"সংগৃহীত"
"প্রসঙ্গ ক্রিকেট"-১
একটি রম্য রচনা
মূল লেখকঃ জনাব আসিফ রহমান জয়।
সমস্ত রাত হাতুড়ুসিংহার ঘুম হয়নি, বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেছেন। থেকে থেকেই আফসোস হচ্ছে! ইস! জেতা ম্যাচটা একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেলো! শেষরাতের দিকে অল্পসময়ের জন্য একটু তন্দ্রামতো এসেছিলো। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একটা ছোটখাটো স্বপ্ন দেখে ফেললেন। দেখলেন যে, তিনি প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ডাগ-আউটে বসে সবার সাথে বার্গার আর কফি খাচ্ছেন। একটু দূরেই শ্রীলংকান টিম যথারীতি প্রাকটিস করছে। হঠাৎ শুনলেন যে, স্টেডিয়ামের দুই নাম্বার গেটের কাছে ভীষন কোলাহল, হৈ-চৈ হচ্ছে। হাতুড়ুসিংহা বিস্ময়ের সাথে দেখলেন, একদল লোক বিকট চিৎকার করতে করতে তার দিকে তেড়ে আসছে, সবার হাতেই হাতুড়ি! নানা ধরনের, নানা সাইজের হাতুড়ি! কিন্তু এরা সবাই তার দিকে এভাবে তেড়ে আসছে কেন? প্রচন্ড ভয়ে তার পিলে চমকে গেলো। তিনি উঠে দৌড়াতে যেয়ে কিভাবে যেন পিছলে পড়ে গেলেন। লোকগুলো ততক্ষনে তার খুব কাছে চলে এসেছে। তিনি উঠতে যেয়ে আবারো পিছলে পড়ে গেলেন! এই খটখটে শুকনো মাঠে তিনি বারবার পিছলে যাচ্ছেন কেন কে জানে? লোকগুলো তাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেললো! আশ্চর্যের ব্যাপার! লোকগুলোর চেহারা অনেকটা সিংহের মতো, মাথায় চুলের বদলে লম্বা লম্বা কেশর, মুখের দুপাশে লম্বা দাত! ওদের মধ্যে একজন হাতুড়ি উচু করে, মুখ হা করে হুঙ্কার ছাড়লো, ঠিক যেন সিংহের মতো। ভয়ের চোটে তিনি চীৎকার করে উঠলেন!
তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো! উফ! কী ভয়ঙ্কর স্বপ্ন! এসি রুমের ঠান্ডার মধ্যেও তিনি পুরো ঘেমে গেছেন। হাতুড়ুসিংহা বিড়বিড় করতে করতে বিছানা ছাড়লেন। তার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিষ মনে পড়ে গেছে। তিনি এমার্জেন্সী বোর্ড মিটিং কল করলেন।
সকাল দশটা। শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড অফিস। জরুরী মিটিং শুরু হয়েছে। খেলার পরদিন এতো সকালে সাধারনতঃ মিটিং থাকার কথা না। কিন্তু হাতুড়ুসিংহের জরুরী ডাকে কর্মকর্তারা সাত সকালেই চলে এসেছেন। সবারই মুড অফ। গতকালকের নাটকীয় খেলার রেশ এখনো সবার চোখে-মুখে লেগে রয়েছে।
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আমি খুব দুঃখিত সবাইকে এতো শর্ট নোটিশে আসতে বলার জন্য।’
বোর্ড প্রধান মিঃ এক্স হাই তুলতে তুলতে কফির কাপে চুমুক দিলেন। তার দেখাদেখি অন্য সবাই কফির কাপ হাতে নিলেন। সবারই অনেকক্ষন ধরে কফি খেতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু বোর্ড প্রধান শুরু না করায় কেউ শুরু করতে পারছিলো না। বোর্ডের কেউ কেউ একটু শব্দ করেই হাই তুললেন। সবাই ভীষন ক্লান্ত।
মিঃ এক্স বললেন-
-‘ওয়েল মিঃ হাতুড়ু, প্লিজ কাম টু দা পয়েন্ট।’
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আপনারা জানেন যে, কিছুদিন আগেও আমি বাংলাদেশের কোচ ছিলাম। অনিবার্য কারনবশতঃ ওখান থেকে হঠাৎ করেই খুব শর্ট নোটিশে এখানে চলে আসি। এখানে চলে আসার সময় আমি ওখানকার সব ইনফরমেশন আমার মাথায় করে নিয়ে এসেছি। কোন প্লেয়ার কেমন খেলে, কার কোথায় দূর্বলতা, কে কোন শট ভালো খেলতে পারে না, কে কোন ধরনের বল করতে পারে না...এভরিথিং... সব আমার মাথায় আছে।’
মিঃ ওয়াই বললেন-
-‘আমরা জানি মিঃ হাতুড়ু। এ জন্যই আপনাকে তাড়াহুড়া করে আমরা নিয়ে এসেছিলাম। কারন, আমাদের এ বছরের দু’টো ইম্পরট্যান্ট সিরিজই বাংলাদেশের সাথে ছিলো। অলরেডী একটাতে আমরা জিতেছি আপনার দেওয়া ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে। ব্যাডলাক, কালকে একটুর জন্য আমরা পারিনি।’
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আমিও সেটাই বলতে চাই। একটা ভাইটাল ইনফরমেশন আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আর এ জন্যই আমরা কালকে হেরে গেছি।’
বোর্ডের সবার মধ্যে ফিসফিস গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো।
বোর্ড সভাপতি মিঃ এক্স খুক খুক করে কেশে বললেন-
-‘কি বলছেন আপনি? কি সেই ইনফরমেশন?’
হাতুড়ুসিংহা চশমা খুলতে খুলতে বললেন-
-‘দ্যা ফিনিশার! আমরা দু’টো ম্যাচই হেরেছি ওদের ব্যাটিঙের কাছে। একদিন মুশফিকের ব্যাটিং এ, আরেকদিন মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং এ। আসলে, আমি ভুলে গিয়েছলাম এরা দুজনেই রিলেটিভ, এরা দু’জনেই ভায়রা ভাই।’
মিঃ জেড ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করলেন-
-‘ভায়রা ভাই? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ভায়রা ভাই?’
-‘আই মিন, দে গট ম্যারিড ইন দ্যা সেম ফ্যামিলি। নিশ্চই ওদের ফাদার ইন ল’র বাড়ীর খাওয়াতে এমন কিছু আছে, যাতে করে ওরা টেম্পারমেন্ট হারায় না। ঠান্ডা মাথায় লাস্ট ওভারে এরা ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারে। আই টোটালি ফরগট দ্যাট!’
সভায় আবার ফিসফিস গুঞ্জন শুরু হলো।
মিঃ ওয়াই বললেন-
-‘সো... এখন আমাদের করনীয় কি?’
হাতুড়ুসিংহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-
-‘যেভাবেই হোক, ওই বাড়ীর খাবার মেন্যু আমাদের কালেক্ট করতেই হবে। আরো পরিস্কার করে বললে, আমাদের জানতেই হবে, ওরা কোন চালের ভাত খায়!’
সভায় পিন-পতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
বিঃদ্রঃ “উপুল চন্দিকা হাতুড়ুসিংহা” আমার খুব পছন্দের কোচ। সে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় মিডিয়া তাকে প্রায় ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আসলে সে ভিলেন না। এই পোস্টটা ফান পোস্ট হিসাবে নিলেই খুশী হবো।
"প্রসঙ্গ ক্রিকেট"-১
একটি রম্য রচনা
মূল লেখকঃ জনাব আসিফ রহমান জয়।
সমস্ত রাত হাতুড়ুসিংহার ঘুম হয়নি, বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেছেন। থেকে থেকেই আফসোস হচ্ছে! ইস! জেতা ম্যাচটা একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেলো! শেষরাতের দিকে অল্পসময়ের জন্য একটু তন্দ্রামতো এসেছিলো। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একটা ছোটখাটো স্বপ্ন দেখে ফেললেন। দেখলেন যে, তিনি প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ডাগ-আউটে বসে সবার সাথে বার্গার আর কফি খাচ্ছেন। একটু দূরেই শ্রীলংকান টিম যথারীতি প্রাকটিস করছে। হঠাৎ শুনলেন যে, স্টেডিয়ামের দুই নাম্বার গেটের কাছে ভীষন কোলাহল, হৈ-চৈ হচ্ছে। হাতুড়ুসিংহা বিস্ময়ের সাথে দেখলেন, একদল লোক বিকট চিৎকার করতে করতে তার দিকে তেড়ে আসছে, সবার হাতেই হাতুড়ি! নানা ধরনের, নানা সাইজের হাতুড়ি! কিন্তু এরা সবাই তার দিকে এভাবে তেড়ে আসছে কেন? প্রচন্ড ভয়ে তার পিলে চমকে গেলো। তিনি উঠে দৌড়াতে যেয়ে কিভাবে যেন পিছলে পড়ে গেলেন। লোকগুলো ততক্ষনে তার খুব কাছে চলে এসেছে। তিনি উঠতে যেয়ে আবারো পিছলে পড়ে গেলেন! এই খটখটে শুকনো মাঠে তিনি বারবার পিছলে যাচ্ছেন কেন কে জানে? লোকগুলো তাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেললো! আশ্চর্যের ব্যাপার! লোকগুলোর চেহারা অনেকটা সিংহের মতো, মাথায় চুলের বদলে লম্বা লম্বা কেশর, মুখের দুপাশে লম্বা দাত! ওদের মধ্যে একজন হাতুড়ি উচু করে, মুখ হা করে হুঙ্কার ছাড়লো, ঠিক যেন সিংহের মতো। ভয়ের চোটে তিনি চীৎকার করে উঠলেন!
তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো! উফ! কী ভয়ঙ্কর স্বপ্ন! এসি রুমের ঠান্ডার মধ্যেও তিনি পুরো ঘেমে গেছেন। হাতুড়ুসিংহা বিড়বিড় করতে করতে বিছানা ছাড়লেন। তার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিষ মনে পড়ে গেছে। তিনি এমার্জেন্সী বোর্ড মিটিং কল করলেন।
সকাল দশটা। শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড অফিস। জরুরী মিটিং শুরু হয়েছে। খেলার পরদিন এতো সকালে সাধারনতঃ মিটিং থাকার কথা না। কিন্তু হাতুড়ুসিংহের জরুরী ডাকে কর্মকর্তারা সাত সকালেই চলে এসেছেন। সবারই মুড অফ। গতকালকের নাটকীয় খেলার রেশ এখনো সবার চোখে-মুখে লেগে রয়েছে।
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আমি খুব দুঃখিত সবাইকে এতো শর্ট নোটিশে আসতে বলার জন্য।’
বোর্ড প্রধান মিঃ এক্স হাই তুলতে তুলতে কফির কাপে চুমুক দিলেন। তার দেখাদেখি অন্য সবাই কফির কাপ হাতে নিলেন। সবারই অনেকক্ষন ধরে কফি খেতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু বোর্ড প্রধান শুরু না করায় কেউ শুরু করতে পারছিলো না। বোর্ডের কেউ কেউ একটু শব্দ করেই হাই তুললেন। সবাই ভীষন ক্লান্ত।
মিঃ এক্স বললেন-
-‘ওয়েল মিঃ হাতুড়ু, প্লিজ কাম টু দা পয়েন্ট।’
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আপনারা জানেন যে, কিছুদিন আগেও আমি বাংলাদেশের কোচ ছিলাম। অনিবার্য কারনবশতঃ ওখান থেকে হঠাৎ করেই খুব শর্ট নোটিশে এখানে চলে আসি। এখানে চলে আসার সময় আমি ওখানকার সব ইনফরমেশন আমার মাথায় করে নিয়ে এসেছি। কোন প্লেয়ার কেমন খেলে, কার কোথায় দূর্বলতা, কে কোন শট ভালো খেলতে পারে না, কে কোন ধরনের বল করতে পারে না...এভরিথিং... সব আমার মাথায় আছে।’
মিঃ ওয়াই বললেন-
-‘আমরা জানি মিঃ হাতুড়ু। এ জন্যই আপনাকে তাড়াহুড়া করে আমরা নিয়ে এসেছিলাম। কারন, আমাদের এ বছরের দু’টো ইম্পরট্যান্ট সিরিজই বাংলাদেশের সাথে ছিলো। অলরেডী একটাতে আমরা জিতেছি আপনার দেওয়া ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে। ব্যাডলাক, কালকে একটুর জন্য আমরা পারিনি।’
হাতুড়ুসিংহা বললেন-
-‘আমিও সেটাই বলতে চাই। একটা ভাইটাল ইনফরমেশন আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আর এ জন্যই আমরা কালকে হেরে গেছি।’
বোর্ডের সবার মধ্যে ফিসফিস গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো।
বোর্ড সভাপতি মিঃ এক্স খুক খুক করে কেশে বললেন-
-‘কি বলছেন আপনি? কি সেই ইনফরমেশন?’
হাতুড়ুসিংহা চশমা খুলতে খুলতে বললেন-
-‘দ্যা ফিনিশার! আমরা দু’টো ম্যাচই হেরেছি ওদের ব্যাটিঙের কাছে। একদিন মুশফিকের ব্যাটিং এ, আরেকদিন মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং এ। আসলে, আমি ভুলে গিয়েছলাম এরা দুজনেই রিলেটিভ, এরা দু’জনেই ভায়রা ভাই।’
মিঃ জেড ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করলেন-
-‘ভায়রা ভাই? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ভায়রা ভাই?’
-‘আই মিন, দে গট ম্যারিড ইন দ্যা সেম ফ্যামিলি। নিশ্চই ওদের ফাদার ইন ল’র বাড়ীর খাওয়াতে এমন কিছু আছে, যাতে করে ওরা টেম্পারমেন্ট হারায় না। ঠান্ডা মাথায় লাস্ট ওভারে এরা ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারে। আই টোটালি ফরগট দ্যাট!’
সভায় আবার ফিসফিস গুঞ্জন শুরু হলো।
মিঃ ওয়াই বললেন-
-‘সো... এখন আমাদের করনীয় কি?’
হাতুড়ুসিংহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-
-‘যেভাবেই হোক, ওই বাড়ীর খাবার মেন্যু আমাদের কালেক্ট করতেই হবে। আরো পরিস্কার করে বললে, আমাদের জানতেই হবে, ওরা কোন চালের ভাত খায়!’
সভায় পিন-পতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
বিঃদ্রঃ “উপুল চন্দিকা হাতুড়ুসিংহা” আমার খুব পছন্দের কোচ। সে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় মিডিয়া তাকে প্রায় ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আসলে সে ভিলেন না। এই পোস্টটা ফান পোস্ট হিসাবে নিলেই খুশী হবো।
Last edited: