What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মুসলিম রাষ্ট্রে নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার (1 Viewer)

DoW57Al.jpg


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবেসে কুল মখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। জিন, ইনসান বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে। মানুষ সামাজিক জীব, এই সমাজে সৎ ও যোগ্য লোকেরা নেতৃত্ব দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি যাবুরে (কিতাবে) উপদেশাত্মক লিপিবদ্ধ করেছি—নিশ্চয়ই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে আমার সৎকর্মশীল সুযোগ্য বান্দাগণ। (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ১০৫)। তাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে কীভাবে শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন, তা-ও বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর কালামে। ‘আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দিলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত প্রদান করবে, সৎ কাজে আদেশ করবে ও মন্দ কাজে বাধা দেবে; সকল কাজের পরিণাম ফল আল্লাহরই এখতিয়ারে।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪১)।

মানবজাতির দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা শত পুস্তিকা ও চারটি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি মহাগ্রন্থ ‘কোরআন কারিম’। আল্লাহর বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অসংখ্য নবী, রাসুল পাঠিয়েছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন খোদায়ি বিধান ইসলামের পূর্ণতা দানের জন্য।

প্রিয় নবী (সা.) আইয়ামে জাহিলিয়াত তথা অন্ধকার যুগে আরবের মক্কা নগরে শুভাগমন করেন। সে সময় আরব ও মক্কা ছিল অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অপরাধ-অরাজকতার স্বর্গরাজ্য। মানুষকে হাটে-বাজারে বিক্রি করা হতো। নারীদের মানুষরূপে গণ্যই করা হতো না। শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। ধর্মের নামে অধর্ম চর্চা হতো। অশ্লীলতা চরম রূপ পরিগ্রহ করেছিল। নারী ও পুরুষ বিবস্ত্র হয়ে কাবাঘর তাওয়াফ করত। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বংশানুক্রমিকভাবে যুদ্ধবিগ্রহ চলতে থাকত। মানুষ মানুষের রক্ত পান করত, হত্যা করে কলিজা চিবিয়ে খেত।

অশান্তির দাবানলে জ্বলতে থাকা নরকসম স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে এলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আহ্বান করলেন ঐক্য, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার। কায়েমি স্বার্থবাদী কিছু অমানুষের কারণে তা সম্ভবপর হচ্ছিল না। শান্তির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ ও পরম সহিষ্ণুতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরত করে মদিনায় চলে গেলেন। মদিনা ও মদিনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিকসহ নানা ধর্মের ও নানা বর্ণের এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকদের নিয়ে একটি সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন; যা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ঐতিহাসিক চুক্তি ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এটি পৃথিবীর প্রথম লিখিত সনদ ও প্রথম সংবিধান। এ চুক্তির নানামুখী উদ্দেশ্যের অন্যতম ছিল যুদ্ধের পরিবর্তে পরস্পরের শান্তিপূর্ণ অবস্থান। আরও উদ্দেশ্য ছিল অত্যাচারিত, নিপীড়িতকে সাহায্য করা এবং চুক্তিভুক্ত সব পক্ষের মান–মর্যাদা ও ধর্মবিশ্বাসের অধিকার সংরক্ষণ করা।

ইসলামি সমাজ বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মানে শান্তির জন্য ধর্মীয় বিধান তথা ইসলামি শরিয়ত কার্যকর করা। ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলির মৌলিক উদ্দেশ্য পাঁচটি। যথা: জীবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান; সম্পদের মালিকানা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান; জ্ঞানের সুরক্ষা ও সুকুমারবৃত্তি বিকাশ; প্রজন্মের পবিত্রতা, বংশপরম্পরার ধারাবাহিকতা ও মানবসভ্যতা সুরক্ষা করা; ধর্মকর্ম ও বিশ্বাসের সুরক্ষা প্রদান করা।

ইসলামি সমাজ বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মানে শান্তির জন্য ধর্মীয় বিধান তথা ইসলামি শরিয়ত কার্যকর করা। ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলির মৌলিক উদ্দেশ্য পাঁচটি। যথা: জীবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান; সম্পদের মালিকানা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান; জ্ঞানের সুরক্ষা ও সুকুমারবৃত্তি বিকাশ; প্রজন্মের পবিত্রতা, বংশপরম্পরার ধারাবাহিকতা ও মানবসভ্যতা সুরক্ষা করা; ধর্মকর্ম ও বিশ্বাসের সুরক্ষা প্রদান করা।

বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষণা দিয়ে বললেন, ‘মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তেমনি পবিত্র ও সুরক্ষিত, যেমন হজের দিবস, আরাফাতের ময়দান, মক্কা নগরী ও কাবাঘর পবিত্র ও সুরক্ষিত।’ (মুহাম্মাদ ইবনে কাসির)।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিকের জান, মাল ও ইজ্জত-আবরু সুরক্ষা করা। প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা এটি বাস্তবায়ন করবেন। সচেতন জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতা করা কর্তব্য। না হলে দায়িত্ব অবহেলায় দায় এড়াতে পারবেন না।

সাম্য, মৈত্রী ও সামাজিক ন্যায়বিচার মদিনা আদর্শ ইসলামি রাষ্ট্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন অধিকারবঞ্চিতদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা। একের অপরাধে অন্যকে অভিযুক্ত না করা। প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা। প্রতিবেশীর অধিকার নিজের অধিকারের মতোই গণ্য করা। প্রতিবেশীর কোনো ক্ষতি না করা বা তার প্রতি কোনো অপরাধ সংঘটন না করা। কোনো জালিম বা অপরাধীকে সুরক্ষা না দেওয়া। (মুহাম্মাদ ইবনে হিশাম)।

ইসলামি বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর না হলে প্রত্যেক মুসলিম নাগরিক তার সামর্থ্য অনুযায়ী যত দূর সম্ভব নিজের ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও সমাজে পালন ও প্রতিষ্ঠা করায় সচেষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষে, সামাজিক সুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদে উঠে দাঁড়াতে হবে। কোনোভাবেই কোনো অজুহাতে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top