ছবির শেষ ক্লাইম্যাক্স সিন, ভিলেন তার জনা ত্রিশেক সঙ্গী নিয়ে নায়কের পরিবার ও তার প্রেমিকাকে একটি পরিত্যক্ত এলাকায় জিম্মি করে রেখেছে। তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে, স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। উপরওয়ালাকে স্মরণ করতে না করতেই পর্দায় কে যেন হাজির হয়ে শূন্যে দুই পা উঠিয়ে দুইজনের থুতনি ভঁচকে দিলো! এরপর উপস্থিত লোকদের সে কি মাইর! গতানুগতিক ঢিসুম-ঢিসুম না, চমৎকার সব মার্শাল আর্ট স্টান্ট দেখিয়ে এক নিমিষেই সবাইকে কুপোকাত!
আশির দশকের মাঝামাঝি হতে শূন্য দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি ছিল সিনেমাহলের অন্তত পরিচিত একটি দৃশ্য। বলছি অ্যাকশন হিরো মাসুম পারভেজ রুবেলের কথা। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট প্রাপ্ত এই প্রতিভা আজ জীবনের ৫৮ বসন্ত পেরিয়ে ৫৯ এ পা দিলেন। আশির দশকের শুরুতে পরপর দুবার ন্যাশনাল ক্যারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা এই সুপারস্টারকে নিয়ে আজ সাজালাম আমার পছন্দের সেরা দশ।
১০. বেয়াদব (১৯৯৪)
কবির আনোয়ার পরিচালিত সোশ্যাল অ্যাকশন ড্রামা ঘরানার এ ছবিটিতে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে গ্রাম এবং শহরের প্রেক্ষাপটে নারীর অধিকার, আত্মমর্যাদাবোধ, প্রেম, অভিমান ও সাহসিকতা দেখানো হয়েছে। ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রের প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে সমাজ বেয়াদবি ভাবলেও, ঐ বেয়াদবিটাই ছিল আত্মপরিচয়ের মূল চাবিকাঠি।
ভিন্নধারার চলচ্চিত্রগুলোতে এমন সুন্দর গল্প হরহামেশা দেখা গেলেও, বাণিজ্যিক ছবিতে খুব কমই দেখা যায়। তাই এমন গল্প দিয়েও যে ভালো কমার্শিয়াল ছবি সম্ভব, ‘বেয়াদব’ তার একটা উদাহরণ।
এ ছবিতে রুবেল তার প্রচলিত ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে এসে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি নায়িকা সাবরিনা দাপুটে পারফরমেন্স দিয়েছেন। আরও অভিনয় করেছেন খলিল, দিলদার, আশীষ কুমার লৌহ, খালেদা আখতার কল্পনা, দুলারী, আরিফুল হক’সহ অনেকে। ছবিটি মোটামুটি ব্যবসা করে।
৯. ঘৃণা (১৯৯৪)
মালেক আফসারী পরিচালিত অ্যাকশন-সাসপেন্স-ড্রামা জনরার এ ছবিতে রুবেলের বিপরীতে একসাথে তিন জাঁদরেল (হুমায়ুন ফরিদী, খলিল ও এটিএম শামসুজ্জামান) খলনায়ককে পর্দা ভাগাভাগি করতে দেখা যায়। নেতা হুমায়ুন ফরীদির মেয়ে চম্পার সাথে রুবেল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে ফরীদি, তার সহযোগী এটিএম শামসুজ্জামান ও উকিল ইলিয়াস কোবরা মিলে রুবেলের জীবনকে বিপর্যস্ত এবং দূর্বিষহ করে তোলে। তার পরিবারকে সমাজের চোখে ঘৃণার পাত্র বানায়।
সাসপেন্সে ঠাসা এছবিতে রুবেল, চম্পা, ফরিদী, এটিএম শামসুজ্জামান, ইলিয়াস কোবরা, খলিল ছাড়াও অভিনয় করেছেন রোজী আফসারী, আমির সিরাজীসহ অনেক। রোজী ফিল্মের ব্যানারে নির্মিত ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে। ছোটপর্দায় যতবারই দেখেছি ততবারই উপভোগ করেছি।
৮. বিচ্ছু বাহিনী (২০০১)
অন্যান্য মার্শাল আর্ট ভিক্তিক ছবিতে রুবেলের গুরু হিসেবে সিরাজ পান্না কিংবা ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের আবির্ভাব থাকলেও, এবার তিনি নিজেই গুরু হিসেবে আবির্ভাব হলেন। ছবিটির নাম ‘বিচ্ছু বাহিনী’, প্রযোজক ও পরিচালক তিনি নিজেই। ছবিতে নয়জন ক্ষুদে মার্শাল আর্টিস্টদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ধুন্ধুমার অ্যাকশন ও নান্দনিক সব মার্শাল আর্টের কারুকার্য ছবির অন্যতম বিশেষত্ব। আরো অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদী, খালেদা আখতার কল্পনা, ভারতের শিনা, শিবানীসহ অনেকে।
ছবিটি চাইনিজ মুভি ‘লাকি সেভেন’ (১৯৮৬) থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত। আয়ের দিক থেকে ২০০১ সালের অন্যতম সেরা ছবি ছিল এটি। রুবেল যে কয়টি ছবি পরিচালনা করেছেন ‘বিচ্ছু বাহিনী’কে তার মধ্যে সেরা ধরা হয়।
৭. যোদ্ধা (২০০০)
এ ছবিটির প্রচারণা কৌশল রুবেল ভক্ত তথা সুস্থ বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য আজীবন বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। অশ্লীলতার করাল গ্রাসে যখন একাধিক মাথাওয়ালা ও নিম্নরুচির পোস্টারে পুরো দেশ ছেয়ে গিয়েছিল, তখন এ ছবির ফার্স্টলুক পোস্টারে কোনো জনমানুষের চিহ্ন ছিল না। লাল আবরণে ঢাকা পোস্টারের টাইটেল ‘যোদ্ধা’র নিচে লেখা ছিল- এটি একটি সিনেমার পোস্টার। বলা বাহুল্য, পোস্টারটি উন্মোচনের পর যেকোনো অশ্লীল ছবির তুলনায় বেশি হাইপ তুলেছিল।
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত অ্যাকশন ঘরানার এ ছবিতে রুবেলকে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে পাওয়া যায়, যার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে ভিলেন রাজীব তাকে হত্যা করে। গল্পের শুরুতে দেখা যায় রাজীব এক গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে, তবে বাসর রাত কাটানোর পর পরের দিন সে তার বউকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কয়েক মাস পর সেই মেয়ে পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে তিনি সেই বাচ্চাকে রাজীবের বাসার সামনে রেখে চলে যান এবং পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেন। রাজীব ওই বাচ্চাকে আপদ মনে করে জঙ্গলে ফেলে দেন। আর এই পুরো ঘটনাচক্র ক্যামেরাবন্দী করে রাখেন মিজু আহমেদ, যিনি একসময় রাজীবের অধীনস্থ থেকে চোরাকারবারির ব্যবসা করতো। পরবর্তীতে অনেক বছর পর বিভিন্ন ঘটনাচক্রের ফলস্বরূপ রাজীব, মিজু আহমেদ, রুবেল এবং সেই ফেলে দেওয়া বাচ্চা বড় হয়ে (হুমায়ূন ফরীদি) পরস্পরের মুখোমুখি হয়।
মিষ্টি নায়িকা পূর্ণিমার প্রথমদিককার ছবি ছিল এটি। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন গোলাম মোস্তফা, খলিল’সহ অনেকে। বছরের অন্যতম সর্বোচ্চ আয়ের ছবিতে পরিণত হয় এটি। প্রমাণ হয়- ছবির মান যতই নামুক, ভালো ছবির ক্ষেত্রে দর্শকের রুচি এখনো নামেনি।
৬. বীর পুরুষ – Symbol of Strength (১৯৮৮)
প্রত্যেক বড় তারকার জীবনে এমন একটা কাজ থাকে, যেটা তাকে ছোট থেকে মহাতারকাতে পরিনত করে। রুবেলের শিল্পীজীবনের এই টার্নিং পয়েন্ট ‘বীরপুরুষ’। শূন্যে উঠে দুই পা দু’দিকে ছড়িয়ে মাটির হাড়ি ভাঙার দৃশ্যটা পুরোনো বাংলা ছবির দর্শকের চোখে লেগে আছে এখনও। অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার এ ছবিতে রুবেল এমন কিছু মার্শাল আর্ট দেখিয়েছেন, তখনকার সময়ে শুধুমাত্র হংকংয়ের জ্যাকি চ্যান এবং তার আগে ব্রুস লির ছবিগুলোতে এমন স্টান্ট দেখা যেতো।
শহীদুল ইসলাম খোকনের এ ছবিতে প্রধান চরিত্রে রুবেলের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সোহেল রানা। তাদের আরেক ভাই কামাল পারভেজকেও সিনেমায় প্রথমবারের মতো দেখা যায়। অন্যান্য চরিত্রে আছেন সুচরিতা, সখী, ড্যানি সিডাক, খলিল, সিরাজ পান্না, দিলদার’সহ অনেকে। ব্লকবাস্টার ছবিটি একটানা ৯ মাস দেশের আনাচে-কানাচের হলগুলোতে চলে। রুবেল এ ছবি দিয়ে তরুণদের আইকনে পরিণত হন। হাজারো তরুণ মার্শাল আর্ট শেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
৫. অকর্মা – Good For Nothing (১৯৯০)
রুবেলের এই ছবিটি দেখেছেন অথচ অবাক হননি এমন দর্শক খুজেঁ পাওয়া দুষ্কর। কারণ ‘অকর্মা’য় আমরা অন্যরকম রুবেলকে দেখতে পাই। প্রথমবারের মতো গোফবিহীন লুকে দেখা যায়। ছবির প্রথমার্ধে রুবেল তার স্বভাববিরুদ্ধ অভিনয় দিয়েছেন, তাতেও তিনি কোটি ভক্তের মন জয় করে নিয়েছেন। ছবির একটি অংশে রুবেলকে বেধম মার খেতে দেখা যায়। এই মার খাওয়ার দৃশ্যটি দেখে রুবেলের প্রতি মায়া হয়নি, এমন দর্শক হয়তো নেই।
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত কমেডি-অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার সুপারহিট ব্যবসা করে। রুবেলের বিপরীতে ছিলেন সুচরিতা; অন্যান্য চরিত্রে সোহেল রানা, ববিতা, আমির সিরাজী, কবির খাঁ, ড্যানি সিডাক, দিলদার’সহ অনেককে দেখা যায়। ছবিটি আমেরিকান ‘দ্য কারাতে কিড’ (১৯৮৪) থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত।
৪. লড়াকু – The Fighter (১৯৮৬)
রুবেলকে দর্শকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ছবি এটি। গতানুগতিক ঢিসুম-ঢিসুম ফাইটের বিপরীতে ‘লড়াকু’তে যে রকম ধুন্ধুমার স্মার্ট অ্যাকশন দেখা গেছে, বলিউড কিংবা সাউথের ছবিও তখন নিজেদের এতটা উন্নত করতে পারেনি। রুবেলের সেই বাটিকাট চুলের স্টাইল তখন তরুণদের মধ্যে একপ্রকার ট্রেন্ডে পরিণত হয়।
শহীদুল ইসলাম খোকন প্রথম সাফল্যের দেখা পান ‘লড়াকু’র মাধ্যমে। খল অভিনেতা ড্যানি সিডাকের অভিষেক ছবিও এটি। সময়ের তুলনায় কনসেপ্ট বেশ এগিয়ে থাকায় অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার ছবিটিকে দর্শক দু’হাত ভরে গ্রহণ করে। বছরের সেরা আয়ের ছবিতে পরিণত হয়। ‘বাংলার ব্রুস লি’ নামে রুবেল জনসাধারণের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। রুবেল ও ড্যানি সিডাক ছাড়াও ছিলেন সোহেল রানা, জুলিয়া, পাপড়ি, খলিল, দিলদার’সহ অনেকে।
৩. বিশ্বপ্রেমিক – I Will Do Anything For Love (১৯৯৫)
দূর্দান্ত রোমান্টিক-সাইকো-থ্রিলার ছবি। মাস্টারপিস বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। শহীদুল ইসলাম খোকনের জাদুকরী পরিচালনা ও রুবেল-ফরীদির অসাধারণ পারফরমেন্স ছবিটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
‘শিখা আমার শিখা’ এ ছবির জনপ্রিয় গান, পুরো নব্বই দশক জুড়েই গানটি তুমুল জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া মার্কিন পপতারকা মিটলোফের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় ‘আই উইল ডু এনিথিং ফর লাভ’ গানটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যবহার করা হয়। রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন পর্দাকাপানো হার্টথ্রব নায়িকা মৌসুমী। রুবেলকে দিয়ে যে রোমান্স খুব ভালোভাবেই সম্ভব তার উপযুক্ত প্রমাণ এ ছবি। অন্যান্য চরিত্রে আছেন গোলাম মুস্তাফা, সোহেল রানাসহ অনেকে। হুমায়ুন ফরীদীকে একজন সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলারের মতো এক ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখা যায়, তার দূর্দান্ত অভিনয়ের জন্যও ছবিটি খ্যাত। ফলস্বরূপ ব্লকবাস্টার ব্যবসা করে।
২. ভন্ড (১৯৯৮)
আমাদের ইন্ডাস্ট্রির একটি ক্লাসিক কমেডি ছবি। এ ছবি দেখেছেন অথচ হাসতে-হাসতে গড়াগড়ি খাননি, এমন দর্শক খুব কমই পাওয়া যাবে। একইসাথে এটি একটি মাল্টিস্টারার ছবিও বটে! নবাগতা তামান্নার সাথে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান, রাজীব, খলিল, ইলিয়াস কোবরা’সহ অনেকে।
ও সাথী রে আমারই জীবন শুধু তুমি, এক টোকা তে খুলে গেলো মনের তালা কিংবা আন্ধারে আন্ধা তুই আন্ধা; সংগীত পরিচালক আলম খান এ ছবির জন্য যেন তার সর্বোচ্চটাই ঢেলে দিয়েছিলেন। যার দরুণ সবগুলো গানই জনপ্রিয়তার চূড়ায় চড়ে পুরো শূন্য দশক জুড়ে বেতার ও টেলিভিশন দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
রুবেলই প্রথমবার মেয়ে সাজতে দেখা যায়। এছাড়া এটিএম শামসুজ্জামান ও হুমায়ুন ফরীদি পজেটিভ চরিত্রে দারুণ পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। ‘ভন্ড’ বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবির তালিকায় জায়গা করে নেয়। খোকন পরবর্তীতে শাকিব খানকে নিয়ে এ ছবির সিক্যুয়েল তৈরি করেন, ‘চেহারা ভন্ড-২’ (২০০৯) নামে; তবে এটি নামের প্রতি ততটা সুবিচার করতে পারেনি।
নাম্বার ওয়ান সম্পর্কে আলোচনা করার আগে এমন কিছু ছবির নাম নিতে চাই, যেগুলো এই লিস্টে আসেনি। তবে এগুলোও মানসম্পন্ন ছবি। সেগুলো হলো-
উদ্ধার (১৯৮৯), মারকশা (১৯৮৯), আমি শাহেনশাহ (১৯৮৯), অধিনায়ক (১৯৮৯), বীর যোদ্ধা (১৯৯০) বিপ্লব (১৯৯০), অর্জন (১৯৯০), বিষদাঁত (১৯৯১), সন্ত্রাস (১৯৯১), দেশ দুশমন (১৯৯১), ডন (১৯৯২), ইনকিলাব (১৯৯২), উথান পতন (১৯৯২), আজাদ (১৯৯২), মা মাটি দেশ (১৯৯২), সম্পর্ক (১৯৯২), লড়াই (১৯৯২), গোলামির জিঞ্জির (১৯৯২), শ্রদ্ধা (১৯৯২), পলাতক আসামী (১৯৯৩), অপহরণ (১৯৯৩), ঘাতক (১৯৯৪), আখেরী রাস্তা (১৯৯৪), স্বজন (১৯৯৬), রাক্ষস (১৯৯৬), লম্পট (১৯৯৬), নর পিশাচ (১৯৯৭), চারিদিকে শত্রু (১৯৯৭), ক্ষমা নেই (১৯৯৭), উল্কা (১৯৯৮), বিপদ সংকেত (১৯৯৮), কালো চশমা (১৯৯৮), অন্ধ আইন (১৯৯৮), রাগী (১৯৯৯), বাঘের থাবা (১৯৯৯), কুংফু নায়ক (১৯৯৯), লিঞ্জা (১৯৯৯) ও পাগলা ঘণ্টা (২০০০)।
১. বজ্রমুষ্ঠি (১৯৮৯)
চীনের শাওলিন মন্দিরে প্রচলিত উপকথা নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে মার্শাল আর্টের দুইটি বিশেষ স্টাইল সুনিপুণভাবে দেখানো হয়েছে। প্রথমটি হলো ঈগল ক্ল (Eagle Claw), যেই মার্শাল আর্ট শেখার মাধ্যমে যেকোনো সাধারণ মানব লৌহমানবে পরিণত হতে পারে। মানবশরীরের যে ৫টি দূর্বল পয়েন্ট রয়েছে, ঈগল ক্ল আয়ত্তে আনলে উক্ত দূর্বলতা অস্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে যায়। ফলে লৌহমানবকে আর কোনভাবেই পরাস্ত করা যায় না, শুধুমাত্র একটি উপায় ছাড়া। সেটি হলো বজ্রমুষ্ঠি (Thunderfist)।
মুভির কাহিনী শুরু হয় মার্শাল আর্ট কেন প্রয়োজন তা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। দেখা যায় চার বন্ধু মিলে মার্শাল আর্টে দক্ষতা লাভের জন্য গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নিতে। দীক্ষা শেষে তাদের জানানো হয় একটি দুর্লভ বইয়ের কথা, যেখানে মার্শাল আর্টের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের কথা লেখা আছে। তিনি এবং তার এই চার শিষ্য কেবল এর একটি কৌশল [ঈগল ক্ল] জানে, আর কেউ এই কৌশল জানে না। কিন্তু চার শিষ্যের মধ্যে বীরেন্দ্র (ড্যানি সিডাক) ছিল সব থেকে উচ্চাভিলাষী, তার ইচ্ছা যেভাবেই হোক নিতে হবে বইটি। কিন্তু বিদায়ের আগে সবার অগোচরে দিয়ে যান অন্য এক শিষ্যকে (সিরাজ পান্না)। বইটি পাবার জন্য বীরেন্দ্র মেরে ফেলে তার গুরুকে। কিন্ত বইটি পায় না। বইটি তার পেতেই হবে, তার কাছে মূল্য নেই কোন বন্ধুত্বের, কোন সম্পর্কের। একটি বই ও ক্ষমতার একছত্র অধিপতি হবার জন্য বীরেন্দ্রর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার নিয়ে পরবর্তীতে এগিয়ে চলে ‘বজ্রমুষ্টি’র কাহিনী।
পুরো মুভি জুড়ে রয়েছে একদম পিউর অ্যাকশন, যা ছবিটি হিট করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। দৃশ্যায়ন হয়েছে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে। অভিনেতাদের মধ্যে সোহেল রানা ও রুবেল ভালো কাজ করেছেন। রুবেলের বেশির ভাগ মুভিতে নায়িকাদের তেমন করার কিছু থাকে না, তাও জুলিয়া, সুচরিতা নিজ নিজ স্থান থেকে সেরাটা দেবার চেষ্টা করেছেন।
বীরপুরুষ মুভিতে অভিষেক হওয়া সিরাজ পান্না এছবিতেও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। তাকে দেখতে আসলেই মার্শাল আর্টের ওস্তাদের মতো লাগতো। আর ভিলেনের ভূমিকায় ড্যানি সিডাক বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। তার বিশ্বাসঘাতকতার হাসি আজীবন মনে থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন কবির খাঁ, ইলিয়াস কোবরা’সহ অনেকে। ছবিতে কোন গোলাগুলি নেই। শুধুমাত্র মার্শাল আর্ট ও হাত-পায়ের অ্যাকশন। গতানুগতিক ঢিসুম-ঢিসুম অ্যাকশন দৃশ্যের বদলে ছবির দর্শক সম্পূর্ন নতুন ধরনের অ্যাকশনের স্বাদ পায়।
ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে লোকাল সিন্ডিকেটের কাছে অন্য সবার মতো রুবেলও আত্মসমর্পণ করেছেন, অভিনয় করেছেন অশ্লীল ছবিতে। অশ্লীল ছবি পরিচালনা করে আবার সমালোচকদের কাছে নিজেকে ‘এক কাঠি সরেস’ বানিয়েছেন। তবুও বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদান কোনো অংশেই কম না। তালিকায় উল্লেখিত ১০টি এবং এর বাইরে উল্লেখিত ৩৮টি ছবি সেকথাই বলে, তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের চেয়ে ঢের এগিয়ে, নতুনত্বের দিশারি।