What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পরিবারের নারীদের সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যবহার (1 Viewer)

dn7e37J.png


মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাচরণ অনুসরণ করা সুন্নত। তাই তাঁর প্রতিটি আচরণই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে নারীর মর্যাদা সুউচ্চ, তবু এ ভুল ধারণাই বদ্ধমূল যে ইসলামে নারীরা সব দিক থেকে বঞ্চিত বা অসম্মানিত। নারীর প্রকৃত সম্মান বোঝার জন্য রাসুল (সা.) নারীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছেন, সেটা জানা খুবই জরুরি।

মা, স্ত্রী বা কন্যা যেকোনোরূপেই নারী সম্মানিত। রাসুল (সা.) মা আমিনাকে হারিয়েছেন শৈশবে। দুধমা হালিমাকে তিনি আজীবন মায়ের মতোই সম্মান করেছেন। নিজের চাদর খুলে তাঁকে বসতে দিতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন এবং উপঢৌকন পাঠিয়েছেন সন্তানের মতোই।

রাসুল (সা.)-এর জীবনের আরেক শ্রদ্ধেয় নারী উম্মু আইমান (রা.)। ক্রীতদাস ছিলেন এই সাহাবি। রাসুল (সা.) তাঁকে উম্মু বা মা বলে ডাকতেন এবং মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। রাসুলের জন্মের পর তিনিই প্রথম তাঁকে কোলে নেন। রাসুল (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁকে ছেড়ে যাননি। রাসুল (সা.) ও খাদিজা (রা.) তাঁকে বিয়ে দেন মধ্যবয়সেই। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কে এই বেহেশতি নারীকে বিয়ে করতে চাও, তখন জায়েদ বিন হারিসা (রা.) তাঁকে বিয়ে করেন।

আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের সুখ আর প্রশান্তির জন্য। যেমন সুরা রুমে আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন যাদের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য প্রশান্তি।

তোমাদের মধ্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসা ও মায়া।’ রাসুল (সা.)-এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর জীবৎকালে তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি। এরপর আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ১১টি বিয়ে করেন। বিভিন্ন বয়সের নারী ছিলেন রাসুলের স্ত্রী। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক বড় আবার কেউ অনেক ছোট। অথচ বিভিন্ন বয়সী সব স্ত্রীর সঙ্গেই রাসুল (সা.)-এর ছিল ভালোবাসার ও মধুর সম্পর্ক। বয়সে বড় খাদিজা (রা.)-কে রাসুল (সা.) এতটাই ভালোবাসতেন যে যখনই তাঁর স্মৃতিচারণা করতেন, তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত হতেন। খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-কে আগলে রেখেছিলেন আর্থিক ও মানসিকভাবে। প্রথম ইমান এনে পাশে থেকেছেন নবুওয়াতের সূচনা থেকেই। রাসুল (সা.) নির্ভার আর নিশ্চিন্ত ছিলেন খাদিজার ভালোবাসার সান্নিধ্যে।

আবার প্রায় ৪৫ বছরের ছোট স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গেও ছিল তাঁর প্রেমময় দাম্পত্য জীবন। আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে তিনি সমবয়সী স্বামীর মতোই আচরণ করেছেন। ছোট্ট আয়েশা (রা.) খেলাধুলা করেছেন, হাস্যকৌতুকে মেতেছেন। খেলাচ্ছলে কখনো দৌড়িয়েছেন, এক পাত্রে খেয়েছেন, পান করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একবার দৌড় প্রতিযোগিতায় আগে চলে গিয়েছিলাম, পরে আমি স্বাস্থ্যবান হয়ে যাওয়ার পর দৌড়ে তিনিই বিজয়ী হলেন। রাসুল (সা.) তখন বলেন, এ বিজয় সেই পরাজয়ের বদলা।’ (আবু দাউদ: ২৫৭৮) আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, একবার হাবসি ছেলেরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা করছিল। রাসুলের আড়ালে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ সেই খেলা দেখেন আয়েশা (রা.)। রাসুল তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন সামান্য বিরক্তি প্রকাশ না করেই।

স্ত্রীদের সঙ্গে রাসুল (সা.) একসঙ্গে খাবার খেতেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজেও তাঁদের ডেকে নিতেন। প্রতিনিয়ত তাঁদের শিক্ষা দিতেন যেন তাঁদের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ে। হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। তাই তিনি বর্ণনা করেছেন দুই হাজারের বেশি হাদিস। রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারে অবদান রেখেছেন। আয়েশা (রা.)-কে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘তুমি কখন সন্তুষ্ট থাকো আর কখন আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হও, আমি বুঝতে পারি। যখন তুমি বলো “মুহাম্মদের প্রভুর শপথ!” তখন তুমি খুশি থাকো আর যখন বলো “ইব্রাহিমের প্রভুর শপথ!” তখন তুমি রেগে থাকো।’ নবীজি (সা.) আদর করে হুমাইরা বলে ডাকতেন আয়েশা (রা.)-কে। নিজের কাজ নিজে করতেন এবং ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। স্ত্রীদের নারীসুলভ দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং সুন্দর ভাষায় সংশোধন করে দিয়েছেন। তাঁদের আচরণে কষ্ট পেলে কথা কম বলতেন বা দূরত্ব রাখতেন, তবু কাউকে বকাঝকা বা প্রহার করেননি। প্রত্যেক স্ত্রীর মধ্যে সমতা বিধান করতেন। তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দিতেন।

‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে’—এই হাদিস থেকে বোঝা যায় নবীজির শিক্ষা। স্ত্রীদের সঙ্গে কখনোই প্রভুসুলভ ব্যবহার করেননি নবীজি (সা.), বরং বন্ধুর মতো ছিলেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (বুখারি: ৫১৮৪) ‘আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (মুসলিম: ১২১৮)

সন্তান আল্লাহর নিয়ামত; তা পুত্র হোক বা কন্যা। কিন্তু মানুষ আদিকাল থেকেই পুত্রকে সৌভাগ্য আর কন্যাকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করে আসছে। জাহেলি যুগ থেকে আজকের তথাকথিত আধুনিক যুগেও কন্যাসন্তানের জন্মকে দুঃসংবাদ মনে করা হয় অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কন্যাসন্তানের জন্মকে সুসংবাদ (সুরা আন-নাহল, আয়াত: ১৬) বলেছেন। তাই অসংখ্য হাদিসে কন্যাসন্তান লালন-পালনের অপরিসীম ফজিলতের কথা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। ইসলামে কন্যাসন্তানের প্রতিপালন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির উপায়। রাসুল (সা.)-এর চার কন্যা ফাতেমা (রা.), জয়নব (রা.), উম্মু কুলসুম (রা.) এবং রুকাইয়া (রা.)। রাসুলের জীবদ্দশাতে ফাতেমা (রা.) ছাড়া বাকি তিন কন্যার মৃত্যু হয়। ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র ছয় মাস পর ইন্তেকাল করেন। কোনো সফরে যাওয়ার সময় মেয়ে ফাতেমা (রা.)-এর কাছে যেতেন সবার পরে আবার ফেরার পর প্রথমেই দেখা করতেন ফাতেমা (রা.)-এর সঙ্গে। ফাতেমা (রা.) যখনই রাসুল (সা.)-এর কাছে আসতেন, তিনি মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। চুমু দিয়ে হাত ধরে তাঁকে পাশে বসাতেন। মিশওয়ার বিন মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফাতেমা আমার অংশ, যে ফাতেমাকে রাগান্বিত করল, সে যেন আমাকেই রাগান্বিত করল।’ (সহিহ বুখারি)

যে নারীদের জাহিলি যুগে মানুষ বলেই গণ্য করা হতো না, ইসলাম সেই নারীকে দিয়েছে অপরিসীম মর্যাদা। রাসুল (সা.)-এর যুগে নারীদের পদচারণ ছিল সর্বত্র। নারীরা যুদ্ধে গেছেন, মসজিদে জামাতে নামাজ পড়েছেন আবার অকপটে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন প্রয়োজনীয় মাসআলা। জানতে চেয়েছেন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে।

* তাসনীম আলম: শিক্ষিকা, ইসলামিক স্টাডিজ, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top