What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রমাদানে নারীর বিশেষ আমল ও বিধিবিধান (1 Viewer)

qCyElrN.jpg


মানবসভ্যতা সৃষ্টিতে মনস্থ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রথমে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)কে সৃজন করলেন। এরপর সৃষ্টির পূর্ণতার জন্য আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ.)কে সৃজন করলেন। এই নর-নারী থেকে মনুষ্য বংশপরম্পরা তৈরি করলেন। মানবসমাজ পূর্ণতা পেল। (সূত্র, সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১)।

নারী ও পুরুষ জীবনের সর্বত্র একে অন্যের সম্পূরক ও সহায়ক। ইবাদত ও প্রতিদানে নারী ও পুরুষের রয়েছে যথাযথ যৌক্তিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪)।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, রমাদান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করে, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত–আবরু রক্ষা করে এবং শরিয়াসম্মত বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করে; সে জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (আবু দাউদ)।

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এবং যাবতীয় ইবাদতে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে। নারীরা রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবিহ নামাজও পড়বেন এবং রমাদানের অন্যান্য সুন্নত আমলসমূহ যথা কোরআন তিলাওয়াত ও ইতিকাফ ইত্যাদি আমলও করবেন। নারীদের জন্য জামাতে শামিল হওয়া জরুরি নয়।

নারীরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজেদের সোনাদানা, গয়না, টাকাপয়সাসহ সব ধরনের অর্থসম্পদের জাকাত প্রদান করবেন এবং সদাকাতুল ফিতরও আদায় করবেন। অবশ্য নারীর পক্ষে পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, সন্তান বা অন্য কেউ জাকাত ও ফিতরা আদায় করে দিলেও চলবে, যেহেতু আর্থিক ইবাদতগুলো একজন অন্যজনের পক্ষ থেকে আদায় করতে পারেন।

রোজা, নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পালনে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে। মায়েরা রোজা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না। নিজের সন্তান হোক বা অপরের সন্তান। এমনকি এমনিতে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার বা অজুর ক্ষতি হয় না। কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে (তা যে পরিমাণই হোক না কেন) রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না, তবে অজু ভঙ্গ হবে। কারণ, রোজা শুধু পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারাই বিনষ্ট হয়; অন্য কোনো কারণে নয়। উল্লেখ্য, রক্ত বের হওয়া বা তরল ক্ষরণ হওয়া অজু ভঙ্গের কারণ; রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে নারীদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও মুত্তাকি চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে সে রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। নারী রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা পালন করতে পারবেন না, ওই রোজাগুলো পরে কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মিসরিয়া)।

মাসিক পিরিয়ড বা রজঃস্রাব চলাকালীন রোজা রাখা যায় না, নামাজ পড়া যায় না এবং কোরআন তিলাওয়াত করা যায় না। এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া কালাম, দরুদ ইস্তিগফার, হাদিস তফসির, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার, অজিফা ইত্যাদি আমল করা যাবে। ঋতুমতী রমণীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা কারও অজু-গোসল প্রয়োজন হয় না।

যদি কোনো নারী বিশেষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তাঁর নিয়মিত মাসিক বন্ধ রেখে রোজা পালন করেন, তবে তাঁর রোজা আদায় হয়ে যাবে, যদি এতে তাঁর শারীরিক ও মানসিক কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে ওই রোজাটি পরে কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপ রোজার মধ্যে মাসিক চলাকালীন দিনের বেলায় তা বন্ধ হলে সেদিনও পানাহার থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না; পরে এই রোজাটিও কাজা আদায় করবে।

যদি কেউ রোজা অবস্থায় কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরা করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নাবান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ চাখতে পারবেন। মুখে বা জিহ্বায় নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলিও করে নিতে পারেন। রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার প্রভৃতি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top