পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আনিতাকে খুব আগলে রাখে তার শাশুড়ি মা। এতো টাই আদর যত্ন করে যে, তাকে সামান্য কাটাকুটি কিংবা নাড়তেও দেয় না। সংসারের সমস্ত কাজ তার শাশুড়ি ও ছোট ননদ ফারজানাই করে দেয়।আনিতা এই পাঁচ মাসে তার শাশুড়ির এমন পরিবর্তন দেখে সত্যি মুগ্ধ। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।যে মানুষটার কিছুদিন আগেও দুচোখে বিষ ছিল আনিতা।সে মানুষটার এমন হঠাৎ বদলে যাওয়াটা মাঝেমধ্যেই তাকে ভাবিয়ে তোলে।
---এই যে বউ মা তোমার জন্য গরম গরম দুধ এনেছি খেয়ে নেও তো দেখি।
---মা এখন আবার দুধ আনতে গেলেন কেন?মাত্রই না ভাত খেয়ে আসলাম।
---আরে বোকা মেয়ে!এই সময় না খেলে কখন খাবে? তোমার মাঝে যে তিলতিল করে বড় হচ্ছে তার সুস্থতার জন্যই তো তোমাকে খেতে হবে।নেও...খেয়ে নেও তো দেখি।
কথা শেষ করতে না করতেই, থক করে টেবিলের উপর দুধের গ্লাসটি পিরিচ চাপা দিয়ে, চলে গেলেন।
সবে মাত্র বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে অমনি ফোনটা বেজে উঠলো, আননোন নাম্বার!... কিঞ্চিৎ দ্বিধা বোধের পরেও কেন জানি ফোনটা ধরলো আনিতা।
---হ্যালো, কে বলছেন?
--- কি করছিলেন?
---কিছু না,বই পড়ছিলাম। কিন্তু কে আপনি?
---বাহ্ বেশ তো, কার লেখা?
---হুমায়ুন আহমেদের। আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু দেননি।
---আপনি তো দেখছি বেশ রোমান্টিক!
---মানে?রোমান্টিক কেন বলছেন?
---রোমান্টিক প্রেমিরাই তো হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে।
---আপনার ধারণা ভুল।তাঁর বই যে কেউই পড়তে পারে।তা ছাড়া, এসব কথা আমি আপনাকে কেন বলব।কে আপনি?
দরজায় কলিং বেল বাজার শব্দেই ফোনটা কেটে দিলো আনিতা। ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিছানা ছেড়ে। নিশ্চয়ই আবির এসেছে।ঠিক তাই নিচ থেকে আবিরের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে।
•
•
•
আনিতা এখন আর ভয় পায়না আবিরকে।আগে আবিরের কন্ঠ শুনলেই আনিতা ভয়ে কুঁকড়ে যেতে।যেটুকু সময় আবির বাড়িতে থাকত আতংকে শিউরে উঠত বারবার। কিন্তু এখন আবির অনেকটা পাল্টে গেছে। একদমই পাল্টে গেছে। এখন অনিতাকে সে চোখে হারায়। আবির নিজেও আনিতাকে কাজে সাহায্য করে। এমনকি মাঝে মধ্যে অনিতাকে নিজের হাতে খায়িয়ে পর্যন্ত দেয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও কেন জানি আনিতার এসব পানসে লাগে। আনিতা জানে এসবই শুধু মাত্র অনাগত সন্তানের জন্যই।
তার প্রতি আবির কিংবা আবিরের মায়ের কোনো স্নান মমতা কিচ্ছু নেই।এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ মুখোশধারী ভদ্রলোক।এরা খুব সুন্দর করে অভিনয় করতে পারে।সেটা সে আবিরকে দিয়েই বুঝেছে।তা না হলে অনিতাকে ভালোবেসে বিয়ের পরেও এভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আনিতা আবিরের মিষ্টি মিষ্টি কথা ভুলে বাড়ি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পরেছিল। কিন্তু আবিরের বাড়িতে আসার পর ঘটলো ঠিক উল্টো ঘটনা। আবিরের এক একটি কথা যেন ধারালো ছুরি ফলা। যেদিন প্রথম আনিতার গায়ে হাত তুলে সেদিনই আনিতা বুঝে গিয়েছিলো তার ভুল পরিমাণ ঠিক কতটা। তারপর থেকে তো প্রতিনিয়ত কিছুনা কিছু ছুতো নিয়েই গায়ে হাত তুলতো আবির। কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো আবিরের মা যখন এসব দেখে আবিরকে বারন করবে, কিন্তু তিনি তা না করে সে নিজে এসে আনিতার গায়ে হাত তোলে। একেই বলে নিয়তি। কিন্তু এই পাঁচ মাসে এই পরিবারের দৃশ্যটাই বদলে গেছে।
এসব কিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আনিতা লাফিয়ে উঠে।কে যেন পেছন থেকে তার দু চোখ জাপটে ধরেছে।কে আবার আবির। আবির আজকাল বড্ড বেশি করছে...। হঠাৎ এভাবে কেউ পেছনে থেকে চোখ ধরে।
---কি হয়েছে কি চোখ ধরলে কেন?
---তুমি বুঝে গেলা কি ভাবে?
--- কি বল। প্রতিদিনই তো একই জিনিস করো।
---কিন্তু আজ একটা নতুন জিনিস করেছি? দেখবে কি সেটা?
---আরে বাবা চোখ না ছাড়লে দেখব কি করে?
---ও সরি!
আবির চোখ ছেড়ে দিল।চোখ খুলেই আনিতা অবাক হয়ে গেল।এক গাদা জামা কাপড় নিয়ে এসেছে।ছোট ছোট প্যান্ট, গেঞ্জি, শীতের পোশাক, জুতো, মোজা আরো কতো কি।
---আবির কি পাগলামি শুরু করেছো? এতো সব এখনই কি দরকার ছিল? সবেতো মাত্র পাঁচমাস।
---এই দাঁড়াও দাঁড়াও আরেকটা জিনিস এনেছি,দেখবে?
বড় একটা খামে মোড়ানো কি যেন খুলতে লাগল আবির। ভেতরে কি আছে বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই।
তারপর সেই খাম থেকে বের করল বড় একটা ওয়ালমার্ট। ওয়ালমার্টের দৃশ্যটা হচ্ছে একটা ছোট বাবুর।বাবুটার চেহারায় একটা মায়া জড়ানো। একবার তাকালে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে হয় না।
---ওয়াও অনেক ভালো লাগছে, ধন্যবাদ তোমাকে। আমার ওয়ালমার্টটি পছন্দ হয়েছে।
---রাস্তা দিয়ে আসার পথে এই ছবিটা আমার মন কেড়েছে।তাই আর দেরী করিনি।তবে বেশ চড়া দামে কিনতে হয়েছে। এই ছবিটার মতো আমাদের একটা ফুটফুটে বাচ্চা হবে। সারাক্ষণ আমি আদর করবো।
---আবির, তোমার মা বলছিল।তার একটা নাতি চা..ই চাই। নাতনি হলে নাকি সে মুখোও দেখবেন না। তুমিও কি তাই চাও?
কথা গুলো বলতে বলতে আনিতা কেঁদে দিল।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অনবরত।
আবির আনিতার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল।
---ধুর বোকা মেয়ে হলেও আমাদের ছেলে হলেও আমাদের।এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করবে না।আর মা এখন এমন বলছেন কিন্তু দেখবে, আমাদের সন্তানদের মুখ দেখলে তার আর কিছু মনে থাকবে না।এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করবে না।চিন্তা করলে শরীর খারাপ করবে তোমার,আর শরীর খারাপ করলে আমাদের মেহমানের শরীর খারাপ করবে। তাই কোন টেনশন নয়।
আনিতা আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি শুধু সারাজীবন আমার পাশে থেকো। তবেই আমার সকল চিন্তার মুক্তি।
বিছানায় রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠল,সেই আননোন নাম্বার থেকে।
---এটা কার নাম্বার?
---কেউ না, আমার বান্ধবী।
---ধরছো না কেন?
---আরে বকবক বকবক করবে।ভালো লাগছে না,পরে কথা বলব। এখন তুমি যাও ফ্রেস হয়ে আসো।
আবির চলে গেল।আনিতা কথা টা লুকালো,কারন আনিতা আবিরের স্বভাব সমন্ধে জানে। যদি জানতে পারে এটা রং নাম্বার তবে সেটা শুধু রং নাম্বার ভেবেই উড়িয়ে দেবে না বরংঞ্ছ অনিতাকেও সন্দেহ করবে।আর তাই আনিতা, আবির সন্দেহ বাড়াতে চায়না।
চলবে, প্রত্যাশার প্রাপ্তি-১ © তরিকুল ইসলাম শাওন
---এই যে বউ মা তোমার জন্য গরম গরম দুধ এনেছি খেয়ে নেও তো দেখি।
---মা এখন আবার দুধ আনতে গেলেন কেন?মাত্রই না ভাত খেয়ে আসলাম।
---আরে বোকা মেয়ে!এই সময় না খেলে কখন খাবে? তোমার মাঝে যে তিলতিল করে বড় হচ্ছে তার সুস্থতার জন্যই তো তোমাকে খেতে হবে।নেও...খেয়ে নেও তো দেখি।
কথা শেষ করতে না করতেই, থক করে টেবিলের উপর দুধের গ্লাসটি পিরিচ চাপা দিয়ে, চলে গেলেন।
সবে মাত্র বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে অমনি ফোনটা বেজে উঠলো, আননোন নাম্বার!... কিঞ্চিৎ দ্বিধা বোধের পরেও কেন জানি ফোনটা ধরলো আনিতা।
---হ্যালো, কে বলছেন?
--- কি করছিলেন?
---কিছু না,বই পড়ছিলাম। কিন্তু কে আপনি?
---বাহ্ বেশ তো, কার লেখা?
---হুমায়ুন আহমেদের। আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু দেননি।
---আপনি তো দেখছি বেশ রোমান্টিক!
---মানে?রোমান্টিক কেন বলছেন?
---রোমান্টিক প্রেমিরাই তো হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে।
---আপনার ধারণা ভুল।তাঁর বই যে কেউই পড়তে পারে।তা ছাড়া, এসব কথা আমি আপনাকে কেন বলব।কে আপনি?
দরজায় কলিং বেল বাজার শব্দেই ফোনটা কেটে দিলো আনিতা। ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিছানা ছেড়ে। নিশ্চয়ই আবির এসেছে।ঠিক তাই নিচ থেকে আবিরের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে।
•
•
•
আনিতা এখন আর ভয় পায়না আবিরকে।আগে আবিরের কন্ঠ শুনলেই আনিতা ভয়ে কুঁকড়ে যেতে।যেটুকু সময় আবির বাড়িতে থাকত আতংকে শিউরে উঠত বারবার। কিন্তু এখন আবির অনেকটা পাল্টে গেছে। একদমই পাল্টে গেছে। এখন অনিতাকে সে চোখে হারায়। আবির নিজেও আনিতাকে কাজে সাহায্য করে। এমনকি মাঝে মধ্যে অনিতাকে নিজের হাতে খায়িয়ে পর্যন্ত দেয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও কেন জানি আনিতার এসব পানসে লাগে। আনিতা জানে এসবই শুধু মাত্র অনাগত সন্তানের জন্যই।
তার প্রতি আবির কিংবা আবিরের মায়ের কোনো স্নান মমতা কিচ্ছু নেই।এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ মুখোশধারী ভদ্রলোক।এরা খুব সুন্দর করে অভিনয় করতে পারে।সেটা সে আবিরকে দিয়েই বুঝেছে।তা না হলে অনিতাকে ভালোবেসে বিয়ের পরেও এভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আনিতা আবিরের মিষ্টি মিষ্টি কথা ভুলে বাড়ি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পরেছিল। কিন্তু আবিরের বাড়িতে আসার পর ঘটলো ঠিক উল্টো ঘটনা। আবিরের এক একটি কথা যেন ধারালো ছুরি ফলা। যেদিন প্রথম আনিতার গায়ে হাত তুলে সেদিনই আনিতা বুঝে গিয়েছিলো তার ভুল পরিমাণ ঠিক কতটা। তারপর থেকে তো প্রতিনিয়ত কিছুনা কিছু ছুতো নিয়েই গায়ে হাত তুলতো আবির। কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো আবিরের মা যখন এসব দেখে আবিরকে বারন করবে, কিন্তু তিনি তা না করে সে নিজে এসে আনিতার গায়ে হাত তোলে। একেই বলে নিয়তি। কিন্তু এই পাঁচ মাসে এই পরিবারের দৃশ্যটাই বদলে গেছে।
এসব কিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আনিতা লাফিয়ে উঠে।কে যেন পেছন থেকে তার দু চোখ জাপটে ধরেছে।কে আবার আবির। আবির আজকাল বড্ড বেশি করছে...। হঠাৎ এভাবে কেউ পেছনে থেকে চোখ ধরে।
---কি হয়েছে কি চোখ ধরলে কেন?
---তুমি বুঝে গেলা কি ভাবে?
--- কি বল। প্রতিদিনই তো একই জিনিস করো।
---কিন্তু আজ একটা নতুন জিনিস করেছি? দেখবে কি সেটা?
---আরে বাবা চোখ না ছাড়লে দেখব কি করে?
---ও সরি!
আবির চোখ ছেড়ে দিল।চোখ খুলেই আনিতা অবাক হয়ে গেল।এক গাদা জামা কাপড় নিয়ে এসেছে।ছোট ছোট প্যান্ট, গেঞ্জি, শীতের পোশাক, জুতো, মোজা আরো কতো কি।
---আবির কি পাগলামি শুরু করেছো? এতো সব এখনই কি দরকার ছিল? সবেতো মাত্র পাঁচমাস।
---এই দাঁড়াও দাঁড়াও আরেকটা জিনিস এনেছি,দেখবে?
বড় একটা খামে মোড়ানো কি যেন খুলতে লাগল আবির। ভেতরে কি আছে বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই।
তারপর সেই খাম থেকে বের করল বড় একটা ওয়ালমার্ট। ওয়ালমার্টের দৃশ্যটা হচ্ছে একটা ছোট বাবুর।বাবুটার চেহারায় একটা মায়া জড়ানো। একবার তাকালে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে হয় না।
---ওয়াও অনেক ভালো লাগছে, ধন্যবাদ তোমাকে। আমার ওয়ালমার্টটি পছন্দ হয়েছে।
---রাস্তা দিয়ে আসার পথে এই ছবিটা আমার মন কেড়েছে।তাই আর দেরী করিনি।তবে বেশ চড়া দামে কিনতে হয়েছে। এই ছবিটার মতো আমাদের একটা ফুটফুটে বাচ্চা হবে। সারাক্ষণ আমি আদর করবো।
---আবির, তোমার মা বলছিল।তার একটা নাতি চা..ই চাই। নাতনি হলে নাকি সে মুখোও দেখবেন না। তুমিও কি তাই চাও?
কথা গুলো বলতে বলতে আনিতা কেঁদে দিল।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অনবরত।
আবির আনিতার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল।
---ধুর বোকা মেয়ে হলেও আমাদের ছেলে হলেও আমাদের।এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করবে না।আর মা এখন এমন বলছেন কিন্তু দেখবে, আমাদের সন্তানদের মুখ দেখলে তার আর কিছু মনে থাকবে না।এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করবে না।চিন্তা করলে শরীর খারাপ করবে তোমার,আর শরীর খারাপ করলে আমাদের মেহমানের শরীর খারাপ করবে। তাই কোন টেনশন নয়।
আনিতা আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি শুধু সারাজীবন আমার পাশে থেকো। তবেই আমার সকল চিন্তার মুক্তি।
বিছানায় রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠল,সেই আননোন নাম্বার থেকে।
---এটা কার নাম্বার?
---কেউ না, আমার বান্ধবী।
---ধরছো না কেন?
---আরে বকবক বকবক করবে।ভালো লাগছে না,পরে কথা বলব। এখন তুমি যাও ফ্রেস হয়ে আসো।
আবির চলে গেল।আনিতা কথা টা লুকালো,কারন আনিতা আবিরের স্বভাব সমন্ধে জানে। যদি জানতে পারে এটা রং নাম্বার তবে সেটা শুধু রং নাম্বার ভেবেই উড়িয়ে দেবে না বরংঞ্ছ অনিতাকেও সন্দেহ করবে।আর তাই আনিতা, আবির সন্দেহ বাড়াতে চায়না।
চলবে, প্রত্যাশার প্রাপ্তি-১ © তরিকুল ইসলাম শাওন