চারদিকে অনেকেরই জ্বর, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সময় এমন উপসর্গে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এসব উপসর্গকে সাধারণ সর্দি-কাশি মনে করে পাত্তাই দিচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে করোনা ও সাধারণ সর্দি-কাশি তথা ফ্লুর মিল-অমিল জানা থাকা জরুরি।
করোনা ও সাধারণ ফ্লুর মিল রয়েছে যেসব উপসর্গে
দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। সংক্রমণ ছড়ায় পরস্পরের সংস্পর্শে, সর্দি ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নিতে পারে দুটোই। বিশেষ করে, যাঁরা বয়োবৃদ্ধ ও যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের জন্য ফ্লু ও করোনা—দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ।
সাধারণ কিছু সচেতনতার মাধ্যমে করোনা ও ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়। যেমন মাস্ক পরা, হাঁচি–কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, সাবান–পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।
করোনা ও ফ্লুর অমিল
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে হয় ফ্লু। আর সার্স করোনাভাইরাস গোত্রের নতুন এক সদস্যের সংক্রমণে হয় কোভিড-১৯। ফ্লুর তুলনায় করোনায় জটিলতা দেখা দেয় বেশি। কেবল নিউমোনিয়াই নয়, করোনার মারাত্মক অন্যান্য জটিলতার মধ্যে হঠাৎ হাইপোক্সিয়া বা অক্সিজেন কমে যাওয়া, এআরডিএস, রক্ত জমাট বাঁধা ইত্যাদি অন্যতম।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তুলনায় করোনাভাইরাস ছড়ায়ও দ্রুত। করোনার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশ একেবারেই উপসর্গহীন থাকতে পারে। তবে এই রোগীরাও সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রাখে।
এদিকে অ্যালার্জিজনিত সর্দির উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া অথবা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। এদের আগে থেকেই ধুলাবালি, ফুলের রেণু, পোকামাকড়, পশম, পোষা প্রাণীর লোম বা প্রসাধনীতে অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে। অ্যালার্জিতে সাধারণত জ্বর হয় না।
যা করবেন
করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় সন্দেহজনক কোনো উপসর্গকেই অবহেলা করা চলবে না। করোনায় প্রথমে জ্বর বা মৃদু জ্বর (তাপমাত্রা ৯৯-১০১ ডিগ্রি) থাকে। সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। প্রবল এই জ্বর নামতে চায় না সহজে। কারও কারও অবশ্য জ্বর দু–তিন দিনেই সেরে যায়। জ্বর দীর্ঘমেয়াদি হলে বুঝতে হবে, ফুসফুসে নিউমোনিয়া হয়েছে।
শুকনা কাশি, কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম করোনার সংক্রমণের লক্ষণ। ফ্লুর মতো হাঁচি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ততটা দেখা যায় না এতে। তবে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না চলে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে করোনায় চোখ লাল বা কনজাংটিভাইটিসও হতে পারে। সারা গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, তীব্র অবসাদও থাকতে পারে।
করোনার মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। আবার কারও কারও শ্বাসকষ্ট তেমন তীব্র অনুভূত না হলেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে।
যদি সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দেয়, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার দু–তিন দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করান। সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খান। বাড়িতে অক্সিজেন মাপতে থাকুন।
যদি জ্বর বাড়ে, অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হয়, রক্তচাপ কমে যায় অথবা রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২ শতাংশের নিচে চলে যায়, তাহলে রোগীকে হাসপাতালে নিন।
* ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান | বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ