What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected 'ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়' (1 Viewer)

apuvai

Moderator
Staff member
Moderator
Joined
Mar 23, 2019
Threads
20
Messages
12,899
Credits
81,983
Thermometer
Red Apple
Audio speakers
Pistol
Pistol
Thermometer

প্রবাদে আছে—ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়।

আমি গেলাম দ্বিতীয়বার। বেশ কয়েক বছর আগে একটা বই প্রকাশের ঝুঁকি নেওয়ার পরও আমার শিক্ষা হয়নি। আমি আবারও বই প্রকাশের কথা ভাবতে শুরু করলাম। দুই-একজন আশকারাও দিল, ‘করেন না ভাই! একটা বই করেন!’

আমি বই নিয়ে থাকি সন্দেহে। গতবার বই বের করেছিলাম। বইমেলার শেষের দিকে প্রকাশককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, কত কপি বিক্রি হলো?’

প্রকাশক অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন, ‘১৬ কপি।’

: কী বলেন! আমি তো নিজেই ১৭ কপি কিনছি।

: আপনি কিনা নিয়া গিয়া যাঁদের কাছে পুশ সেল করছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আইসা বই ফেরত দিয়া টাকা নিয়া গেছেন। বই বিক্রি হইছে টোটাল ১৬ কপি। আমার ধারণা, এইটা আরও কমবে!

: আরও কমবে মানে?

: মানে দোকানে আইসা বই ফেরত দেওয়ার ‘চান্স’ আরও আছে। আসলে আপনার বইয়ে তো পড়ার মতো কিছু নাই। হুদা-টাইপ বই।

লেখকের জন্য এ ধরনের কথা অত্যন্ত অপমানের। আমি অপমানিত হয়ে বললাম, ‘আসলে আপনাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নাই, নাইলে এই বই হাজারখানেক তো বিক্রি হইতই...!’

: তাইলে আপনিই বিক্রি কইরা দেন!

: কী! আমি?

: হুম। মেলা ফুরাইতে বাকি আছে আরও পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে ৫০টা বই বিক্রি কইরা দেন দেখি!

আমি চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করলাম। পাঁচ দিনে ৫০টা বই...এ আর এমন কী! আমার ফেসবুক-ফ্রেন্ডই আছে তিন হাজার। প্রথমেই স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের বই কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলাম। প্রত্যেকের ইনবক্সে বইয়ের ছবিসহ প্রকৃত দাম, ছাড় ইত্যাদি বিস্তারিত জানালাম। লিখলাম, ‘এই বই পড়লে আরও জানতে পারবেন...।’

সেই রাতেই বন্ধুসংখ্যা তিন হাজার থেকে আড়াই হাজারে নেমে এল। কেউ কেউ নীরবতা পালন করল সিন করার পরও। কেউ কেউ খুবই উৎসাহ নিয়ে বইয়ের পুরো বৃত্তান্ত জানতে চাইল, ‘কী বই? কয়টা গল্প? গল্পগুলো কেমন?’ তারা অতি আগ্রহের সঙ্গে জানাল, বইটা অবশ্যই কিনবে। আমার অবশ্য ঘোর সন্দেহ হলো—অন্যরা দুয়েকটা বই কিনলেও, এই অতি উৎসাহীরা আমার বইটা কেনা তো দূরের কথা, ছুঁয়েও দেখবে না!

 
ভার্চ্যুয়াল বন্ধু ছেড়ে আমি ছুটলাম আসল বন্ধুদের কাছে। এক-একটা বন্ধুকে অনেক অনেক দিন পর ফোন করি। তারা আমার কথা অত্যন্ত গম্ভীরভাবে শোনে এবং জানায়, ‘নেক্সট ফ্রাইডেতেই’ তারা বইমেলায় গিয়ে আমার বইটা কিনবে।

আমি বুকে সাহস ও ফেসবুকে আকাঙ্ক্ষা বাঁধলাম। স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে জানিয়ে দিলাম, ‘অচিরেই আমার বইটা বেস্টসেলার হতে যাচ্ছে মেলায়!’

শুক্রবার এল। বন্ধুরা এল না। না, একজন অবশ্য এল। আমার ধারণা, সে অন্য কোনো কাজে শাহবাগে এসেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় বইটা তাকে কিনতেই হলো। আমি যখন খুশিমনে তাকে অটোগ্রাফ দিচ্ছি, খেয়াল করলাম, তার মুখটা কেমন চিমসে হয়ে আছে।

আমি বললাম, ‘কী রে, কী হইছে?’

: না, কিছু না। আসলে তোর ভাবি খুব হিসাবি তো...দেড় শ টাকা এ রকম বেহুদা কাজে বেরিয়ে গেছে জানলে খুব রাগারাগি করবে!

আমি কথা বাড়ালাম না। ওর হাত থেকে বইটা শুধু নিয়ে নিলাম। বন্ধুরা বন্ধুদের উন্নতি সহ্য করতে পারে না, এটাই স্বাভাবিক!

আমার সব ভরসা গিয়ে আছড়ে পড়ল এবার অফিসের কলিগদের ওপর। তাঁদের প্রতিদিনই জিজ্ঞেস করি, ‘কি, বইমেলা যাবেন না?’

কলিগরা বলেন, ‘আজকে না, আজকে না। আপনার না একটা বই বের হয়েছে? ওটা কিনব। অবশ্যই কিনব। কিন্তু আজকে যাব না।’

অফিস শেষ হতে না হতেই দেখি, তাঁরা বেরিয়ে যান। নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার সময় আমাকে দেখলে চুপ হয়ে যান হঠাৎই। কেউ কেউ বলেন, ‘আরে লেখক সাহেব, কেমন চলছে আপনার বই? দেখি আজকালকের মধ্যেই যাব বইমেলায়!’

তখন ইচ্ছা হতো, রাগ করে জানিয়ে দিই আজকালকের মধ্যে বইমেলা গিয়ে লাভ নাই। কারণ, গত পরশুই বইমেলা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু যাঁরা আমার বইয়ের গুরুত্ব বোঝেনি, তাদের কিছু বলেই বা লাভ কী?

অবশ্য আমার বইয়ের গুরুত্ব কেউই বোঝেনি। সাকল্যে বিক্রি হয়েছিল ১৯ কপি। পরের সেই দুটি বইও আমি কিনেছিলাম। শেলফের একটা তাক পূরণ করতে আর দুটি বইয়েরই দরকার ছিল!

বই নিয়ে আমার এমন বেইজ্জতিপূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকার পরও আমি আবার বই বের করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ফেসবুকে লম্বা একটা স্ট্যাটাস দিলাম, ‘আসছে আমার নতুন বই। বইয়ের নাম...।’

নাম শোনার অপেক্ষা পর্যন্ত কেউ করল না। ফেসবুকে আড়াই হাজার বন্ধু থেকে অচিরেই সেটা নেমে এল দেড় হাজারে। অফিসের কলিগরা হঠাৎই ভীষণ কাজ-পাগলা হয়ে উঠলেন। আমার দিকে তাকানোর মতো সময় ও সুযোগ—কোনোটাই তাঁরা পেলেন না। আর আমার পুরোনো বন্ধুদের ফোন বেশির ভাগ সময়ই বিজি পাওয়া গেল। ফোনে যাদের পেলাম, তারাও খুব তাড়া দেখিয়ে বলল, ‘দোস্ত, একটু পরে কল দিতাছি!’

সেই ‘একটু পরে’ আর আসে না। আমি বইয়ের কথা কাকে বলব বুঝে পাই না। এর মধ্যেই প্রকাশকের ফোন এল। বলল, ‘হ্যালো ভাই, আপনার বইটা বের হতে একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনার পাঠকদের বলবেন একটু অপেক্ষা করতে।’

আমি ফোন রেখে একটা নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম, ‘ভাইরে, আমার পাঠকেরা এখন অনেক আগে থেকেই তাদের “লেখক হইতে সাবধান” হয়ে গেছে!

ফেসবুক থেকে সংগৃহিত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top