পাত্রপক্ষের কাছে দুর্ঘটনার কথা লুকাননি মিম। পাত্রও জানিয়ে দিয়েছেন, গণধর্ষণের ঘটনায় মেয়েটির কোনো ভুল ছিল না। যার ভুল নয়, সে কেন দায় নেবে—এ রকম এক গল্পে সচেতনতামূলক স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘নট হার ফল্ট’ নির্মাণ করে প্রশংসায় ভাসছে প্রথম আলো ও নির্মাতা মাহাথির স্পন্দন।
গত সোমবার নারী দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয় নট হার ফল্ট। ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের বার্তা দিয়েছে এটি। সেখানে মিমকে দেখানো হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের চরিত্রে। দশজন বাঙালি তরুণীর মতো বাড়ির সব কাজ করে সে, তবু পাত্রপক্ষ দেখতে এলে তার বিয়ের কথা এগোয় না। কারণ, তার পায়ে ‘সমস্যা’।
কন্যাদায়গ্রস্থ বাবা সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে চাইলে, মিম অকপটে স্বীকার করেন ধর্ষণের কথা। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হলে তাকে প্রায় অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। ধর্ষণের ‘কালিমা’ সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এমন মানসিকতা থেকে মানুষকে বের করে আনতেই এই স্বল্পদৈর্ঘ্য।
সচেতনতামূলক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নট হার ফল্ট’– এ মিম ও সহশিল্পী
মাত্র ৫ মিনিটের এ স্বল্পদৈর্ঘ্যে যত্নের কমতি রাখেননি পরিচালক। গৃহসজ্জা, পোশাক, সংলাপ আর আবহসংগীতে যেন চলচ্চিত্রেরই আমেজ পাওয়া গেছে। নির্মাতা মাহাথির স্পন্দন বলেন, ‘এই গল্পটি বলার উদ্দেশ্য একটাই। যারা ধর্ষণের শিকার, তাদের প্রতি আমরা যেন আরেকটু সহানুভূতিশীল ও হৃদয়বান হই। আমাদের সমাজে তাদের ব্যাপারে যে মানসিকতা, এই গল্পের মাধ্যমে সেটা যদি কিছুটা দূর করতে পারি, সেখানেই আমাদের সার্থকতা।’
বিদ্যা সিনহা মিম, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে স্বল্পদৈর্ঘ্যটি। অনেকে বলছেন, বাস্তবে হয়তো এমন দেখা যায় না, কিন্তু এ রকমই হওয়া উচিত। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি দেখা হয়েছে ১৭ লাখ বারেরও বেশি। মন্তব্যে পৃথা মণ্ডল লিখেছেন, মানুষকে বদলাতে না পারলেও তার মানসিকতা বদলানো কঠিন নয়। মানসিকতা বদলালে, সমাজও বদলে যাবে। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন, তবু এ ধরনের শর্টফিল্ম নিয়মিত তৈরি হলে সমাজ একদিন বদলাবেই। পজিটিভ কিছু মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী পজিটিভ ইফেক্ট ফেলে।
প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় নট হার ফল্ট প্রযোজনা করেছে দ্য বিগ কন্টেন্ট লি। এতে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, ইরফান সাজ্জাদ, মিলি বাশার, ফখরুল বাশার, শিল্পী সরকার প্রমুখ। স্বল্পদৈর্ঘ্যটির প্রধান অভিনয়শিল্পী মিম দিয়েছেন এক অসাধারণ বার্তা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, একজন নারী হিসেবে সমাজকে আমার এ রকম সচেতনতার একটি বার্তা দেওয়া উচিত যে, তাদের প্রতি সদয় হোন।’ এ স্বল্পদৈর্ঘ্যে কাজ করার জন্য পারিশ্রমিক না নেওয়া প্রসঙ্গে মিম বলেন, ‘একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা আমার সামাজিক দায়িত্ব।’
বিদ্যা সিনহা মিম
নারী দিবস ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু নাটক, গান ও সচেতনতামূলক ভিডিও। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মেহ্জাবীন অভিনীত নাটক কনকচাঁপা, আলম আরা মিনুর সুরে সাত নারী শিল্পীর গান ‘শোনো পৃথিবী শোনা’। এ ছাড়া সমাজে সাত ভূমিকার নারীর চরিত্রে সজ্জিত আলোকচিত্র অনলাইনে প্রকাশ করেছেন নওশাবা আহমেদ।
বিদ্যা সিনহা মিম