পুরো বাড়ি সাজানো-গোছানো। কারণ, সময় পেলেই আমরা ঘর পরিষ্কার করতে কিংবা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু বাড়ির যে ঘরটিতে আমরা নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাই, তার দিকে নজরই দেওয়া হয় না! বলা হচ্ছে বাথরুমের কথা। বাথরুমের মাধ্যমেও একজন মানুষের নান্দনিক রুচির প্রকাশ পেতে পারে। অথচ একান্ত এই জায়গাটি সাজানোর সময় সে কথা মাথায় রাখেন না অনেকেই। বাড়ির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিরও প্রয়োজন সঠিক সাজ। আর উৎসবের সময় হলে তো কথাই নেই। কারণ, উৎসব আয়োজনে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের আসা–যাওয়া বেশিই থাকে।
বাড়ির ডাইনিং, ড্রয়িং, বেডরুম, কিচেনের মতো বাথরুমেরও তো একটা নিজস্ব চরিত্র রয়েছে। ফলে বাথরুমের রং, টাইলস এবং বেসিনের ধরনেরও রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কী করা যায়? প্রথমেই যেটা করা উচিত—নিজে সাজানোর চেয়ে ভালো একজন ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া। তিনি যথেষ্ট স্থান বাঁচিয়ে বাথরুমটি সাজিয়ে দিতে পারবেন। এরপরও কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে।
* বাথরুমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো বেসিন, কমোড ও শাওয়ার। খরচ কমাতে এই তিনটিকে রাখুন এক লাইনে। এতে প্লাাম্বিংয়ের খরচ কমবে।
* বেসিন রাখুন দরজার কাছাকাছি, কারণ বাথরুমে ঢুকতে এবং বেরনোর আগে এটা আপনার কাজে লাগবেই।
* বড়মাপের একটা আয়না রাখুন। এটি ছোট বাথরুমকেও কিছুটা বড় দেখাবে।
* উজ্জ্বল আলো যেন বাথরুমে থাকে। এতে ঘরটা বড় দেখাবে।
* সঠিক স্থানে লাইট লাগাতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আয়নার ঠিক উপরেই একটা বাল্ব লাগানো থাকে। এতে চোখ, নাক ও গালের নিচে ছায়া পড়ে। তাই আয়নার জন্য বেস্ট অপশন টাস্ক লাইটিং।
* আয়নার পাশে বা বেসিনের নিচে ক্যাবিনেট রাখতে পারেন। এই ক্যাবিনেট টপে রাখতে পারেন শেভিং কিট বা প্রসাধনী।
* বেসিনের আকার, আয়তন, রঙেও নতুনত্ব আনতে পারেন।
* দরজা থেকে দূরে রাখুন টয়লেট এবং শাওয়ার এরিয়া। বাথরুমের দরজা খুললেই কমোডটা যেন নজরে না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* টয়লেট এরিয়ার উপরের দেয়ালে গিজার ফিট করে নিন।
* শাওয়ার এরিয়া অন্তত ইঞ্চিখানেক সিমেন্ট দিয়ে বাথরুম ফ্লোর গার্ড করে নিন। এতে গোসলের পানি এই এলাকার বাইরে যেতে পারবে না।
* বাথরুম বড় হলে বাথটাব রাখতে পারেন। লাগাতে পারেন কাচের শাওয়ার কিউবিকলও। এতে গোসলের পানি বাইরে ছিটকে আসবে না।
* লাগতে পারেন শাওয়ার কার্টেন। এতে বাথরুমে নানা রঙের ছোঁয়া আনবে।
* শাওয়ার এরিয়ায় সাবান-শ্যাম্পু-তেল রাখার জন্য একটা তাক থাকা প্রয়োজন।
* সুন্দর একটা টাওয়েল রড লাগন। এই রড দরজার গায়েও লাগাতে পারেন।
* যেহেতু সব কটি পাশাপাশি রাখা, তাই অন্য দেওয়ালটা কিন্তু ফাঁকা। এখানে একটি ক্যাবিনেট লাগিয়ে নিতে পারেন। তাতে থাকবে পোশাক, টয়লেট্রিজ ইত্যাদি।
* ফ্লোর ও দেয়ালে অ্যান্টি-স্কিড সিরামিক টাইলস ব্যবহার করলে সহজে পরিষ্কার করা যাবে, পিচ্ছিলও হবে না।
* বাথরুমকে সুন্দর দেখাতে ব্যবহার করুন রঙিন টাইলস। নীল ও সবুজ রং মন ভালো রাখবে। হালকা ও গাঢ় রঙের টাইলস মিশিয়ে লাগান।
* বাথরুমে একটা এগজস্ট ফ্যান অবশ্যই রাখবেন। কারণ, বাতাস চলাচল করলে পানি শুকাবে তাড়াতাড়ি।
* বাথরুমের সিলিংটা সাদা বা ক্রিম রঙের হলে ভালো। এতে আলো প্রতিফলিত হবে।
* কোনো বেঢপ আকৃতির ফিটিংস লাগাবেন না, যা বাথরুমের সঙ্গে মানানসই নয়।
* পেন্টিংও লাগাতে পারেন।
* জায়গা থাকলে সাউন্ড সিস্টেমও রাখা যায়। বাথরুমে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয় তো, তাই একটু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
* রাখতে পারেন নানা রকম ড্রাই ফ্লাওয়ার ও সেন্টেড ক্যান্ডেল।
* হ্যাঙ্গিং পটে গাছও রাখতে পারেন। এতে বাথরুমের চেহারাটাই বদলে যাবে।
* অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বাথরুমে অনেক বেশি সময় কাটান। তাঁরা চাইলে একটা বুকশেলফ রেখতে পারেন। বইয়ের পাশাপাশি সেখানে খবরের কাগজও রাখতে পারেন। জায়গা কম থাকলে হ্যাঙ্গিং তাক পাওয়া যায়, ঝুলিয়ে দিন।
* দুটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ঢোকার যেন পর্যাপ্ত অবকাশ থাকে। দ্বিতীয়ত, ভেজা আর শুকনো অংশ সব সময় আলাদা রাখুন।
সবশেষে ভালোভাবে দেখুন সবকিছু শক্তভাবে লাগানো হয়েছে কি না।
*** সারমীন আকতার ***