What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পিতা-মাতার উপর সন্তানের অধিকার (1 Viewer)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,635
Messages
124,044
Credits
289,256
Coca Cola Can
SanDisk Sansa
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
পিতা-মাতার উপর সন্তানের অধিকার

পৃথিবীর প্রতিটি গৃহে প্রত্যেক ব্যক্তি সন্তান কামনা করে। সন্তানের উপস্থিতি যেমন কল্যাণ বয়ে আনে, তেমনি গৃহের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। তাই যে গৃহে নিষ্পাপ শিশুর কল-কাকলি থাকে না, সে গৃহের শোভা ও সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। শিশুর শোভা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জনৈক কবি সুন্দর করে বলেছেন,
إِنَّمَا أَوْلاَدُنَا بَيْنَنَا * أَكْبَادُنَا تَمْشِىْ عَلَى الْأَرْضِ
وْ هَبَّتِ الرِّيْحُ عَلَى بَعْضِهِمْ * لاَمْتَنَعَتْ عَيْنِىْ عَنِ الْغُمْضِ.
সন্তানেরা মনে হয় যেন আমাদের মাঝে,
মোদেরি অন্তর মূর্ত হয়ে মাটিতে হাঁটে।
দমকা হাওয়াও বয়ে যায় যদি কোনও সাঁঝে,

ঘুম আসে না আমাদের চোখে সারাটি রাতে।
 
সন্তান আল্লাহ তা'আলার অগণিত নে'মতের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নে'মত ও তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লামা আলূসী (রহঃ) বলেছেন, 'ধন-সম্পদ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর উপায় আর সন্তান-সন্ততি হচ্ছে বংশ তথা মানব প্রজাতি রক্ষার মাধ্যম'। পিতা-মাতার নিকট থেকে স্নেহ-মমতাসহ সন্তানের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবার অধিকার আছে। সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَأَعْطِ كُلَّ ذِىْ حَقٍّ حَقًّهُ. 'তোমার উপর তোমার রবের হক রয়েছে, তোমার শরীরের হক রয়েছে এবং তোমার পরিবারের হক রয়েছে। অতএব প্রত্যেককে তার অধিকার দাও'। রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে সালমান (রাঃ)-এর এ বক্তব্য পেশ করা হ'লে তিনি বলেন, 'সালমান সত্য বলেছে'। (বুখারী হা/১৮১, ১৮৪; রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৪৯ 'ইবাদতে মধ্য পন্থা' অনুচ্ছেদ।) কারণ মানব সন্তান পশু-পাখির মত নয় বিধায় তারা পুরোপুরি আদর-যত্ন, স্নেহ-মমতা না পেলে তাদের পক্ষে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
সন্তান পিতা-মাতার যৌথ ফসল। মহান আল্লাহ তা'আলার সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি মানব সন্তান পিতা-মাতার নিকট পবিত্র আমানত। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যাদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে, কিন্তু তা ভোগ করার মতো কোন উত্তরাধিকারী নেই। তারা হাযারও চেষ্টা-সাধনা ও কামনা করে একটি সন্তান লাভ করতে পারছে না। অপরপক্ষে বহু লোক আছে যাদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও বহু সংখ্যক সন্তানের জনক। সন্তান লাভ করা আল্লাহর পক্ষ হ'তে এক বিশেষ নে'মত। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ إِنَاثاً وَّيَهَبُ لِمَن يَّشَاءُ الذُّكُوْرَ- أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَاناً وَّإِنَاثاً وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَاءُ عَقِيْماً إِنَّهُ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ.

'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান' (শূরা ৪২/৪৯-৫০)।
 
সন্তানের লালন, পরিপুষ্টি, সংরক্ষণ, পরিবৃদ্ধি সর্বোপরি আল্লাহর মর্যি মোতাবেক একজন সুন্দর মানুষ হিসাবে তার জীবন গঠন করার দায়িত্ব মাতা-পিতা উভয়ের। শিশুকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা পরস্পর পরিপূরক দায়িত্ব পালন করেন। উপার্জন, শাসন, নিয়ন্ত্রণ ও বহিরাঙ্গনের শ্রমসাধ্য দায়িত্ব পিতাকে পালন করতে হয়। অভ্যন্তরীণ কাজ-কর্ম, শিশুর লালন-পালন ও প্রাথমিক শিক্ষার মত মৌলিক ও ধৈর্যসাধ্য কাজগুলি সাধারণতঃ মায়ের উপর বর্তায়। শিশু নির্দোষ প্রকৃতি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। তাকে দৈহিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলে উপযুক্ত নাগরিক করার দায়িত্ব পিতা-মাতার। মহানবী (ছাঃ) বলেছেন,
مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ.
'প্রতিটি শিশুই ফিতরাতের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়'।
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৯০।)
সন্তান পিতা-মাতার যৌথ উদ্যোগের এক অনুপম উপহার। পিতা-মাতা উভয়ের নিকট সন্তানের অধিকার স্বীকৃত। আমরা সন্তানের অধিকারকে দু'ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

  • মাতার নিকট থেকে প্রাপ্ত অধিকার।
  • পিতার নিকট থেকে প্রাপ্ত অধিকার।
 
(১) মাতার নিকট থেকে প্রাপ্ত অধিকার সমূহ :

মাতার নিকট হ'তে সন্তানের যে অধিকার স্বীকৃত তা দু'টি পর্যায়ে বিভক্ত।
(ক) গর্ভকালীন বা জন্মপূর্ব অধিকার।
(খ) জন্ম পরবর্তী অধিকার।

(ক) গর্ভকালীন অধিকার সমূহ :

গর্ভধারণ :

আল্লাহর অপার অনুগ্রহে গর্ভে আগত সন্তানকে মা অত্যন্ত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বহন করবেন। এজন্য তিনি তার দেহ-মনকে সুস্থ, পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত রাখবেন। সন্তানের মঙ্গলের নিমিত্তে নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি সদা সতর্ক থাকবেন। সন্তানকে আপদ মনে করে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিবেন গর্ভস্থ সন্তানের জন্য এবং সাগ্রহে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট মাথা পেতে নিতে প্রস্ত্তত থাকবেন। তবেই সন্তানের প্রতি মায়ের যথাযথ কর্তব্য পালন করা হবে। মায়ের এ কঠিন দায়িত্ব সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ. 'তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন' (লোকমান ৩১/১৪)
 
দৈহিক গঠন :

সন্তান গর্ভে অবস্থানকালীন সময়ে মায়ের কঠোর পরিশ্রম ও বেপরোয়া চলাফেরা তার দৈহিক গঠন প্রক্রিয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। সন্তানের কল্যাণের জন্য চলাফেরার সময় তাকে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন পূর্বক কঠোর পরিশ্রম হ'তে বিরত থাকতে হবে। অসাবধানতার কারণে সন্তান বিকলাঙ্গ হ'তে পারে, এমনকি গর্ভপাত পর্যন্তও ঘটতে পারে। এ সময় পুষ্টিকর ফলমূল এবং উত্তম খাদ্য মা গ্রহণ করবেন। ফলমূল অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে ফলমূলে অধিক পরিমাণে সুগার আছে যা সহজে হজম হয় এবং এ থেকে শরীর গ্রহণ করে জীবনী শক্তি ও খাদ্যপ্রাণ। ফলমূল দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এ কারণে মহান আল্লাহ মারয়াম (আঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
وَهُزِّيْ إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَباً جَنِيًّا- فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْناً.
'তোমার দিকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডকে ঝুঁকিয়ে নাও, সে তোমার উপর পতিত করবে তাজা উপাদেয় খেজুর, তা তুমি খাও ও পান কর এবং নয়ন জুড়াও'
(মারয়াম ১৯/২৫-২৬)।
আহার্য গ্রহণের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তিতা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে রামাযানের ছিয়াম থেকে বিরত থাকার বিষয়ে শরী'আতের অনুমোদন আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ شَطْرَ الصَّلَواةِ وَالصَّوْمَ عَنِ الْمُسَافِرِ وَعَنِ الْمُرْضِعِ وَالْحُبْلَى. 'আল্লাহ তা'আলা মুসাফির হ'তে অর্ধেক ছালাত এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিনী মাতা ও গর্ভবতী স্ত্রী লোক হ'তে ছিয়াম উঠিয়ে নিয়েছেন'। অর্থাৎ ছিয়ামের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/২০২৫, সনদ জাইয়িদ বা উত্তম।)
 
পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য, একটি মৌলিক বিষয়
 
পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য, একটি মৌলিক বিষয়

কর্তব্য আর অধিকার এক বিষয় নয় !
এখানে অধিকারের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।
রিপ্লাইয়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ !
 
মানসিক গঠন :

দৈহিক কাজ-কর্মের ন্যায় এ সময় মায়ের মানসিক কর্মেরও প্রভাব সন্তানের উপর প্রতিফলিত হয়। অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজেকে সংযত রেখে ঝগড়া-বিবাদ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি হ'তে দূরে থাকা মায়ের অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) থেকে বিমুখ করতে পারে এরূপ বই-পত্র ও ধ্যান-ধারণা হ'তে মনকে পূত-পবিত্র রাখতে হবে। কেননা যাবতীয় খারাপ, অশ্লীল চিন্তা-ভাবনা পরিহার করে সৎ চিন্তা ও কুরআন-হাদীছ এবং নবীদের জীবনী পঠন ও শ্রবণ গর্ভস্থ সন্তানের সুশীল মানসিকতা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। হারাম এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত খাদ্যদ্রব্য গর্ভের শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। তাই এসব হ'তে মাকে অনেক দূরে অবস্থান করতে হবে। হারাম বর্জন করে হালাল বস্ত্ত খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে, وَكُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلاَلاً طَيِّباً. 'আল্লাহ তোমাদের যা কিছু রিযিক দান করেছেন, তার মধ্যে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত আহার কর'
(মায়েদাহ ৫৪/৮৮)।
সন্তানকে সুষ্ঠু ও সুন্দর মনের একজন আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্ব মায়ের। মায়ের মন-মানসিকতার উপর নির্ভর করে সন্তানের মন-মানসিকতা। পৃথিবীর অধিকাংশ মা এ বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান না করার কারণে সন্তান হয় দুশ্চরিত্র। তাই একজন সুন্দর মনের সন্তান পেতে হ'লে মাকে সুন্দর পূত-পবিত্র মানসিকতাসম্পন্ন হ'তে হবে। গর্ভস্থ সন্তানের স্বার্থেই এটি প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের এটি অধিকার। সন্তানের জন্য গর্ভবতী মাতার এসব মু'আমালাত অবশ্যই পালনীয়। এতে মাতা ও সন্তানের পার্থিব কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং পরকালে মাতার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
 
(খ) জন্ম পরবর্তী অধিকার :

মায়ের স্তনে সন্তানের অধিকার :


গাছের শাখা যেমন মূলের মুখাপেক্ষী, তেমনি শিশু জন্মের পর মায়ের উপর নির্ভরশীল। শিশুর জন্মের সাথে সাথে আল্লাহর রহমতে মাতৃস্তনে সৃষ্টি হয় শিশুর উপযোগী খাবার। সুতরাং পৃথিবীতে কোন মা যেন বিশেষ কারণ ছাড়া স্বীয় দুধপান থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করে শিশুর অধিকার অস্বীকার না করেন। সন্তানকে দুধপান করানোর জন্য আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلاَدَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ. 'যে সকল জননী সন্তানদের পুরো সময় পর্যন্ত দুগ্ধ দান করতে ইচ্ছা রাখে, তারা নিজেদের শিশুদেরকে পুরো দু'বছর ধরে দুগ্ধ পান করাবে'
(বাক্বারাহ ২/২৩৩)।
মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানযুক্ত আল্লাহ প্রদত্ত এমন তৈরী খাবার, যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে এবং তা শিশুর শরীরের বৃদ্ধি ঘটানোতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর শরীরের খাদ্য চাহিদার যে পরিবর্তন ঘটে, মায়ের বুকের দুধে অনুরূপ পরিবর্তন প্রতিদিনই ঘটে থাকে। শিশুর দেহ যে পরিমাণ তাপমাত্রা হ'লে দুধ তার দেহে কাজে লাগতে পারে, সেরূপ তাপমাত্রা মায়ের বুকের দুধে বিদ্যমান থাকে। শিশুকে সুস্থ-সুন্দর করে গড়ে তুলতে হ'লে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। মায়ের বুকের দুধে বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধক উপাদান থাকে। যেমন- আই.জি.এ ল্যাকটোফেরিন এবং লাইসোজাইম। এছাড়াও মায়ের বুকের দুধে প্রচুর শ্বেত রক্তকণিকা থাকে যেগুলো আবার আই.জি.এ ল্যাকটোফেরিন, লাইসোজাইম, ইন্টারফেরন তৈরী করে। বাইফিজস ফ্যাকটর নামে আরও একটি পদার্থ মাতৃদুগ্ধে পাওয়া যায়। এগুলো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে। যার ফলে বাচ্চার দেহে ডায়রিয়া, কান পাকা রোগ, শ্বাসনালীর রোগ কম হয়। এছাড়া মাতৃদুগ্ধ পানে হৃৎপিন্ডের রোগ, করোনারী, খাদ্যনালীর রোগ প্রভৃতি প্রতিরোধ করে। মায়ের দুধ পান শিশুর চেহারার লাবণ্য সৃষ্টি করে, বাকশক্তি ও সাধারণ বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে।
বিশেষ কারণ ছাড়া কোন মা শিশুকে দুধ পান হ'তে বঞ্চিত করে যে ক্ষতি সাধন করে, তা অপূরণীয়। কারণ স্তন্যদান মায়ের মধ্যে সৃষ্টি করে শিশুর প্রতি এক বিশেষ স্নেহ প্রবণতা ও আবেগ-অনুভূতি। যে সকল মহিলা তাদের চাকচিক্য ও রূপ-লাবণ্য নষ্ট হবার ভয়ে শিশুকে বুকের দুধ পান করানো হ'তে বিরত থাকে, তাদের এ হীন মানসিকতা এখুনি পরিত্যাগ করা উচিত।

শিশুর স্বাস্থ্য, মন-মানসিকতা, চরিত্র ও রুচি গঠনে মায়ের দুধের ভূমিকা যথেষ্ট। বিশেষ কারণ বশতঃ কোন শিশুকে আপন মা ব্যতীত অন্য মহিলার দুধ পান করানোর প্রয়োজন হয়ে পড়লে, সেক্ষেত্রে দুশ্চরিত্রা ও অসুস্থ মহিলার দুধ পান করানো হ'তে বিরত রাখতে হবে।
 
স্নেহের পরশে প্রতিপালন :

সন্তান মায়ের হৃদয়ের দরদ ও পরম স্নেহ-যত্নের দাবীদার। মা কোন প্রকার ঘৃণা না করে আন্তরিক ভালবাসা দিয়ে সন্তানের পরিচর্যা করবে। আদর-স্নেহ হ'তে বঞ্চিত সন্তানদের স্বভাব-চরিত্রে বিরূপ পড়ে থাকে। স্নেহের পরশে প্রতিপালনকারী মা আল্লাহর অনুগ্রহের অংশীদারিণী হয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে স্বস্নেহে চুম্বন করেন। আকরা বিন হাবিস আত-তামিমী (রাঃ) এ দৃশ্য দেখে বললেন, إِنَّ لِىْ مِنَ الْوَلَدِ عَشَرَةً مَا قَبَّلْتُ أَحَدًا مِِّنْهُمْ. 'আমার দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন করিনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, إِنَّهُ مَنْ لاَ يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ 'যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না'।
(তিরমিযী হা/১৯১১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯১, হাদীছ ছহীহ।)
অন্য আরেকটি হাদীছে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَدِمَ نَاسٌ مِّنَ الْأَعْرَابِ عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوْا : أَتُقَبِّلُوْنَ صِبْيَاَكُمْ؟ قَالُوْا : نَعَمْ، فَقَالُوْا لَكِنَّا وَاللهِ! مَانُقَبِّلُ فَقََالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمْلِكُ أَنْ كَانَ اللهُ قَدْ نَزَعَ مِنْكُمُ الرَّحْمَةَ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদল বেদুঈন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, তোমরা কি তোমাদের সন্তানদেরকে চুমু দাও? উপস্থিত সবাই বলল, হ্যাঁ। তখন তারা বলল, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা তাদেরকে চুমু দেই না। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, 'আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে মায়া-মমতা তুলে নিলে আমি কী করতে পারি'।
(ইবনু মাজাহ হা/৩৬৫, হাদীছ ছহীহ।)

সন্তান জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে মায়ের নিকট অধিক সময় থাকে। তাই মায়ের অপত্য স্নেহের পরশ না পেলে সে নিজেকে অসহায় মনে করবে। মনরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অসহায়ত্বের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এমন রূপ ধারণ করবে যা সারা জীবন খেসারত দিয়েও পরিশোধ করা যাবে না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top