ফুটবল
ফুটবল: ফুটবল খেলা অতি প্রাচীন। কালের বির্বতনে এ খেলা বর্তমানে একটি আধুনিক খেলায় পরিণত হয়েছে। আধুনিক ফুটবল খেলার জন্মস্থান ইংল্যান্ড। ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রনয়ণ হয় ইংল্যান্ডেই। এই খেলা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে খুব দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও ফুটবল খেলা এখানেও কম জনপ্রিয় নয়। ফুটবল খেলায় রয়েছে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘ফিফা’ (FIFA) (ফেডারেশন ইন্টান্যাশনাল দি ফুটবল অ্যাসোসিয়শন। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় ফুটবল খেলা বিভিন্ন দেশে প্রসার লাভ করেছে। বাংলাদেশ ফিফার সদস্যভূক্ত হয়ে এই খেলাকে সারা দেশের জনপ্রিয় করে তুলছে। ফুটবল বর্তমানে বিশ্বে সর্বজনীন খেলা। এ খেলা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৭ টি আইন আছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন খেলার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে একই নিয়মে বিশ্বের সর্বত্র এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খেলোয়াড়রা যেমন নিয়ম মেনে চলে তেমনি রেফারি নিয়মের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ করেন। তাই খেলাটি হয়ে ওঠে চির আনন্দময়। নিচে আইনগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো-
১. মাঠ : ফুটবল আইনের প্রথমটি হলো মাঠ। মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ বা ১২০ মিটার। সর্বনিম্ন ১০০ গজ বা ৯০ মিটার। প্রস্থ সর্বোচ্চ ১০০ গজ বা ৯০ মিটার, সর্বনিম্ন ৫০ গজ বা ৪৫ মিটার।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠের মাপ হবে -
ক. দৈর্ঘ্য -১২০ গজ, প্রস্থ -৮০ গজ।
খ. দৈর্ঘ্য -১১৫ গজ, প্রস্থ -৭৫ গজ।
গ. দৈর্ঘ্য -১১০ গজ, প্রস্থ -৭০ গজ।
এই তিনটি মাপের মাঠের যে কোন একটি মাঠ আন্তর্জাতিক, জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য প্রযোজ্য তবে স্কুলের ছোট ছেলেদের জন্য দৈর্ঘ্য ১০০ গজ ও প্রস্থ ৫০ গজ নেওয়া যেতে পারে।
১.১ দাগ : প্রত্যেকটি দাগ চওড়া হবে ৫ ইঞ্চি। দৈর্ঘ্যের দাগকে টাচ লাইন এবং প্রস্থের দাগকে গোল লাইন বলে।
১.২ গোল এরিয়া : দুই গোল পোস্টের উভয় দিকে ৬ গজ এবং সামনের দিকে ৬ গজ নিয়ে উভয় দাগকে একটি সরলরেখা দ্বারা যোগ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২০ গজ। এই দাগের ভিতরের জায়গাকে গোল এরিয়া বলে।
১.৩ পেনাল্টি এরিয়া : গোল পোস্টের উভয় দিকে ১৮ গজ এবং সামনের দিকেও ১৮ গজ নিয়ে একটি সরলরেখা টানতে হবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪ গজ এই ভেতরের এরিয়াকে পেনাল্টি এরিয়া বলে।
১.৪ পেনাল্টি মার্ক : যে চিহ্নিত বল বসিয়ে পেনাল্টি কিক মারে তাকে পেনাল্টি মার্ক বলে। দুই গোল পোস্টের মাঝ থেকে সামনের দিকে ১২ গজ দূরে চিহ্ন দিতে হবে যার ব্যাস হবে ৯ ইঞ্চি।
১.৫ কর্নার পতাকা : মাঠের চার কোনায় ৪টি পতাকা থাকবে। পতাকা দন্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ইঞ্চি। পোস্টের মাথা চোখা হবে না এবং মাথায় পতাকা লাগানো থাকবে। মাঠের মাঝখানে দুইদিকে পতাকা থাকবে। একে ঐচ্ছিক পতাকা বলে।
১.৬ কর্ণার এরিয়া : কর্নার পতাকাদন্ড থেকে ১ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। যার মধ্যে বল বসিয়ে কর্নার কিক মারতে হবে।
১.৭: গোল পোস্ট : মাটি থেকে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত উচ্চতা ৮ ফুট ও দুই গোল পোস্টের মাঝের দূরত্ব ৮ গজ। গোল পোস্টের পিছনে জাল টাঙ্গাতে হবে। জাল এমনভাবে টাঙ্গাতে হবে যেন গোল কিপারের চলাফেরায় কোনো অসুবিধা না হয়।
১.৮ সেন্টার সার্কেল : মধ্য রেখার মাঝখানে ১০ গজ ব্যাসার্ধ্য নিয়ে একটি বৃত্ত অংকন করতে হবে যাকে সেন্টার সার্কেল বলে।
২. খেলার বল : বলের পরিধি ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার, খেলা আরম্ভের সময় বলের ওজন হবে ৪১০-৪৫০ গ্রাম।
৩. খেলোয়াড়ের সংখ্যা : একটি দলে ১৮ জন খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গঠিত হবে।১১ জন মাঠে খেলবে বাকি ৭ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে থাকবে। তবে আঞ্চলিক বা আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় দলের খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমানো যেতে পারে।
৪. খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম : একজন খেলোয়াড়ের বাধ্যতামূলক সাজপোশাক শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিনগার্ড ও বুটস থাকবে। অন্যান্য খেলোয়াড়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এমন কোনো বস্তু বা পোশাক পরা যাবে না।
৫. রেফারি : খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি থাকেন।
৬. ডেপুটি রেফারি : রেফারিকে সাহায্য করার জন্য ২ ডেপুটি রেফারি থাকেন। এছাড়া মাঠের বাইরে একজন চর্তুথ রেফারি থাকেন। তিনিও খেলা পরিচালনার ব্যাপারে রেফারিকে সাহায্য করেন।
৭. খেলার সময় : আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে খেলার সময় প্রতি অর্ধে ৪৫ মিনিট মাঝে বিরতি ১৫ মিনিটের বেশি হবে না।
৮. খেলা আরম্ভ : খেলা আরম্ভের সময় উভয় দলের খেলোয়াড়গণ নিজ নিজ অর্ধে অবস্থান করে। রেফারির সংকেতের সাথে সাথে কিক অফের মাধ্যমে খেলা শুরু হয়।
৯. বল খেলার মধ্যে ও বাইরে : বল গড়িয়ে বা শূন্য দিয়ে সম্পূর্নভাবে গোল লাইন বা টাচলাইন অতিক্রম করে তখন সে বলকে বাইরে ধরা হয়। বল দাগের উপরে থাকলে খেলার মধ্যে গণ্য হবে।
১০. গোল হওয়া : বল শূন্য বা মাটি দিয়ে গড়িয়ে দুই পোস্টের ও বারের নিচ দিয়ে গোল লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে গোল হয়েছে বলে ধরা হয়।
১১. অফ সাইড : বল ছাড়া কোনো খেলোয়াড় বিপক্ষের অর্ধে অবস্থান করে এবং তার সামনে বিপক্ষের ২ জন খেলোয়াড় না থাকলে ঐ অবস্থায় যদি সে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল পায় তাহলে অফ সাইড হবে।
১২. ফাউল ও অসদাচারণ : ফাউল বা অসদাচারণ হলে দু’ধরনের কিক দেওয়া হয়। ক. ডাইরেক্ট ফ্রি কিক খ. ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক। নিচের অপরাধের জন্য প্রত্যেক্ষ বা ডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেওয়া হয়-
১. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে লাথি মারা বা লাথি মারার চেষ্টা করা।
২. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ল্যাং মারা।
৩. বিপক্ষ খেলোয়াড়ের উপর লাফানো।
৪. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আক্রমণ করা।
৫. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করা বা আঘাত করার চেষ্টা করা।
৬. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধাক্কা মারা।
৭. বল খেলার পূর্বে বিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ করা।
৮. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরে রাখা।
৯. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে থুথু মারা।
১০. বল হাত দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধরা, বহন করা, আঘাত করা বা সামনে চালিত করা। (গোল কিপারের জন্য এই নিয়ম পেনাল্টি এরিয়ার ভিতর প্রযোজ্য নয়)
নিম্ন অপরাধগুলোর জন্য পরোক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়-
ক. এমনভাবে খেলা যা রেফারির নিকট বিপজ্জনক বলে মনে হয়।
খ. বল আয়ত্তে না থাকা অবস্থায় কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেওয়া।
গ. গোল রক্ষক বল ছুড়ে দেওয়ার সময় তাকে বাধা দেওয়া।
ঘ. বল নিজে খেলছে না অহেতুক অপরকে বাধা দেওয়া।
ঙ. গোলরক্ষককে আক্রমণ করা, গোলরক্ষক যখন তার সীমানার মধ্যে থাকে।
চ. গোলরক্ষক বল ছেড়ে দেওয়ার পর অন্য খেলোয়াড় টাচ করার পূর্বেই টাচ করা।
ছ. গোলরক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে।
১৩. ফ্রি কিক : যে কিকে সরাসরি গোল হয় তাকে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক বলে। যে কিকে সরাসরি গোল হয় না তাকে পরোক্ষ ফ্রি কিক বলে।
১৪. পেনাল্টি কিক : পেনাল্টি এরিয়ার ভেতর রক্ষণদলের কোনো খেলোয়াড় উক্ত ১০ টি অপরাধের যে কোনো একটি করে তাহলে বিপক্ষ দল একটি পেনাল্টি কিক পাবে। (গোল কিপারের জন্য ১০ নং প্রযোজ্য নয)।
১৫. থ্রো-ইন : কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শে টাচ লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে বিপক্ষ দল ঐ স্থান থেকে নিক্ষেপের মাধ্যমে খেলা শুরু করে ঐ নিক্ষেপকে থ্রো-ইন বলে।
১৬. গোল কিক : দুই গোল পোস্ট বাদে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের স্পর্শে গোল লাইন অতিক্রম করে তখন যে কিকের মাধ্যমে খেলা শুরু হয় তাকে গোল কিক বলে।
১৭. কর্নার কিক : কোনো খেলোয়াড় গোলপোস্ট বাদে বল যখন নিজ গোল লাইন অতিক্রম করায় তখন বিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক পায়।
কলাকৌশল : ফুটবল হচ্ছে গতির খেলা, প্রচন্ড শারীরিক সামর্থ্যের ও শৈলীর খেলা। ইংরেজিতে যাকে বলে Speed, Stamina ও Skill এই তিনটি গুণের সমন্বয়ে ঘটলে সে ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। ফুটবল খেলার মৌখিক কলাকৌশলসমূহ যথা ঃ
১. কিকিং, ২. হেডিং, ৩. ড্রিবলিং, ৪. ট্রাপিং, ৫. ট্যাকলিং, ৬. গোলকিপিং
১. কিকিং : ফুটবল পায়ের খেলা। পায়ের সাহায্যে বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারলে ফুটবল খেলার প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করা যায়। পায়ের তিনটি দিক রয়েছে - পায়ের ভেতরের দিক(Inside) , পায়ের বাইরের দিক(Outside) এবং পায়ের পাতার উপরের দিক(Instep) । কিক করার সময় পায়ের এসব অংশ ব্যবহার করতে হয়। পায়ের বিভিন্ন অংশ দিয়ে বিভিন্ন কিক মারা যায়। তবে ইনসাইড কিক সহজ ও সঠিক ভাবে করা যায় এবং কাছাকাছি হলে এই কিকের মাধ্যমে বল পাস দেওয়া যায়। অনেক সময় ডানদিকের খেলোয়াড়ের কাছে বল পাস দেওয়ার সময় আউটসাইড কিক ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ পায়ের পাতার বাইরের অংশ দিয়ে পাস দেওয়া। সোজা ও মাটি ঘেঁষে বল পাঠানোর জন্য বাম পা বলের বামপাশে স্থাপন করে দৃষ্টি বলের উপর রেখে ডান পায়ের পাতার উপরের অংশ দিয়ে বলের মাঝ বরাবর জোরে আঘাত করতে হবে। হাত দুটো প্রসারিত করে শরীরের ব্যালান্স রাখতে হবে। কিকিং ফুট সামনে দিকে যাবে। বল উঁচুতে পাঠাতে হলে বলের নিচের দিকে কিক করতে হবে।
২. হেডিং : হেড করার সময় মনে রাখতে হবে বলকে মাথা দিয়ে আঘাত করতে হবে। হেড করার নিয়ম-
ক. চুলের নিচে কপালের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে হেড করতে হয়।
খ. বলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
গ. শরীরের উপরের অংশ পিছনের দিকে এনে কপাল দিয়ে আঘাত করতে হবে।
ঘ. হাত দুটো সামান্য প্রসারিত থাকবে।
ঙ. ডানে বামে যে দিকেই হেড করা হোক না কেন কপাল দিয়েই হেড করতে হবে শুধু মাথা ঘুরিয়ে সেদিকে বল পাঠাতে হবে।
৩. ড্রিবলিং : পায়ে পায়ে বলকে গড়িয়ে নেওয়াকে ড্রিবলিং বলে। সর্তীথকে সঠিকভাবে বল যোগান দেওয়ার জন্য ড্রিবলিং করা হয়। ড্রিবলিং দু’রকমের-
ক. পায়ের কাছাকাছি বল রেখে ড্রিবলিং : এই ড্রিবলিং - এর সময় দুপায়ের ভেতরের অংশ ব্যবহার করে ড্রিবলিং করা হয়।
খ. বল সামান্য দূরে রেখে ড্রিবল : এই প্রকার ড্রিবলিং সাধারনত দ্রুততার জন্য করা হয়। বল সামনে বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত দৌড়িয়ে পুনরায় আয়ত্তে আনা।
অনুশীলন : মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মধ্যমাঠ পর্যন্ত ড্রিবর করে আসবে। একবার ডান পা দিয়ে একবার বাম পা দিয়ে এবং পরবর্তীতে দু’পা ব্যবহার করে অনুশীলন করবে। পায়ের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে অনুশীলন করবে।
৪. ট্রাপিং : হাত ছাড়া শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে বলকে আয়ত্তে আনা বা থামানোকে ট্র্যাপিং বলে। ট্র্যাপিং বিভিন্ন প্রকার :
ক. সোল ট্র্যাপ(Sole trap)
খ. শিন ট্র্যাপ(Shin trap)
গ. থাই ট্র্যাপ(Thigh trap)
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ(Chest trap)
ঙ. হেড ট্র্যাপ(Head trap)
ক. সোল ট্র্যাপ : মাটি গড়ানো বা উপরের বল পায়ের তলা দিয়ে থামানোকে সোল ট্র্যাপ বলে।
খ. শিন ট্র্যাপ : উঁচু বল মাটিতে ড্রপ খাওয়ার পর শিন দিয়ে বল থামানোকে শিন ট্র্যাপ বলে।
গ. থাই ট্র্যাপ : উপরের বল থাই দিয়ে থামিয়ে নিচে ফেলাকে থাই ট্র্যাপ বলে। বল থাই স্পর্শ করার সাথে সাথে থাইটা নিচের দিকে টানতে হবে। তাহলে বলের গতি কমে সামনে পড়বে।
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ : উঁচু বল বুক দিয়ে থামানো বুঝায়। বল টাচ করার সাথে সাথে বুক ভেতরের দিকে টানতে হবে তাহলে বলের গতি থেমে সামনে পড়বে।
ঙ. হেড ট্র্যাপ : কপাল দিয়ে বল ঠেকিয়ে সামনে ফেলাকে হেড ট্র্যাপ বলে। মাথা পিছনের দিকে বাঁকাতে হবে এবং বল টাচ করার সাথে সাথে পিছনের দিকে নিতে হবে।
অনুশীলন : দু’জন সামনাসামনি মুখ করে দাঁড়াবে। একজন বল নিক্ষেপ করে দেবে, অপর জন সেই বল ট্র্যাপ বা থামাবে। বল যে উচ্চতায় পাবে সেভাবে করতে হবে। বল যদি উপরে আসে তাহলে হেড বা চেস্ট ট্র্যাপ করতে হবে। এভাবে অনুশীলন করে পারদর্শিতা অর্জন করবে।
৫. ট্যাকলিং : ট্যাকলিং ফুটবর খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষনাত্মক কৌশল। এর সাহায্যে বিপক্ষের নিকট থেকে বলকে কেড়ে নেওয়া যায়। বিপক্ষের নিকট থেকে বলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার নামই ট্যাকলিং।
৬. গোলকিপিং : ফুটবল খেলায় গোলকিপারের দায়িত্ব অনেক বেশি। গোলকিপার শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে বল থামাতে পারে। হাত দিয়ে বল ধরা বা থামানোই প্রধান। যেমন-
ক. নিচু বল ধরা : কেবল মাটি দিয়ে গড়িয়ে আসে বা সামান্য উপর দিয়ে আসে সে বলকে এক পা সামনে ও অপর পা পিছনে দিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে কোমর থেকে উপরের অংশ সামনে ঝুঁকিয়ে বলটির পিছনে যেয়ে দু’হাত দিয়ে বল ধরে বুকের কাছে আনতে হবে।
খ. কোমর সমান বল ধরা : প্রথমে বলের লাইনে যেতে হবে। দৃষ্টি বলের দিকে থাকবে, দু’হাত বলের নিচে দিয়ে জড়িয়ে বুকের সাথে আটকিয়ে রাখতে হবে।
গ. মাথার উপরের বল ধরা : উঁচু বল ধরার সময় লাফিয়ে বলের পিছনে গিয়ে দু’হাত সামনে উপরের দিকে প্রসারিত করে দু’হাতের তালু বলের পিছনে রেখে বল ধরবে। এছাড়াও যে সমস্ত বল আয়ত্তের বাইরে সেগুলোকে ধরার চেষ্টা না করে পাঞ্চ করে সরিয়ে দিতে হবে।
ফুটবল: ফুটবল খেলা অতি প্রাচীন। কালের বির্বতনে এ খেলা বর্তমানে একটি আধুনিক খেলায় পরিণত হয়েছে। আধুনিক ফুটবল খেলার জন্মস্থান ইংল্যান্ড। ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রনয়ণ হয় ইংল্যান্ডেই। এই খেলা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে খুব দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও ফুটবল খেলা এখানেও কম জনপ্রিয় নয়। ফুটবল খেলায় রয়েছে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘ফিফা’ (FIFA) (ফেডারেশন ইন্টান্যাশনাল দি ফুটবল অ্যাসোসিয়শন। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় ফুটবল খেলা বিভিন্ন দেশে প্রসার লাভ করেছে। বাংলাদেশ ফিফার সদস্যভূক্ত হয়ে এই খেলাকে সারা দেশের জনপ্রিয় করে তুলছে। ফুটবল বর্তমানে বিশ্বে সর্বজনীন খেলা। এ খেলা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৭ টি আইন আছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন খেলার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে একই নিয়মে বিশ্বের সর্বত্র এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খেলোয়াড়রা যেমন নিয়ম মেনে চলে তেমনি রেফারি নিয়মের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ করেন। তাই খেলাটি হয়ে ওঠে চির আনন্দময়। নিচে আইনগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো-
১. মাঠ : ফুটবল আইনের প্রথমটি হলো মাঠ। মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ বা ১২০ মিটার। সর্বনিম্ন ১০০ গজ বা ৯০ মিটার। প্রস্থ সর্বোচ্চ ১০০ গজ বা ৯০ মিটার, সর্বনিম্ন ৫০ গজ বা ৪৫ মিটার।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠের মাপ হবে -
ক. দৈর্ঘ্য -১২০ গজ, প্রস্থ -৮০ গজ।
খ. দৈর্ঘ্য -১১৫ গজ, প্রস্থ -৭৫ গজ।
গ. দৈর্ঘ্য -১১০ গজ, প্রস্থ -৭০ গজ।
এই তিনটি মাপের মাঠের যে কোন একটি মাঠ আন্তর্জাতিক, জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য প্রযোজ্য তবে স্কুলের ছোট ছেলেদের জন্য দৈর্ঘ্য ১০০ গজ ও প্রস্থ ৫০ গজ নেওয়া যেতে পারে।
১.১ দাগ : প্রত্যেকটি দাগ চওড়া হবে ৫ ইঞ্চি। দৈর্ঘ্যের দাগকে টাচ লাইন এবং প্রস্থের দাগকে গোল লাইন বলে।
১.২ গোল এরিয়া : দুই গোল পোস্টের উভয় দিকে ৬ গজ এবং সামনের দিকে ৬ গজ নিয়ে উভয় দাগকে একটি সরলরেখা দ্বারা যোগ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২০ গজ। এই দাগের ভিতরের জায়গাকে গোল এরিয়া বলে।
১.৩ পেনাল্টি এরিয়া : গোল পোস্টের উভয় দিকে ১৮ গজ এবং সামনের দিকেও ১৮ গজ নিয়ে একটি সরলরেখা টানতে হবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪ গজ এই ভেতরের এরিয়াকে পেনাল্টি এরিয়া বলে।
১.৪ পেনাল্টি মার্ক : যে চিহ্নিত বল বসিয়ে পেনাল্টি কিক মারে তাকে পেনাল্টি মার্ক বলে। দুই গোল পোস্টের মাঝ থেকে সামনের দিকে ১২ গজ দূরে চিহ্ন দিতে হবে যার ব্যাস হবে ৯ ইঞ্চি।
১.৫ কর্নার পতাকা : মাঠের চার কোনায় ৪টি পতাকা থাকবে। পতাকা দন্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ইঞ্চি। পোস্টের মাথা চোখা হবে না এবং মাথায় পতাকা লাগানো থাকবে। মাঠের মাঝখানে দুইদিকে পতাকা থাকবে। একে ঐচ্ছিক পতাকা বলে।
১.৬ কর্ণার এরিয়া : কর্নার পতাকাদন্ড থেকে ১ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। যার মধ্যে বল বসিয়ে কর্নার কিক মারতে হবে।
১.৭: গোল পোস্ট : মাটি থেকে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত উচ্চতা ৮ ফুট ও দুই গোল পোস্টের মাঝের দূরত্ব ৮ গজ। গোল পোস্টের পিছনে জাল টাঙ্গাতে হবে। জাল এমনভাবে টাঙ্গাতে হবে যেন গোল কিপারের চলাফেরায় কোনো অসুবিধা না হয়।
১.৮ সেন্টার সার্কেল : মধ্য রেখার মাঝখানে ১০ গজ ব্যাসার্ধ্য নিয়ে একটি বৃত্ত অংকন করতে হবে যাকে সেন্টার সার্কেল বলে।
২. খেলার বল : বলের পরিধি ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার, খেলা আরম্ভের সময় বলের ওজন হবে ৪১০-৪৫০ গ্রাম।
৩. খেলোয়াড়ের সংখ্যা : একটি দলে ১৮ জন খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গঠিত হবে।১১ জন মাঠে খেলবে বাকি ৭ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে থাকবে। তবে আঞ্চলিক বা আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় দলের খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমানো যেতে পারে।
৪. খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম : একজন খেলোয়াড়ের বাধ্যতামূলক সাজপোশাক শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিনগার্ড ও বুটস থাকবে। অন্যান্য খেলোয়াড়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এমন কোনো বস্তু বা পোশাক পরা যাবে না।
৫. রেফারি : খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি থাকেন।
৬. ডেপুটি রেফারি : রেফারিকে সাহায্য করার জন্য ২ ডেপুটি রেফারি থাকেন। এছাড়া মাঠের বাইরে একজন চর্তুথ রেফারি থাকেন। তিনিও খেলা পরিচালনার ব্যাপারে রেফারিকে সাহায্য করেন।
৭. খেলার সময় : আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে খেলার সময় প্রতি অর্ধে ৪৫ মিনিট মাঝে বিরতি ১৫ মিনিটের বেশি হবে না।
৮. খেলা আরম্ভ : খেলা আরম্ভের সময় উভয় দলের খেলোয়াড়গণ নিজ নিজ অর্ধে অবস্থান করে। রেফারির সংকেতের সাথে সাথে কিক অফের মাধ্যমে খেলা শুরু হয়।
৯. বল খেলার মধ্যে ও বাইরে : বল গড়িয়ে বা শূন্য দিয়ে সম্পূর্নভাবে গোল লাইন বা টাচলাইন অতিক্রম করে তখন সে বলকে বাইরে ধরা হয়। বল দাগের উপরে থাকলে খেলার মধ্যে গণ্য হবে।
১০. গোল হওয়া : বল শূন্য বা মাটি দিয়ে গড়িয়ে দুই পোস্টের ও বারের নিচ দিয়ে গোল লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে গোল হয়েছে বলে ধরা হয়।
১১. অফ সাইড : বল ছাড়া কোনো খেলোয়াড় বিপক্ষের অর্ধে অবস্থান করে এবং তার সামনে বিপক্ষের ২ জন খেলোয়াড় না থাকলে ঐ অবস্থায় যদি সে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল পায় তাহলে অফ সাইড হবে।
১২. ফাউল ও অসদাচারণ : ফাউল বা অসদাচারণ হলে দু’ধরনের কিক দেওয়া হয়। ক. ডাইরেক্ট ফ্রি কিক খ. ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক। নিচের অপরাধের জন্য প্রত্যেক্ষ বা ডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেওয়া হয়-
১. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে লাথি মারা বা লাথি মারার চেষ্টা করা।
২. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ল্যাং মারা।
৩. বিপক্ষ খেলোয়াড়ের উপর লাফানো।
৪. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আক্রমণ করা।
৫. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করা বা আঘাত করার চেষ্টা করা।
৬. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধাক্কা মারা।
৭. বল খেলার পূর্বে বিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ করা।
৮. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরে রাখা।
৯. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে থুথু মারা।
১০. বল হাত দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধরা, বহন করা, আঘাত করা বা সামনে চালিত করা। (গোল কিপারের জন্য এই নিয়ম পেনাল্টি এরিয়ার ভিতর প্রযোজ্য নয়)
নিম্ন অপরাধগুলোর জন্য পরোক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়-
ক. এমনভাবে খেলা যা রেফারির নিকট বিপজ্জনক বলে মনে হয়।
খ. বল আয়ত্তে না থাকা অবস্থায় কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেওয়া।
গ. গোল রক্ষক বল ছুড়ে দেওয়ার সময় তাকে বাধা দেওয়া।
ঘ. বল নিজে খেলছে না অহেতুক অপরকে বাধা দেওয়া।
ঙ. গোলরক্ষককে আক্রমণ করা, গোলরক্ষক যখন তার সীমানার মধ্যে থাকে।
চ. গোলরক্ষক বল ছেড়ে দেওয়ার পর অন্য খেলোয়াড় টাচ করার পূর্বেই টাচ করা।
ছ. গোলরক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে।
১৩. ফ্রি কিক : যে কিকে সরাসরি গোল হয় তাকে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক বলে। যে কিকে সরাসরি গোল হয় না তাকে পরোক্ষ ফ্রি কিক বলে।
১৪. পেনাল্টি কিক : পেনাল্টি এরিয়ার ভেতর রক্ষণদলের কোনো খেলোয়াড় উক্ত ১০ টি অপরাধের যে কোনো একটি করে তাহলে বিপক্ষ দল একটি পেনাল্টি কিক পাবে। (গোল কিপারের জন্য ১০ নং প্রযোজ্য নয)।
১৫. থ্রো-ইন : কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শে টাচ লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে বিপক্ষ দল ঐ স্থান থেকে নিক্ষেপের মাধ্যমে খেলা শুরু করে ঐ নিক্ষেপকে থ্রো-ইন বলে।
১৬. গোল কিক : দুই গোল পোস্ট বাদে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের স্পর্শে গোল লাইন অতিক্রম করে তখন যে কিকের মাধ্যমে খেলা শুরু হয় তাকে গোল কিক বলে।
১৭. কর্নার কিক : কোনো খেলোয়াড় গোলপোস্ট বাদে বল যখন নিজ গোল লাইন অতিক্রম করায় তখন বিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক পায়।
কলাকৌশল : ফুটবল হচ্ছে গতির খেলা, প্রচন্ড শারীরিক সামর্থ্যের ও শৈলীর খেলা। ইংরেজিতে যাকে বলে Speed, Stamina ও Skill এই তিনটি গুণের সমন্বয়ে ঘটলে সে ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। ফুটবল খেলার মৌখিক কলাকৌশলসমূহ যথা ঃ
১. কিকিং, ২. হেডিং, ৩. ড্রিবলিং, ৪. ট্রাপিং, ৫. ট্যাকলিং, ৬. গোলকিপিং
১. কিকিং : ফুটবল পায়ের খেলা। পায়ের সাহায্যে বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারলে ফুটবল খেলার প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করা যায়। পায়ের তিনটি দিক রয়েছে - পায়ের ভেতরের দিক(Inside) , পায়ের বাইরের দিক(Outside) এবং পায়ের পাতার উপরের দিক(Instep) । কিক করার সময় পায়ের এসব অংশ ব্যবহার করতে হয়। পায়ের বিভিন্ন অংশ দিয়ে বিভিন্ন কিক মারা যায়। তবে ইনসাইড কিক সহজ ও সঠিক ভাবে করা যায় এবং কাছাকাছি হলে এই কিকের মাধ্যমে বল পাস দেওয়া যায়। অনেক সময় ডানদিকের খেলোয়াড়ের কাছে বল পাস দেওয়ার সময় আউটসাইড কিক ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ পায়ের পাতার বাইরের অংশ দিয়ে পাস দেওয়া। সোজা ও মাটি ঘেঁষে বল পাঠানোর জন্য বাম পা বলের বামপাশে স্থাপন করে দৃষ্টি বলের উপর রেখে ডান পায়ের পাতার উপরের অংশ দিয়ে বলের মাঝ বরাবর জোরে আঘাত করতে হবে। হাত দুটো প্রসারিত করে শরীরের ব্যালান্স রাখতে হবে। কিকিং ফুট সামনে দিকে যাবে। বল উঁচুতে পাঠাতে হলে বলের নিচের দিকে কিক করতে হবে।
২. হেডিং : হেড করার সময় মনে রাখতে হবে বলকে মাথা দিয়ে আঘাত করতে হবে। হেড করার নিয়ম-
ক. চুলের নিচে কপালের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে হেড করতে হয়।
খ. বলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
গ. শরীরের উপরের অংশ পিছনের দিকে এনে কপাল দিয়ে আঘাত করতে হবে।
ঘ. হাত দুটো সামান্য প্রসারিত থাকবে।
ঙ. ডানে বামে যে দিকেই হেড করা হোক না কেন কপাল দিয়েই হেড করতে হবে শুধু মাথা ঘুরিয়ে সেদিকে বল পাঠাতে হবে।
৩. ড্রিবলিং : পায়ে পায়ে বলকে গড়িয়ে নেওয়াকে ড্রিবলিং বলে। সর্তীথকে সঠিকভাবে বল যোগান দেওয়ার জন্য ড্রিবলিং করা হয়। ড্রিবলিং দু’রকমের-
ক. পায়ের কাছাকাছি বল রেখে ড্রিবলিং : এই ড্রিবলিং - এর সময় দুপায়ের ভেতরের অংশ ব্যবহার করে ড্রিবলিং করা হয়।
খ. বল সামান্য দূরে রেখে ড্রিবল : এই প্রকার ড্রিবলিং সাধারনত দ্রুততার জন্য করা হয়। বল সামনে বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত দৌড়িয়ে পুনরায় আয়ত্তে আনা।
অনুশীলন : মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মধ্যমাঠ পর্যন্ত ড্রিবর করে আসবে। একবার ডান পা দিয়ে একবার বাম পা দিয়ে এবং পরবর্তীতে দু’পা ব্যবহার করে অনুশীলন করবে। পায়ের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে অনুশীলন করবে।
৪. ট্রাপিং : হাত ছাড়া শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে বলকে আয়ত্তে আনা বা থামানোকে ট্র্যাপিং বলে। ট্র্যাপিং বিভিন্ন প্রকার :
ক. সোল ট্র্যাপ(Sole trap)
খ. শিন ট্র্যাপ(Shin trap)
গ. থাই ট্র্যাপ(Thigh trap)
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ(Chest trap)
ঙ. হেড ট্র্যাপ(Head trap)
ক. সোল ট্র্যাপ : মাটি গড়ানো বা উপরের বল পায়ের তলা দিয়ে থামানোকে সোল ট্র্যাপ বলে।
খ. শিন ট্র্যাপ : উঁচু বল মাটিতে ড্রপ খাওয়ার পর শিন দিয়ে বল থামানোকে শিন ট্র্যাপ বলে।
গ. থাই ট্র্যাপ : উপরের বল থাই দিয়ে থামিয়ে নিচে ফেলাকে থাই ট্র্যাপ বলে। বল থাই স্পর্শ করার সাথে সাথে থাইটা নিচের দিকে টানতে হবে। তাহলে বলের গতি কমে সামনে পড়বে।
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ : উঁচু বল বুক দিয়ে থামানো বুঝায়। বল টাচ করার সাথে সাথে বুক ভেতরের দিকে টানতে হবে তাহলে বলের গতি থেমে সামনে পড়বে।
ঙ. হেড ট্র্যাপ : কপাল দিয়ে বল ঠেকিয়ে সামনে ফেলাকে হেড ট্র্যাপ বলে। মাথা পিছনের দিকে বাঁকাতে হবে এবং বল টাচ করার সাথে সাথে পিছনের দিকে নিতে হবে।
অনুশীলন : দু’জন সামনাসামনি মুখ করে দাঁড়াবে। একজন বল নিক্ষেপ করে দেবে, অপর জন সেই বল ট্র্যাপ বা থামাবে। বল যে উচ্চতায় পাবে সেভাবে করতে হবে। বল যদি উপরে আসে তাহলে হেড বা চেস্ট ট্র্যাপ করতে হবে। এভাবে অনুশীলন করে পারদর্শিতা অর্জন করবে।
৫. ট্যাকলিং : ট্যাকলিং ফুটবর খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষনাত্মক কৌশল। এর সাহায্যে বিপক্ষের নিকট থেকে বলকে কেড়ে নেওয়া যায়। বিপক্ষের নিকট থেকে বলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার নামই ট্যাকলিং।
৬. গোলকিপিং : ফুটবল খেলায় গোলকিপারের দায়িত্ব অনেক বেশি। গোলকিপার শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে বল থামাতে পারে। হাত দিয়ে বল ধরা বা থামানোই প্রধান। যেমন-
ক. নিচু বল ধরা : কেবল মাটি দিয়ে গড়িয়ে আসে বা সামান্য উপর দিয়ে আসে সে বলকে এক পা সামনে ও অপর পা পিছনে দিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে কোমর থেকে উপরের অংশ সামনে ঝুঁকিয়ে বলটির পিছনে যেয়ে দু’হাত দিয়ে বল ধরে বুকের কাছে আনতে হবে।
খ. কোমর সমান বল ধরা : প্রথমে বলের লাইনে যেতে হবে। দৃষ্টি বলের দিকে থাকবে, দু’হাত বলের নিচে দিয়ে জড়িয়ে বুকের সাথে আটকিয়ে রাখতে হবে।
গ. মাথার উপরের বল ধরা : উঁচু বল ধরার সময় লাফিয়ে বলের পিছনে গিয়ে দু’হাত সামনে উপরের দিকে প্রসারিত করে দু’হাতের তালু বলের পিছনে রেখে বল ধরবে। এছাড়াও যে সমস্ত বল আয়ত্তের বাইরে সেগুলোকে ধরার চেষ্টা না করে পাঞ্চ করে সরিয়ে দিতে হবে।