এক বান্ধবীকে ফোন করেছিলাম। সে তখন ডেনিমের একটা প্যান্ট কেটে লুসনি বানাচ্ছিল। কথায় কথায় জানা গেল, প্যান্টটিও নাকি সেকেন্ডহ্যান্ড। সে পুরোনো কাপড়ের মার্কেট থেকে কিনেছিল। কিনে ফুলেল একটা নকশা এঁকে নিয়েছিল। বছর দুয়েক পরার পর এখন সেই প্যান্ট টুকরা টুকরা হয়ে সেলাইয়ে জুড়ে হয়ে উঠছে রান্নাঘরের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, লুসনি। সেই কথোপকথন থেকেই বিষয়টি নিয়ে লেখার আইডিয়া পেলাম। পুরোনো পোশাক দিয়ে করবেন কী!
পুরনো কাপড় দিয়ে নতুন এবং ট্রেন্ডি পোশাক
আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করি, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি পোশাক উৎপাদন করা হয়। আর একবিংশ শতকে এসে গার্মেন্টসের জঞ্জালে ভরে উঠেছে পৃথিবী। চাপ পড়ছে তুলা উৎপাদন আর সুতার ওপর। বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের বেশি আসছে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে। সব মিলিয়ে পৃথিবীকে জঞ্জালমুক্ত করতে, পরিবেশদূষণ কমাতে জনপ্রিয় হচ্ছে রিসাইকেলিং। পুরোনো কাপড় রিসাইকেলের মাধ্যমে হতে পারে অনেক কিছুই। পুরোনো জামাকাপড়, শার্ট দিয়ে বানিয়ে ফেলুন ট্রেন্ডি ব্লাউজ। সেটা আপনার শাড়ির লুকটাই বদলে দেবে।
একটি পোশাকের জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়।
পুরোনো সুতির পোশাক দিতে হতে পারে এমনসব লুসনি, ছবি: উইকিপিডিয়া
ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে ওয়ার্ডরোব নতুন জামায় ভরে উঠছে। কিন্তু পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। তাই পুরোনো কাপড় ভাগাড় বা সমুদ্রে না ফেলে বানিয়ে ফেলুন নতুন কিছু। সেটা আপনার মানিব্যাগ, মন আর বিশ্ব—সবার জন্যই ভালো। একটা পুরোনো কামিজ, যেটা হয়তো আর গায়ে ঢুকছে না, সেটা মাঝখান থেকে কেটে ফেলুন। পছন্দসই লেস লাগিয়ে নিন। হুক বা বোতাম জুড়ে দিয়ে পরতে পারেন কটি হিসেবে। চাইলে বাদ দিতে পারেন হাতা দুটোকেও।
শাড়ি কেটে হতে পারে ক্যাজুয়াল লুকের পোশাকও, ছবিতে ডিজাইনার জাকিয়া ঊর্মি
শাড়ি দিয়ে জামা বানানোর আইডিয়া পুরোনো। নতুন করে দেওয়ার নেই। বাংলাদেশের মেয়েরা এই কাজে ওস্তাদ। একটা শাড়ি কেটে বোনেরা বা বান্ধবীরা একই রকম জামা বানিয়েছেন, এমন উদাহরণ হরহামেশাই পাওয়া যাবে। এমনকি শাড়ি কেটে জুটি বেঁধে বানাতে পারেন কামিজ আর পাঞ্জাবিও। শাড়ির আঁচলের ভারী অংশ দিয়ে হতে পারে অনেক কুচি দিয়ে ঘেরওয়ালা চমৎকার একটি আনারকলির ওপরের অংশ। পুরোনো কাতান শাড়ি কেটে সিম্পল জামায় লেস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ওড়নার বর্ডারেও জুড়ে দিতে পারেন সেটি।
পুরোনো শাড়ি থেকেই হতে পারে সুন্দর একটি জামা
আমাদের মা, নানি, দাদিরা তো সুতি শাড়ি আর ওড়না দিয়ে কাঁথা বানাতে ওস্তাদ। ভেতরের দিকে বেশি পুরোনো কাপড়, আর ওপরের দিকে কম পুরোনো কাপড়। এমনকি সেই কাঁথা যখন পুরোনো হয়ে যায়, ওপরের দিক থেকে সুতা উঠে যায়, তখন আবার সেটিকে নতুন একটা কাপড়ে মুড়ে সেলাই করে নতুন কাঁথা বানিয়ে ফেলা যায়। আর একরঙা কাপড় দিয়ে মুড়ে যদি তার ওপর নকশা করেন, তাহলে তো কথাই নেই।
কয়েকটি পুরোনো কাপড় কেচে শুকিয়ে নতুন করে ডাই করে অথবা না করে বানিয়ে ফেলতে পারেন বর্ণিল ঝোলানো নকশা করা ব্যাগ। ব্যাগের ওপরে থাকবে নানা রঙের, নানা ধরনের কাপড়ের সম্ভার। যেকোনো গেট টুগেদারে সেই ব্যাগ হয়ে উঠতে পারে আলোচনার টপিক।
পুরোনো কাপড় থেকে হতে পারে রঙ বেরঙের ব্যাগ, ছবি: উইকিপিডিয়া
পুরোনো কাপড় দিয়ে হতে পারে রঙিন কুশনও। একেকটি কুশন একেক রকম এটিই ড্রয়িংরুমের চলমান ট্রেন্ড। আর অতিরিক্ত পুরোনো জামাকাপড় কুচি কুচি করে কেটে পুরে ফেলতে পারেন সেই কুশনের পেটের ভেতর। পুরোনো জামা কেটে ডাইনিং টেবিলের ম্যাট বা পাপোশও বানিয়ে নিতে পারেন। ওড়না, শাড়ি দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন পর্দাও। ছেলেদের পুরোনো ফুলপ্যান্ট হয়ে যেতে পারে থ্রি কোয়ার্টার বা হাফপ্যান্ট। পুরোনো সোয়েটার থেকে উল খুলে বানিয়ে নিতে পারেন মাফলার।
আগে গ্রাম বা মফস্বলে পুরোনো কাপড়ের বদলে পাওয়া যেত বাসনকোসনসহ নানা কিছু। এখন সেটা উঠে এসেছে অনলাইনে। এমন অনেক সাইট আছে, যেখানে আপনি পুরোনো কাপড় বেচতে পারেন। আবার পুরোনো জামা বদলে পেতে পারেন অন্য কারও অন্য কিছু, যেটা আপনার খুবই মনে ধরেছে।
এখানে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে পুরোনো পোশাক দিয়ে আপনি যা–ই বানান না কেন, পৃথিবীতে সেটা এক পিসই।
শাড়ি কেটে সুন্দর ওড়নাও বানিয়ে নিতে পারেন, ছবি: উইকিপিডিয়া
একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করেছি। আরেকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখাটা শেষ করি। ব্রাজিলের সমর্থক হিসেবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে আলমারি খুলে সব জামাকাপড় নামালাম। উদ্দেশ্য পুরোনো ব্রাজিলের জার্সিটা খুঁজে বের করা। না পেয়ে আম্মুকে ফোন করলাম। আম্মু বললেন, ‘আমি তোমার বাসা থেকে আসার সময় তোমার ব্রাজিলের জার্সি, দুটো পুরোনো টি-শার্ট, তোমার ভাইয়ের আর্জেন্টিনার জার্সি আর একটা শার্ট নিয়ে এসেছি। সেগুলো দিয়ে আমি ফার্নিচার মুছি, ঘর মুছি।’
পুরনো কাপড় দিয়ে নতুন এবং ট্রেন্ডি পোশাক
আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করি, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি পোশাক উৎপাদন করা হয়। আর একবিংশ শতকে এসে গার্মেন্টসের জঞ্জালে ভরে উঠেছে পৃথিবী। চাপ পড়ছে তুলা উৎপাদন আর সুতার ওপর। বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের বেশি আসছে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে। সব মিলিয়ে পৃথিবীকে জঞ্জালমুক্ত করতে, পরিবেশদূষণ কমাতে জনপ্রিয় হচ্ছে রিসাইকেলিং। পুরোনো কাপড় রিসাইকেলের মাধ্যমে হতে পারে অনেক কিছুই। পুরোনো জামাকাপড়, শার্ট দিয়ে বানিয়ে ফেলুন ট্রেন্ডি ব্লাউজ। সেটা আপনার শাড়ির লুকটাই বদলে দেবে।
একটি পোশাকের জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়।
পুরোনো সুতির পোশাক দিতে হতে পারে এমনসব লুসনি, ছবি: উইকিপিডিয়া
ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে ওয়ার্ডরোব নতুন জামায় ভরে উঠছে। কিন্তু পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। তাই পুরোনো কাপড় ভাগাড় বা সমুদ্রে না ফেলে বানিয়ে ফেলুন নতুন কিছু। সেটা আপনার মানিব্যাগ, মন আর বিশ্ব—সবার জন্যই ভালো। একটা পুরোনো কামিজ, যেটা হয়তো আর গায়ে ঢুকছে না, সেটা মাঝখান থেকে কেটে ফেলুন। পছন্দসই লেস লাগিয়ে নিন। হুক বা বোতাম জুড়ে দিয়ে পরতে পারেন কটি হিসেবে। চাইলে বাদ দিতে পারেন হাতা দুটোকেও।
শাড়ি কেটে হতে পারে ক্যাজুয়াল লুকের পোশাকও, ছবিতে ডিজাইনার জাকিয়া ঊর্মি
শাড়ি দিয়ে জামা বানানোর আইডিয়া পুরোনো। নতুন করে দেওয়ার নেই। বাংলাদেশের মেয়েরা এই কাজে ওস্তাদ। একটা শাড়ি কেটে বোনেরা বা বান্ধবীরা একই রকম জামা বানিয়েছেন, এমন উদাহরণ হরহামেশাই পাওয়া যাবে। এমনকি শাড়ি কেটে জুটি বেঁধে বানাতে পারেন কামিজ আর পাঞ্জাবিও। শাড়ির আঁচলের ভারী অংশ দিয়ে হতে পারে অনেক কুচি দিয়ে ঘেরওয়ালা চমৎকার একটি আনারকলির ওপরের অংশ। পুরোনো কাতান শাড়ি কেটে সিম্পল জামায় লেস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ওড়নার বর্ডারেও জুড়ে দিতে পারেন সেটি।
পুরোনো শাড়ি থেকেই হতে পারে সুন্দর একটি জামা
আমাদের মা, নানি, দাদিরা তো সুতি শাড়ি আর ওড়না দিয়ে কাঁথা বানাতে ওস্তাদ। ভেতরের দিকে বেশি পুরোনো কাপড়, আর ওপরের দিকে কম পুরোনো কাপড়। এমনকি সেই কাঁথা যখন পুরোনো হয়ে যায়, ওপরের দিক থেকে সুতা উঠে যায়, তখন আবার সেটিকে নতুন একটা কাপড়ে মুড়ে সেলাই করে নতুন কাঁথা বানিয়ে ফেলা যায়। আর একরঙা কাপড় দিয়ে মুড়ে যদি তার ওপর নকশা করেন, তাহলে তো কথাই নেই।
কয়েকটি পুরোনো কাপড় কেচে শুকিয়ে নতুন করে ডাই করে অথবা না করে বানিয়ে ফেলতে পারেন বর্ণিল ঝোলানো নকশা করা ব্যাগ। ব্যাগের ওপরে থাকবে নানা রঙের, নানা ধরনের কাপড়ের সম্ভার। যেকোনো গেট টুগেদারে সেই ব্যাগ হয়ে উঠতে পারে আলোচনার টপিক।
পুরোনো কাপড় থেকে হতে পারে রঙ বেরঙের ব্যাগ, ছবি: উইকিপিডিয়া
পুরোনো কাপড় দিয়ে হতে পারে রঙিন কুশনও। একেকটি কুশন একেক রকম এটিই ড্রয়িংরুমের চলমান ট্রেন্ড। আর অতিরিক্ত পুরোনো জামাকাপড় কুচি কুচি করে কেটে পুরে ফেলতে পারেন সেই কুশনের পেটের ভেতর। পুরোনো জামা কেটে ডাইনিং টেবিলের ম্যাট বা পাপোশও বানিয়ে নিতে পারেন। ওড়না, শাড়ি দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন পর্দাও। ছেলেদের পুরোনো ফুলপ্যান্ট হয়ে যেতে পারে থ্রি কোয়ার্টার বা হাফপ্যান্ট। পুরোনো সোয়েটার থেকে উল খুলে বানিয়ে নিতে পারেন মাফলার।
আগে গ্রাম বা মফস্বলে পুরোনো কাপড়ের বদলে পাওয়া যেত বাসনকোসনসহ নানা কিছু। এখন সেটা উঠে এসেছে অনলাইনে। এমন অনেক সাইট আছে, যেখানে আপনি পুরোনো কাপড় বেচতে পারেন। আবার পুরোনো জামা বদলে পেতে পারেন অন্য কারও অন্য কিছু, যেটা আপনার খুবই মনে ধরেছে।
এখানে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে পুরোনো পোশাক দিয়ে আপনি যা–ই বানান না কেন, পৃথিবীতে সেটা এক পিসই।
শাড়ি কেটে সুন্দর ওড়নাও বানিয়ে নিতে পারেন, ছবি: উইকিপিডিয়া
একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করেছি। আরেকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখাটা শেষ করি। ব্রাজিলের সমর্থক হিসেবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে আলমারি খুলে সব জামাকাপড় নামালাম। উদ্দেশ্য পুরোনো ব্রাজিলের জার্সিটা খুঁজে বের করা। না পেয়ে আম্মুকে ফোন করলাম। আম্মু বললেন, ‘আমি তোমার বাসা থেকে আসার সময় তোমার ব্রাজিলের জার্সি, দুটো পুরোনো টি-শার্ট, তোমার ভাইয়ের আর্জেন্টিনার জার্সি আর একটা শার্ট নিয়ে এসেছি। সেগুলো দিয়ে আমি ফার্নিচার মুছি, ঘর মুছি।’