পৃথিবীর ভূগর্ভে যে পরিমাণ জল রয়েছে, অন্য গ্রহে সংরক্ষিত জলের কাছে তা কিছুই নয়। পৃথিবীতে থাকার জলের পরিমাণ খুবই সামান্য। হ্যাঁ, এটাই সত্য ! আমাদের সৌরজগতের বাইরে বহুদুরে অবস্থিত এরকম একটি গ্রহ হচ্ছে কেপলার ৬২ ! বলা হয়ে থাকে, সেখান থেকে জল নিয়ে আসতে পারা গেলে আর কখনোই জলকষ্টে ভুগতে হবে না মানবসভ্যতাকে। এই বাসযোগ্য গ্রহে জলাভাব হবে না কোনোদিন। পর্যাপ্ত পানি থাকার কারণে এটাকে একটি বাসযোগ্য গ্রহ বলা হয়। কিন্তু সেখানকার সূর্যের কারণে গ্রহটি বসবাসের অযোগ্য। কারণ কেপলার সিস্টেমের সূর্য প্রতিটি সেকেন্ডে কয়েকবার করে জ্বলে এবং নিভে। অর্থাৎ এটি আমাদের সহন ক্ষমতার বাইরের একটি গ্রহ !
তবে এছাড়াও বিশ্বব্রক্ষান্ডে আরেকটি জলের ট্যাংক রয়েছে। আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগর সহ এই পৃথিবীতে যত নদী, সমুদ্র আর মহাসাগর রয়েছে, তার সবকটিকেই অন্তত একলক্ষ চল্লিশ হাজার বার পুরোপুরি ভরে ফেলতে পারা যাবে ওই ট্যাংকের জলে ! আর এটাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় এবং পুরনো জলের ট্যাংক। যার বয়স প্রায় ১,৩০০ কোটি বছর। এরমানে দাঁড়ায়, ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরণের পর একশো কোটি বছরের মধ্যেই গড়ে উঠেছিলো ওই জলের ট্যাংক। যা বয়সে পৃথিবীর চেয়ে ছয় বা সাড়ে ছয় গুণ বড়! নাসার ভাষায় এটাকে বলা হয়েছে, ‘Largest and the oldest water-reservoir in the Universe’ !
পৃথিবীর বাইরে সবচেয়ে বড় জলের ট্যাংক
সবচেয়ে বড় এই প্রাচীনতম জলের ট্যাংকের খোঁজ মেলার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’র সাম্প্রতিক সংখ্যায়। চার বছর আগে প্রথম এই বিশালতম ও প্রাচীনতম জলের ট্যাংকটি নজরে পড়েছিল মহাকাশে হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৩৭০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের।
পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির তরফে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিল্লোল গুপ্ত এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, “ছবি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি খতিয়ে দেখে আমরা এক রকম নিশ্চিত হয়েছি, পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি আলোক-বর্ষ দূরে (এক আলোক-বর্ষ বলতে বোঝায়, সেকেন্ডে এক লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল গতিবেগে ছুটলে এক পার্থিব বছরে আলো যতটা দূরে যাবে, ততটা দূরত্ব) থাকা এই জলের ট্যাংকই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন জলের সঞ্চয়। যা জলে ভরা জলীয় বাস্পের মেঘ হয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে।”
প্রাচীনতম এ জলের ট্যাংক সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর
- সেই জল মহাকাশে উড়ে বা ভেসে যাচ্ছেনা কেনো?
- কতটা ভারী সেই মেঘ?
- জলের তো কোনও অভাব নেই আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে। তা হলে আমাদের গ্যালাক্সির জলের সঙ্গে সদ্য আবিস্কৃত জলের ট্যাংকের ফারাকটা কোথায়?
কোয়াসার আবিষ্কারের সময়কাল
ওই ‘কোয়াসার’টি ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত হলেও খুব সম্প্রতি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ক্যালটেক অবজারভেটরি ওই ‘কোয়াসার’ থেকে আসা বিকিরণের বর্ণালী বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই বৃহত্তম ও প্রাচীনতম জলের ট্যাংকটির সন্ধান পাওয়া গেছে।’’