What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রহস্যে ঘেরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (1 Viewer)

Mashruhan Eshita

Expert Member
Joined
Jan 11, 2022
Threads
68
Messages
1,788
Credits
39,873
Lipstick
Audio speakers
Glasses sunglasses
Thermometer
Tomato
Cocktail Green Agave
ছোটবেলায় একদিন স্কুলের এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর কথা। আটলান্টিক মহাসাগরে নাকি খুব অদ্ভুত একটা জায়গা আছে। আজ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে কেউ আর ফিরে আসেনি, কত জাহাজ যে নিখোঁজ হয়েছে। কত বিমান যে হদিস হারিয়েছে সেসবের কোন হিসাব নেই! কেন এমন হয় ? কেউ বললো, "এলিয়েন থাকে ওখানে জানিস না?", তো অন্যকেউ বললো, "আরেহ ! ওটা তো বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল না, বল শয়তানের ট্রায়াঙ্গেল!" – এসব রহস্যে ঘেরা কথা শুনতে শুনতে যখন আরেকটু বড় হলাম, তখন মাথায় ভূত চাপল বারমুডা রহস্যের একটা কিনারা করার। আর সেটা করতে গিয়ে যা জানলাম তা অবাক করার মতো।

কোথায় আছে শয়তানের ত্রিভুজ? :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল শয়তানের ত্রিভুজ নামেও ব্যাপক পরিচিত। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলটা যে একদম ঠিকঠাক আটলান্টিক মহাসাগরের কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। একদল মানুষের মতে, এই ত্রিভুজ এলাকাটির এক প্রান্ত হলো পুয়ের্তো রিকোয়, আরেক প্রান্তে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহমা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণাংশ, আর অন্য প্রান্তে হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ। কেউ কেউ আবার এসব জায়গার সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। অনেকে মনে করেন, এই অঞ্চলের আকৃতি ঠিক ত্রিভুজ না বরং অনেকটা ট্রাপিজয়েড এর মত।
 
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে যত সব মিথ আর গল্প :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে কত যে মিথ আর গল্প আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, এই এলাকায় কখনো কোনো জাহাজ বা বিমান গেলে তা আর কখনো ফিরে আসেনি, ওখানে গেলেই জাহাজ আর বিমান নাকি ওদের সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে,আর বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে কম্পাসের কাঁটা এলোমেলো দিক দেখায়,অদ্ভুত সব আলোর নাচানাচি দেখা যায়, আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস তো চলতেই থাকে। এরকম আরো কত গল্প যে আছে ! লোকমুখে প্রচলিত আছে, বারমুন্ডা ট্রায়াংগেলে লুকিয়ে আছে শয়তানের আস্তানা। আবার কেউ কেউ বলে, এসবের জন্য দায়ী অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। অনেকের মতে দাজ্জালের দ্বীপ নাকি এটাই, আবার কেউ কেউ বলে এই পানির তলদেশে লুকিয়ে আছে হারানো আটলান্টিস শহর। এসব মিথকে আরো অতিরঞ্জিত করেছে বিভিন্ন লেখকের বই, যেখানে অনেক কারণ সহ প্রমাণ করার চেষ্টাও করা হয়েছে যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোন স্বাভাবিক স্থান নয়।
 
কেমন করে আবিষ্কৃত হলো এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

পঞ্চদশ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় যান, তখনই তিনি সাগরের এই অদ্ভুত এলাকাটিকে লক্ষ করেছিলেন। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, ১৪৯২ সালের ১১ ই অক্টোবর এই জায়গাটি নিয়ে তিনি অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, তার জাহাজের নাবিকেরা দূর থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অঞ্চলের দিকে আলোর নাচানাচি আর আকাশে ধোঁয়া দেখেছিল, আর তার কম্পাসও তখন এলোমেলো ছোটাছুটি করছিল। অদ্ভুত এই জায়গাটি লেখক ভেদে প্রায় ১,৩০০,০০০ থেকে ৩,৯০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে।

যদিও এই অঞ্চলের আবিষ্কারক কলম্বাস তবে, "বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল " শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন লেখক ভিনসিয়েন্ট গ্যাডিস, তার লেখা একটি কাহিনীতে, ১৯৬৪ সালে। "দা মায়ামি হোরাল্ড" পত্রিকায় ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে, আটলান্টিক মহাসাগরের নামহীন এক অদ্ভুত এলাকা নিয়ে, একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। আর এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই গ্যাডিস লিখেছিল, "The Deadly Bermuda Triangle" নামক কাহিনীটি।
 
কেন এত রহস্যে মোরা এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ গিয়েছে , তখনই সে গুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদি ফিরেও আসে, তবুও মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার। ব্ল্যাক হোলের মত সবকিছু নিজের কাছে টেনে নিতে চায় বলে সবার কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এক রহস্যের নাম। কিছু ঘটনার কারনে এই রহস্য যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে।

মারি সেলেস্ত নামের একটি মালবাহী জাহাজ, ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্ক বন্দর থেকে রওনা হয়। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরও জাহাজটি যখন গন্তব্যে পৌঁছায়নি, তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো জাহাজে সব মালপত্র, খাবার দাবার সবকিছু একদম অক্ষত ছিল, শুধুমাত্র ১১ জন কর্মী উধাও!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায়। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখেই উধাও হয়ে যায় এর সাথে থাকা ৩০৬ জন ক্রু নিয়ে।

ঠিক একই ভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস ও ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ।

তবে জাহাজের ঘটনা গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। ১৫ হাজার টন গলিত সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে রওনা হয় জাহাজটি। ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থান করছিল তখন হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায়, অথচ অফ হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও কমান্ডার বলছিলেন "কত সুন্দর আবহাওয়া ! কী চমৎকারভাবে নেভিগেশন চলছে !" এভাবেই হঠাৎ ৬০০ ফুটের দানবাকার এই জাহাজটি এতগুলো মানুষকে নিয়ে যেন একদম -নেই হয়ে গেল!

এ তো গেল জাহাজের কথা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে আজ পর্যন্ত যা কিছু হারিয়ে গিয়েছে তার মাঝে সবচেয়ে বিস্ময়কর ও আলোচিত হল "ফ্লাইট নাইনটিন" নামক পাঁচটি বিমানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, ইউএস নেভির সেরা ৫ জন অ্যাভেঞ্জার বম্বার একটি প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য রওনা হয়। রেডিওতে পাইলট বেজের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলছিলেন লেফটেন্যান্ট চার্লস টেলর। কিন্তু বিমান গুলো যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলএ অবস্থান করছিল তখন কথা বলার একপর্যায়ে, পুরো বাক্য শেষ করার আগেই হঠাৎ চুপ হয়ে যায় সবকিছু। কথা অস্পষ্ট বা শোনার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে – এমন কিছু নয়, হঠাৎ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সব! সেই ৫ বিমানের সন্ধান আজও মেলেনি।
এরকম কত শত ঘটনা যে ঘটেছে! তবে এসব ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও বেশ কিছু ঘটনাই ভিত্তিহীন।
 
অবশেষে সমাধান হলো রহস্যের :

বারমুডা রহস্য উদঘাটন করার জন্য বিজ্ঞানীরা কম চেষ্টা করেননি বরং এখনও চলছে গবেষণা। প্রচুর গবেষণার পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০০ টির মত জাহাজ আর ৭৫ টির মত বিমান নিখোঁজ হয়েছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে।

তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, এই সব কিছু ঘটনার পেছনে অতিপ্রাকৃতিক কোন কারণ নেই। বরং বৈরী আবহাওয়া, মানবঘটিত ভুল আর দুর্ভাগ্যের কারণে আসলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। তারা যুক্তি দেখান যে, এই অঞ্চল আর দশটা সাধারণ দুর্ঘটনা প্রবণ অঞ্চলের থেকে আলাদা কিছু নয়।

সত্যি বলতে ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলাচলের জন্য, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পথেই পড়ে। তাই প্রতিদিনই অনেক জাহাজ আর বিমান কে ওই পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বেশি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার খবর গুলো একটু বেশিই শোনা যায়।

২০১৬ সালে কলরাভো স্টেট ইউনিভার্সিটির, স্যাটেলাইট মিটিওরোলজিস্ট ড. স্টিভ মিলার, নাসার স্যাটেলাইট এর ছবি বিশ্লেষণ করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য থিওরি দিয়েছিলেন। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলেরর অনেক অংশ জুড়ে থাকে ষড়ভুজ আকার মেঘ এবং কোন কোন মেঘের বিস্তৃতি ২০ থেকে ৫৫ মাইল। আর এখানকার বায়ুবেগ প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৭০ মাইল! আর এসবই হলো জাহাজ ও বিমান দুর্ঘটনার কারণ।

একবিংশ শতকের আগে মিথেন হাইড্রেট গ্যাস থিউরি'র জন্য মানুষ ভাবতো, এই মহাসাগরের তলদেশ থেকে তৈরি হওয়া মিথেন হাইড্রেট গ্যাসের বুদবুদ, পানির ঘনত্ব কমিয়ে দিয়ে, জাহাজ ডুবিয়ে ফেলে। তবে US Geological Survey (USGS ) যখন জানায় গত ১৫ বছরে এই অঞ্চলে কোন মিথেন হাইড্রেট গ্যাস নির্গত হয়নি তখন এই ধারণা বাতিল হয়ে যায়।

এরপর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় Larry kusche এর "The Bermuda Triangle Mystery : Solved " বইটি। যুক্তিতে ভরপুর এই বইটিতে দেখানো হয়েছে যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশিরভাগ গল্পই ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত। প্রমাণ সহকারে ল্যারি দেখান যে, বারমুডার বেশিরভাগ প্রচলিত দুর্ঘটনাই আসলে সেখানে নয় বরং অন্য কোথাও ঘটেছে। আর ট্রপিক্যাল সাইক্লোন প্রবণ অঞ্চলে জাহাজডুবি তো স্বাভাবিক ঘটনা।

তাহলে যে সব রহস্যের কথা আগে বললাম, সেসবের কী সমাধান ? কিছু কিছু সমাধান পাওয়া গিয়েছে বৈকি!

প্রথমেই আসি কলম্বাসের ধোঁয়া আর আলোর নাচন এর কথায়। গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, কলম্বাস আসলে দূরের অন্য জাহাজের নাবিকদের রান্নার আগুনের ধোঁয়া দেখেছিলেন।

ফ্লাইট নাইনটিন এর তদন্তে দেখা গিয়েছে, রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হওয়ার আগে পাইলট বলেছিলেন, "কম্পাস কাজ করছে না, কোথায় আছি বুঝতে পারছি না, সম্ভবত ফ্লোরিডায়"।

জিপিএসহীন যুগে পাইলট একবার পথ হারালে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। আর জ্বালানি শেষ হলে তো কথাই নেই। এটাই ছিল ফ্লাইট নাইনটিন এর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য।

এবার আসি মেরিন সালফার কুইন এর রহস্যতে। মেরিন সালফার কুইন এর সাথে বানানো হয়েছিল একই রকম আরেকটি জাহাজ। নিচের ছবিটি সেই একইরকম জাহাজের। দেখেই বুঝতে পারছ এর গঠন কতটা দুর্বল ছিল যে এর ট্যাংকারটা ভেঙে দুভাগ হয়ে গিয়েছে। মেরিন সালফার কুইন এর গঠনও একই রকম দুর্বল ছিল।

তবে এখনও অমীমাংসিত আছে ক্যম্পাসের এলোমেলো ছোটাছুটির রহস্যটি। বাস্তবে যদিও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হয় ওই এলাকায় ম্যাগনেটিক অ্যানোমালী বা চৌম্বকীয় বিশৃঙ্খলা আছে। সে কারণেই কম্পাস এমন আচরণ করে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের অনেকখানি কিনারা করা গেলেও, একে নিয়ে আরো নতুন নতুন গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়নি। হবেও বা কেন? সাহিত্য আর মিডিয়ার অর্থোপার্জনের অনেক বড় একটা পুঁজি এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। যেহেতু কিছু রহস্যের আজও সমাধান হয়নি তাই এখনো একে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।

বারমুডা ট্রায়েংগেল নিয়ে এর আগে কি তোমার কোনো ধারণা ছিল? এই লেখাটি পড়ে নতুন কী কী জানলে? এই গল্পগুলো ছাড়াও তুমি যদি আরো কিছু জেনে থাকো, তাহলে আমাদেরও জানিয়ে দিতে পারো কমেন্ট করে!
 
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এখানে উল্লেখ্য তথ্যের বাইরে আমার এই সম্পর্কে জানা নেই
 
এ সম্পর্কে আমিও পড়েছি আগে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। এ মূল্যবান লেখার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top