‘সারা জীবন অনেক দিয়েছি। কিন্তু নিতে আমার খুবই কষ্ট। কারণ মনে হয় যে নিজে নিতে গেলে আমি ছোট হয়ে যাব। নিতে গেলে মনে হবে, আমি একজন দুর্বল মানুষ হয়ে উঠছি। যে ভালোবাসে, সব সময় সে মনে করে, ভালোবাসাটাই বড় কাজ। সব সময় মানুষকে তো দিয়েই গেলাম। কারও কাছ থেকে কিছু পাইনি। কারও কাছ থেকে কিছু চাইওনি। এই যে সবাইকে দিয়ে গেলাম, ভালোবেসে গেলাম, তার বিনিময় প্রত্যাশা করাটা অনুচিত।’ নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন
চিত্রনায়িকা কবরী।
কবরীর ছবিগুলোয় দর্শকেরা অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন বাংলাদেশের চিত্রজগতের অসামান্য এক তারকার তারকা হয়ে ওঠা। কেমন ছিল এই তারকার শৈশব? প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁরই জবানিতে জানুন সে গল্প।
কবরীর জন্ম ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে। বাবা কৃষ্ণদাস পাল। মা শ্রীমতী লাবণ্য প্রভা পাল। তাঁর বাবার দুই বিয়ে। ছোট স্ত্রীর দ্বিতীয় মেয়ে মিনা পাল (কবরী)। সৎমায়ের দুই মেয়ে, দুই ছেলে। ছোট মায়ের পাঁচ ছেলে, চার মেয়ে। সব ভাইবোন একসঙ্গে বড় হয়েছেন।
পাঁচ ছেলের সঙ্গে কবরী।
আমাদের পুরো পরিবারটিই ছিল ভীষণ সংস্কৃতিমনা। বড় বোনদের মধ্যে দুবোন নাচতেন। ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। আমি নাচ-গান একসঙ্গে করতাম। ছোট্টবেলার কথা আমার যেটুকু মনে আছে, তা হলো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইবোনেরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম - কবরী
ময়নামতি ছবিতে রাজ্জাক ও কবরী
স্মৃতিচারণায় কবরী বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারটিই ছিল ভীষণ সংস্কৃতিমনা। বড় বোনদের মধ্যে দুবোন নাচতেন। ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। আমি নাচ-গান একসঙ্গে করতাম। ছোট্টবেলার কথা আমার যেটুকু মনে আছে, তা হলো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইবোনেরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম।’
কবরী।
মিনা পাল বা কবরীর প্রথম স্কুল ছিল আল করন। থাকতেন চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গিবাজারে। আল করন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন তিনি। এরপর মা কবরীদের জে এম সেন হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। ‘আমরা রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কাপড় ভাঁজ করে মাথার বালিশের নিচে রেখে দিতাম। এভাবেই কাপড় ইস্তিরি হয়ে যেত। আর ওই কাপড় পরেই স্কুলে যেতাম।’ বলেছিলেন কবরী।
অভিনেত্রী কবরী
একদিন স্কুলে ‘ক্ষুধা’ নাটক মঞ্চস্থ হবে বলে ঠিক হলো। যে ছেলেটির এই নাটকে অভিনয় করার কথা ছিল, সে আসেনি। কবরীকে তার জায়গায় অভিনয় করতে বলা হলো। এমনি করেই প্রথম নাটকে অভিনয় করলেন...
তিতাস একটি নদীর নাম ছবির দৃশ্যে রোজি সামাদ ও কবরী
ছোটবেলায় কবরীদের ঘরে কোনো টেলিভিশন ছিল না, একটা রেডিও ছিল। রেডিওর গান শুনে বোনেরা কেউ নাচতেন আবার কেউ তাল মিলিয়ে গান গাইতেন। একসময় রুনু বিশ্বাসের কাছে নাচ শেখা শুরু করলেন কবরী। বাবা আবার এসবে খুব উৎসাহ দিতেন। কিন্তু মা বলতেন, না, এত নাচ-গান করতে হবে না। তার চেয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করো। যেমন সন্ধ্যা হলেই মা সন্তানদের পড়তে বসার জন্য তাগাদা দিতেন। আর বাবা বলতেন, না, আগে ওরা ভজন গাইবে। এমনি করে বাবা কবরীদের সংস্কৃতিমনা করে তুলেছেন।
এমন মিষ্টি মেয়ের দেখা খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা
একদিন স্কুলে ‘ক্ষুধা’ নাটক মঞ্চস্থ হবে বলে ঠিক হলো। যে ছেলেটির এই নাটকে অভিনয় করার কথা ছিল, সে আসেনি। কবরীকে তার জায়গায় অভিনয় করতে বলা হলো। এমনি করেই প্রথম নাটকে অভিনয় করলেন। এরপর থেকেই বোনদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে লাগলেন, নাচতেন। পাশাপাশি পড়াশোনা যেন ঠিক থাকে, সেদিকটায় আবার তাড়া দিতেন মা। এভাবেই ভাইবোনেরা বেড়ে উঠেছেন।
দেবদাস ছবিতে কবরী ও বুলবুল আহমেদ।