মানুষ চলার পথে নানা জনের সঙ্গে নানা সম্পর্কে জড়ায়। এরই মধ্যে কিছু সম্পর্ক পাড়ি দেয় বহু পথ। আবার কিছু সম্পর্ক প্রথম পরিচয়েই ইতি টানে। যার নামকরণগুলোও শ্রুতিমধুর—বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, প্রেমিক-প্রেমিকা প্রভৃতি। নিঃসন্দেহে সব সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারিবারিক সূত্রে তৈরি হওয়া সম্পর্ক। অর্থাৎ যাঁদের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি পরিচয় প্রতিষ্ঠা পায়।
অন্যভাবে বলা যায়, পৃথিবীতে আমাদের বনিয়াদ যাঁদের ঘিরে তৈরি হয়। কাছের মানুষ বলেই তাঁদের সঙ্গে নানা টানাপোড়েন দেখা দেয়। কিন্তু যেকোনো বিপদে সবার আগে তারাই পাশে দাঁড়ায়। এর ব্যতিক্রম যে ঘটে না, তা কিন্তু নয়। তবুও তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কের ফুটোফাটাগুলি নিয়মিত মেরামত করা জরুরি। চলমান করোনা মহামারি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের আরও বেশি মানবিক হওয়া উচিত। কারণ লকডাউন নামের বন্দী দশায় যাঁরা নিজ বাড়ি থেকে দূরে, পরিবার, স্বজন, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে একা থাকতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাই বুঝেছেন সম্পর্কের মাহাত্ম্য। তাই সম্পর্কের প্রতিও হতে হবে মানবিক।
পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিন
দূরে থাকলে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলুন নিয়মিত। কাছাকাছি থাকলে অন্তত এক বেলা একসঙ্গে খাবার খান। সবার সঙ্গে বসে আড্ডা দিন, ইনডোর গেমও খেলতে পারেন, দেখতে পারেন সিনেমা। পরিবারে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন, তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দিন। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান। কারণ করোনা পরিস্থিতি তাঁদের জন্য খুবই অসহনীয় এবং ভয়ের। পরিবারের ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করুন। তাদের গল্প শোনান, কেননা, এখন শিশুরা গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। খেয়াল রাখতে হবে নিজের দিকেও। বই পড়ুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। অবসর সময়টুকু উপভোগ করুন।
বিধিনিষেধ শিথিল হলেও সতর্ক থাকুন
বিধিনিষেধ চলতেই থাকবে, বিষয়টা এমন নয়। ধাপে ধাপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চলেছে সবাই। দোকান, শপিংমল, গণপরিবহন খুলে গেলেই খুশিতে আত্মহারা না হয়ে সতর্ক হোন। এমন অবস্থায় অহেতুক পরিবার নিয়ে বাইরে চলাফেরা না করাই ভালো। কারণ আপাতদৃষ্টিতে সংক্রমণ কম মনে হলেও একটু অসতর্ক হলে তা আবারও বাড়তে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক লোকজনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। আবার মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা একটু একটু করে যে বন্দী জীবনের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেখানেও ছেদ পড়তে শুরু হয়েছে।
ভ্যাকসিন কিছু কিছু মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার করোনাকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে, এমন একটা মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমেই। কারণ মহামারির প্রাথমিক আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছেন অনেকে। যতই ভয় কাটুক, কঠিনভাবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। খেয়াল রাখতে হবে পরিবারের একেক বয়সীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেক রকম। বাচ্চাদের বেলায় বিষয়টি একটু বেশিই কঠিন। একে তো দীর্ঘদিন তারা ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছে। তার ওপর যখন দেখছে বড়রা অফিস, বাজারসহ নানা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছে, এতে তারাও বায়না ধরতে পারে। এমনকি একই কাজ করতে পারে পরিবারের বয়স্করাও।
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে প্রথমে নিজে একটু বুঝে নিন। তারপর তাদের বোঝান। বলুন, সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। পার্কে বা মাঠে এখনই যাওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, বোঝান। সবার ভালোর জন্য হলেও আরও কিছুদিন ঘরে থাকতেই হবে। অফিস, বাজারের মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলো কেন করতে হয়। মাঝেমধ্যে তাদের বাড়ির ছাদে নিয়ে যেতে পারেন।