What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রক্তাক্ত কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - কারবালার মর্মান্তিক কাহিনী (1 Viewer)

Placebo

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Jul 31, 2018
Threads
847
Messages
16,671
Credits
181,489
Recipe soup
Onion
কারবালার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি কালো অন্ধাকরময় একটি অধ্যায় যেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ)’কে।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মক্কা হতে মদীনা গমনের পরবর্তী ৪র্থ হিজরীতে নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত ইমাম আলী (রাঃ) এর কোল জুড়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর। স্বয়ং নবী কারীম (সাঃ) তাঁর কানে প্রথম আজান দেন এবং তাঁর আকীকা পালন করেন। নবীজীর কাছে তাঁর দুই দৌহিত্র ইমাম হাসান এবং হোসাইন ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। তাঁদের দেখার নিমিত্তে প্রায় তাঁদের ঘরে যেতেন, তাঁদের খেলতে দেখে প্রীত হতেন এবং বুকের সাথে লাগিয়ে রেখে আদর করতেন। মাঝেমধ্যে নামাজ পড়ার সময়ে তাঁর দৌহিত্রগণ এসে পিঠে উঠে বসে থাকতো। নবীজী ধীরেসুস্থে নামাজ সম্পূর্ণ করে তাঁদের নিজের কোলে নিয়ে বসতেন।

নবীজী বলতেন,

‘ যারা তাঁদের ভালোবাসে তাঁরা আমাকে ভালোবাসে। যারা তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তাঁরা আমার সম্পর্কেও বিদ্বেষ পোষণ করে। আমি হোসাইনের এবং হোসাইন আমার। যে হোসাইনকে ভালোবাসে, আল্লাহ্‌ সুবহান তায়ালাও তাঁকে ভালোবাসবে। ‘

নবীজী একদা মসজিদে শুক্রবারের খুতবা প্রদানকালে হোসাইন (রাঃ) প্রবেশ করলে নবীজী তাঁকে দেখে মিম্বার হতে নেমে আসেন এবং তাঁকে কোলে তুলে বুকের সাথে লাগিয়ে রেখে মহান আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করেন,

‘ হে আল্লাহ্‌! আমি তাঁদের উভয়কেই ভালোবাসি। আপনিও তাঁদের একইরকম ভালোবাসুন। ‘ – (বুখারী শরীফ)

ইমাম হাসান (রাঃ) এর বিষ পানঃ

ইমাম হাসান তাঁর পিতার সহিত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ইসলামের ইতিহাসে তিনি একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। হযরত আলীর (রাঃ) এর শাহাদাতের পর ১০ বছর যাবত ইমামের দায়িত্ব পালন করেন তিনি এবং ৫০ হিজরিঈর ২৮ শে সফর ৪৭ বছর বয়সে মুয়াবিয়া ইবনে সুফিয়ানের চক্রান্তে প্রলুব্ধ হয়ে তাঁর স্ত্রী জো’দা বিনতে আসয়াস বিন কায়েসের বিষ প্রয়োগের ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

NzvX7gs.jpg


কারবালা - Source: WallpaperCave

কারবালা কোথায় অবস্থিত?

কারবালা একটি শহর যা ইরাকের মধ্য-দক্ষিণে অবস্থিত এবং বাগদাদ হতে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণাংশে অবস্থান। পবিত্র শহরের মধ্যে এটি অন্যতম কারণ কারাবালা ময়দান যেখানে এখানে নবী কারীম (সাঃ) অতি আদরের দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ) শহীদ হোন এবং তাঁর কবরস্থান অবস্থিত।
 
কারবালার সঠিক ইতিহাস ও কারবালা যুদ্ধের কারণ

মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের আগে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে খলিফার জন্য কাউকে মনোনয়ন না করে বরং তা জনগণের চাহিদার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। সে সূত্রে ইসলামের চার খলিফা নিযুক্ত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের চাহিদানুযায়ী। তবে উমাইয়া বংশের খিলাফত লাভের পর গণতান্ত্রিক প্রথা বিলুপ্ত হয়ে রাজতন্ত্রের শাসন কায়েম হয়।

IxadgI4.jpg


কারবালা - Source: Who is Hussain?

এজিদের ইতিহাস

সময়কাল তখন হিজরির ৬০ সাল। বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় হযরত মু’আবিয়া (রাঃ) তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র এজিদের নাম খলিফা হিসেবে উল্লেখ করেন। এই নিয়োগে ইসলামের গণতান্ত্রিক নিয়মের পুরোপুরি বহির্ভূত কারণ মুয়াবিয়া পুত্র ছিলেন একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির, মদ্যপ, ধর্মে অবিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। যার কারণে হযরত মু’আবিয়ার মৃত্যুর পর এজিদের কাছে ইমাম হোসাইন (রাঃ) তাকে খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায় যারকারণে তাঁদের উপর শুরু হয় অত্যাচার। অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইরাক হতে মক্কায় চলে যান।

কারবালার যুদ্ধের কারণ

এদিকে কুফাবাসীগণ ইয়াজিদের বিপক্ষে। তাঁরা ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর সাহায্য প্রার্থণা করে দূত মারফত চিঠি পাঠান তাঁর কাছে যেখানে লেখা ছিলো ইয়াজিদের বদলে ইমাম হোসাইনকেই তাঁরা খলিফা হিসেবে দেখতে চান। তিনি এই ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে পাঠালেন কুফা যাতে তিনি সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসেন। সবকিছু দেখেশুনে মুসলিম কুফা হতে পত্র মারফতে ওখানকার ইমাম হোসাইনের প্রতি তাঁদের ব্যাপক সমর্থনের কথা জানান এবং তাঁকে কুফায় আসার অনুরোধ করেন। তবে মুসলিম বিন আকীলের ভাগ্যে লেখা ছিলো নৃশংস কিছু। মুসলিম বিন আকীলের আগমনে কুফাবাসীর মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির খবরে ইরাকের অধীনস্থ বসরার শাসনকর্তা উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে তৎক্ষণাৎ এজিদ কুফার দায়িত্ব অর্পণ করে এবং বিদ্রোহ দমন করতে বললো, তবে ইমাম হোসাইন (রাঃ) কে হত্যার কোন ধরণের নির্দেশ সে দেয় নি। সে গিয়ে দেখে আসলেই ঘটনা সত্য এবং মুসলিম বিন আকীল প্রায় চার হাজার সৈন্যসমেত তার প্রাসাদ ঘেরাও করে আছে। উবায়দুল্লাহ সবার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন ইয়াজিদের সৈন্য দিয়ে তাদের নির্মমভাবে দমন করা হবে এবং হত্যা করা হবে। এই ঘোষণা শুনে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে সরে পড়ে। দিনশেষে দেখা যায় আকিলের পিছে আর কোনো সমর্থক অবশিষ্ট নেই। তিনি নিজের নির্মম ভাগ্যকে মেনে নেন এবং গ্রেফতারের পর উবায়দুল্লাহ তাঁকে হত্যার নির্দেশ দিলে তিনি মৃত্যু কার্যকর করার পূর্বে ইমাম হোসাইনকে পত্র মারফত জানান,

“ হোসাইন…!! পরিবার পরিজন নিয়ে ফিরে যাও। কুফাবাসীদের ধোঁকায় পড়িও না। তারা তোমার সাথে মিথ্যে বলেছে যেমনটা তারা আমার সাথে বলেছে। “

দারুল এমারার ছাদে মুসলিম বিন আকীল এবং তাঁকে নিজের ঘরে আশ্রয় দেয়া হানি ইবনে উরওয়াকে গর্দান কেটে হত্যা করা হয়।

UHQXtcD.jpg


তবে দ্বিতীয় পত্র পৌঁছানোর পূর্বেই প্রথম পত্রের সাড়া দিয়ে ইমাম হোসাইন যিলহজ্জ্ব মাসের ৮ তারিখে মক্কা হতে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। বিভিন্নসূত্রে জানা যায় সেদিনই মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করা হয়। কুফার উদ্দেশ্যে গমনের পূর্বে বহু সাহাবীর নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি যাত্রা শুরু করেন।

সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হোসাইনকে বলেছিলেন,

‘ মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমাকে যাত্রা হতে বিরত রাখতাম। ‘

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন,

‘ হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে? ‘

কুফার পৌঁছাতে মাত্র দুই মনজিল বাকি এমনসময় কারবালা নামক স্থানে ইয়াজিদের সৈন্য দ্বারা তিনি বাধাপ্রাপ্ত হোন যার দায়িত্বে ছিলো আল হুর ইবনে এজিদ আল তামিমী।

কুফাবাসীর পাঠানো চিঠি দেখালেও তারা সেসব স্বীকার করলো না। তিনটি প্রস্তাব পেশ করলেন। হোর ইবনে এজিদ প্রস্তাবগুলোকে যুক্তিসম্মত বললেও এজিদ সৈন্যরা উবায়দুল্লাহর ফয়সালা ব্যতীত তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। হযরত হোসাইন (রাঃ) বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং ঘোড়ায় সওয়ার হলেন কিন্তু হোর বাহিনী কখনো সম্মুখে বা কখনো পশ্চাতে তাঁকে বাধা দিচ্ছিলো। এভাবে মহররমের ২ তারিখ কারবালা প্রান্তরে উপনীত হলেন। সেখানে পৌঁছে হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) জায়গায়টির নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়া হয় – ‘ কারবালা। ‘

উপস্থিত ইমাম হোসাইন (রাঃ) বললেন,

‘হে আল্লাহ্‌; বালা মসিবত হতে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করি। ‘
 
iM6yPmz.jpg


কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস

ইমাম হোসাইন কারবালা প্রান্তরে নেমে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ এখানে দু;খ ও বালা মুছিবতে স্থান। নেমে পড়, এখানেই আমাদের অবতরণে, রক্ত ঝরানোর এবং আমাদের কবরস্থান। ‘

এরপর সবাই নেমে পড়লেন। হোর এবং তার সঙ্গীরা অন্য এক দিকে তাঁবু ফেললো।

ইমাম হোসাইন (রাঃ) নিজের করুণ পরিণতির কথা আগে হতেই জানতেন তাই অন্যদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের পূর্ব হতেই নির্দেশ দেন,

‘ হে উম্মে কুলসুম, হে যয়নব, হে ফাতেমা, হে রোবাব, সাবধান! আমি যখন নিহত হবো, তখন যেনো গায়ের কাপড় ছিন্ন না করো। চেহারায় যেনো আঘাত না কর। এমন কথা মুখ দিয়ে না বলো যা আল্লাহ্‌র অপছন্দনী। ‘

উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর বিন সা’দকে সেনা অধিনায়ক ঘোষণা করে চার হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে কুফা হতে পাঠায়। এই বাহিনী হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর গতিরোধ করে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

একের পর এক সেনাদল পাঠাতে থাকে জিয়াদ। যারফলে ৬ মোহররমের সময় সেনাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার জন আর ওইদিকে ইমাম হোসাইনের পক্ষে রয়েছে সর্বসাকুল্যে শ খানেক মানুষ।

তবে সেদিন মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের অনুরোধে প্রথম দিন যুদ্ধবিরতী ঘোষণা করা হয়। ইমাম হোসাইন তাঁর সাথে আগত অনেককেই অনুরোধ করেন ফিরে যেতে তবে তাঁরা কিছুতেই ইমামকে ছেড়ে নতুন জীবন গড়তে রাজি হোন নি। সেই রাতটি ইবাদাত, মোনাজাতে কাটিয়ে দেয়া হয়।

K4p4Wii.jpg


যুদ্ধ শুরু (আশুরার দিন ভোরে)

ওমর বিন সা’দের সৈন্য বাহিনী অগ্রসর হলো। হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) বারবার তাদের যুদ্ধবিগ্রহের দিকে না যেতে আহবান জানালেও তারা মোটেও কর্ণপাত করলো না অথচ এই কুফাবাসীদের রক্ষার্থেই ইমাম হোসাইন (রাঃ) রওনা হয়েছিলেন। অতঃপর ইমাম হোসাইন দাঁড়িয়ে বললেন,

‘ হে জনগোষ্ঠী!! তোমাদের এজন্যেই ধ্বংস হোক যে, তোমরা জটিল পরিস্থিতিতে আমার সাহায্য চেয়েছো আর আমি তোমাদের সাহায্যার্থে ছুটে এসেছি কিন্তু যে তরবারী আমার সাহায্যে পরিচালনার শপথ নিয়েছিলে আজ আমাকে হত্যার জন্য সে তরবারী হাতে নিয়েছো। তোমরা যে আগুনে আমাকে জ্বালানোর জন্য প্রজ্বলিত করেছো, আমি চেয়েছিলাম এ আগুন দিয়ে আমার ও তোমাদের দুশমনদের জ্বালিয়ে দেবো। আজ তোমরা নিজের বন্ধুকে হত্যা এবং দুশমনদের সাহায্যে ছুটে এসেছো। তোমাদের জন্য আফসুস। ‘

‘ আল্লাহ্‌র কসম। আমার মৃত্যুর পর তোমরা বেশীদিন বাঁচবে না। তোমাদের জীবন কোন সওয়ারীতে আরোহণ এবং নেমে পড়ার অধিক সময় স্থায়ী হবে না। ‘

ওমর বিন সা’দ সামনে অগ্রসর হয়ে ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর সঙ্গীদের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করলো । ইমাম হোসাইনের নির্দেশে তাঁর বাহিনীও পাল্টা দুটি অভিযান চালান এবং অনেকেই শাহাদাত বরণ করেন।
 
এজিদের সেনাপতি হোর ইবনে ইয়াজিদের আগমন ইমাম হোসাইনের পক্ষেঃ

হঠাৎ হোর ইবনে ইয়াজিদ উবায়দুল্লার সেনাপতি ওমর বিন সা’দকে লক্ষ্য করে বললেন,

‘ হোসাইনের সাথে যুদ্ধ করতে চাও? ‘

“ হ্যা, আল্লাহ্‌র শপথ। এমন যুদ্ধ করবো যাতে সহজেই শরীর হতে মাথাগুলো বিচ্ছিন্ন করা যায় আর হাতগুলো ধড় থেকে পৃথক করা যায়। “ – ওমরের জবাব।

হোর ইবনে ইয়াজিদ ছিলেন কুফার সবচেয়ে বড় পরীক্ষিত যোদ্ধা তবে ওমরের এমন জবাবে তিনি দল থেকে পৃথক হয়ে যান এবং কাঁপতে থাকেন। মুহাজির বিন আউস জিজ্ঞেস করলেন সে কাঁপছে কেনো? জবাবে হোর বললেন,

‘ আল্লাহ্‌র কসম আমি নিজেকে বেহেশত ও দোযখের মাঝখানে দেখছি। তবে খোদার শপথ, বেহেশত ব্যতীত অন্যকিছুকে প্রাধান্য দিবো না। এতে যদি নিজের শরীর টুকরো হয় বা জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়।‘

তিনি হাঁক দিয়ে ইমাম হোসাইনের দিকে অগ্রসর হয় এবং বলতে থাকেন,

“ হে আল্লাহ্‌! তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, আমার তওবা কবুল করো কারণ আমি তো তোমার বন্ধু এবং তোমার নবী নন্দিনীর সন্তানদের ভয় দেখিয়েছি। “

নিজের জীবন আল্লাহ্‌র পথে বিসর্জন দেয়ার বাসনা নিয়ে তিনি ইমাম হোসাইনের দলে চলে আসেন এবং যেহেতু তিনিই প্রথম ইমাম হোসাইনের পথ রুদ্ধ করেছিলেন তাই তিনিই প্রথম শহীদ হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন ইমামের কাছে।

বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে যখন তিনি শহীদ হোন তাঁর মরদেহ ইমাম হোসাইনের নিকট আনলে তিনি মুখমন্ডল হতে ধুলাবালি সরিয়ে দিলেন।

wahNH5G.jpg


Source: Deskgram

ইমাম হোসাইনের পুত্রদ্বয়ের মৃত্যু

একের পর এক সাথী নিহত হওয়ার পর ইমাম হোসাইনের পুত্র আলী আকবর (রাঃ) যুদ্ধের অনুমতি নিয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে এবং চরম পিপাসার্ত হয়ে পিতার নিকট ফিরে এসে পানির খাওয়ার চরম আকুতি জানায়। তবে ইমাম হোসাইন তাঁকে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ শেষ করার নির্দেশ দিলে তিনি ফিরে যান এবং মুনকিজ বিন মুররা আবদীর ছোঁড়া তীরে শাহাদাত বরণ করেন।

এরপর কাসেম বিন হাসান (রাঃ) এর মৃত্যুর পর ইমাম হোসাইন তাবুর দরজায় এসে যয়নবকে বলেন,

“ আমার ছোট ছেলেকে দাও – তাঁর কাছ হতে বিদায় নিই। “

তবে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, দুধের শিশুকে হাতে তুলে নিয়ে চুমু দেয়ার জন্য তুলবেন এমন সময় হারমালা বিন কাহেলের ছোঁড়া তীর এসে শিশুর গলায় বিদ্ধ হয়। যার ফলে শিশুপুত্র আলী আসগর শহীদ হোন। শিশুপুত্রকে নিচে রেখে তাঁর তাজা রক্তে হাত রঞ্জিত হয়ে পড়ে এবং রক্ত ছুঁড়ে দেন আকাশের দিকে,

‘ এসব মুসীবত আমার জন্য খুবই সহজ। কেননা, এসবই আল্লাহ্‌র রাস্তায় হচ্ছে আর আল্লাহ্‌ দেখছেন। ‘

হযরত ইমাম বাকের (রাঃ) বলেন, ছুঁড়ে মারা রক্তকণার একটুও জমীনে ফিরে আসে নি।
 
ইমাম হোসাইনের ময়দানে অবতরণ

তিনি ময়দানে নেমে শত্রুপক্ষকে মল্লযুদ্ধের আহবান জানালেন। দুশমন পক্ষের খ্যাতনামা যোদ্ধারা একে একে ইমাম হোসাইনের আঘাতে ধরাশায়ী হচ্ছে।

প্রচন্ড যুদ্ধ চলতে চলতে শত্রুপক্ষ ইমাম হোসাইনের তাঁবুর কাছে পৌঁছালে ইমাম হোসাইন ফরিয়াদ জানায় যেন তাঁবুতে অবস্থিত নারীদের ক্ষতি করা না হয়। তিনি যতোক্ষণ জীবিত আছেন কেউ যেন তাঁবুতে না ঢুকে। শিমার তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করলো।

এরপরই শিমারের নেতৃত্বে ইমাম হোসাইনকে হত্যার পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হয় এবং হামলা চালায়। পাল্টা আক্রমণ ইমাম হোসাইন প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তবে তিনি প্রচন্ড পিপাসার্ত হয়ে পড়লে শত্রুপক্ষ হতে পানি চাইলে এক ফোঁটা পানিও তাঁকে দেয়া হলো না। অভিশপ্ত শিমারের নেতৃত্বে থাকা দলেরা ইমাম হোসাইনের বদনে প্রায় ৭২ টি আঘাতে জর্জরিত করে ফেলে।

আঘাতের কারণে তিনি থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। দূর্বলতার দরুণ বেশ কিছু সময় যুদ্ধ করতে সক্ষম হোন নিই। এমনসময় একটি পাথর এসে তাঁর পেশানিতে আঘাত করলে রক্ত গড়িয়ে তাঁর জামা ভিজতে শুরু করে। তিনি রক্তের স্রোত বন্ধ করতে উদ্যত হলে একটি বিষাক্ত ত্রিশুল এসে ইমামের বুকে বিদ্ধ হয়। তিনি ত্রিশুলটি টেনে বের করেন এবং রক্ত বন্যার মতো গড়িয়ে পড়তে থাকে। তিনি যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হয়েও দাঁড়িয়ে রইলেন। এতো সৈন্য থাকার পরেও কেউ মহানবীর দৌহিত্রকে হত্যা করার সাহস জোগাতে পারলো না এবং আল্লাহ্‌র কাছে মহানবীর দৌহিত্র হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে পিছু হটে যায়।

তবে কান্দা গোত্রের মালেক বিন ইয়াসর ইমাম হোসাইনের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে মাথায় তরবারী চালিয়ে দেন।

তরবারী তাঁর পাগড়ী ভেদ করে মাথায় ঢুকে যায়। উক্ত পাগড়ী ছিলো মহানবী (সাঃ) এর যা ইমাম হোসাইনের রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। ইমাম একখানা রুমাল দিয়ে মাথা বাধলেন এবং একটী টূপি চাইলেন। এরপর পাগড়ী দিয়ে ভালোভাবে মাথা বাঁধেন। সামান্য বিরতি দিয়ে যিয়াদের সৈন্য তাঁকে চতুর্দিকে ঘিরে ফেলে।

এরপর ওমরে নির্দেশে বেশ কয়েকজন ইমাম হোসাইনের মাথা হতে ধড় বিচ্ছিন্ন করতে এগিয়ে গেলেও ফিরে আসে। নাবালক ভাতিজা আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান তাঁবু হতে দৌড়ে এসে চাচার সামনে এসে দাঁড়ায় তবে শত্রুপক্ষের তীরের আঘাতে সেও শহীদ হয়।

শিমার জিল জওশন এগিয়ে আসলে ইমাম হোসাইন আসরের নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়ে নামাজ পড়াকালীন সিজদায় যখন নত হোন সেসময় শিমার তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করে বলে,

‘ খোদার শপথ। আমি তোমার মাথা বিচ্ছিন্ন করছি এটা জেনেও যে তুমি মহানবীর দৌহিত্র এবং পিতা মাতার দিক হতে অতি উত্তম। ‘

এ বলে মহানবীর প্রিয় দৌহিত্রের শরীর হতে মাথা ছিন্ন করে ফেলে।

ANHgjfT.jpg


ইমাম হোসাইনের মৃত্যুর পরবর্তীতে অপরাধীদের শাস্তি

মোখতার সাকাফী পরবর্তীতে ইমাম হোসাইনের মৃত্যুতে সহায়তা করা সেনান বিন আনাসকে পাকড়াও করে এবং তাঁর আঙ্গুলগুলোর প্রতিটি গিঁট বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ইমাম হোসাইনকে উলঙ্গ করে ফেলায় অভিশাপে আবহুর বিন কা’বের দুরারোগ্য ব্যাধী হয় যার ফলে তার হাত শুকনো কাঠ এবং ঠান্ডা হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে যতোদিন তার মৃত্যু হয় নি ততোদিন। তাঁর জামা খুলে পরিধান করা ইসহাক বিন হাবিয়া হাজরামী শরীরে শ্বেতরোগের সৃষ্টি হয় এবং শরীরের সকল পশম ঝরে পড়ে। ইমামের পাজামা পরিধান করা আবহোর বিন কা’বের শরীর অবশ হয়ে যায়। ইমামের পাগড়ী নিয়ে পরিধান করা জাবের বিন ইয়াজিদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। তাঁর আংটি নেয়ার অপরাধে বোজদিল বিন সালিনকে হাত পা কেটে ছেড়ে দেয়া হয় মোখতারের নির্দেশে। বর্মটি ওমর নিয়ে আসে ওমর বিন সা’দ তবে ওমর বিন সা’দের হত্যাকারীকে ইমাম হোসাইনের বর্মটি দান করে মোখতার।

ইমাম হোসাইন (রাঃ) সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কুফাবাসীর আহবানে এগিয়ে গিয়েছিলেন কোন ধরণের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছাড়াই। বিশ্বাসঘাতকতা এবং হিংস্রতার করাল থাবায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন অথচ তাঁর নানাজান হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এদেরকেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ভাষায় বলেন,

“ নীল সিয়া আসমা লালে লাল দুনিয়া,

আম্মা! লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া।

কাঁদে কোন ক্রদসী কারবালা ফোরাতে,

সে কাদনে আঁসু আনে শিমারেরও ছোরাতে।

রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া দামেশকে,

জয়নালে পরাল এ খুনিয়ারা বেশ কে?

‘হায় হায় হোসেনা’ ওঠে রো ঝনঝায়,

তলওয়ার কেওএ ওঠে এজিদেরো পঞ্জায়।

উন্মাদ ‘দুলদুল’ ছুটে ফেরে মদীনায়,

আলি-জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়। “
 
অনেক ধন্যবাদ... অনেক বিস্তারিত কথা বলা আছে।
তবে ভাল কোন অনুবাদকের লেখা দিতে পারলে বুঝতে সুবিধা হতো
 

Users who are viewing this thread

Back
Top