প্রদোষের দাদু নীলকন্ঠ বসুর বিয়ের পরে ৬০ বছর কেটে গেল। নিজের বয়স ৮৪, স্ত্রীর বয়স ৭৭ এর মত । ছেলে মেয়ের বয়স ৫৫-৫৬ এর আশে পাশে । কিন্তু বুড়োর মনের থেকে আয়না খাতুন নামটা এখনো গেল না!
আয়না নাকি ফরিদপুরে নীলকন্ঠ দাদুর বাড়ির উল্টো দিকে পুলিশ লাইনে থাকত। আয়নার বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টর ছিল। কথায় কথায় দাদু এটাও বলত যে আয়না দাদুর থেকে বয়সে ছিল ২ বছরের ছোট। দাদু ১৯৪৭ সনে দেশ ছেড়েছে তখন ওনার বয়স ছিল ১৫, তাহলে দাদুর ভালোবাসার পাত্রী আয়না খাতুন তখন ১৩ বছরের বালিকা। শালা বুড়োর রগর দেখলে পিত্তি জ্বলে যায়। ওই জমানায় একটা কচি মাল তুলেছিল নীলকন্ঠ বসু, ভাগ্যবান লোক মাইরি!
ভালোলাগা এবং ভালোবাসার এই কাহিনী পরিবারের সকলের'ত বটেই, বন্ধু বান্ধবদেরও অজানা ছিল না। আয়নার কথা শুনতে শুনতে কান পেঁকে গেছিল সবার। কিন্তু দাদু তাও বলতে থামেননি। কেউ কিছু বললেই দাদুর প্রতিক্রিয়া,
- অন্তরের ভালোবাসা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়া খুব মুস্কিল। তোরা ছাগলের দল, এই যুগের স্বার্থপর পোলাপান, এইসব বুঝবি না। তোদের ভালোবাসা এই আসে, এই যায়।
নাতি প্রদোষ একদিন জাস্ট একটা মন্তব্য করে কেঁচিয়ে দেয়,
- তোমার আয়না নিশ্চয় এতদিনে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মানে কবরের মধ্যে শুয়ে পড়েছে। এত বছর পরে আয়না পাওয়ার বায়না আর করো না দাদুন। এখন তুমিও দিন গুনতে শুরু করো। বয়স ৮৪ হয়েছে। পরের জন্মে বাংলাদেশে আবার জন্ম নিও। মনের ইচ্ছে হয়ত পুরণ হবে।
এটা শোনার পরে দাদুর বিষণ্ণ মুখটা দেখতে প্রদোষের একটুও ভালো লাগেনি। ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলেছিল,
- দাদুন, আমার মাস্টার্স ডিগ্রীর পরে চাকরি বাকরি না পাওয়া পর্যন্ত ফ্রিই থাকব। তখন তোমায় আমি নিশ্চয় ফরিদপুরে নিয়ে যাব।
দাদুর চোখ চিক চিক করে উঠল,
- আমারে কবে ফরিদপুরে নিয়া যাবি বাবাই ?
- আরতো মাত্র দু বছর বাকি আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হতে। আমারও ইচ্ছে হয় বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে। সবাই এত কিছু বলে, তোমায় তোমার আয়না ম্যাডামের কাছে গ্যারেজ করে দিয়ে আমি স্টিমারে চড়ব, স্টিমারের ছাদে বসে পদ্মা দেখব, ইলিশ মাছের হালকা ঝোল আর আমন চালের ভাত খেতে খেতে কবিতা লিখব। দারুন হবে!!
নীলকন্ঠ বসুর এসব শুনে যে কী হাসি। এর পরের থেকে ৮৪ বছর বয়সের বুড়ো লেগে গেল দিনে দুবেলা রুটিন করে যোগা করতে। সময় করে খাওয়া, সকাল সন্ধ্যায় পদভ্রমন, সময় করে দাঁড়ি কাটা, ফুল বাগানে জল দেয়া .....
প্রদোষ নিজের এবং দাদুর জন্য পাসপোর্টের এপ্লিকেশন দেয়ায়, মার মার করে ছুটে এসেছে ওর মা এবং মামা,
- এসব কি পাগলামি হচ্ছে বাবাই? তুমি কি দাদুর মতই পাগল হয়ে গেছ? বাবা জন্ম থেকেই পাগল, ৭০ বছর আগে দেশ ছেড়েছে। কিন্তু মূর্খের মত এখনো তার ভালোবাসার পাত্রীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাচ্ছেতাই !! লজ্জা শরম বলে কিছু নেই। লোকজন জানলে কি বলবে!
প্রদোষ জবাব দেয়নি। কিন্তু দমে যায়নি ওর মা আর মামা,
- দেখ বাবাই, বাবার বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে। কিন্তু তুমি'ত নিশ্চয় বুঝতে পারবে যে কলকাতা থেকে ফরিদপুরে যাতায়াত, হোটেলে কয়েকদিন থাকা খাওয়ায় কত বিরাট খরচ। আর বাবার বয়স হয়েছে। এই ধকল সহ্য করতে পারবে বাবা ?
প্রদোষ বেফাঁস,
- যতটা বুঝতে পারি, তোমরা পুত্র কন্যা দুজনে তো অপেক্ষাই করছ দাদুন আর দিদুন কবে ফুটে যাবে, আর ওদের জমির উপরে চার ফ্লোরের বিল্ডিং বানাবে। সে যাইহোক, ফরিদপুরের ট্র্যাভেল তো দাদুর জমানো টাকা থেকেই হবে। তোমাদের কাছে দাদু টাকা চাইছে নাকি ? তাহলে কেন এত গলা শুকাচ্ছ ?
অগ্নিশর্মা প্রদোষের মা এবং মামা,
- বাহ, প্রেসিডেন্সি কলেজে তাহলে তোমাদের এসবই শেখায়? তোমার মনে মা মামার প্রতি এতটা প্রেম দেখে আমরা অভিভূত। আগে জানলে, গলা ধাক্কা দিয়ে সাধারণ একটা কলেজে ভর্তি করে দিতাম তোমায়! এই প্রেসিডেন্সিই যত নষ্টের গোড়া। তোমায় বিপ্লবী বানাচ্ছে!
প্রদোষ আর কিছু বলেনি। ২০১৬ তেই পাসপোর্ট এসে গেছে। নীলকন্ঠ বাবুর খুশি আর ধরে না। ওনার স্ত্রী কিন্তু ফুঁসছে,
- বুড়োটাকে আয়নার কাছেই রেখে আসিস। এই নামটা বিয়ের পরে ষাট বছর ধরে হাজার বার শুনে শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বাবাই, ওই আয়না খাতুনের একটা ফটোও তুলে আনবি। আমি দেখতে চাই, ওটার মধ্যে এমন কি বিশেষ আকর্ষণ আছে!
- ঠিক আছে দিদুন আয়না খাতুনের ফটো তুলে আনব। কিন্তু তুমি তো চোখে এতটা ভালো দেখ না ! তাহলে ......
দিদা বেশ চিন্তিত,
- হ্যাঁ, সেটাও তো ঠিক। যাইহোক আলোর নিচে দাঁড়িয়ে কিছুটা তো আঁচ করতে পারব।
২০১৮ তে ভিসা বানিয়ে প্রদোষ চললো দাদুকে ফরিদপুরে তার ভালোবাসার পাত্রী আয়না খাতুনের সাথে দেখা করাবার প্রয়াসে। মাথায় হাজার হাজার প্রশ্ন ছিল, 'আয়না খাতুন বেঁচে আছে কিনা ? বেঁচে থাকলেও কোথায় থাকে?' কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়েছে প্রদোষ। ওর প্রেসিডেন্সির বন্ধুরা বনগাঁর পেট্রাপোল পর্যন্ত এসেছিল ওকে সাহস জোগাতে, শুভেচ্ছা জানাতে।
আয়না নাকি ফরিদপুরে নীলকন্ঠ দাদুর বাড়ির উল্টো দিকে পুলিশ লাইনে থাকত। আয়নার বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টর ছিল। কথায় কথায় দাদু এটাও বলত যে আয়না দাদুর থেকে বয়সে ছিল ২ বছরের ছোট। দাদু ১৯৪৭ সনে দেশ ছেড়েছে তখন ওনার বয়স ছিল ১৫, তাহলে দাদুর ভালোবাসার পাত্রী আয়না খাতুন তখন ১৩ বছরের বালিকা। শালা বুড়োর রগর দেখলে পিত্তি জ্বলে যায়। ওই জমানায় একটা কচি মাল তুলেছিল নীলকন্ঠ বসু, ভাগ্যবান লোক মাইরি!
ভালোলাগা এবং ভালোবাসার এই কাহিনী পরিবারের সকলের'ত বটেই, বন্ধু বান্ধবদেরও অজানা ছিল না। আয়নার কথা শুনতে শুনতে কান পেঁকে গেছিল সবার। কিন্তু দাদু তাও বলতে থামেননি। কেউ কিছু বললেই দাদুর প্রতিক্রিয়া,
- অন্তরের ভালোবাসা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়া খুব মুস্কিল। তোরা ছাগলের দল, এই যুগের স্বার্থপর পোলাপান, এইসব বুঝবি না। তোদের ভালোবাসা এই আসে, এই যায়।
নাতি প্রদোষ একদিন জাস্ট একটা মন্তব্য করে কেঁচিয়ে দেয়,
- তোমার আয়না নিশ্চয় এতদিনে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মানে কবরের মধ্যে শুয়ে পড়েছে। এত বছর পরে আয়না পাওয়ার বায়না আর করো না দাদুন। এখন তুমিও দিন গুনতে শুরু করো। বয়স ৮৪ হয়েছে। পরের জন্মে বাংলাদেশে আবার জন্ম নিও। মনের ইচ্ছে হয়ত পুরণ হবে।
এটা শোনার পরে দাদুর বিষণ্ণ মুখটা দেখতে প্রদোষের একটুও ভালো লাগেনি। ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলেছিল,
- দাদুন, আমার মাস্টার্স ডিগ্রীর পরে চাকরি বাকরি না পাওয়া পর্যন্ত ফ্রিই থাকব। তখন তোমায় আমি নিশ্চয় ফরিদপুরে নিয়ে যাব।
দাদুর চোখ চিক চিক করে উঠল,
- আমারে কবে ফরিদপুরে নিয়া যাবি বাবাই ?
- আরতো মাত্র দু বছর বাকি আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হতে। আমারও ইচ্ছে হয় বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে। সবাই এত কিছু বলে, তোমায় তোমার আয়না ম্যাডামের কাছে গ্যারেজ করে দিয়ে আমি স্টিমারে চড়ব, স্টিমারের ছাদে বসে পদ্মা দেখব, ইলিশ মাছের হালকা ঝোল আর আমন চালের ভাত খেতে খেতে কবিতা লিখব। দারুন হবে!!
নীলকন্ঠ বসুর এসব শুনে যে কী হাসি। এর পরের থেকে ৮৪ বছর বয়সের বুড়ো লেগে গেল দিনে দুবেলা রুটিন করে যোগা করতে। সময় করে খাওয়া, সকাল সন্ধ্যায় পদভ্রমন, সময় করে দাঁড়ি কাটা, ফুল বাগানে জল দেয়া .....
প্রদোষ নিজের এবং দাদুর জন্য পাসপোর্টের এপ্লিকেশন দেয়ায়, মার মার করে ছুটে এসেছে ওর মা এবং মামা,
- এসব কি পাগলামি হচ্ছে বাবাই? তুমি কি দাদুর মতই পাগল হয়ে গেছ? বাবা জন্ম থেকেই পাগল, ৭০ বছর আগে দেশ ছেড়েছে। কিন্তু মূর্খের মত এখনো তার ভালোবাসার পাত্রীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাচ্ছেতাই !! লজ্জা শরম বলে কিছু নেই। লোকজন জানলে কি বলবে!
প্রদোষ জবাব দেয়নি। কিন্তু দমে যায়নি ওর মা আর মামা,
- দেখ বাবাই, বাবার বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে। কিন্তু তুমি'ত নিশ্চয় বুঝতে পারবে যে কলকাতা থেকে ফরিদপুরে যাতায়াত, হোটেলে কয়েকদিন থাকা খাওয়ায় কত বিরাট খরচ। আর বাবার বয়স হয়েছে। এই ধকল সহ্য করতে পারবে বাবা ?
প্রদোষ বেফাঁস,
- যতটা বুঝতে পারি, তোমরা পুত্র কন্যা দুজনে তো অপেক্ষাই করছ দাদুন আর দিদুন কবে ফুটে যাবে, আর ওদের জমির উপরে চার ফ্লোরের বিল্ডিং বানাবে। সে যাইহোক, ফরিদপুরের ট্র্যাভেল তো দাদুর জমানো টাকা থেকেই হবে। তোমাদের কাছে দাদু টাকা চাইছে নাকি ? তাহলে কেন এত গলা শুকাচ্ছ ?
অগ্নিশর্মা প্রদোষের মা এবং মামা,
- বাহ, প্রেসিডেন্সি কলেজে তাহলে তোমাদের এসবই শেখায়? তোমার মনে মা মামার প্রতি এতটা প্রেম দেখে আমরা অভিভূত। আগে জানলে, গলা ধাক্কা দিয়ে সাধারণ একটা কলেজে ভর্তি করে দিতাম তোমায়! এই প্রেসিডেন্সিই যত নষ্টের গোড়া। তোমায় বিপ্লবী বানাচ্ছে!
প্রদোষ আর কিছু বলেনি। ২০১৬ তেই পাসপোর্ট এসে গেছে। নীলকন্ঠ বাবুর খুশি আর ধরে না। ওনার স্ত্রী কিন্তু ফুঁসছে,
- বুড়োটাকে আয়নার কাছেই রেখে আসিস। এই নামটা বিয়ের পরে ষাট বছর ধরে হাজার বার শুনে শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বাবাই, ওই আয়না খাতুনের একটা ফটোও তুলে আনবি। আমি দেখতে চাই, ওটার মধ্যে এমন কি বিশেষ আকর্ষণ আছে!
- ঠিক আছে দিদুন আয়না খাতুনের ফটো তুলে আনব। কিন্তু তুমি তো চোখে এতটা ভালো দেখ না ! তাহলে ......
দিদা বেশ চিন্তিত,
- হ্যাঁ, সেটাও তো ঠিক। যাইহোক আলোর নিচে দাঁড়িয়ে কিছুটা তো আঁচ করতে পারব।
২০১৮ তে ভিসা বানিয়ে প্রদোষ চললো দাদুকে ফরিদপুরে তার ভালোবাসার পাত্রী আয়না খাতুনের সাথে দেখা করাবার প্রয়াসে। মাথায় হাজার হাজার প্রশ্ন ছিল, 'আয়না খাতুন বেঁচে আছে কিনা ? বেঁচে থাকলেও কোথায় থাকে?' কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়েছে প্রদোষ। ওর প্রেসিডেন্সির বন্ধুরা বনগাঁর পেট্রাপোল পর্যন্ত এসেছিল ওকে সাহস জোগাতে, শুভেচ্ছা জানাতে।