বাগানের নিমন্ত্রণে এসেছে ডালিয়া, এসেছে ফুশিয়া,
এসেছে ম্যারিগোল্ড্,
ও আছে অনাদরের অচিহ্নিত স্বাধীনতায়,
জাতে বাঁধা পড়ে নি;
ও বাউল,ও অসামাজিক ।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে ডলিয়া অন্যতম একটি ফুল। বড় আকারের ফুলগুলির মধে ডালিয়ার অবস্থান বর্ণের প্রাচুর্য ও অপরূপ লাবণ্যে অদ্বিতীয়। ডালিয়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শীতকালীন বাগানে নিজের যায়গা করে নিলেও সুন্দরী ডালিয়ার কোনো বাংলা নাম নেই। ডালিয়া নামটি শুনতে যদিও বাংলা নামই মনে হয়, আসলে তা নয়।
শোনা যায় লর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ “আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল” এর নাম অনুসারে ফুলটির নামকরণ হয় ডালিয়া, Dahlia, Garden Dahlia.
আমি বারান্দা ছেড়ে বাগানে নামলাম।
এক চিলতে বাগান
ভেজা পাতার পানিতে আমার চটি আর পাজামাভিজিয়ে
চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ থেকে একগোছা শাদাআর হলুদ ফুল তুললাম ।
বাতাসে মাথা নাড়িয়ে লাল ডালিয়া গাছ আমাকে ডাকলো ।
তারপর গেলাম গোলাপের কাছে ।
----- আল মাহমুদ -----
ডালিয়ার ১১টি শ্রেণীর আওতায় ৪২টির মতো প্রজাতি রয়েছে। যেমন- কোলারেট ডালিয়া, সিঙ্গল ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া, অ্যানিমোল ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া, পমপন ডালিয়া, ক্যাকটাস ডালিয়া,ফর্মাল ডেকরেটিভ ডালিয়া, ইন ফর্মাল ডেকরেটিভ ডালিয়াবল ডালিয়া, ডবল শো ফ্যান্সি, রয়্যাল হোয়াইন, ভ্যারাইটি গার্ল, পিত্তনী ফ্লাওয়ার্ড, স্টার ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া, ইত্যাদি।
ডালিয়া ফুলের পাপড়ির বিন্যাস ফুলটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। ডালিয়া ফুল বিভিন্ন আকারের ও রং এর হয়। যেমন লাল, সাদা, কমলা, বেগুনি, হলুদ, ডিপ গোলাপি ইত্যাদি ইত্যাদি ছাড়াও মিশ্র রং এরও হয়।
ডালিয়া এক ধরনের গুল্মজাতীয়, কন্দযুক্ত, সপুষ্পক উদ্ভিদ। ডালিয়া বীজ, মূলজ কন্দ, ডাল কলম এবং ক্ষেত্রবিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। চারা থেকে ডালিয়া গাছটি বড় হলে কান্ড ছেটে দিতে হবে। কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে। এতে ঝাকড়ানো গাছ হবে, প্রতিটি ডাঁটির আগায় একটি করে অনেক ফুল ফুটবে। তবে ফুলের আকার ছোটো হবে। বড় আকারের ফুল চাইলে গাছের উর্দ্ধমূখী আগার কুড়িটি রেখে বাকী পার্শ্বকুঁড়িগুলি ছেটে দিতে হবে। ফুল গুলি দীর্ঘ্যস্থায়ী হয়। ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে।
ছায়াযুক্ত স্থানে ডালিয়ার গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমিতে ডালিয়ার গাছ লাগাতে হয়।
বছর পেরিয়ে শীতের ঘোমটা সরিয়ে তুমি এলে
যেন অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে,
সদ্য ফোটা শিমুল পলাশের পুষ্পদলে
তুমি এলে রক্তিম ডালিয়া ফুলের সৌন্দর্য ছুঁয়ে।
----- সরদার সায়িদ আহমেদ -----
ডালিয়া ফুলের আদি নিবাস মেক্সিকো। ১৯৬৩ সালে ডালিয়াকে মেক্সিকোর জাতীয় ফুল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
ছবি তোলার স্থান : রমনা পার্ক, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ০৬/০২/২০২০ ইং