What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নিসর্গের মৌতাতে প্রাক্‌-ইতিহাসের অনুভব (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
আদিগন্ত সবুজের মাঝে নানা রঙের ফুল। প্রকৃতির নকশিকাঁথায় বোনা অনুচ্চার সময়ের গল্প। মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টিতে ছড়ায় নৈঃশব্দ্যের আবেশ। শেফিল্ডের পাহাড়, নদী, ঝরনা আর অবিরল প্রকৃতি সেই অনুভবেরই দৌতনাবহ। এই অনিন্দ্য নিসর্গ কেবল সৌন্দর্যের মৌতাত নয়, হৃদয় উদ্বেল করা ইতিহাসের কথকতাও।

i7d6Tz1.jpg


হোপ ভ্যালি

ব্রিটিশ গ্রীষ্ম মানে অদ্ভুত এক আনন্দের বান। চারপাশটা কেমন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। হেথায় হোথায় ফোটে হাজারো ফুল। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় প্রকৃতি। আমরা যারা লন্ডনে থাকি তারাও উন্মুখ হয়ে উঠি সাগরতীরে অথবা লন্ডনের কোলাহল ছেড়ে কোথাও সবুজে ছাওয়া শান্ত পরিবেশে বুকভরে অক্সিজেন নিতে। সেবার আমাদের অক্সিজেন গ্রহণের গন্তব্য ছিল শেফিল্ড।

KrKyc5R.jpg


আপার ডারওয়েন্ট ভ্যালিতে মৌনি ও রিয়া; দূরে উপত্যকা ছেয়ে আছে হিদার ফুলে

নর্থ ইংল্যান্ডের মাঝারি সাইজের একটি শহর। লন্ডন থেকে দূরত্ব ১৬১ মাইল। সবুজময় একটি শহরের নাম যে স্টিল সিটি হতে পারে, সেটা শেফিল্ডে না গেলে বোঝার উপায় নেই। ডউন নদীর তীরে অনেকগুলো পাহাড়ের সমন্বয়ে তৈরি সবুজ শেফিল্ডকে বলা হয় ব্রিটেনের পিক ডিস্ট্রিক্ট। যে ডিস্ট্রিক্টের চারপাশে রয়েছে পাথুরে পাহাড়ে রকারি ফ্লাওয়ার, রয়েছে লেক, পাহাড়ি উপত্যকা আর হাত দিয়ে মেঘ ছুঁয়ে দেখার সুযোগ। আগে অনেক লেখায় বলেছি আমার বাড়ি সিলেটে। মেঘালয়ের খাসি হিলস বা খাসিয়া, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের ঠিক এপাশে আমার বাড়ি। যেখান থেকে আষাঢ় মাসের ঘন বর্ষায় স্পষ্ট দেখা যায় উঁচু পাহাড় থেকে উদ্যম ছন্দে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনার ঢল; যার ছোঁয়া লাগে বাড়ির কাছের সুরমা, কুশিয়ারা কিংবা কুড়া নদীতে। তাই পাহাড়, নদী, জল জঙ্গল আর সবুজের অন্তরঙ্গতা আমাকে দেয় শৈশবের আনন্দ।

আমার স্ত্রী মৌনির দিদি জামাইবাবুরা শেফিল্ডে থাকেন। সংগত কারণে লজ কিংবা হোটেল ভাড়া করার দৃষ্টতা দেখানো অনেকটাই হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলার মতোই। অতএব তাঁদের সঙ্গে থাকার পাকা সিদ্ধান্ত শেষে কাটা হলো ইস্ট মিডল্যান্ডস রেলওয়ে ট্রেনের টিকিট। ভ্রমণের দিন ঘুম থেকে উঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো লন্ডনের কিংস ক্রস সেইন্ট প্যানক্রস স্টেশনের দিকে।

qDUu5p5.png


লন্ডনের কিংস ক্রস সেইন্ট প্যানক্রস স্টেশনে লেখক

শুধু কিংসক্রস স্টেশনটই নয়, বস্তুত প্রায় সব বন্দর কিংবা স্টেশনই আমার কাছে মনে হয় এক একটি ইচ্ছে পূরণের উপাসনালয়। যেখান থেকে প্রতিদিন শুরু হয় অগুনতি স্বপ্নযাত্রা অথবা স্বপ্নযাত্রা শেষে একতাল কাদামাটির মতো চোখে–মুখে লেপ্টে থাকা আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরা।

স্টেশনে ঢোকার আগেই রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া একটি ক্যাফের বারান্দায় বসে সকালের রোদ মাখতে মাখতে ব্রেক ফাস্ট সারলাম। মেনুতে ছিল ব্রেড টোস্ট, হ্যাশ ব্রাউন, বেকড বিনস, রোস্টেড টমেটো অ্যান্ড মাশরুম, সসেজ, ওমলেট আর চা। যাকে বলে একেবারে ইংলিশ ব্রেক ফাস্ট। ইতিমধ্যে ইস্ট মিডল্যান্ডস রেলওয়ের লাল-হলুদ রঙের ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অপেক্ষায়। দেখতে একেবারে বিশ্ববিখ্যাত ঘোড়া হেকনি হর্সের মতো, গতিও তেমন। ব্যস, আমরা সওয়ারি হলাম সেই তেজি ঘোড়ার।

Wy2YEbv.jpg


লেখক (সর্বডানে), রিয়া ও রাতুল

ব্রিটেনের কান্ট্রি সাইডের সৌন্দর্য ইন্দ্রপুরীর মতো। দুপাশে এমন নয়নাভিরাম নিসর্গের বুক চিরে কু ঝিক ঝিক আওয়াজ তুলে আমাদের ট্রেন ছুটে চলে। গন্তব্য পিক ডিস্ট্রিক্ট। স্টেশনে পৌঁছে দেখি দাদাবাবু গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ব্যস, বাড়ি পৌঁছে খাওয়াদাওয়া, গল্প, আড্ডাতেই দিনাতিপাত; সেই সঙ্গে প্রস্তুতি পরের দিনের।

p78pzqf.jpg


বয়ে চলেছে আশপ নদী

সকালে উঠেই শুরু হলো যাত্রা। গন্তব্য ডার্বিশায়ারের ক্যাসল্টনের গুহা এবং লেডিবাওয়ার রিজার্ভার, যেখানে পাহাড় আর ঝরনার সঙ্গে খেলা করে শ্যামাঙ্গী নদী আশপ। সেদিনের সঙ্গী ছিলেন বড় দাদাবাবু, মৌনি, রিয়া আর রাতুল।

শেফিল্ড থেকে লেডিবাওয়ারের দূরত্ব মাত্র ১০ মাইল। গাড়িতে যেতে সময় লাগে মাত্র ২৩ মিনিট। কিন্তু যাত্রাপথের সেই ২৩ মিনিট রাস্তার দুপাশের অবারিত প্রকৃতি থেকে চোখ ফেরানো দায়। রাস্তার দুপাশে নাতিউঁচু পাহাড়গুলো পাথুরে মাটিতে জন্ম নেওয়া লাল রঙের হেদার ফুলের মেলা দেখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ছোটো নদী’ কবিতার একটি লাইন মনে পড়ল। কবি লিখেছেন দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। আর এখানে হেদার ফুলের লাল রঙে ছাওয়া।

teklRXg.jpg


লেডি বাওয়ার। শেফিল্ড থেকে দূরত্ব মাত্র ১০ মাইল

সংগত কারণে জায়গাটার নাম হেদার সেইজ। ইতিমধ্যে পাহাড়, ঝিল আর অবারিত প্রকৃতি পেরিয়ে আমরা প্রায় উঠে এসেছি ১ হাজার ৫১৬ ফুট উঁচু উইন হিলের চূড়ার কাছাকাছি। যদিও এর বেশির ভাগই গাড়ির রাস্তা। তাই রক্ষে। উইন হিলের ভিউ পয়েন্টে এসে হঠাৎ করেই সবার মধ্যে ভর করে প্রচণ্ড নীরবতা। নিচের স্বচ্ছ জলধারা, আপার ডেরওয়েন্ট ভ্যালি আর দূরের লাল পাহাড়ের সামনে আসলে তেমন কিছু বলার থাকে না। যা থাকে তা শুধুই দেখার।

ভূতত্ত্ববিদেরা ধারণা করেন, ডার্বিশায়ারের এই উঁচু ভূমি নাকি তৈরি হয়েছে কার্বোনিফেরাস নামের ভূতাত্ত্বিক সময়কালে; যা ৩৫৮.৯ মিলিয়ন বছর আগের ডিভোনিয়ান পিরিয়ডের সমাপ্তি থেকে ষাট মিলিয়ন বছর ধরে বিস্তৃত ছিল। ওই সময়ে মানুষের অস্তিত্ব ছিল না এই পৃথিবীতে। সেই সময়ের প্রধান প্রাণী ছিল সরীসৃপ, মাকড়সা, বিছা ইত্যাদি আর ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ। সেই কার্বোনিফেরাস সময়কালে টেকটোনিক প্লেটগুলোর ক্রিয়াকলাপে পৃথিবীর রূপান্তরকালে তৈরি হয় ব্রিটেনের পাহাড়ে ঘেরা এই পিক ডিস্ট্রিক্ট।

b9X39q1.jpg


ক্যাসলটন ভিলেজের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে জলধারা

আমি পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটছি আর ভাবছি শত শত মিলিয়ন বছরের ঘটনা। কেমন ছিল আজকের সবুজে ঘেরা অপার্থিব সৌন্দর্যময় এই পিক ডিস্ট্রিক্টের রূপ? এমন সময় দূরে ঝুপ করে কিছু একটা উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে মনে হলো এই বুঝি ক্রমাগত নগরায়ণের চাপে পৃথিবীকে বাঁচাতে মিলিয়ন বছরের পুরোনো ডাইনোসররা ফিরে এসে হাতজোড় করে বলল, দাও সে অরণ্য লও এ নগর।

চোখধাঁধানো লেডি বাওয়ার শেষে যাত্রা শুরু হলো ক্যাসলটনের পথে। যে ছোট নগরের কথা লেখা আছে ১০৮৬ সালের ডুমসডে বইয়ে। পাহাড়ি স্বচ্ছ পিকসোল জলধারার কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ক্যাসেলটনের চারপাশে রয়েছে নাতিদীর্ঘ পাহাড়ের সমাবেশ, চমৎকার ছিমছাম বাড়িঘর আর প্রাচীন গুহা। গুহা বিষয়টা আমার খুব প্রিয় জায়গা নয় বিধায় গুহায় ঢোকা হলো না; তবে নিজেকে বঞ্চিত করিনি স্থানীয় ক্যাফেতে পাহাড়ি নদীর ট্রাউট মাছের ব্যাটার্ড ফিশ অ্যান্ড চিপসের স্বাদ নেওয়া থেকে।

yD7aMk5.jpg


ক্যাসলটন মুনমেন্ট

রসনা তৃপ্তি শেষে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল জনশূন্য ট্রেনস্টেশন যার নাম হোপ। সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী উপন্যাসে পড়েছিলাম দার্জিলিংয়ের ঘুম স্টেশনের কথা। ঘুম স্টেশন থেকে আট হাজার মাইল দূরে ক্যাসলটন নামের এই পাহাড়ি জনপদে রয়েছে হোপ নামের একটি স্টেশন।

M1VmOMP.png


জনশূন্য এই ট্রেনস্টেশনের নাম হোপ, ছবি: উইকিপিডিয়া

যে স্টেশনের নাম হয়তো নেই কোনো লেখকের গল্পে। কেউ হয়তো মনেও রাখবে না চাকচিক্যহীন আটপৌরে এই স্টেশনের কথা। অথচ হোপ নামের এই ছোট্ট নির্জন স্টেশনটা তীব্রভাবে আমাকে টানল প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হওয়া তাঁর নিঃসঙ্গ দিন–রাত্রির জন্য। দুই হাজার বছরের পুরাতন ইট-পাথরের জঙ্গলে বসবাস করা আমার অনেকটা হিংসেও হলো হোপ স্টেশনের অন্তহীন প্রকৃতিবাস দেখে।

এবার বাড়ি ফেরার পালা। আমরা ছুটলাম শেফিল্ডের পথে। গাড়ি স্টার্ট দিয়েই দাদাবাবু ছেড়ে দিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গান:

সেই সুরে, সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে।
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে
ভুলে-যাওয়া গানের বাণী
ভোলা দিনের কাঁদন হাসি।
ভালোবাসি, ভালোবাসি…

(চলবে)

* লেখক: অসীম চক্রবর্তী | পিএইচডি গবেষক ও প্রভাষক, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ (যুক্তরাজ্য)
 
বাঃ মানাসভ্রামন ই সই। কারণ এ জীবনে এসব জায়গা যাওয়া ত হবে না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top