What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শাবান মাস এবং শবে বরাতের তাৎপর্য ও আমল (1 Viewer)

x8FQ7KW.jpg


শাবান মাসটি বিশেষ মর্যাদার ও ফজিলতপূর্ণ। হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এ মাসেই কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা শরিফ নির্ধারিত হয়। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনাসংবলিত অসাধারণ আয়াতটি (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৫৬) এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা পালন, নফল নামাজ আদায়সহ অন্যান্য নফল ইবাদত করতেন।

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ কথাটি ফারসি। ‘শব’ মানে রাত বা রজনী আর ‘বারাত’ মানে মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত অর্থ হলো মুক্তির রাত। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে একে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি ‘শবে বরাত’ নামেই সমধিক পরিচিত।

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ কথাটি ফারসি। ‘শব’ মানে রাত বা রজনী আর ‘বারাত’ মানে মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত অর্থ হলো মুক্তির রাত। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে একে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে

কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘উজ্জ্বল কিতাবের শপথ! নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এ উভয়ের মধ্যে যা আছে, সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে তামাশা করে। তবে অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ২-১০)।’ মুফাসসিরিনরা বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে শাবান মাসের পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রা.) বলেন, হজরত ইকরিমাহ (রা.) প্রমুখ কয়েক তফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাত, অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত বোঝানো হয়েছে (মাআরিফুল কোরআন)।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস শরিফে আছে: নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; সহিহ ইবনে খুজাইমা, পৃষ্ঠা: ১৩৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন: আল্লাহ তাআলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন (মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)। ‘এ রাতে আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার চাওয়া পূরণ করে থাকেন (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮৩)।’

‘যখন অর্ধশাবানের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না।’ (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)। হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়িশা! তোমার কী আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।” নবীজি বললেন, “তুমি কি জানো এটা কোন রাত?” আমি বললাম, “আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।” তখন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, “এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।”’

নবীজি (সা.) এ রাতে জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়ে বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৭৩৯)। শবে বরাতের করণীয় আমল সম্পর্কে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন: কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।

মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এই দিনের রোজা আইয়ামে বিজ, অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার অন্তর্ভুক্ত (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top