সুযোগ
প্রথম পর্ব
আমি দেবদত্ত। বয়স ২৮. পেশায় শিক্ষক। আমি একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের গণিতের শিক্ষক। বাড়িতে টুকটাক টিউশনি করি। সবেমাত্র মাধ্যমিকের টেষ্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একদিন আমি বাড়িতে টিউশনি পড়াচ্ছি। সবাইকে কয়েকটা অংক করতে দিয়েছি। বলেছি যার আগে হয়ে যাবে সে বাড়ি চলে যাবে। এক এক করে সবাই খাতা দেখিয়ে বাড়ি চলে গেল। সব শেষ খাতা নিয়ে এল রিম্পা ( এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষাথ্রী যদি টেস্টে পাশ করে) ।
রিম্পা — স্যার! আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
আমি — হ্যাঁ বলো।
রিম্পা — আমার কিছু অংক আটকে গেছে, যদি একটু দেখিয়ে দিতেন।
আমি — ঠিক আছে, পরের দিন এসে দেখিও, করে দেব।
রিম্পা — আসলে স্যার, সকলের সাথে আমি ঠিক বুঝতে পারি না। আর কিছু জিজ্ঞাসা করলে ওরা হাসাহাসি করে।
আমি — কিন্তু আজ তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
রিম্পা — অসুবিধা নেই স্যার আমি চলে যেতে পারব। যদি আপনার অসুবিধা থাকে তো……
আমি — না না কোন অসুবিধা নেই, ঠিক আছে তুমি অংক গুলো বের করো।
রিম্পার আগ্রহে আমি একটু অবাক হলাম। যে মেয়ে পড়াশুনার কথা বললে আশপাশে থাকে না, সে কিনা নিজে থেকে অংক করতে চাইছে! আবার ভাবলাম মাধ্যমিক এসে গেছে তাই বুঝি পড়াশুনায় মন বসেছে। আমি বেশ ধৈর্য ধরে ওকে অংক বোঝাতে লাগলাম। রিম্পা ও আগ্রহ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। রিম্পার আগ্রহে আমি খুশিই হলাম।
বেশ কয়েকটি অংক করার পর ঘড়িতে দেখলাম সাতটা বাজে। আমি রিম্পাকে বই খাতা গুছিয়ে নিতে বললাম যদিও ও আরো কিছু অংক করতে চাইছিল। কিন্তু আমি না করলাম কারন গ্রামে সন্ধ্যার পরে কেউ বাহিরে থাকে না। সেখানে সাতটা মানে বেশ রাত।
আমি শহরে মানুষ হলেও চাকরী সূত্রে দুই বছর গ্রামে বসবাস। তাই এখানকার রীতিনীতি কিছুটা হলেও জেনেছি। বউ রিমি, তিন বছরের ছেলে আর শিক্ষকতা নিয়ে বেশ ভালোই আছি। যাক সেসব কথা, রিম্পা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বই খাতা গুছিয়ে নিল।
আমি — বাইরে তো অন্ধকার হয়ে এসেছে, তুমি যেতে পারবে তো রিম্পা!
রিম্পা — (আমতা আমতা করে) হ্যাঁ স্যার, পারব।
রিম্পা যাওয়ার জন্য সবে পা বাড়িয়েছে রিমি পিছন থেকে ডেকে আমাকে একটা টর্চ লাইট দিয়ে বলল
— গ্রামের অন্ধকার পথ তার উপর একা মেয়ে যাবে, তার চেয়ে তুমি বরং ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে এসো।
আমি টর্চটা নিয়ে রিম্পার সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। শরৎকাল, বাইরে ফুরফুরে মিষ্টি হাওয়া। আমাদের বাড়ি থেকে রিম্পাদের বাড়ি যাওয়ার দুটি পথ। একটি গ্রামের ভিতর দিয়ে ইটের রাস্তা, যেটা দিয়ে গেলে হেঁটে ঘন্টাখানেক লাগবে। অন্যটা মাঠের মাঝখান দিয়ে ছোটো জমির রাস্তা। গ্রামের লোকজন চাষবাসের কাজের জন্য ব্যবহার করে। এটা দিয়ে গেলে দশ পনের মিনিট লাগবে। আমরা 2য় পথ ধরলাম।রাস্তার দুপাশে শুধু ধান আর ধান। হাঁটতে হাঁটতে রিম্পার সাথে টুকটাক কথা হচ্ছে।
আমি — পড়াশুনার প্রতি এই আগ্রহ কটা দিন আগে দেখালে মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট হত। যদিও এখনও সময় আছে।
রিম্পা — হ্যাঁ স্যার, আমি এখন থেকে আর ফাঁকি দেব না। আচ্ছা স্যার আমাদের অংক খাতা দেখেছেন?
আমি– না, এখনো দেখা হয়নি। কেন বলতো?
রিম্পা — আসলে স্যার ঐ অংকটায় আমার ভয়।
আমি — ঠিক আছে, কোন সাহায্য লাগলে আমাকে জানাবে।
আমরা কথা বলতে বলতে এক বিশাল ভুট্টা বাগানের সামনে আসলাম। প্রায় দশ বিঘা জমির উপর ভুট্টা চাষ। লম্বা লম্বা ভুট্টা গাছে বাতাস বেঁধে সাঁ সাঁ করে শব্দ হচ্ছে। হঠাৎ রিম্পা থমকে দাঁড়িয়ে লুঙ্গির উপর দিয়ে আমার বাড়া মুঠো করে ধরে
— প্লিজ স্যার, আমাকে টেস্টে অংকে পাশ করিয়ে দিন।
Hidden content
You need to reply to this thread or react to this post in order to see this content.
Hidden content
You need to reply to this thread or react to this post in order to see this content.
Last edited: