার নাম। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এই রোগের কারণে মারা যান। মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হেপাটাইটিস ক্যান্ট ওয়েট’।
ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিসের কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস আমাদের কাছে পরিচিত। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ করতে পারে। শুধু সচেতন হলেই ভাইরাল হেপাটাইটিস থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে।
হেপাটাইটিস এ
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস পানি ও খাবারবাহিত। অবিশুদ্ধ পানি আর ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের মাধ্যমে এটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। প্রথমে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় যেমন—অরুচি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। তারপর দেখা দেয় চোখ হলুদ মনে হওয়া, প্রস্রাব হলুদাভ বর্ণ ধারণ করা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর সঠিক যত্নআত্তি নিলে এ ধরনের হেপাটাইটিস ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যায়। যদিও তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তারপরও প্রয়োজনে নিকটবর্তী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। হেপাটাইটিস এ-এর জন্য টিকা আছে।
হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি মারাত্মক একটি ভাইরাস। এটি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া একই ইনজেকশন সিরিঞ্জ অনেকে ব্যবহার করলে আর অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের ফলে এটা ছড়াতে পারে।
এটা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই রকম সংক্রমণ করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। কিন্তু এ রোগেরও আধুনিক চিকিৎসা আছে। হেপাটাইটিস বি-এর কার্যকর টিকা আছে, যা এই রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে এ রোগের জন্য অবশ্যই নিকটবর্তী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
হেপাটাইটিস সি
হেপাটাইটিস সি রক্তবাহিত রোগ। অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন মূলত এ রোগের কারণ। এটা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ করে তবে মাঝেমধ্যে স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণও করতে দেখা যায়। আজকাল এই রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে, চিকিৎসায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ও প্রদাহের ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো কার্যকর টিকা এখন পর্যন্ত নেই।
হেপাটাইটিস ডি
এই ভাইরাস সাধারণত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সঙ্গে কারও কারও একসঙ্গে হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ হলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন: লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার। এ ভাইরাসের আলাদা করে কোনো টিকা নেই।
হেপাটাইটিস ই
এই ভাইরাসটিও খাবার ও পানিবাহিত। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণ করে থাকে। জন্ডিসই মূল উপসর্গ। রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে হেপাটাইটিস ই দিয়ে সংক্রমণ হলে অনেক সময় মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অবশ্যই দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সতর্ক থাকুন
* ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন | সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।
ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিসের কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস আমাদের কাছে পরিচিত। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ করতে পারে। শুধু সচেতন হলেই ভাইরাল হেপাটাইটিস থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে।
হেপাটাইটিস এ
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস পানি ও খাবারবাহিত। অবিশুদ্ধ পানি আর ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের মাধ্যমে এটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। প্রথমে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় যেমন—অরুচি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। তারপর দেখা দেয় চোখ হলুদ মনে হওয়া, প্রস্রাব হলুদাভ বর্ণ ধারণ করা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর সঠিক যত্নআত্তি নিলে এ ধরনের হেপাটাইটিস ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যায়। যদিও তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তারপরও প্রয়োজনে নিকটবর্তী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। হেপাটাইটিস এ-এর জন্য টিকা আছে।
হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি মারাত্মক একটি ভাইরাস। এটি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া একই ইনজেকশন সিরিঞ্জ অনেকে ব্যবহার করলে আর অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের ফলে এটা ছড়াতে পারে।
এটা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই রকম সংক্রমণ করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। কিন্তু এ রোগেরও আধুনিক চিকিৎসা আছে। হেপাটাইটিস বি-এর কার্যকর টিকা আছে, যা এই রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে এ রোগের জন্য অবশ্যই নিকটবর্তী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
হেপাটাইটিস সি
হেপাটাইটিস সি রক্তবাহিত রোগ। অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন মূলত এ রোগের কারণ। এটা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ করে তবে মাঝেমধ্যে স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণও করতে দেখা যায়। আজকাল এই রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে, চিকিৎসায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ও প্রদাহের ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো কার্যকর টিকা এখন পর্যন্ত নেই।
হেপাটাইটিস ডি
এই ভাইরাস সাধারণত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সঙ্গে কারও কারও একসঙ্গে হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ হলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন: লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার। এ ভাইরাসের আলাদা করে কোনো টিকা নেই।
হেপাটাইটিস ই
এই ভাইরাসটিও খাবার ও পানিবাহিত। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণ করে থাকে। জন্ডিসই মূল উপসর্গ। রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে হেপাটাইটিস ই দিয়ে সংক্রমণ হলে অনেক সময় মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অবশ্যই দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সতর্ক থাকুন
- হেপাটাইটিস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ।
- যেখানে-সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। বাড়িতেও খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনে সতর্ক থাকুন।
- অবশ্যই নিরাপদ রক্ত নিতে হবে। রক্ত কেনাবেচা আইনত নিষিদ্ধ আর কেবল পরীক্ষিত নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন করবেন। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। মাদক পরিহার করতে হবে, কারণ ব্যবহৃত সুচের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ছড়ায়।
- যেসব ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা আছে, সেগুলো নিয়ে নিন।
- কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জন্ডিস বা হেপাটাইটিস হলে টোটকা বা কবিরাজি সমস্যা আরও জটিল করে তোলে। হেপাটাইটিসের আধুনিক সহজলভ্য চিকিৎসা দেশেই আছে।
* ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন | সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।