What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected রিচার্জ হোক ভালোবাসা (1 Viewer)

qxzIVEK.jpg


‘তুই বিয়ে করবিই? বিয়ে করার কী দরকার।’

প্রশ্নটা শুনে চমকে গেলাম। আজ থেকে ১০ বছর আগে আমরা তখন কাজি অফিসে। বর–কনেও হাজির। বর–কনে দুজনই আমাদের বন্ধু। অনেক দিন প্রেমের পরে তাদের এই পরিণয়। তো, শুভক্ষণে হইহই করতে করতে তাদের সঙ্গে এসেছি আমরা বন্ধুরা। দলের সঙ্গে আরও আছেন বন্ধুস্থানীয় এক বড় ভাই। আমাদের চেয়ে বছর পনেরোর বড় তিনি। স্বভাবতই অভিজ্ঞতাও আমাদের চেয়ে বেশি। কাজি সাহেব বর–কনের বিয়ে পড়াতে প্রস্তুত। এমন মধুরেণ সমাপয়েৎকালে ওই ভাই বেরসিকের মতো যখন বরবেশে থাকা আমাদের বন্ধুকে এ কথা বললেন, সে সময় চমকে না গিয়ে উপায় কী!

পরে সেই বন্ধুর বিয়ে হলো। তাদের ঘরে এল একটি সন্তান। চলে গেল দিনের পর দিন। আমরা সবাই যার যার জগতে ব্যস্ত, কে কার খবর রাখে আর। এ সময় এক রাতে—এই তো বছরখানেক আগে ইনবক্সে ভেসে উঠল ওই বন্ধুর মেসেজ, ‘সংসার একটা কারাগার রে। আমার এখন কিছুই আর ভালো লাগে না। সংসারবিবাগি হতে মন চায়।’

ফিরতি মেসেজে তাকে লিখলাম, ‘কী বলছিস এসব! মাথামুথা ঠিক আছে তোর?’

এবার সে বলল সবিস্তার, ‘আমার আর জেনির (ছদ্মনাম) মধ্যে আর কোনো ভালোবাসা নেই রে। যা আছে, তার নাম মায়া, একটা ভালোবাসাহীন সম্পর্ককে প্রতিদিন টেনে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। এটা কি ঠিক, বল?’

শেষের প্রশ্ন ঘাই মারল হৃদয়ের গভীরে। ১০ বছর আগের স্মৃতি ফিরে এল আবার, মনে পড়ল, ওই যে বন্ধুর বিয়ের দিন বড় ভাই তাকে বলেছিলেন, ‘বিয়ে করার কী দরকার?’ তাহলে কি তিনিই ঠিক? বিয়ের কিছুকাল পরে ভালোবাসা কি মরে যায়?

প্রশ্নের আকারে যে কথাটি উত্থিত হলো মনে, সেটিই এক আড্ডায় পেড়েছিলাম আমার এক মনোবিদ বন্ধুকে। শুনে তিনি হাসলেন একগাল। তারপর খানিক ইয়ার্কির ছলেই বললেন মোক্ষম কথাটি, ‘এই জীবনে শুধু শুধু কি কোনো জিনিস বেঁচে থাকে? একটি ফুলগাছে নিয়মিত পানি না দিলে সেটা কি বাঁচে? ভালোবাসাও তেমন। পানি দেওয়া লাগে, বুঝেছেন।’

চায়ে চুমুক দিতে দিতে তাঁর কথা শুনছি। আর আমাকে মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে তিনিও যেন কথার লেজে কথা জুড়ে দিচ্ছেন—গুরুতর সব কথা, ‘বিয়ের অনেক দিন পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংসারের নানা প্রয়োজন, সন্তানের এটা লাগবে ওটা লাগবে—এই সব দৈনন্দিনতার মুখোমুখি হয়ে স্বামী–স্ত্রী নিজেদেরকে আর আগের মতো সময় দিতে পারেন না। দুজনেই পরস্পরকে “টেকেন ফর গ্রান্টেড” ভাবতে থাকেন। এ রকম সমস্যা হয় তখনই। মনে হয়, যেন দায়িত্ব পালন করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই। দায়িত্বের জোয়ালের চাপে ভালোবাসা যে কখন জানালা দিয়ে পালিয়েছে, তা তারা আর বুঝতে পারেন না, অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে চানও না।’

‘তাহলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?’ আনমনেই কথাটি বেরিয়ে এল।

এবার মনোবিদ বন্ধুটি দিলেন সহজ সমাধান, ‘যেকোনো সম্পর্কে এবং অবশ্যই দাম্পত্যে ভালোবাসা রিচার্জ করতে হবে; ভাই, এটা কিন্তু অনেকটা মোবাইল রিচার্জের মতোই।’

‘ভালোবাসা রিচার্জ করতে হবে।’—মাথায় গেঁথে গেল এই কথা। সংসারকে আমার যে বন্ধুটি ‘কারাগার’ বলেছিল, আমার সেই বন্ধুসহ মনে এল চেনাজানা আরও অনেক মুখ। এর মধ্যে কেন জানি না কবি জীবনানন্দ দাশের ম্লান মুখটিও মনে পড়ল। স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে একজীবন কাটিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য এই যে তাঁদের ভেতরে ছিল যোজন যোজন দূরত্ব। ‘বোধ’ কবিতায় একদা জীবনবাবু লিখেছিলেন দাম্পত্যের একঘেয়ে যাপনের কথা, ‘সন্তানের জন্ম দিতে দিতে/ যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়,/ কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়/ যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে আসিতেছে চলে/ জন্ম দেবে জন্ম দেবে বলে/ তাদের হৃদয় আর মাথার মতন/ আমার হৃদয় না কি?’

H6479cT.jpg


বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসা বাড়ুক দাম্পত্যে

হয়তো এমন হৃদয় আমাদের অনেকেরই। দাম্পত্য তো কেবল সন্তানের জন্মদান নয়, এটি আরও ঢের বড় আঙিনা। প্রাত্যহিক জীবনযাপনের চাপে যখন জীবনানন্দের সুরঞ্জনার হৃদয়ের মতো ভালোবাসাও ‘ঘাস’ হয়ে যায়, তখনই সেই ভালোবাসাকে আবার জন্ম দিতে হয় নতুন করে, নতুন স্বরে। রবিঠাকুরের গানের ভাষায়, ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে...’

কথাগুলো বলেছিলাম আমার সেই সংসারবিবাগি বন্ধুকে। সে বলল, ‘কেমন করে পাব নতুন করে?’

এতক্ষণে তাকে আমার মনোবিদ বন্ধুর কথাগুলো শোনানোর মওকা পেলাম। বলা ভালো, মনোবিদ বন্ধুর কাছ থেকে শোনা কথাগুলোই গড়গড় করে হুবহু বলে গেলাম:

‘বউয়ের মুখের দিকে শেষ কবে তাকিয়েছিস? প্রেমের সময় যেমন খুনসুটি করতি, এখনো কি সে রকম খুনসুটি করিস? বউকে আলাদা করে সময় দে, তাকে অনুভব কর, দুজন মিলে কোথাও ঘুরে আয়, ভালোবাসার বাগানে আবার ফুল ফুটবে।’

এখন জানতে কি ইচ্ছে করছে, সেই ফুল ফুটেছিল কি না।

সেই খবর সবিস্তার ওই বন্ধু আমাকে জানায়নি। কেবল দু–তিন দিন আগে ফোন করে বলল, ‘শোন, একটা ঘটনা ঘটেছে। জেনির জন্মদিন ছিল ১৩ নভেম্বর। এদিন হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনও। বিয়ের আগে আমরা যখন প্রেম করতাম, সে সময় প্রত্যেক ১৩ নভেম্বরেই জেনিকে আমি হুমায়ূনের একটা বই গিফট করতাম। তাকে ডাকতাম রূপা নামে। আর হলুদ পাঞ্জাবি পরে আমি হয়ে যেতাম হিমু। অনেক দিন পর এবার ১৩ তারিখে জেনির জন্মদিনে আমি সেই আগের মতো হিমু হয়েছিলাম। জেনিকে সত্যিই লাগছিল রূপার মতো।’

বন্ধুটি এরপর আর কিছুই বলেননি আমাকে। তবু বেশ বুঝতে পারছিলাম তার অনুভব। এ সময় বারবার মনে পড়ছিল ভালোবাসা নিয়ে হুমায়ূনেরই একটা উক্তি, ‘ভালোবাসা যদি তরল পানির মতো কোনো বস্তু হতো, তাহলে সেই ভালোবাসায় সব পৃথিবী তলিয়ে যেত। এমনকি হিমালয় পর্বতও!’

ভালোবাসা রিচার্জ করে আমার বন্ধু দম্পতি যেমন আবার তরল পানির মতো হলো, হিমু–রূপা হতে পারল, তেমন তো পারি আমরা সবাই–ই। তখন নিশ্চয়ই আমাদের আবার মনে পড়বে জীবনানন্দ দাশকে এবং তাঁর থেকে ধার করে পরস্পরকে আমরা বলব:

‘তবু তোমাকে ভালোবেসে

মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে

বুঝেছি অকূলে জেগে রয়

ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয়।’

[FA]pen[/FA] লেখক: আলতাফ শাহনেওয়াজ, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top