ফাল্গুন মাসে মুক্তি পেয়েছে নতুন একটি সিনেমা ‘প্রেম পুরাণ।’ ফার্স্ট ক্লাস বা সেকেন্ড ক্লাস যেখানে বসে দেখা হোক, টিকিটের দাম মাত্র ২০ টাকা। তবে শুরু করলে মনে থাকবে না যে, কোথায় বসে সিনেমা দেখছেন। একটানে সেটি দর্শককে নিয়ে যাবে মফস্বল এক নিস্তরঙ্গ শহরে। রাজধানী থেকে পড়ালেখা শেষ করে সেখানে গিয়ে সংসার শুরু করা এক দম্পতির গল্প কেন প্রেমকাহিনি হতে পারে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩৫ মিনিট। হয়তো প্রশ্নও উঠবে মনে, প্রেম এমনও হয়?
যেহেতু ছবিটি দেখতে হবে অনলাইনে, তাই আসনের ক্লাস নির্ধারণের সুযোগটুকু দেওয়া হয়েছে দর্শকের হাতে। তবে নায়ক-নায়িকা ছাড়া সিনেমা যাঁদের অপছন্দ, এ ছবি তাঁদের জন্য নয়। কেননা নায়ক-নায়িকার ধারণা আলতো করে উল্টে দেওয়া হয়েছে এখানে। এখনকার নির্মাতাদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘গল্পই সিনেমার নায়ক।’ জাহিদ গগণ পরিচালিত প্রেমপুরাণের গল্পটিকে বলা যায়—‘নায়ক’। এখানে কী এমন দেখানো হবে? সেই অপেক্ষা করতে গিয়ে দর্শক এমন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন, যা তিনি কোনোভাবেই প্রত্যাশা করেননি। ও হেনরি ‘দ্য গিফট অব দ্য মেজাই’, জহির রায়হানের ‘ভাঙাচোরা’ এবং ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘রেইনকোট’—এ তিন গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ‘প্রেমপুরাণ’-এর গল্প প্রসঙ্গে নির্মাতা বললেন, ‘আবহ ও পরিবেশ ভিন্ন হলেও এ তিন গল্পের পরিকাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমাটিতে।’ আর চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করে যা শিখেছেন, সেসব জ্ঞানকে হাতিয়ার করে তিনি নেমেছেন নির্মাণে। তিনি বলেন, ‘চাইলে কেবল ঢাকায় সেট তৈরি করেই বানিয়ে ফেলা যেত ছবিটি। কিন্তু যতটা সম্ভব বাস্তবানুগ করে তুলতে আমরা চলে গেছি কুষ্টিয়ায়। যেখানে কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে সংসারগুলোতে। সেই সংগ্রামে টিমটিম করে জ্বলে আছে মানুষের প্রেম।’
প্রেম পুরাণ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
মনোজ প্রামাণিক ও সামিয়া অথৈকে ছবির মূল দুটি চরিত্রে দেখা যাবে। মূলত এ দুই চরিত্রের প্রয়োজনে আসবে আরও কিছু চরিত্র। তবে সিনেমার শেষভাগে জানা যাবে গল্প কীভাবে ছবিটিতে নায়ক হিসেবে অবস্থান নেয়। আরমান পারভেজ মুরাদ, অশোক বেপারী, পঙ্কজ মজুমদার এবং শিশুশিল্পী ওয়ানিয়া কারও চরিত্রই এখানে অপ্রয়োজনীয় নয়, আরোপিত নয়। কুষ্টিয়া ছাড়াও ছবিটির শুটিং হয়েছে পাবনা ও ঢাকায়। নির্মাতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে খুন হওয়া আদমজী পাটকলের শ্রমিকনেতা তাজুল ইসলামের জীবনাদর্শের ওপর ভিত্তি করে ছবির গল্প।
২০১৭ সালে একবার ছবির বেশ কিছু অংশের শুটিং করেছিলেন তরুণ নির্মাতা গগণ। কিন্তু অর্থের অভাবে বাকিটা শেষ করা হয়নি। পরে সেই ছবি আর বানানোই হয়নি। দ্বিতীয় চেষ্টায় ২০১৮ সালে নতুন করে আবারও শুটিং করতে হয়। সেখানেও অর্থকষ্ট এসে বাদ সাধে। তবে এবার আর পিছু হটেননি তিনি। গণ–অর্থায়নে ছবি বানানোর কিছু টাকা জোগাড় করে ফেলেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ছবির ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে গণ–অর্থায়নের মাধ্যমে। বাকিটা? নির্মাতা জানান, সেটাও ধারদেনা। তিনি বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, ছবিটা মানুষ দেখছেন।’
প্রেম পুরাণ ছবিতে মনোজ প্রামাণিক ও অথৈ। ছবি : সংগৃহীত
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে ‘প্রেমপুরাণ’। কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মুম্বাই ইন্টারন্যাশনাল শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, জয়পুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইরানের ইন্টারন্যাশনাল মুভিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। ছবিটির নির্মাতা জাহিদ গগণ পেয়েছেন তারেক মাসুদ ইয়াং ফিল্মমেকার অ্যাওয়ার্ড। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট (ইউল্যাব) থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর পড়াশোনা করেছেন তিনি। ‘এ বুক বিহাইন্ড দ্য শুজ’, ‘রিউমার: আ সোশ্যাল টিউমার’ ও ‘একটি মৃত্যু, তিন বিঘা জমি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ। জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।