What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review রাজত্বঃ শাকিব খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,441
Pen edit
Sailboat
Profile Music
PBes8fr.jpg


ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র অগ্নির পর মাত্র একমাসের ব্যবধানে মুক্তি পেল ইফতেখার চৌধুরীর নতুন ছবি রাজত্ব। ফ্যাটম্যান ফিল্মস এর প্রযোজনায়, অদিত এর সংগীত আয়োজনে এই ছবিতে অভিনয়ে আছেন শাকিব খান, ববি, প্রবীর মিত্র, আমির সিরাজি, সানকো পাঞ্জা সহ আরও অনেকে। উল্লেখ্য যে, ইফতেখার চৌধুরী এর সাথে এটাই শাকিব খানের প্রথম ছবি এবং ফুল অ্যান্ড ফাইনালের পর এটা শাকিব- ববি জুটির দ্বিতীয় ছবি।

শহরের অন্যতম টপ সন্ত্রাসী হলেন টেন পার্সেন্ট সম্রাট (শাকিব খান) । অন্য চাঁদাবাজ যারা শহরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা চায়, তাঁদের মেরে তক্তা বানান শাকিব খান, কিন্তু বিনিময়ে তাকে সেই টাঁকারই ‘টেন পার্সেন্ট” অংশ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। চার পাঁচজন সন্ত্রাসীদের টেন পার্সেন্ট করে দেয়ার চেয়ে শুধু শাকিবকে টেন পার্সেন্ট দিয়ে উটকো ঝামেলা বিদায়কে ব্যবসায়ীদের কাছে অধিক লাভজনক মনে হয়। এরকম কাজ করতে গিয়েই সম্রাট বিরোধে জড়িয়ে পড়ে আরেক সন্ত্রাসী কিবরিয়া জুহালা (সানকো পাঞ্জা ) এর সাথে। এলাকার সবাই সম্রাটকে বেশ সমীহ আর ভয় পেলেও “নির্ভীক” সম্রাট দুনিয়াতে শুধু একজনকেই ভয় পান, তিনি হলেন তার মা। সম্রাটের মা জানেন তার ছেলে হচ্ছেন পুলিশের এসিপি এবং দীর্ঘদিন ধরেই তিনি তার ছেলেকে বিয়ে করানোর চেষ্টা করছেন, যদিও কিছুতেই তা করতে পারছেন না। সম্রাটের সহকারী একদিন মুখ ফসকে ভুলে সম্রাটের মা কে বলে ফেলেন যে সম্রাট বিয়ে করে ঘরে বউ এনে ফেলেছে। এই ঘটনা শুনেই সম্রাটের মা বাড়ি থেকে রওনা দেন বউ দেখতে। মার হাত থেকে বাঁচার জন্য সম্রাট নকল বউ হাজির কোরান, যদিও তার এই জারিজুরি ফাঁস হতে খুব বেশি সময় লাগে না। এভাবেই কাহিনী এগোচ্ছিল, একদিন নিজের মাকে বাড়িতে দিয়ে নিজের মৃত বাবার মোটর সাইকেলে ফেরার সময় পথে মোটর সাইকেল নষ্ট হলে সম্রাট রাস্তার পাশের এক বাসায় তার মোটর সাইকেল শুধু সেই রাতের জন্য রাখার কথা ভাবেন । সেই বাসায় গিয়ে তার সাথে পরিচয় হয় রিয়ানা (ববি) এর সাথে, প্রথম দেখাতেই শাকিব তার প্রেমে পড়ে যান। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এবার আর মিথ্যা বিয়ে নয়, এই মেয়েকেই তিনি বিয়ে করে মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন সকালেই তিনি প্রস্তুত হয়ে রিয়ানাদের বাড়িতে যান। কিন্তু হঠাৎ করেই কাহিনীতে টুইস্ট আসে, রিয়ানা, তার বোন, এমনকি তার বাবা ইউসুফ সাহেব( প্রবীর মিত্র), যাদের সাথে একদিন আগের রাতেই শাকিবের পরিচয় ও কথা হয়েছে, তারা কেওই সম্রাটকে চিনতে অস্বীকৃতি জানান, এমনকি সম্রাটের রেখে যাওয়া বাইকও উধাও! কি কারণ রিয়ানার পরিবারের এই রহস্যময় আচরণের? সম্রাট কি পারবেন সেই রহস্যের সমাধান করতে? সম্রাট কি পারবেন কিবরিয়া জুহালা এর রাজত্ব ধ্বংস করে নিজের রাজত্ব কায়েম করতে? জানতে হলে দেখতে হবে ‘রাজত্ব‘।

পুরো ছবির যত ত্রুটি আর বিচ্যুতি আছে- তা শুধু একজনের পারফর্মেন্স এর কারণেই ক্ষমা করা যায়- তিনি হলেন শাকিব খান। শেষ কবে তাকে কোন ছবিতে এতটা, গ্লামারাস, এতটা ম্যানলি, এতটা “চকোলেট বয়” হিসেবে দেখা গেছে- তা হয়ত শাকিব খানের নিজেরও মনে নেই। চুলের স্টাইল পরিবর্তন, সম্ভবত এই প্রথম প্রায় ছবির অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে ম্যানলি লুক, একদম চিৎকার ছাড়া পরিমিত অভিনয়, ডায়লগ ডেলিভারি- ছবিতে এন্ট্রি সিন থেকে শুরু করে ছবির লাস্ট সিন পর্যন্ত – এইসব কিছুর জন্য শাকিব দর্শকের তালি পেয়েছেন পুরোটা সময় জুড়ে। পুরো ছবিকে তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন। ছবির প্রাণ হল ছবির গান। অদিতের সংগীত পরিচালনায় ‘তুমি ছাড়া”, ‘মন কি চায়”, “কি করি হায়” “যুবতী কন্যার মন” – গানগুলোর দৃশ্যায়ন ছিল বেশ চমৎকার। বিশেষ করে “তুমি ছাড়া” গানটি। যুবতী কন্যার মন গানের দৃশ্যায়ন আরও ভালো হতে পারতো, এই গানটি দেখার চেয়ে কানে শুনতেই বেশ ভাল্লেগেছে। গানের সাথে ববি শাকিবের দারুণ কস্টিউম আর অতিরিক্ত মেকাপ না ব্যবহার গানগুলোতে অন রকমের মাত্রা যোগ করেছে। তবে প্রথম আইটেম গানটি একেবারেই ভালো হয়নি, কোন দরকারও ছিল না সেই গানের।

বাংলা ছবির বেশিরভাগ পরিচালকে ধারণা- সিনেমার পোস্টার মানেই হচ্ছে সিনেমায় যারা অভিনয় করেছে, সবার চেহারা দিয়ে পোস্টার ভরিয়ে ফেলা। রাজত্ব এই দিক থেকে একেবারে ব্যতিক্রম- পোস্টারে শাকিব ববি ছাড়া আর কেও নেই, দুইজনকে পোস্টারে পরিবেশন ও করা হয়েছে বেশ অন্যরকমভাবে। পোস্টারে “রাজত্ব’ শব্দটি লেখাও হয়েছে অন্যরকম ভাবে, রাজত্ব শব্দটির উপরে মুকুটের ছবি পোস্টারের মান বাড়িয়েছে। ছবি শুরু হওয়ার সময় ছবির সব কলাকুশলীদের নাম দেখানোর স্টাইলটাও বেশ অন্যরকম ও আকর্ষণীয়। কাহিনীকার আব্দুল্লাহ জহির বাবুকে ধন্যবাদ একটু অন্যরকম কাহিনী লেখার জন্য, বিশেষ করে ইন্টারভেল এর আগে ছবির টুইস্ট এর রহস্য ভেদ করা অনেক অভিজ্ঞ দর্শকের পক্ষেও বেশ কঠিন হবে।

সিনেমাতে শাকিব যতটাই ভালো, ববি সেই তুলনায় একেবারেই নন। কান্নার দুই একটি দৃশ্য ছাড়া বাকি সব দৃশ্যতেই ববির অভিনয়ের অপরিপক্বতা প্রকাশ পায়। শুধুমাত্র দেহ প্রদর্শন করে কতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে পারবেন অভিনয় ছাড়া- সেটি নিয়ে ববির এখনই ভাবা উচিত। সেই তুলনায় ববির ছোটবোন চরিত্রে অভিনয়কারী মেয়ের অভিনয় বেশ ভালো ছিল। প্রবীর মিত্র সাধারণত যে ধরনের অভিনয় করেন, সেইভাবেই অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদিন পর আমির সিরাজি পর্দায় ফিরে এলেও ,মেইন ভিলেন “রাইসুল জুহালা” চরিত্রে তিনি ছিলেন হতাশাজনক। সেই তুলনায় তার বড় ছেলের চরিত্রে সানকো পাঞ্জা পাঞ্জা বেশ ভালো করেছেন, বিশেষ করে সানকো পাঞ্জা এর এন্ট্রি সিনে মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া বের হওয়ার সিনটা বেশ ভালো ছিল। কমেডিয়ান চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন, তারা কমেডি এর চেয়ে ভাঁড়ামি বেশি করেছেন, যদিও হলের দর্শক তাতেও তালি বাজিয়েছেন। কমেডিয়ান মানেই যে বোকা, সহজ সরল, অশিক্ষিত হতে হবে- এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসা দরকার, কমেডিয়ান ও যথেষ্ট স্মার্ট হতে পারেন- উদাহরণস্বরূপ পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী সিনেমার সাজু খাদেমের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। নিজের মৃত স্বামীর মোটর সাইকেল দেখে যখন শাকিবের মা স্মৃতিরোমন্থন করেন, তখন বাইক যেই রাস্তায় চলছিল, সেই রাস্তা ক্রমেই পার হলেও, বাইকের চাকা কেন থেমে ছিল, থেমে থাকলে তাহলে রাস্তা কীভাবে পার হচ্ছিল- তা বোধগম্য নয়। দর্শকদের এতটা বোকা ভাবাও মনে হয় ঠিক নয়। ছোট্ট একটা স্কুল ব্যাগে শাকিব খান কীভাবে টেন পার্সেন্ট অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা (সিনেমা অনুযায়ী) নিয়ে আসেন তাও বোধগম্য নয়। শেষের দিকে শাকিবের শরীরে আগুন লাগার পড়েও (যদিও তৎক্ষণাৎ তিনি নদীতে ঝাপ দেন) তিনি একটু পড়েও গুণ্ডাদের শায়েস্তা করার জন্য সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসেন , তা একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলে ভালো হত। মাত্র এক রাতে পরিচয় হয়ে ঠিক পরের দিনই ববির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া বেশ অদ্ভুত দেখায়। কোন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি না হওয়া ডাক্তার কেন ও কীভাবে শুধুমাত্র ডিওএইচএস এর একটি ফ্ল্যাট এর কারণে বিক্রি হয়ে যান – তাও একটু দৃষ্টিকটু লাগে। এক সিনে শাকিবের দাড়ি নেই, পুরো ক্লিন শেভ, ঠিক পরের সিনেই শাকিবের মুখ ভর্তি দাড়ি – এই ধরনের ভুল বেশ চোখে লাগে। শেষের দিকে শাকিবের দৌড়ে আসার সিনটা বলিউড এর “ওয়ান্টেড” থেকে হুবুহু নকল না করলেও চলত।

এই ধরনের অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, রাজত্ব একটি পয়সা উসুল এন্টারটেইনিং সিনেমা। পুরো ছবিটাই ওয়ান ম্যান শো- অর্থাৎ শাকিব খানের সিনেমা। অগ্নি এর মত এত ধুমধাড়াক্কা একশন সিনেমা করার পর যারা রাজত্ব আরও বেশি আশা নিয়ে দেখতে যাবেন- তারা একটু হতাশই হবেন। বিশেষ করে ইফতেখার চৌধুরী এর ট্রেডমার্ক হচ্ছে “একশন”, সেই একশনই এই ছবিতে বেশ ভালভাবেই মিসিং ছিল, আরও অনেক একশন সিন রাখা যেত। এটা কি বাজেটের কারণে নাকি প্রযোজকের সিনেমা তাড়াতাড়ি রিলিজ দেয়ার কারণে- সেটা তারাই ভালো জানেন। এতকিছুর পড়েও শাকিবের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের জন্য রাজত্ব একবার অন্তত হলে গিয়ে দেখা যায়। আর কিছু না হোক, ভালো পরিচালক পেলে আর শাকিবকে ভালমত ব্যবহার করতে পারলে যে তিনি কতটা ভালো করতে পারেন বা পারবেন- সেটা আপনি রাজত্ব দেখলে বেশ ভালভাবেই বুঝবেন।

SkMmRWR.jpg


পুনশ্চঃ সিনেয়া হলের বাইরে সহ সারাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় বলিউড এর “আর রাজকুমার” এর পোস্টারে গলা কেটে শাকিব আর ববির গলা বসিয়ে যেই পোস্টার দর্শকের আকৃষ্ট (!?) করার জন্য বানানো হয়েছে, সেই পোস্টার রাজত্ব ছবির আসলে পোস্টারের তুলনায় অতি নিম্নমানের, কোন দরকারই ছিল না এসবের, বরং যারা ট্রেইলার দেখে কিছুটা আগ্রহী হয়েছিলেন, তারা “পোস্টার নকল” বলে চিৎকার শুরু করেছেন। এই ধরনের কাজ ছবির নেতিবাচক প্রচারণা তৈরি করে- কথাটা হল মালিক থেকে শুরু করে বুকিং এজেন্ট, পরিচালক, প্রযোজক সর্বোপরি আমাদের দর্শকেরা যত দ্রুত বুঝেন- আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ততই মঙ্গল।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top