[HIDE]"দাদা, চার নম্বর ব্রীজ এসে গেছি প্রায়, কোথায় নামবেন?" চমকে গেলাম। [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]
[HIDE]
"এসে গেছি?"
"এই তো সেভেন পয়েন্ট মোড়, এর পরই চার নম্বর ব্রীজ", বলে উঠল ড্রাইভার।
হঠাৎ কেমন ভয় করে উঠল, ভাবলাম, ট্যাক্সি ঘুরিয়ে ফিরে যাই। মনের ভিতর কে যেন বলে উঠল,"আবার পালাবি?" সাথে সাথে মাথাটা ঝাঁকিয়ে সব দ্বিধাদ্বন্দ ঝেড়ে ফেলে দিলাম। ড্রাইভার কে দেখিয়ে দিলাম বাড়ির গলিটা।
ওই তো সেই হলুদ রংয়ের দেড়তলা বাড়ি টা।১০বছর আগে এক ভোররাতে এক নগ্ন রমনী, ওই বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আমায় বার করে দিয়েছিল...নাকি মুক্ত করে দিয়েছিল? আমি কি মুক্তি পেয়েছি? আর মা? বেঁচে আছে তো? নাকি মিথ্যা আশায় ছুটে এসেছি? ওই বিজ্ঞাপন টা অন্য কোনো সাগরের জন্য তার মা দ্যায়নি তো?
" ও দাদা, কোন বাড়িটা বোলবেন তো!!"
নিজের আবোলতাবোল ভাবনার জালটা হঠাৎ ছিঁড়ে গেল। তারাতারি গাড়িটা দাঁড় করাতে বললাম ড্রাইভার কে। দরজা খুলে পা রাখলাম ফুটপাথে। ট্যাক্সি টা শোঁ করে বেরিয়ে গেল আমি নামা মাত্র।
একি চেহারা হয়েছে বাড়িটার!!?? প্লাস্টার খসে পড়েছে জায়গায় জায়গায়, সিঁড়ির ঘরের কাঁচ ভেঙে গেছে, ছাদের আলসেয় আগাছা গজিয়েছে। এত হতশ্রী দশাতো ছিলোনা। তবে কি মা আর......
"না না, এসব আজেবাজে কি ভাবছি আমি?" নিজেই নিজেকে ধমকে উঠলাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।
কলিং বেল টা ভাঙা। কড়া নাড়বো বলে হাত বাড়াতেই হাতের চাপে খুলে গেল পাল্লা দুটো।
করিডোরটা ফাঁকা, সিঁড়ির নিচে একগাদা আবর্জনা জমে।
"ঢুকবো?", প্রশ্নটা নিজেকেই করলাম। তারপর হেসে ফেললাম নিজের বোকামোয়। এতোদুর এসে, এখানে এই প্রশ্ন করছি!! সত্যি আমার মাথাটা গেছে। হাসতে হাসতেই চৌকাঠ পেরিয়ে ঢুকে পরলাম।
বাঁপাশে সেই ঘরটা....একই রকম রয়ে গেছে। আরেকটু এগিয়ে গেলাম। বাঁদিকে একটা বেডরুম, ডানদিকে আমার পুরোনো ঘরটা। ঘরের সামনে এসে ভেতরে তাকালাম। একি!! এতো সেই একইরকম রয়ে গেছে, যেরকম ছিল সেই ১০বছর আগে!!
হঠাৎ একটা শব্দ পেলাম, মনে হল কেউ সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ঘুরে তাকিয়ে থাকলাম সিঁড়ির দিকে। আস্তে আস্তে ল্যান্ডিঙয়ে মাথায় ছায়া পরল, তারপর.....মা এসে দাঁড়াল।
"মা"
"কে? কে ওখানে?"
সিঁড়ির দুটো ধাপ উঠে এলাম, এখন আমার মুখে আলো পরছে, বললাম, "আমি"।
"সাগর......." চিৎকার করে উঠল মা।
কোনো রকমে ঘাড়টা নারলাম....মুখ থেকে কেন শব্দ বেরোচ্ছেনা আমার?....সব কথা মিশে গিয়ে শুধু একটাই শব্দ মাথার ভিতর প্রচন্ড জোরে বেজে চলেছে.."মা...মা....মা..."
মার চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে.....মা কি নিশ্বাস নিতে পারছেনা? একটু একটু যেন টলছে.....হঠাৎ দেখলাম...মা পড়ে যাচ্ছে!! এক লাফে সিঁড়ির ধাপ গুলো পেরিয়ে জাপটে ধরলাম মাকে....আমার বুকের মধ্যে নেতিয়ে পড়ল মার শরীরটা।
পাঁজাকোলে করে মাকে তুলে নিলাম, আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নেমে, আমার ঘরে ঢুকে, খাটে শুইয়ে দিলাম মাকে। দরজার কাছে আমার ব্যাগটা পড়ে ছিলো, সেটার ভিতর থেকে জলের বোতলটা বের করে, আঁজলা করে কিছুটা নিয়ে ঝাপটা মারতে লাগলাম মার চোখে মুখে। দু তিন বার ঝাপটা মারার পর, মা একটু নড়ে উঠল। আমি তারাতারি ঝুঁকে পড়লাম, "মা...ওমা....চোখ খোলো না মা....ও মা..."
আস্তে আস্তে চোখ খুললো মা.....এক দৃষ্টে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল......কতক্খন জানিনা.....সময়ের হিসাব আর মাথায় নেই আমার।
"সোনা.....তুই? সত্যিই এসেছিস? আমি.....আমি....ভুল দেখছিনা তো?"
"না মা, আমি এসেছি.....সত্যি আমি তোমার কাছে ফিরে...."
কথা শেষ করতে পারলাম না....মা হঠাৎ হাউহাউ করে কেঁদে ফেললো। আর কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মত চুমু খেতে শুরু করল আামার কপালে, গালে, চোখে, নাকে, ঠোঁটে.....
কান্না আর চুমুর মাঝে মাঝে অস্ফুট শব্দে বার বার বলতে লাগল, "আমার সোনা....আমার সোনা....আমার সাগর.....আমার সোনা....এসেছে.....এসেছে...."
শিশুর মত কেঁদে উঠলাম.....১০ বছর পরে।
১০ বছর পর আজ আমি কাঁদছি। সেদিন রাতের পর একবারের জন্য চোখের জল ফেলিনি। আজ কিছুতেই আটকাতে পারছিনা.....মনে হচ্ছে সব ভেসে যাবে। মার বুকের মধ্যে মুখটা ডুবিয়ে একেবারে ভেউ ভেউ করে কান্না যাকে বলে, তাই কাঁদতে লাগলাম। যেই আমি কাঁদতে শুরু করলাম, মার কান্না থেমে গেল, মা আমার মাথায়, পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলতে লাগলো, "কাঁদেনা সোনা...কাঁদেনা...এইত্তো মা রয়েছে....সোনা আমার...মানিক আমার...কাঁদেনা..."। এই কথাগুলো শুনে কান্না থেমে গেল। মার বুকের মাথাটা আরো গুঁজে দিয়ে, আরো জোরে জাপটে ধরলাম। মা মাথায় আস্তে আস্তে হাত বোলাতে লাগলো আর ছোট ছোট চুমু দিতে লাগলো আমার মাথায়, কপালে।
হঠাৎ একটা গুড়গুড়্ করে শব্দ হল। মা আমার মুখটা জোর করে দুহাতের মধ্যে ধরে, বুকের উপর থেকে তুললো। ভুরু কুঁচকে একটু ক্খন তাকিয়ে বলল,"তুই অনেকক্খন কিছু খাসনি তাইনা?" আমি চুপ করে মাথাটা আবার বুকের মধ্যে গুঁজে দিয়ে মাথা নাড়লাম।
"তুমি কি করে বুঝলে?", বুকের ভেতর থেকেই প্রশ্ন করলাম।
[/HIDE]