নদীটিই পিদিমদের প্রতিবেশী। পিদিমদের এলাকা ছুঁয়ে ছুটে চলেছে উচ্ছল নদীটি। দুপুর রোদে ঝলমল করে ওঠে, যেন রুপার পাত। বিকেলের আকাশ যখন তরমুজের ফালির মতো লাল, তখন দু-একটি নৌকা কালো কালো পাখির মতো ভেসে যায়। আর কালবৈশাখীতে নদীর নাচন কে দেখে!
পিদিম প্রায়ই জানালা ধরে তাকিয়ে থাকে। যেন নদীর সঙ্গে তার কত দিনের পরিচয়! মা রান্নাঘর থেকে যাওয়া–আসার সময় পিদিমের কাণ্ড দেখে। আগে অবাক হলেও এখন আর হয় না। খাবার সময় বাবা ডাকে, ‘ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!’
আপু না হয় মা এসে টেনে নিয়ে যায় পিদিমকে। নদীর সঙ্গে ওর কথা শেষ হতে চায় না। পশ্চিমের জানালাটি দিয়ে নদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছোট্ট পিদিমের। তাই জানালাটিকেও পিদিমের আপন মনে হয়। তিনতলায় জানালাটি না থাকলে নদীর সঙ্গে পিদিমের বন্ধুত্ব হতো না।
মা তো পিদিমকে নদীর কাছে যেতেই দেবে না। কেবল একবার ইমন মামার সঙ্গে নদীর তীরে গিয়েছিল পিদিম। যেখানে ছেলেরা রংবেরঙের ঘুড়ি ওড়ায়। পিদিমের সবচেয়ে ভালো লাগে দুপুরের ঝকঝকে রোদে ইমন মামারা যখন নদীতে ঝুপ ঝুপ করে ঝাঁপ দেয়। ইমন মামার মতো স্কুলে পড়লে তখন সে বড় হয়ে যাবে। সে-ও মামার সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেবে। মা কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু মামাকে পাবে কোথায়? মামা গেছে দূরের দেশে পড়তে। ভরদুপুরে যখন চারদিক সুনসান নীরব, নদীটা ডাক দেয়, ‘পিদিম সোনা আয়, আয়!’
সেদিন রাতে পিদিমদের কারও ঘুম আসে না। চিতা বাঘের মতো একের পর এক ট্রাকের হুংকার কানে আসে। সকালে উঠে সবাই দেখে, বালুতে বালুতে নদীর শ্বাসরোধ! চাপা পড়েছে লাজুক নদীটি। পিদিমের বন্ধুটি।
‘কারা ফেলেছে বালু?’ পিদিমের প্রশ্নে বাবার কণ্ঠ ভিজে আসে, ‘জানি না রে, মা!’
সে রাতের পর থেকে জানালা ধরে কেবল পিদিম নয়, মা-ও দাঁড়িয়ে থাকে। নদী কোথায়? কোথাও নদী নেই। কেবল পিদিমই দেখে মায়ের দুচোখে গড়িয়ে পড়ছে নদী।
[FA]pen[/FA] লেখক: নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ