What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ফরাসি সুবাসের পিছুটানে ১ (4 Viewers)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,654
Messages
117,056
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Xp37hcV.jpg


হোয়াইট টাউন যেন এক টুকরো ফ্রান্স

চোখের সামনে ফরাসি দেশীয় মানুষের সারি সারি সাজানো বাড়িঘর। কোনো কোনো বাংলো বাড়ির সামনে বাগানবিলাস নুয়ে নুয়ে চুমু খাচ্ছে মাটিকে, কোথাও ধূসর দেয়ালে কানাকানি করছে ফরাসি সংগীত পাশের হলদে বাড়ির পিয়ানোর সঙ্গে সুর মেলানোর জন্য। এমনই একটুকরা ফরাসি শহর, যেখানে পথ চলতে চলতে কানে ভেসে আসতে পারে ফরাসি ভাষার টুকরো টুকরো কথা। অথবা কোনো সুন্দরী একরাশ সুগন্ধি উড়িয়ে চলে যেতে পারে আবেশ কেটে যাওয়ার আগেই।

gOPWwrY.jpg


পন্ডিচেরির হোয়াইট টাউন

এমনও হতে পারে, কোনো ফরাসি মাঝবয়সী যুবক অন্যজনকে বলছে, ‘মঁশিয়ে, কেমন চলছে তোমার কারবার?’

কোথায় আছে এমন পাশের বাড়িতে ফরাসি দেশ! সে কোন গল্পে আটকে আছে পাঁচ হাজার মাইলের দূরত্ব ঠিক আমার পাশের ঘরে!

পাশের ঘরটি সত্যি সত্যিই আমার পাশের ঘরই। ভারতের পন্ডিচেরি শহর।
কিছুদিন ভ্রমণের জন্য গিয়েছিলাম তামিলনাড়ু। সেখান থেকে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম পন্ডিচেরি যাওয়ার।

2jyluiz.jpg


হোয়াইট টাউনের বাড়িঘর

মহাবালিপুরাম থেকে রওনা হওয়ার পথে অটোরিকশা ঠিক করতে গিয়ে জার্মানির এক যুগলের সঙ্গে দোস্তি পাতালাম। তাদের বয়স মধ্য চল্লিশের দিকে হবে। ইনা আর স্টিভ। ভারত ভ্রমণ করছে ১০ সপ্তাহ ধরে। আগেও এসেছিল এরা।

যেখানে বাস স্ট্যান্ড থাকার কথা, সেখানে তা নেই। শুধু চওড়া রাস্তা আর সামনে বিশাল খালি জমি পড়ে আছে। আশপাশে কোথাও ছাউনি নেই, এ আবার কেমন জায়গা! বাসস্ট্যান্ড ছাড়া বাস থামবে কোথায়!

হাইওয়েতে হাত উঁচু করে লোকাল বাস থামাতে হবে। কয়েকটা বাসে লোক নেওয়ার জায়গা ছিল না। তাই উঠিনি। পরে চতুর্থ বাসে উঠে পড়লাম। পথের দুই ধারে কোথাও ধানখেত, সবে টিয়ে রং ছড়াচ্ছে, কোথাও ফিকে ধূসর জলাশয় বকের দলকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

ll1yAjJ.jpg


হোয়াইট টাউনের বাড়িঘরে স্পষ্ট ফরাসি আদল

শ্বেতাঙ্গ দুজন বাসে বারবার হর্ন দেওয়ার কারণে চমকে, ভয়ে একাকার। বাকি যাত্রীরা নির্লিপ্ত। আমি তো অভ্যস্ত। এই না হলে ভারতবর্ষ।

বোঁ ভিভোঁ! পন্ডিচেরি এসে পড়ল বলে। অবশ্য কেউ এভাবে ফরাসি ভাষায় অভিবাদন জানায়নি। আমি নিজেই নিজেকে জানালাম আরকি!

পন্ডিচেরি শহরের হোয়াইট টাউন ফ্রেঞ্চ ঔপনিবেশিক অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। ছোটখাটো শহর বলা যায়। ভারতের ইউনিয়ন টেরিটরি। অটোরিকশা নিয়ে ছুটলাম হোটেলে। চেক ইন করে বেরিয়ে পড়লাম ফরাসি খাবারের খোঁজে। রেস্তোরাঁর নাম ক্রেপ ইন টাউন। ‘ক্রেপ’ ফরাসি দেশের অন্যতম প্রিয় খাবার। আমি সেভারি ক্রেপ খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম। এরপর সুইট ক্রেপ খেতেও অরুচি নেই আমার৷ সেভারি ক্রেপ দেখতে প্রায় কলকাতার এগ রোলের মতো, শুধু রুটির মতো গোলাকার খাদ্যটি প্যানে গড়িয়ে পাটিসাপটা পিঠার মতো করে তৈরি করা হয়। এর ভেতর থাকে ডিম আর হ্যাম। সুইট ক্রেপকে আমি পাটিসাপটা পিঠাই বলব। ভেতরে অবশ্য ক্যারামেল, নিউটেলার পুর থাকে, সঙ্গে স্ট্রবেরি, কলা কেটে দেওয়া৷ আমি দেশি বাঙাল, ক্রেপ খেতে গিয়ে পাটিসাপটা ভেবে খাবারের সঙ্গে আত্মীয়তা করে ফেলি।

এরপর হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ‘নটর ডেম দে এগনেস’ চার্চে। তেমন আহামরি কিছু নয়। ছোট একটা গির্জা, কিন্তু পন্ডিচেরির একমাত্র গির্জা যেখানে ফরাসি, ইংরেজি ও তামিল—তিন ভাষায় প্রার্থনা হয় আলাদা আলাদা সময়ে৷ ইংরেজিতে গির্জার নাম ‘আওয়ার লেডি অব অ্যাঞ্জেলস চার্চ’। তামিলে কী বলে জানি না। কারণ, তামিল ভাষার বিদ্যা যা আছে, তাতে অক্ষর পড়ার ক্ষমতা নেই আমার। পন্ডিচেরির চতুর্থ পুরাতন এই গির্জার নির্মাণকাল ১৮৫৫ সাল।

সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন যখন ভারতে ভ্রমণ করতে আসেন, তখন এই গির্জা নির্মিত হয়। ভেতরের ছাদে এখন এই দুপুরের শেষ ছায়ায় আকাশের মতো বিশাল এক আকাশিরঙা গোলাকার ছাদ বেশ আড়ম্বরে ছাতার মতো মেলে ধরে আছে। হলঘরের দুপাশে সাজানো বেঞ্চ আর সোজা শেষ প্রান্তে মঞ্চে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ প্রতিকৃতি। কোনো মানুষ নেই এ সময়। নীরব হয়ে ছাদটা ঝুঁকে আকাশের ভাষা বোঝাতে চাইছে৷ আর আশপাশে কোনো লেডি অ্যাঞ্জেল না দেখলেও চোখ বন্ধ করে একটু ভেবেই নেওয়া যায় যে এখন পরি আশপাশে ওড়াউড়ি করছে স্কার্ফ নাড়িয়ে।

ফ্রেঞ্চ টাউন হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যায়। সব বাড়িঘর ফ্রেঞ্চ স্টাইলে নির্মিত কয়েক শ বছর আগে, সাদা চুনকাম করা। বেশি পুরোনো গির্জা বা বাড়ির গঠনে দেখা যেতে পারে চুনকামের বদলে আগেকার দিনের মতো চুনাপাথর আর ডিমের সাদা অংশের সংমিশ্রণের আস্তরণ। নটরডেম দে অ্যাগনেস চার্চেও সে রকম আস্তরণ করা। আর শহরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে বিশাল বিশাল গাছ। কয়েকটা পথে তো সূর্য প্রায় অনুনয় করে প্রবেশের পথ খুঁজে নিচ্ছে ডালপালা ভেদ করে।

T6McHXL.jpg


হোয়াইট টাউনের ফ্রেঞ্চ আর তামিল ভাষায় লেখা রাস্তার নাম

গভর্নরের অফিস থেকে শুরু করে সাধারণ বাড়িঘর, সব দালানে একটা ফরাসি গন্ধ মিশে আছে। সব ভবনের ফলকে প্রথমে ফরাসি ভাষায় লেখা, তারপর ইংরেজি এবং তামিলে লেখা ছিল কয়েক বছর আগেও। এখন প্রথমে তামিল, পরে ফরাসি ভাষায় লেখা আছে। ইংরেজি বেমালুম গায়েব। মূলত ফরাসি ভাষায় এখানে অফিস–আদালত চলে। প্রথম দর্শনে মনে হবে, ফ্রান্সে চলে এসেছি। ফ্রান্সের বাইরে এই শহরই এখনো ফ্রান্সের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। শুধু ফরাসি বংশধরেরাই নন, সাধারণ মানুষও ফরাসি জানেন।

চারদিকে ব্রেড আর কেক বেকিংয়ের ম ম গন্ধে মন ভরে গেল। কে বলে আমি ফ্রান্সে নেই! অন্ততপক্ষে কেক-বিস্কুটের সুবাস তো তা–ই বলে। আরও আনন্দের ব্যাপার, পন্ডিচেরির আনাচ–কানাচে বিশাল বিশাল বইয়ের দোকান। পুস্তকপিপাসু মানুষ যে এরা, তা সহজেই বোঝা যায়। বইগুলো ইংরেজি আর ফরাসি ভাষায় লেখা। কলকাতা ছাড়া ভারতের অন্য কোথাও এত বইয়ের দোকান দেখিনি।

xOCwjgQ.jpg


ফরাসি বংশদ্ভূত স্থানীয়

হাঁটতে হাঁটতে দেখতে থাকলাম, সে আমলে তৈরি এক্সাইজ ও ট্যাক্স ভবন, ইউরোপীয় স্থাপত্যকলা অনুসরণ করে নির্মিত বড় বড় অফিসের ভবনগুলো। এখনো একই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাস্টমস ভবনের পাশেই সমুদ্র—বঙ্গোপসাগর। নীল আভা মেখে ধূসর এক জীবনের গল্প বলছে।

আরও মজার ব্যাপার হলো, এ শহরে আরব সাগর আর বঙ্গোপসাগর পাশাপাশি বয়ে যাচ্ছে। কী উদার বন্ধুত্ব!

একটা পার্কও আছে সমুদ্রের উল্টা পাশে। পার্কে ঢুকে মনে হলো, অষ্টাদশ শতাব্দীতে চলে এসেছি। পুরোনো আমলের সব কামান রাখা, বাগানটায়ও একটা মিষ্টি পুরোনো গন্ধ লেগে আছে। গোলাপি, হলুদ, লাল, বেগুনি ফুলে বাগান হাসছে। বাগানের পেভমেন্টে সেই পুরোনো আমলের মতো করে পাথর সিমেন্টে বাঁধাই করা। পার্কের ঠিক মাঝখানে একটা ছোট ইউরোপীয় ঘরের মতো মণ্ডপ, সাদা রঙের। ফরাসি আবেশ এখন আরও খোলতাই করে দিল।

pxt77Lt.jpg


আয়ি মাণ্ডাপাম

অবশ্য এই মণ্ডপ নির্মাণ করেছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে একজন বারাঙ্গনা জলের অভাব পূরণের জন্য। তিনি নিজ বাড়ি ভেঙে এই জায়গায় একটি কূপ খনন করেন শহরবাসীর জলের অভাব পূরণের জন্য। তাঁর নাম ছিল আয়ি। শহরবাসীও তাঁকে ভোলেনি। এই মণ্ডপের নাম রাখা হয়েছে ‘আয়ি মাণ্ডাপাম’। আর পার্কটির নাম ‘ভারতি পার্ক’।

আরেক পাশে গভর্নরের দপ্তর ‘লা প্যালেস দ্যু গভর্নমেন্ট’। সেটা আরও পুরোনো, কিন্তু ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশের মতো মনোহর। পার্ক থেকে সাদা রঙের বিশাল এই দপ্তর দেখা যায়। গাছপালায় ঘেরা, ভবনের সামনে আদিগন্ত সবুজ ঘাসের গালিচা। বাইরের সাদা ফটকের দুই পাশে দুটো কামান রাখা। ১৭৩৮ সালে নির্মিত ভবনটির গেট জনসাধারণের জন্য বন্ধ, শুধু গভর্নর সাহেব এবং তাঁর অফিসের লোকজনই প্রবেশ করতে পারেন। আমার আগে বেশ কিছু ইউরোপীয় ভ্রমণার্থী এই ভবনের সামনে দিয়ে ঘুরে গেলেন। ভবনটি বারোক স্থাপত্যকলায় নির্মিত হয়েছিল। এরপর ভেঙে রোকোকো ডিজাইন করা হয়েছে, যা এখন আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। অবশ্য আমার মতো আনাড়িকে বারোক বা রোকোকো বুঝালে অতি অবশ্যই উল্টোটাই বুঝব।

JB82aro.jpg


গভর্নরের দপ্তর ‘লা প্যালেস দ্যু গভর্নমেন্ট’

এখান থেকে এমজি রোডের দিকে হাঁটা দিলাম। পথে ফ্রান্স থেকে আগত কত যে বুড়াবুড়ি দেখলাম, কী যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন! বেশির ভাগ ফ্রান্সবাসী ভারত ভ্রমণে এলে পন্ডিচেরি না দেখে ফিরে যান না। স্বদেশি একটা টান রয়েই যায়। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই বা মহাবালিপুরামে যত ফ্রেঞ্চ ট্যুরিস্ট দেখেছি, তাঁদের সবারই পরবর্তী গন্তব্য পন্ডিচেরি। অগ্রজদের রেখে যাওয়া চিহ্ন দেখার কী যে এক তাড়না–বাসনা, সে আমরা আর বুঝি কই! আমরা এক শহরে কয়েক বছর থাকলে পরে যদি স্মৃতির টানে সেখানে কোনো কাজ বা কারণ ছাড়াই যাই, তাহলে সবাই ভুরু কুঁচকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করতে থাকে। তবে পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই, যাঁদের আদি নিবাস একসময় বাংলাদেশে ছিল, তাঁদের চোখে এই তাড়না দেখেছি আমি।

সন্ধ্যা হওয়ার পথে একখানা মন্দিরও দেখে ফেললাম হোয়াইট টাউনের শেষ কিনারায়, সাগরপাড়ে। দক্ষিণ ভারতের সব মন্দিরই মীনাক্ষী মন্দিরের আদলে তৈরি করা। মন্দিরের সামনে গোলাপি কমল সারি বেঁধে আধশোয়া হয়ে চেয়ে আছে পূজার নৈবেদ্য হবে বলে। কোমল পাপড়ির রেখায় রেখায় মন্ত্রোচ্চারণ হতে হতে নটরাজের পায়ের কাছে ঢলে পড়ার আশায়।

যেকোনো মন্দিরের বাইরের কারুকাজ আমায় মুগ্ধ করে বেশি। আয়তাকার গোপুরাম বা চূড়া অবধি বিভিন্ন দেবদেবী, ভক্ত, সাধারণ মানুষ, মুনি–ঋষিদের ছোট ছোট রঙিন মূর্তি সারি সারি খোদাই করা। দূর থেকে কিছুই বোঝা যায় না, কাছে এলে গোপুরামের গায়ে খোদাই করা গল্প চোখে পড়ে।

(চলবে)

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 
ঐতিহাসিক নিদর্শন এর ভরপুর একটি দেশ, অসাধারণ লাগলো
 

Users who are viewing this thread

Back
Top