বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, অভিবাসন কিংবা চাকরি—সবকিছুতে সবার আগে যে দক্ষতা যাচাই করা হয়, তা হলো ইংরেজি বলতে, বুঝতে, পড়তে ও লিখতে পারার সক্ষমতা। আর এ ক্ষেত্রে বরাবরই প্রচলিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু পরীক্ষার ব্যাপারই সবার মাথায় আগে আসে। এ ধরনের পরীক্ষা বা টেস্ট যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয়বহুল। তবে সময়ের কথা যদি বিবেচনায় আনি, যা অনেক ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তবে একটি ভিন্নধারার ইংরেজি টেস্টের কথা ভাবার সময় বোধ করি চলে এসেছে। পিয়ারসন টেস্ট অব ইংলিশ, যা সংক্ষেপে পিটিই নামে পরিচিত, আপনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর বা স্কোর দেবে। আর এই স্কোর আন্তর্জাতিকভাবে শুধু স্বীকৃতই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা, স্থায়ী বসবাস ও অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য বটে।
পিটিই কী?
আগেই বলা হয়েছে, পিটিই একটি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা। বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে পিয়ারসন নামের একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের অধীনে। এর ভিন্নতা হলো, এটি পুরোই কম্পিউটারভিত্তিক। অর্থাৎ পুরো পরীক্ষটি পিয়ারসনের তৈরি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডেস্কটপ কম্পিউটারে নেওয়া হয়ে থাকে (নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে)। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হিউম্যান টাচ বা মানুষের হস্তক্ষেপ থাকে না। তাহলে পরীক্ষার নম্বর দেওয়া হচ্ছে কীভাবে? এটিও সেই বিশেষ সফটওয়্যার করে দেয়, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে তৈরি। এই সফটওয়্যারের বিশেষ দক্ষতাই হলো আপনার দেওয়া পরীক্ষার চারটি ভাগ বা মডিউলের (স্পিকিং, রাইটিং, রিডিং, লিসেনিং) সঠিক ও নির্ভুল স্কোরিং করা এবং তা দ্রুততম সময়ে আপনার হাতে তুলে দেওয়া।
কত দিন আগে নিবন্ধন আর স্কোর কত দ্রুত পাওয়া যায়?
পিটিই নিবন্ধন আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন, যদি আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ড থাকে। সেটি না থাকলে ঢাকার উত্তরা বা ধানমন্ডিতে অবস্থিত পিটিই টেস্ট সেন্টারে গিয়ে ভাউচার কোড কিনেও কাজটি করা যায়। সঙ্গে লাগবে পাসপোর্ট। নিবন্ধন ফি ১৮৯ মার্কিন ডলার (১৬,২০০ টাকা)।
একে দ্রুত একটি পরীক্ষা বলার কারণ হলো, নির্ধারিত তারিখের মাত্র তিন দিন আগে টেস্ট বুকিং করা যায়। বিশেষ প্রয়োজনে দুই দিন আগেও করা যায়, তবে কিছু অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। পরীক্ষা দেওয়ার সর্বোচ্চ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে টেস্ট স্কোর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগেই নিবন্ধনের সময় তৈরি অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার পরদিন অথবা ওই দিনই স্কোর আপলোড হয়ে যায়, যা অন্য যেকোনো আন্তর্জাতিক বিকল্প ইংরেজি পরীক্ষার চেয়ে দ্রুত। বিস্তারিত জানা যাবে পিয়ারসনের ওয়েবসাইটে।
পিটিই কাদের জন্য?
যদি পিটিই করে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের দরজা আপনার জন্য খোলা। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশে সহজেই উচ্চতর পড়াশোনার জন্য পিটিই স্কোর গ্রহণ করে। বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের যেকোনো ভিসা ক্যাটাগরিতে পিটিই স্কোর গ্রহণযোগ্য। ইংল্যান্ডে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ‘পিটিই ভি ইউ ই’–এর জন্য নিবন্ধন করতে হতে পারে (তবে টেস্ট একই রকম)।
পিটিইর ধরন বা ফরম্যাট
পিটিইর ফরম্যাট অন্যান্য পরীক্ষার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এর চারটি মডিউল—স্পিকিং, রাইটিং, রিডিং ও লিসেনিং ক্রমে সাজানো হয়। স্পিকিং ও রাইটিংকে পার্ট-১, রিডিংকে পার্ট-২ আর লিসেনিংকে পার্ট-৩ ধরা হয়। পরীক্ষা টানা ৩ ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। পরীক্ষার সর্বমোট নম্বর ৯০। এই পরীক্ষার ভিন্নতা হচ্ছে যে প্রতিটি মডিউলের কিছু টাস্ক অন্য একটা মডিউলের আংশিক স্কোরিং করে। যেমন আপনি যখন স্পিকিং টেস্ট দিচ্ছেন, তখন কিছু টাস্ক এমন থাকবে, যেখানে আপনাকে ছোট ছোট ইংরেজি প্যাসেজ জোরে পড়তে হচ্ছে বা কিছু বাক্য শুনে সেগুলোকে আবার বলতে হচ্ছে। এখানে স্পিকিংয়ে যেহেতু রিডিং ও লিসেনিংয়ের কাজও করতে হচ্ছে, তাই আপনাকে স্পিকিংয়ের পাশাপাশি ওই দুটি মডিউলের (রিডিং ও লিসেনিং) জন্য আংশিক স্কোর দেওয়া হবে (নির্ভর করবে আপনি কত ভালোভাবে টাস্কগুলো সম্পন্ন করছেন)।
প্রস্তুতি যেভাবে
পিটিইর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উদ্যোগ হলো কোনো একজন বিশেষজ্ঞ পিটিই প্রশিক্ষকের অধীনে পিটিইর প্রস্তুতিমূলক কোর্স করে নেওয়া। কারণ, এটি বেশ কারিগরি পরীক্ষা, যার অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে। এগুলো বুঝে ও এর ওপর দক্ষতা বাড়িয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন অল্প হলেও কিছু প্রতিষ্ঠান বেশ ভালো কাজ করছে। আর আপনি যদি নিজে প্রস্তুতি নিতে চান, তাহলে প্রথমেই পিটিইর ওপর একটি সম্যক ধারণা নিয়ে নেওয়াটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পিয়ারসনের প্র্যাকটিস টেস্ট প্লাস: পিটিই একাডেমিক বইটি সহায়ক হবে।
* লেখক: পিটিইতে পূর্ণ নম্বরপ্রাপ্ত এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রশিক্ষক, সেন্টার ফর ইনোভেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং (সিআইএলএল)