What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মুখোশ - The Mask (6 Viewers)

ronylol

Senior Member
Joined
Mar 4, 2018
Threads
36
Messages
737
Credits
72,376
by dayli passenger (Read full story here)

“বাবা ট্রেনে সাবধানে থাকিস। লোকজনের সাথে একটু বুঝে শুনে কথা বলিস, আর বেশী মেলামেশা বা মাখা মাখি একদম নয়। আর হ্যাঁ, পৌঁছেই আমার বা তোর মার মোবাইলে কল করে জানাবি কেমন আছিস। “ মাথা নেড়ে হুম মতন একটা শব্দ করে বুঝিয়ে দিলাম যে আমার চিন্তিত বাবার সব কটা কথা আমার মাথার সেলে গেঁথে গেছে। ট্রেনের সেকন্ড ক্লাস এসির দরজার পাদানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার বাবা, মা আর আমাকে সি-অফ করতে আসা প্রায় জনা পনের লোকের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলে বিদায় নিচ্ছি কোলকাতার উদ্দেশ্যে। কোলকাতার বড় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে যাচ্ছি। পড়তে যাচ্ছি না কি করতে যাচ্ছি সেটা...আপাতত ফ্যাক্ট বলতে গেলে এটাই বলতে হয় যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বোর্ডে আমার নামের পাশে খুব ভাল র্যাঙ্ক ছেপে দিয়েছে সরকার। অগত্যা কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। ট্রেন ছাড়তে আর বেশী দেরী নেই, তাই সবার কাছ থেকে সাবধানে থাকার জ্ঞানের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আমার মনেও যে কোনও উদ্বেগের ভাব নেই সেটা সত্য নয়। আমিও ভেতরে ভেতরে চিন্তিত আর উদ্বিগ্ন। তবে, এই রকম মানসিক অবস্থা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। “এত বড় কলেজে পড়তে যাচ্ছি…” জানি না, আমার কি গর্বিত হওয়া উচিৎ ছিল না?

ভাবনায় ছেদ পড়ল কারণ একজন লোক সপরিবারে এসে আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের পাদানি থেকে টেনে নিচে নামিয়ে দিল। তার সাথে আবার পাঁচটা লাগেজ। তিনটে ইয়া বড় বড় সুটকেস। আর, লাগেজ বলতে একটা ষণ্ডা মার্কা বউ, আর একটা ততধিক কুৎসিত মেয়ে। প্রথমেই ওনার গিন্নী আর মেয়ে উঠে গেল কামড়ায়। তারপর উনি একে একে সুটকেস গুলিকে দরজার উপরে রাখার কসরত শুরু করলেন। বোধহয় সব থেকে দামী লাগেজ দুটোকে অর্থাৎ স্ত্রী আর কন্যাকে কামড়ার নিরাপত্তায় উঠিয়ে দিতে পেরে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছেন।আর সেই জন্যই হয়ত ওনার ভদ্রতা বোধটায় একটু জোয়ার এসেছে। আমাকে যে এক রকম প্রায় ধাক্কা দিয়েই ট্রেনের পাদানি থেকে একটু আগে নামিয়ে দিয়েছিলেন সেটা মনে করে এতক্ষনে বোধহয় ওনার মনে একটু লজ্জার ভাবও জেগে উঠেছে। আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হাঁপ ধরা গলায় একটা “সরি” বলে কোনও মতে গায়ের সব জোড় খাটিয়ে প্রথম সুটকেসটাকে দরজার ভেতর চালান করে দিলেন। আমি আশা করেছিলাম যে ওনার স্ত্রী বা কন্যার মধ্যে অন্তত একজন ওনাকে এই ট্রেনের মধ্যে মাল ওঠানোর ব্যাপারে সাহায্য করবেন। কিন্তু আদপেও তেমন কিছু হল না। তারা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেলেন, বোধহয় নিজেদের সিটের সন্ধানে এগিয়ে গেছেন ওরা। কি বিচিত্র রে বাবা এই দুটো মেয়ে ছেলে। পেছনে ভদ্রলোক ট্রেনের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুটকেসের ভারে হিমশিম খাচ্ছেন আর ওদের সিটের টেনশন। আরে ক্ষ্যাপা সিট কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না কি! লোকটার হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি যে সুটকেসগুলো সত্যিই বেশ ভারী। সুটকেসের নিচে চাকা থাকায় ষ্টেশন দিয়ে দৌড়ে আসার সময় তিনজনের কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এখানে কামড়ার উচ্চতা বেশ বেশী। সুতরাং একটা সুটকেস ওঠাতেই লোকটার প্রায় অক্কা পাবার অবস্থা। দুটো সুটকেস কোনও মতে দরজার ভেতরে রেখে উনি পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছলেন।

আমার অন্য দিকে অবশ্য “ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস, টাকা লাগলে সাথে সাথে কল করে জানাবি, হোটেলের বুকিং হয়ে গেছে, চেক ইন করে জানাবি” ইত্যাদি ভাষণের বন্যা অবিরল হয়েই চলেছে। এ সব কথাই আমার জানা। কিভাবে সবাধানে থাকতে হয় তাও মনে হয় আমি জানি। আর হোটেল সংক্রান্ত বা কলেজ সংক্রান্ত যে সব তথ্য বারবার আমার সামনে তুলে ধরছে ওরা সেই সবই আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। যদিও আমি ওদের সব কথা ভীষণ মন দিয়ে শোনার ভান করে ঘাড় নাড়িয়ে চলেছি, আমার চোখ আর মন, দুইই কিন্তু পড়ে আছে এই অসহায় লোকটার কার্য কলাপের দিকে। মনে মনে বেশ একটা কৌতুক অনুভব করছি ওর হাবভাব দেখে তাতে সন্দেহ নেই। লোকটা শেষ সুটকেসটা কোন মতে দরজার মুখে রাখতে যাবেন, ঠিক এমন সময় ভেতর থেকে একটা অল্প বয়সী ছেলে দৌড়ে এসে দরজার মুখে হাজির হল। ছেলেটার বয়স প্রায় আমারই মতন। দুটো সুটকেস দরজার মুখ আগলে দাঁড়িয়ে থাকায় ছেলেটা যে যারপরনাই বিরক্ত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। “দূর বাল গান্ডু, দরজার মুখটা আঁটকে রেখে দিয়েছে” বলেই একটা সুটকেস লাথি মেরে দরজার মুখ থেকে পেছন দিকে সরিয়ে দিল, আর আরেকটা সুটকেস ততধিক বিরক্তির সাথে লাথি মেরে উপুড় করে কামড়ার মেঝেতে ফেলে দিল। লোকটা কোনও মতে ততক্ষণে থার্ড সুটকেসটা মাটি থেকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেটাকে আর দরজার মুখে রাখা হল না ওনার। ছেলেটা লোকটাকে তার সুটকেস সমেত প্রায় ধাক্কা মেরে দরজার মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে কামরার দরজা দিয়ে নেমে ষ্টেশনের ক্যান্টিনের দিকে দৌড় মারল। সুটকেস সমেত লোকটা সশব্দে ধাই করে ষ্টেশনের মেঝেতে পড়তেই গার্ডের হুইসেল বেজে উঠল। লোকটা যে বেজায় ব্যথা পেয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। হুইসেলের শব্দে যেন কিছুটা ব্যস্ত হয়েই ওঠার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। সুটকেসটা এখনও তার হাঁটুর ওপর শুয়ে রয়েছে। ডান পায়ের হাঁটুটা ভেঙ্গে যায় নি তো? কিন্তু এই মুহূর্তে আর সময় নেই ওনার দিকে তাকানোর। বাবা, মা আর বাকি গুরুজনদের পা ছুয়ে প্রনাম করতে করতেই আড়চোখে দেখে নিলাম যে সেই অল্প বয়সী ছেলেটা ক্যান্টিনের বাইরের একটা বড় সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটা প্যাকেট সিগারেট, কেক, চিপস, ক্যাডবেরি ইত্যাদি একটা প্লাস্টিকে পুড়ছে, ওরও সতর্ক চোখ কিন্তু সামনের সিগন্যালের দিকে। এই লোকটার আর ওই ছেলেটা্র, দুজনেরই ট্রেন মিস করার ভয় এখন পুরো মাত্রায়। প্রনাম পর্ব শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম চটপটে ছেলেটা দুটো প্লাস্টিকের থলি হাতে কোনও মতে দৌড়ে এসে আবার আমাদের সামনে দিয়ে কামড়ার ভেতরে ঢুকে ভ্যানিশ হয়ে গেল। লোকটা এতক্ষনে কোনও মতে উঠে দাঁড়িয়েছেন, সুটকেসটা যদিও ষ্টেশনের ধুলায় এখনও লুটোপুটি খাচ্ছে। উনি আমাকে সরি বলেছেন, তাই আমারও উচিৎ ওনাকে একটু সাহায্য করা। ট্রেনের শরীরে এদিকে সশব্দ কম্পন জেগে উঠেছে। ট্রেন সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। আমি লোকটাকে মৃদু স্বরে বললাম, “উঠে পড়ুন। আমি ওইটা উঠিয়ে নিচ্ছি।” উনিও একটা ছোট থ্যাংকস মতন শব্দ করে চলতি ট্রেনে উঠে পড়লেন, আর আমিও ওনার পিছন পিছন ওনার ভারী সুটকেসটাকে দরজার পাদানির ওপর উঠিয়ে এক লাফে ট্রেনে উঠে পড়লাম। হাত নেড়ে সবাইকে গুডবাই জানিয়ে দরজাটা টেনে দিলাম। সবার মুখে যে গভীর দুশ্চিন্তার ছবি আঁকা হয়ে রয়েছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। উনি আরেকবার আমাকে থ্যাংকস জানিয়ে আবার পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে শুরু করলেন। ওনাকে এই বিপদের সময় সাহায্য করেছি ঠিকই কিন্তু আমি ওনার কুলি নই, তাই কি ভাবে উনি এই তিনটে সুটকেস নিয়ে সিট অব্দি পৌছাবেন সে চিন্তা আমার নয়।, ওনার শেষ সুটকেসটা দরজার মুখেই ছেড়ে দিয়ে আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঝপ করে গিয়ে বসে পড়লাম জানলার ধারে। এটাই আমার সিট। আমার সামনে এখন নতুন জীবনের হাতছানি, অনেক কাজ সামনে। চিন্তায় ডুবে গেলাম।

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে করতে একটু যেন তন্দ্রা মতন এসে গেছিল। ছোটবেলা থেকেই আমার অভ্যেস আছে যে কোনো পরিস্থিতিতে বসে ঘুমিয়ে নেওয়ার। মাঠে বসে পাথরের ওপর পিঠ দিয়ে কতবার ঘুমিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই, আর এখানে তো বদ্ধ কামড়ার মধ্যে সুন্দর এসি চলছে। কিছুক্ষণ পর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। খাবার অর্ডার নিতে এসেছে। একটা নন ভেজ চিকেন মিল বলে দিয়ে আবার মাথাটা ঠাণ্ডা জানলার কাঁচের ওপর নামিয়ে রেখে ঘুম লাগালাম। আমার সহ যাত্রী একটা তামিল ফ্যামিলি। আমাদের মফস্বলে ওরা কি করতে এসেছিল তা অবশ্য বুঝতে পারলাম না। কিন্তু এখন ওরা সপরিবারে ধেয়ে চলেছে কোলকাতার উদ্দেশ্য। ওনারা তামিলেই কথা চালিয়ে গেলেন। আমি তামিল বুঝি। কেন তামিল বুঝি, কি বৃত্তান্ত, সেটা বলতে গেলে লেখা বেড়ে যাবে। তাই আপাতত কাটিয়ে দিচ্ছি। ওনার আর ওনার স্ত্রীর মধ্যে যে কথা বার্তা হল সেটা থেকে বুঝলাম যে উনি কোলকাতার কোনও বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন আর ওনার কাজের ভীষণ চাপ। আর হ্যাঁ পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম যে উনি ওনার এক কুটুম্বের সাথে দেখা করতে আমাদের মফস্বলে এসেছিলেন। ওনার সেই আত্মীয় একটা বড় পাওয়ার প্ল্যান্টের ফ্লোর ম্যানেজার এই আমাদেরই মফস্বল শহরে।

রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার বার্থ নিচেই। ট্রেন কলকাতা পৌঁছাবে খুব ভোরে। মোবাইলে অ্যাঁলার্ম দেওয়া আছে। তবে অ্যাঁলার্মের দরকার হয়নি। ষ্টেশনে গাড়ি ঢুকবার অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। আসলে ঘুমটা তেমন ডিপ হয়নি। চোখ খুলে দেখলাম পুরো কামরা তখনও নিদ্রামগ্ন। চুপচাপ ব্রাশ হাতে বাথরুমের দিকে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম তখনও আমার কুপের সব কটা সহযাত্রী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ষ্টেশন আসতে কিন্তু আর বেশী দেরী নেই। সমস্ত কুপ জুড়ে প্রবল নাক ডাকার শব্দ। অবশ্য ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসার সময় খেয়াল করলাম যে আমাদের কুপে না হলেও ভেতরের দিকে কোনও কোনও কুপের ভেতর আলো জ্বলতে শুরু করেছে।
 
[HIDE]কোলকাতায় এই আমার দ্বিতীয় বার আসা। আগের আর এসেছিলাম কাউন্সেলিং এর সময়। বাপরে বাপ কি ব্যস্ত এই শহর। লোকের ভিড়ে পুরো উপচে পড়েছে। এমনিতে হয়ত আমাকে বাইরে বেড়িয়ে প্রিপেড ট্যাক্সি ধরতে হত, কিন্তু আজ আমাকে সেই ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়াতে হল না। হাওড়ার পারকিং প্লেসে আমার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে। বাবা-ই ঠিক করে রেখেছিল আগে ভাগে। যে আমাকে নিতে এসেছে সেই লোকটাকেও আমি চিনি। ওর দেশের বাড়ি আমাদের বাড়ির খুব কাছে। গাড়িটা খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না কারণ ট্রেন থেকে নামার আগেই মোবাইলে ওর সাথে কথা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দুজনের কাছেই দুজনের নাম্বার দেওয়া ছিল। লোকটা জানে আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে। সোজা ধেয়ে চলল আমার হোটেলের দিকে। গাড়িটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। পেছনের সিটে বসে আরামে চোখ বুজে আরেকটা ঘুম লাগালাম। জানি হোটেলে পৌঁছাতে এখনও প্রায় চল্লিশ মিনিট লাগবে। চেনা শোনা হলেও লোকটার সাথে পথে আমার একটাও কথা হল না। আমি আসলে অকারনে কথা বলা পছন্দ করি না। ছোট বেলা থেকে সবাই শিখিয়েছে যে বাড়তি কথা বলার কোনও মানে হয় না, আর বাড়তি কথার মানেই হল নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা বা কারোর সাথে মেশা আমি পছন্দ করি না। এটা আমার রক্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝে দু একবার চোখ খুলে বাইরেটা দেখে নিলাম। ষ্টেশনের ভিড় দেখে যদিও আমি কোলকাতার জন সংখ্যার আভাষ পেয়ে গেছি, কিন্তু রাস্তায় সত্যি বলতে সেরকম কিছু দেখলাম না। গোটা শহরটা এখনও কেমন যেন ঘুমিয়ে আছে। পূবের আকাশে এখনও তেমন ভাবে আলো ফুটে ওঠেনি। গুঁটি কয়েক দোকানের সামনে দেখলাম দু এক জন লোক বসে উনুনে আগুন দিচ্ছে। সময়ের আগেই হোটেলে পৌঁছে গেলাম। হোটেলটা খুব একটা বড় কিছু না হলেও বাজেটের মধ্যে ছিমছাম হোটেল। একটা এসি রুম বাবা আমার জন্য বরাদ্দ করেই রেখেছে। প্রায় এক মাসের অগ্রিম বুকিং আগে থেকে করা আছে। অ্যাডভান্স দেওয়া আছে। এই এক মাসের মধ্যে অবশ্য আমাকে অন্য কোথাও একটা শস্তা জায়গায় মাথা গোঁজার আর খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলতেই হবে। বাবা মুখে যাই বলুক না কেন যে আমাকে টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না... কিন্তু এই হোটেলে বেশী দিন থাকতে হলে ওনার কপালে যে ঘোর দুর্ভোগ আছে সেটা বলাই বাহুল্য। রুমের প্রত্যেক দিনের ভাড়া ১২০০ টাকা। বাবার টাকা থাকতে পারে, কিন্তু এই হোটেলে এক টানা বেশী দিন থাকতে হলে, যে কারুর হাতে হ্যারিকেন এসে যাবে। আগেই বললাম এখনও শহর ঘুমের আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতে পারে নি। হোটেলের রিসেপসনেরও একই অবস্থা। রিসেপসন এখন ফাঁকা। শুধু রিসেপসন বললে ভুল বলা হবে, কারণ হোটেলের মেইন গেট দিয়ে ঢোকার সময় আমাকে এক জন ঘুমন্ত সিকিউরিটির ঘুম ভাঙাতে হয়েছে। অবশ্য এটা আমার জন্য এক দিক থেকে ভালো।

লাল রঙের শাড়ি পরা একটা মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে স্বাগত জানাল। মেয়েটার বোধহয় নাইট ডিউটি ছিল। কারণ সারা মুখে ক্লান্তির ছায়া। বোধহয় রিসেপসনে বসে বসেই কাজের অভাবে উঁচু চেয়ারের ওপর মাথার পেছন দিকটা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এটা মনে হওয়ার দুটো কারণ । এক, মেয়েটার মুখের সামনের দিকের চুলের বেশভুষা আর সজ্জায় বেশ একটা পারিপাট্য থাকলেও মাথার পেছনের দিকে ক্লিপ বাঁধা চুলের খোঁপাটা বেশ অবিন্যস্ত হয়ে গেছে, নিজের জায়গা ছেড়ে বেশ কিছুটা উপরে উঠে গেছে। দুই, চোখ দুটোও ঘুমে লাল হয়ে আছে। মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ কম্পিউটারে আমার বুকিঙের ডিটেলস চেক করছিল ততক্ষণ আমি মেয়েটাকে একটু আপাদ মস্তক মেপে নিলাম।

বয়স খুব বেশী হলে ৩৪। মুখটা বেশ মিষ্টি। অথবা জানি না মেক আপের জন্য মিষ্টি লাগছে কি না। বিবাহিতা কিনা সঠিক ভাবে বোঝা শক্ত কারণ সিঁথিতে সিঁদুর নেই। অবশ্য অনেক শহুরে মেয়েরাই যে এখন শাঁখা সিঁদুরের ধার ধারে না সেটা আমার অজানা নয়। তবে ডান হাতে দুটো সোনার পাতলা বালা দেখে মনে হল যে ইনি বিবাহিতা। পরনে ম্যাচিং ছোট হাতা ব্লাউজ। বুঝলাম এই লাল শাড়ি আর ব্লাউজ এই হোটেলে কাজ করা মেয়েদের ইউনিফর্ম। ফিগারটা না রোগা না মোটার দিকে। গায়ের রঙ চাপা। আমি আকস্মিক ভাবে এত ভোরে এসে পড়ায় একটু বিচলিত হয়ে পড়েছে। শাড়ির বুকের কাছটাও একটু অবিন্যস্ত। আঁচলটা সামান্য স্রু হয়ে উঠে থাকায় লাল চাপা ব্লাউজে ঢাকা বাঁ দিকের গোল স্তনটা আর স্তনগুলোর উপরের জায়গার বেশ খানিকটা উন্মুক্ত। দেখে মনে হল স্তনের সাইজ খুব বড় নয়। ব্লাউজের গলার কাছে স্তন বিভাজিকারর সামান্য অংশ অনাবৃত হয়ে রয়েছে অসাবধানতায়। তবে সুগভীর বুকের খাঁজ বলতে যা বোঝায় তেমন নয়। এসি তে বসে থাকা সত্ত্বেও স্তন বিভাজিকার শুরুতে আর গলার নিচে কয়েক বিন্দু উজ্জ্বল ঘামের ফোঁটা জমে রয়েছে। আঁটসাঁট ভাবে শরীরের ওপর জড়িয়ে রাখা শাড়িটার পেটের কাছটাও বেশ খানিকটা স্থানচ্যুত হয়ে গেছে। শ্যামলা রঙের পেট আর তলপেটের অনেকটা অংশই নগ্ন হয়ে আছে শাড়িটা সরে যাওয়ায়। পেটে চর্বি প্রায় নেই বললেই চলে। নগ্ন তলপেটের আরেকটু নিচের দিকে ঠিক মাঝ বরাবর বসানো আছে একটা গোল সুগভীর নাভি। নাহ, স্তনগুলোর সাইজ আর স্তন বিভাজিকার গভীরতা চোখে পড়ার মতন না হলেও, মনে মনে এর নাভির গোলাকৃতি আর গভীরতার প্রশংসা না করে পারলাম না। পেট আর তলপেটে তেমন চর্বি না থাকলেও মেয়েটার নাভির গভীর গর্তটার চারপাশের নগ্ন মাংসে যে সামান্য ফোলা ফোলা একটা স্ফীত ভাব রয়েছে সেটা চোখ এড়ালো না। শাড়িটা বাঁধা আছে নাভির ঠিক দুই ইঞ্চি মতন নিচে। তার নিচে পুরোটাই ওই শাড়ির নিচে ঢাকা। কি কি লোকানো আছে কে জানে। পেছনটা মাপার ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব নয় কারণ মেয়েটা আমার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সামনে থেকে বা পাশ থেকে দেখে যা বুঝলাম পাছার শেপ খারাপ নয়, বেশ গোল, কিন্তু স্তনের মতই পাছার আকৃতিও না মোটা না রোগার দিকে, মানে সাইজে একটু চাপার দিকেই পড়ে, মানে এক কথায় এই মেয়েটাকে উচ্চ নিতম্বিনী বলে সম্বোধন করা যায় না। অবশ্য ৩৪ বছরের কাউকে মেয়ে না বলে মহিলা বলাই ভালো।

“প্লীজ এই ফর্মটা একটু ফিল আপ করে দেবেন” বলাতে, আমি যা যা লিখলাম সেটা এই মতন ঃ
নামঃ সংকেত রায়।
বয়সঃ ২০ (সঠিক ভাবে বলতে গেলে ২০ বছর ২ মাস)
বাবাঃ সুবীর রায়।
ঠিকানাঃ ১৭ নম্বর …… মিরাট, উত্তরপ্রদেশ।
লোকাল ঠিকানাঃ ২ নম্বর, নতুন …… গোপালবাজার, পশ্চিমবঙ্গ।
আসার কারনঃ পড়াশুনা, ইঞ্জিনিয়ারিং। কলেজ…
কতদিন থাকার ইচ্ছেঃ ১ মাস।
মোবাইলঃ …………...
আই কার্ডঃ ভোটার আইডি কার্ড। নম্বরঃ *********************

সই।


পরবর্তী অংশ অফিসের আধিকারিক ভরবেনঃ
রুম নম্বরঃ ১০৭
সই।
(একটা টানা হাতের সই যার শেষের জায়গাটা হল সরকার )

ফর্মটা ভরতে ভরতে একবার চোখ তুলে দেখে ছিলাম টেবিলের ওপর পড়ে আছে একটা চৌকো মতন ল্যামিনেটেড আই কার্ড। তাতে লেখা আছে “মালিনী সরকার। সিনিয়র ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার।” ওপরে একটা স্ক্যান করা ছবি। ছবিটা কার সেটা বলাই বাহুল্য।

একজন বেয়ারা ইতিমধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে কাউন্টারে। আমার দুটো বড় ব্যাগ আর একটা ছোট অ্যাঁটাচি। লোকটা তিনটে জিনিসই মাটি থেকে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিক্ষা করছে কখন এইসব সই সাবুত শেষ হয়। মহিলা আমার কাছ থেকে আমার ভোটার আইডি কার্ডটা চেয়ে নিয়ে তার একটা স্ক্যান করে, একটা প্রিন্ট বার করে কার্ডটা আমাকে ফেরত করে দিল একটা হাঁসি আর ধন্যবাদের সাথে। যতক্ষণ মহিলা এইসব স্ক্যান আর প্রিন্টিং করছিল ততক্ষণ আমি স্বভাববশতই হোটেলের এই গ্রাউন্ড ফ্লোরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। (তার আগে অবশ্য মেয়েটার শাড়িতে ঢাকা অনুচ্চ অথচ মসৃণ গোল নিতম্বের ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে ভুলিনি। এটাও আমার আরেকটা স্বভাব। ওর পাছার ব্যাপারে অবশ্য নতুন করে কিছুই লেখার নেই। ) তাই গ্রাউন্ড ফ্লোরের ব্যাপারেই বলি। এক দিকে পাশাপাশি ছেলে আর মেয়েদের জন্য টয়লেট। তার ঠিক পাশেই দুটো পাশাপাশি অত্যাধুনিক লিফট। রিসেপসনের ডান দিকে হল ঘরের এক কোনায় একটা এমারজেন্সি এক্সিট। তার মানে ওই দরজার পিছনেই সিঁড়ির ধাপ নেমে এসেছে ওপর থেকে নিচে। এত কিছু লক্ষ্য করার সত্যিই কিছু নেই, আবারও বলছি যা দেখছি সবই অভ্যাস বশে। আমি শুধু ভাবছি এই গভীর নাভির অধিকারিণীর সাথে যদি আরেকটু ফ্লার্ট করা যায়। আমি শুনেছি এখানকার মেয়েদের সাথে ভাব জমানো নাকি খুব একটা কঠিন নয়। তবে শুরুতেই বুভুক্ষুর মতন হামলে পড়লে বিপদ হতে পারে। যাই হোক। হোটেল থেকে বেরনোর দরজা সব মিলিয়ে চারটে। চারটের সামনেই সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে, যদিও ঢুলু ঢুলু চোখে। বিল্ডীং থেকে বেড়িয়ে দশ গজের মধ্যে মেইন গেট। বিল্ডিঙের চারপাশ ঘিরে আছে ওপেন পারকিং প্লেস। ভালো হোটেল তাতে সন্দেহ নেই। আইডি কার্ডটা ফেরত নিয়ে একটু গলা খাঁকড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম “মালিনীদি। একটা কথা ছিল । ইয়ে যদি কিছু মনে না করেন!” ও একটু অবাক হল বটে আমার সম্বোধনে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে হেঁসে বলল “ বলুন।” আমি বললাম “ ইয়ে এক কাপ চা পাওয়া যাবে? অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয় নি। “ ও এক নিমেষে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুম বয়টাকে বলে দিল যে আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিতে কোন নম্বরে ফোন করলে খাবার পাওয়া যাবে, রুম সার্ভিস কত নম্বরে ইত্যাদি। আমার চেষ্টা মাঠে মারা গেল। বেচারি।[/HIDE]
 
[HIDE]আমি বেয়ারার পেছন পেছেন যেতে যেতে কি মনে হতে পেছন ফিরলাম। না, এখনও বাঁ দিকের স্তনটা, স্তন বিভাজিকার উপরিভাগ আর নাভি সমেত সমস্ত তলপেট নগ্ন রেখে আনমনে ও খাতা আর কাগজ গোছাতে ব্যস্ত। না আরেকটা ট্রাই করাই যায়। মানে আরেকটু হেজিয়ে আরেকটু সময় কাটিয়ে আরেকটু ঝারি মারার চেষ্টা। আমি আবার এগিয়ে গেলাম কর্মরত মহিলাটির দিকে। “ইয়ে…” ও আবার মুখ তুলে তাকাল। বললাম “ইয়ে লিখেছি এক মাস থাকব। কিন্তু ঠিক নেই কিছু কত দিনে এখানে কিছু একটা শস্তায় জোগাড় করতে পারি। তো পরে আরও কয়েক দিন থাকতে চাইলে থাকতে পারব?” ওর ভুরুটা একটু কুঁচকেই নামিয়ে নিল। পরের প্রশ্নটা একটু সোজাসুজি হলেও আমি এর জন্য তৈরি ছিলাম। “আপনার ফ্যামিলির কি বিজনেসে আছে?” বুঝলাম এতগুল টাকা দিনের পর দিন একটা ছাত্রের পেছনে কোন ফ্যামিলিই বা ওড়াতে পারে। আমি সহজ ভাবে কিন্তু ইচ্ছে করেই একটু দম্ভ মেশানো স্বরে বললাম “ঠিক বিজনেস না হলেও আমার বাবাকে উত্তরপ্রদেশ আর এখানকার অনেক লোক খুব মানে। কয়েক মাস এই হোটেলে চালিয়ে নেওয়া বোধহয় খুব কষ্ট হবে না। তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে নেবার চেষ্টা করব। কিন্তু জাস্ট ইন কেস… ধরুন পছন্দ মতন রুম না পেলে তখন …” মালিনী এক মুখ হাঁসি (যদিও তিক্ত) নিয়ে বলল “স্যার, সাত দিন আগে থেকে বলে দেবেন, কোনও সমস্যা হবে না, আমি কথা দিচ্ছি। “ বুঝলাম মাগীটা মনে মনে ভাবছে, বাপের অগাধ টাকা। ছেলেকে কোলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছে। এখন ছেলের ওপর হোটেলে অগাধ পয়সা ঢালছে। এর পর ছেলের ফুর্তির পেছনে ঢালবে। আর এই ছেলে বাপের টাকা উড়িয়ে কোনও একদিন ফিরে যাবে মায়ের আঁচলের তলায়। সে যাই ভাবুক তাতে আমার কিছু এসে যায় না। এই কথা বার্তার সুযোগে আরও এক মিনিট অন্তত ওর সুগভীর নগ্ন নাভির দর্শন তো পাওয়া গেল। আমি ফিরতে যাব, ঠিক সেই সময় আরেকটা প্রশ্ন এলো। এইবার মালিনী দেবী আমাকে নিজের থেকে একটা প্রশ্ন করেছেন। না দাঁড়িয়ে উপায় আছে! “ ইয়ে তবুও কতদিন থাকতে পারেন খুব ম্যাক্স টু ম্যাক্স।” দেখলাম আমার ফিল আপ করা ফর্মটা বের করে হাতের কলমের মুখটাকে ঠিক “”কতদিন থাকার ইচ্ছেঃ”,” ওই জায়গাটার ওপর স্থির করে আমার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছে ও। তবে আমি ওর কলমের পজিশনটা লক্ষ্য করলাম আড়চোখে, কারণ ওর দিকে ফেরার সাথে সাথে আমার চোখ জোড়া অবাধ্যের মতন আবার ওর নগ্ন তলপেট আর নাভির ওপর গিয়ে আঁটকে গেছে। আমার দিক থেকে জবাবটা এল সাথে সাথে “ম্যাক্স টু ম্যাক্স আট মাস” । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও যেন একটু আঁতকে উঠল। বিশ্বাস করতে পারছে না, দিনে ১২০০ টাকা দিয়ে আট মাস ধরে আমি সত্যি এই হোটেলে পড়ে থাকতে পারি। দেখলাম ওর কলমের নিচে কয়েকটা ঘর্ষণ হল। ব্র্যাকেটে লিখে নিল , এইট মান্থস। মনে মনে হাসলাম। দেখলাম ওর মুখেও একটা মৃদু হাঁসি। কি ভাবছে বলা শক্ত। বোধহয় ভাবছে, শালা দুদিনে কাটবে, এখন বেকার শো-অফ করছে আমার সামনে। সে যাই ভাবুক। আমি হাঁসি মুখে পিছনে ফিরে বেয়ারাকে বললাম “চলো হে। দেখি তোমাদের রুম কেমন।” বেয়ারার সাথে যেতে যেতে একটু গলা চড়িয়ে ওই মালিনী মাগীর উদ্দেশ্যেই বললাম “হলে আট মাসেই হবে, নইলে আমার দ্বারা আদপেও হবে না।” ঘাড়টা ঘুরিয়ে দেখলাম ও কেমন একটা ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা কুড়ি বছরের ছেলের কাছ থেকে শো-অফ অব্দি বোধহয় আশা করেছিল, কিন্তু এহেন অর্থহীন কথা আশা করেনি। বোধহয় পরে মনে মনে বলবে যে একটা ডেঁপো ছেলে এসে উঠেছে এই হোটেলে। আবারও মনে মনে হাসলাম শুধু। লিফট নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল। উঠে পড়লাম।

রুমটা ছিমছাম। ক্যান্টিন আর রুম সার্ভিসের নম্বর গুলো বুঝে নিয়ে রুম বয়ের হাতে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট হস্তান্তরিত করে তাকে বিদায় করে দিলাম। আমি জানি কোনও হোটেলে গেলে তার রুম বয়কে একটু হাতে রাখতে হয়। তাতে অনেক সুবিধা হয়। ফোন করে চা আর ব্রেক ফাস্টের অর্ডার করে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। আমার প্রচণ্ড সকাল সকাল ওঠার অভ্যেস। শরীর চর্চার বদভ্যাস আছে। চটপট মুখ হাত ধুয়ে বেড়িয়ে এসে রোজকার মতন একটু শরীর চর্চা,প্রানায়াম, ধ্যান যোগ ইত্যাদি সেরে নিলাম। এ সবই ছোটবেলার অভ্যেস। অবশ্য মাঝে একবার শরীর চর্চায় বাঁধা পড়েছিল, কারণ রুম বয় এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল। সাধারণত অন্যান্য দিন আমি ভোর ৪ টের সময় উঠে নানা রকম শরীর চর্চার কসরত শুরু করি। সব কিছু শেষ হতে হতে প্রায় ৭ টা বেজে যায়। আজ হাতে সময় নেই। তাই কমের ওপর দিয়েই সারতে হল। ব্রেক ফাস্টে পুরি সব্জি আর একটা ডবল ডিমের অমলেট অর্ডার দিয়েছিলাম। গরম গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নিতে হল। হোটেলে সব খাবারের দামই বেশ চরার দিকে। মালিনী নামক মহিলাটির সামনে যতই ফাট দেখাই না কেন, মনে মনে ভালোই জানি যে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে না পড়তে পারলে বেকার বিনা কারণে একগুচ্ছ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে এক মাসের আগে তেমন নিরাপদ আর পছন্দসই জায়গা পাব বলে মনে হচ্ছে না, কারণ শহরটাই তো সম্পূর্ণ অচেনা… অবশ্য...।

এসব চিন্তা পরে করা যাবে। আপাতত বেরতে হবে। কলেজ শুরু হতে অবশ্য এখন অনেক সময় আছে। কিন্তু অনেকগুলো কাজ এই বেলায় গুঁটিয়ে ফেলতে হবে। যে লোকটার গাড়িতে হোটেলে এসেছিলাম তাকে ফোন করলে সেই এসে হয়ত আমাকে নিয়ে যেত। কিন্তু ইচ্ছে করেই তাকে ফোন করলাম না। ঘরের এসিটা বন্ধ করে দিলাম। জানলার পর্দা সরিয়ে দেখলাম স্বচ্ছ কাঁচের স্লাইডিং উইন্ডো। কাঁচের জানলার একটা দিক ঠেলে অন্য দিকে সরিয়ে দিতেই গুমোট হাওয়া এসে মুখে ধাক্কা মারল। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাস্প আছে সেটা অবশ্য আগের বার যখন কোলকাতায় এসেছিলাম তখনই বুঝেছি। দিন যত বাড়ে তাপমাত্রা আর জলীয় বাস্পের পরিমাণও সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েই চলে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে এই দিকটা হল রাস্তার দিক। মন্দ নয়। এমনটাই তো চাইছিলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে জানলা দিয়ে অন্ধকার রাস্তায় লোকের যাতায়াত দেখতে মন্দ লাগবে না। আর নিঝুম রাতে অন্ধকার রাস্তা দেখার তো মজাই আলাদা। অন্ধকারে গ্রামের আর শহুরে রাস্তার সৌন্দর্যের অনেক তফাত। আমার হাত ঘড়ি নেই। একটা ট্যাঁক ঘড়ি আছে। আমার এক জন্মদিনে শান্তিদার বাবা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। ঘড়িটা পেয়েছিলেন ওনার বাবার কাছ থেকে। ঘড়িটা পুরনো। দম দিয়ে চালাতে হয়। একটু সেকেলে বনেদি মার্কা দেখতে কারণ আজকাল এরকম ঘড়ি শুধু মিউজিয়ামে দেখা যায়। শহরে কেন, গ্রামে বা মফস্বলেও এরকম ঘড়ির চল উঠে গেছে। তবে এই ঘড়িটা কিন্তু এখনও দিব্যি চলে। শুধু মনে করে দম দিতে হয়। জন সমক্ষে যদিও এই ঘড়ি বের করে সময় দেখলে হাঁসির খোঁড়াক হতে হবে, তাই সবার সামনে সময় দেখতে হলে মোবাইলে সময় দেখে নি। আমার কাছে এখন দুটো মোবাইল। একটা ভীষণ রকম অত্যাধুনিক মোবাইল যেটা দিয়ে কি না করা যায়, আর আরেকটা হল একটা ছোট সাদা কালো রঙের নোকিয়া সেট। পরেরটা দিয়ে শুধু কল করা যায় আর এস এম এস করা যায়। ট্যাঁক ঘড়িটার মতন দামী মোবাইলটাও আমি জন সমক্ষে খুব একটা বের করি না। এক্ষেত্রে কারণ অবশ্য অন্য...ট্যাঁক ঘড়িটা দেখলে যেমন লোকে হেঁসে মরে যাবে, তেমনি এই অত্যাধুনিক মোবাইলটা দেখলে সবার চোখই টেড়িয়ে আটকে যাবে। আমার বিশ্বাস এমন মোবাইল সচরাচর বড় শহরের ছেলে মেয়েরাও চোখে দেখেনি। মোবাইলে কয়েকটা জিনিস চেক করে নিয়ে ব্যাগের মধ্যে চালান করে দিলাম। ট্যাঁক ঘড়িটা বুক পকেটে ভরতে ভরতে মনে পড়ে গেল শান্তিদার বাবার বলা কয়েকটা কথা। কথাগুলো উনি আমাকে ঘড়িটা দেওয়ার সময় বলেছিলেন। “মনে রাখিস, সময়ই মানুষকে তৈরি করে, সময়ই মানুষকে শেষ করে, সময়কে কোনও দিন অবহেলা করিস না, সময়ের আগে চলার চেষ্টা করিস না কোনও দিন, আবার সময়ের থেকে পিছিয়েও পড়িস না কখনও, সময়কে সম্মান করতে শেখ, তাহলেই সময় তোকে দেবে, সময়কে অসম্মান করলে সময় একদিন তোকে হারিয়ে দেবে। সময় সব থেকে বলবান, আর সময়ের সাথে চলতে গেলে ধৈর্য চাই...।” ছোট মোবাইলটাকে জিন্সের পকেটে পুড়ে কাঁধে একটা ছোট ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে (যদিও ব্যাগটায় কোনও ল্যাপটপ নেই) ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছি। অবশ্য বেড়িয়ে আসার আগে টাকা পয়সা সমেত আমার সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র আর কাগজপ্ত্র আমার ঘরের দেওয়াল আলমারির লকারে নিউমারিক পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রেখে এসেছি। লিফটের দিকে না গিয়ে এমারজেন্সি এক্সিটের দরজাটা খুলে সিঁড়ি বেয়েই নিচে নেমে এলাম। এই দিকটাও চিনে রাখা দরকার। আমি জানি আমি একটা আজগুবি প্রাণী। অন্য ছেলে হলে হয়ত লিফটেই নামত, কিন্তু আমার নতুন রাস্তা চিনে রাখতে ভালো লাগে। কে জানে কখন কোন কাজে লেগে যায়। গ্রাউন্ড ফ্লোরের এমারজেন্সি এক্সিটের দরজাটা খুলে যখন রিসেপসনের দিকে এগিয়ে গেলাম তখন দেখলাম দুটো বেয়ারা আর রিসেপসনে বসে থাকা মালিনী আমার দিকে একটু অবাক চোখে তাকাল। ওরা বোধহয় ভাবতেই পারেনি যে আমি এইভাবে এমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে ভেতরে ঢুকব। আমি হেঁসে রুম কি টা রিসেপসনে ফেলে রেখে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। অবশ্য তার আগে একটা জিনিস খেয়াল করেছি। মালিনী মাগীর শাড়ির অবিন্যস্ত ভাবটা এখন আর নেই। চোরা নজর দিয়েও ওর কোনও অনাবৃত গোপন জায়গা দেখতে পেলাম না, নাভি ক্লিভেজ, শ্যামলা রঙের তলপেট সবই এখন নিখুঁত ভাবে শাড়ির নিচে ঢাকা পড়ে গেছে। মনে মনে নিজের দুর্ভাগ্যকে গালি না দিয়ে পারলাম না।

বেড়িয়ে আসার সময়ই জানলা দিয়ে দেখে নিয়েছিলাম যে রাস্তা জনমুখর হতে শুরু করে দিয়েছে। সুতরাং একটা ট্যাক্সি পাওয়া বোধহয় খুবই সোজা হবে। মেইন গেট দিয়ে সিকিউরিটির সেলুট হজম করে বাইরে বেড়িয়ে আসতে না আসতেই অবশ্য হুঁশ করে দুটো ট্যাক্সি আমার নাকের সমানে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। কিন্তু ওগুলোকে আটকালাম না। হোটেলের উল্টো ফুটে একটু দূরে একটা বড় পান সিগারেটের দোকান আসার সময়ই দেখেছিলাম। এগিয়ে গেলাম সেই দিকে। একটা বড় ক্লাসিকের প্যাকেট কিনে পকেটে চালান করে দিয়ে ট্যাক্সির খোঁজে এগিয়ে গেলাম। হ্যাঁ আমার বয়স কুড়ি হলেও আমি একজন চেইন স্মোকার। সজ্ঞানে থেকে ড্রিঙ্কও করতে পারি প্রচুর। অবশ্য এমন নয় যে মদ আর সিগারেট ছাড়া আমার পাগল পাগল লাগে। দিনের পর দিন সিগারেট আর মদ ছাড়াও কাটাতে আমার বিন্দু মাত্র অসুবিধা হয় না। সবই কন্ট্রোল আর অভ্যেস। তবে নেশা যে করি সেটা অস্বীকার করব না। একটা ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করালাম। চালক একজন বয়স্ক সর্দারজি। আমাকে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাব। বললাম “অনেক জায়গায় যেতে হবে। আর একটু তাড়া আছে। “ আমার বয়স অল্প বলেই বোধহয় সর্দারজি কোথায় যাব সেটা আরও জোড় দিয়ে জানতে চাইল। আমিও একই রকম গা ছাড়া ভাবে উত্তর দিলাম “ধর্মতলা যাব, সেখান থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি আসব, সেখান থেকে যাদবপুর যাব, সেখান থেকে হাতে সময় থাকলে খিদিরপুর যাব।” লোকটা আমার এই বিচিত্র প্ল্যান শুনে বলল “তাহলে প্রথমে খিদির পুরেই চলুন।” আমি মাথা নেড়ে বললাম “না হে সর্দারজি। এখন খিদিরপুরে গিয়ে কোনও লাভ নেই। ওখানে গিয়ে কোনও কাজ হবে না। সময়ের আগে কোথাও গিয়ে কি লাভ!” ওর মতামতের জন্য অপেক্ষা না করেই আমি পেছনের দরজা খুলে উঠে ওর দিকে একটা ক্লাসিক সিগারেট এগিয়ে দিলাম। বললাম “ইয়ে লিজিয়ে। আর চলুন। ৫০ টাকা বাড়তি দেব। “ শেষ কথাটায় কাজ হয়ে গেল। কারণ গাড়ি গড়িয়ে চলল সামনের দিকে। সর্দারজি হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিল যে ও সিগারেট খায় না। আমি বললাম “আমি সিগারেট খেলে সমস্যা নেই তো?” সর্দারজি বয়সে আমার থেকে অনেক অনেক বড়, মাথার সব চুল পাকা। কিন্তু তাও অচেনা বয়স্ক লোকের সামনে সিগারেট খেতে আমার কোনও লজ্জা হয় না। মফস্বল হলে অবশ্য অন্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু এত বড় শহরে এত কিছু মেনে চলার কোনও মানে হয় না। সর্দারজি আমাকে জানিয়ে দিল যে ওর সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি। আমি উত্তরে বললাম “ধর্মতলায় আমার আধা ঘণ্টা সময় লাগবে। তখন নাস্তা করে নিও খন।” ব্যস এর পর আমাদের মধ্যে আর কোনও কথা হয় নি। আগেই বলেছি, প্রয়োজনের থেকে বেশী কথা বলা বা কাজ করা আমি পছন্দ করি না। নিরবে শহরের রাস্তা ঘাট মুখস্থ করতে করতে এগিয়ে চললাম ধর্মতলার দিকে। [/HIDE]
 
[HIDE]ধর্মতলায় গন্তব্য স্থলে যখন পৌছালাম সূর্য তখন মাথার ওপরে। ট্যাক্সি ওয়ালাকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললাম “ ওই যে বলেছিলাম এক্সট্রা পঞ্চাশ টাকা দেব, সেটা দিয়ে দিলাম। আপনি খেয়ে নিন। আমার কিছুক্ষণ সময় লাগবে।” যে বাড়িটায় ঢুকলাম সেটা ব্রিটিশ আমলে তৈরি বোধহয়। সেকেলে চেহারা। ভয় হয় একটু জোড়ে হাওয়া দিলেই হয়ত ইট পাথর সমেত পুরো ইমারতটাই ধ্বসে পড়বে। আমাকে যেতে হবে তিন তলায়। বাবার তেজারতির একটা কারবার চলে এখান থেকে। যে চালায় তাকে আমি চিনি। আগে আমাদের প্রতিবেশী ছিল। কাজ না পেয়ে বেশ কিছু দিন বসে ছিল বলে বাবা এখানে কাজের ভার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। বেশ বিশ্বস্ত লোক তাতে সন্দেহ নেই। বয়স পঞ্চাশ ছুই ছুই। তিন কূলে কেউ নেই। শুনেছি যে খুব অল্প বয়সে একবার বিয়ে করেছিল, কিন্তু পোয়াতি বউকে হাঁসপাতালে নিয়ে যেতে দেরী হওয়ায় রাস্তাতেই ওর বউ ওর ওর বউয়ের পেটের ভিতরে বাচ্চাটা শেষ হয়ে গেছে। নাম হরিপদ। আমরা হরিদা বলেই সবাই ডাকি। হরিদার কাছ থেকে কিছু জিনিস নিয়ে আরেকজনকে দিতে হবে। হরিদা হয়ত নিজেই গিয়ে দিয়ে আসত, কিন্তু এই গদি ছেড়ে যাওয়ার জো নেই তার। দেখলাম সব কিছু তৈরি করেই রেখেছিল ও। আমাকে এক কাপ চা খাইয়েই একটা বড় ক্যাম্বিশের ব্যাগে সব জিনিস হস্তান্তরিত করে দিল। আমি ব্যাগের চেনটা খুলে জিনিস গুলো ভেতর থেকেই একবার নেড়ে ঘেঁটে দেখে নিলাম। সব ঠিক আছে। ভেতরে একটা লেদারের ব্যাগও দেখলাম। ওটাকেও একবার খুলে ভেতরে কি কাগজ পত্র আছে উপর উপর দেখে নিলাম। তেজারতির কারবারের ঝুঁকি তো আছেই, আর তার অপর বিষ ফোঁড়ার মতন আছে এক গাদা হিসেব নিকেশ। এখানকার কাজ মিটেছে। ওর ঘুপচির মতন ঘরের জানলা দিয়ে একবার বাইরে রাস্তার দিকে উঁকি মারলাম। উল্টো ফুটে আমার ট্যাক্সির চালককে দেখলাম কব্জি ডুবিয়ে মুড়ি আর ঘুগনি খাচ্ছে। এখনও খাওয়া বাকি। রাস্তাটা গাড়ি ঘোড়া আর লোক জনে ভরে গেছে। সবাই ব্যস্ত। আমার ল্যাপটপের ব্যাগটা থেকে আমার সেই মোবাইলটা বের করে সেটাকে অন করলাম। এটাকে আমি এমনিতে অফ করেই রাখি। ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে নয়। এমনি রাখি। এর ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ দিলে তিন দিনেও শেষ হয় না। হরিদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে ট্যাক্সিটার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে একটা হাঁসি হাঁসি মুখে সেলফি নিলাম। ওই যে বললাম বিপদ, পাশ দিয়ে যারা যাচ্ছিল সবাই আমার হাতের মোবাইলটার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাতে তাকাতে গেল। সময় নষ্ট না করে ফেসবুকে লগ ইন করে সদ্য তোলা ছবিটা আপলোড করে দিলাম। ক্যাপশন দিলাম “ কোলকাতায় প্রথম দিন। জমজমাট ঐতিহাসিক ধর্মতলা… বেশ ভালো লাগলো… (পাঁচটা স্মাইলি)” । আসলে নতুন জায়গায় এসে একটাও সেলফি তুলে পোস্ট না করলে চলে? সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তো! মোবাইলটা আবার অফ করে ব্যাগের ভিতর চালান দিয়ে দিলাম সযত্নে। অবশ্য অফ করার আগে কয়েকটা জিনিস চেক করতে ভুললাম না। কাজের কিছু নেই।

ধেয়ে চললাম বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে। পৌঁছাতে বেশ সময় লাগলো। ট্রাফিক বড্ড বেশী। আজ আমার কলেজের প্রথম দিন। মনে হয় ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তবে প্রথম দিন খুব একটা কিছু পড়াশুনা হবে বলে মনে হয় না। এখানে একটা সাইবার ক্যাফের মালিকের সাথে কাজ। ভদ্রলোক এক যুগ আগে বাবার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। সেই টাকা আর ফেরত দেয় নি। অনেক দিন জোরাজুরি করার পর অবশেষে লোকটা বাবার কাছে দোকানটা বেচে দিয়েছে। বাবা কিন্তু লোকটাকে তাড়িয়ে দেয় নি। বাবার মন এই সব দিক থেকে ভীষণ উদার। বাবা এখন এই ক্যাফের মালিক। লোকটা ম্যানেজারির কাজ করে। আমরা সবাই একে শুভদা বলে ডাকি। উত্তর প্রদেশ থেকে বাবার সাথে এর চেনাশুনা। বাঙালি হলেও কথা বার্তায় এখনও একটা হিন্দি হিন্দি ছাপ রয়ে গেছে। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। অফিসের ভেতরে একটা লকার আছে। সেখানে থেকে আরেকটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। শালা, এই বাবার চক্করে পড়ে পড়াশুনা মাথায় উঠবে। এখানে এসে তোলাবাজির কারবারে যোগ দিয়েছি বলে মনে হচ্ছে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ব্যাগের ভেতরটা দেখে নিলাম। শুভদা বলল “সামনে ধাবা আছে। কিছু খাবে না কি?” আমি মাথা নেড়ে বেড়িয়ে পড়লাম। ট্যাক্সিটা দেখলাম কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ট্যাক্সিতে উঠে ড্রাইভারকে এক মিনিট দাঁড়াতে বললাম। সেই মোবাইলটা বের করে জানলার একদম ধার ঘেঁসে বসে রাস্তার দিকে তাক করে চারপাশের দৃশ্য সমেত নিজের আরেকটা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিলাম। ক্যাপশন “ রমরমা বালিগঞ্জ। সামনের ধাবাতে একবার আসতে হচ্ছে… বেশ ভালো লাগলো।” আগের ছবিটায় দেখলাম কয়েকজন কমেন্ট দিয়েছে। কিছু সেসব পড়ার সময় এখন নয়। গাড়ি এগিয়ে চলল আর আমার মোবাইলটা আবার ব্যাগের ভিতর চালান হয়ে গেল। বালিগঞ্জ থেকে যাদবপুর পৌঁছাতে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগলো। পথে অবশ্য একটা ফোন করে একজনকে জানিয়ে দিলাম যে আমি আসছি। থানার ঠিক সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে ধর্মতলা আর বালিগঞ্জ থেকে কালেক্ট করা ব্যাগ দুটো এক জনের হাতে তুলে দিলাম। এর নাম বাবুয়া। ফোনে কোথায় থাকবে, কি পরে এসেছে এইসব কথা হয়েই গেছিল। লোকটা বোকা বোকা মুখে একটা ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি থানার সামনেই তাকে দাঁড় করালাম। সর্দারজি থানার সামনে এতক্ষন ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রাখায় গাঁই গুই করছিল, পুলিশের ভয় আর কি, কেস দেবে! কিন্তু আমি কোনও পাত্তাই দিলাম না। এই বাবুয়াকে দেখে খুব সরল মনে হয়েছে আমার। এর সাথে একটা সেলফি না তুললেই নয়। হ্যাঁ, সেলফি তোলাটা আমার একটা নেশা। শুধু সেলফি নয়, ছবি তোলাও আমার একটা নেশা। থানাটাকে ব্যাক গ্রাউন্ডে রেখে ওর সাথে আমার একটা সেলফি তুললাম। একটা পুলিশ আমাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিল সেটা দেখেছি, কিন্তু ওকেও পাত্তা দিলাম না। প্রথম দিন কোলকাতায় এসে গোটা পাঁচেক সেলফি না তুললে আর কি কারণে ফেসবুক করি। ওকে ছেড়ে দিয়ে ফেসবুকে আপলোড করলাম, ক্যাপশনঃ “ কোলকাতার প্রথম বন্ধু বাবুয়া...মন্দ লাগলো না।” সময় দেখে ঠিক করলাম খিদিরপুর আজই যাব। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল। না কোনও কেস খাই নি আমরা।

এখানে যার সাথে দেখা করব তার নাম আব্দুল। লোকটার বয়স খুব বেশী হলে ৩২। আর বেশ শক্ত পোক্ত। চা খেয়ে এর সাথে অনেক গল্প হল। ওর কাছ থেকে দুটো কাগজ ভর্তি হিসাবের ব্যাগ নিয়ে আমার ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতর পুড়ে রওয়ানা হলাম। ঠিক হল সামনের শনিবার এসে ওর কাছ থেকে একটা বড় লেন্স কিনব। এটা আমার অনেক দিনের সখ। বাবা কে এই লেন্সের কথা আগেই বলে রেখেছিলাম। আর আব্দুলের দোকান থেকে কিনব বলেই ঠিক করা ছিল কারণ আব্দুলকেও আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। বাবারও লেন্সের আর ক্যামেরার সখ ছিল একটা বয়সে। তবে সেযুগে এত অত্যাধুনিক লেন্স বা ক্যামেরা ছিল না। বাজারে কিনতে গেলে এই লেন্সের দাম যে কত পড়বে তার কোনও ঠিক নেই। বাবা আমাকে অবশ্য একটা ভীষণ ভালো ক্যামেরা আগেই কিনে দিয়েছিল। তবে লেন্স ছিল না। বেশ একটা টেলিস্কোপিক লেন্স না থাকলে এত ভালো ক্যামেরা দিয়ে কি হবে। তবে অনেক রকমের লেন্স হয় এই জগতে। ধীরে ধীরে জমাতে হবে। হ্যাঁ আমি বড়লোক বাপের একটি মোটামুটি বিগ্রে যাওয়া ছেলে হয়ে গেছি তাতে সন্দেহ নেই। কোলকাতার বিষাক্ত বায়ুর ভেতরে এতক্ষন ঘেমে নেয়ে আর কলেজে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে হচ্ছিল না। আর হ্যাঁ ট্যাক্সিতে ওঠার আগে ফেসবুকে একটা ছবি আপলোড করতে ভুললাম না, এইবারের ক্যাপশনঃ এই নাকি সেই খিদিরপুর, কি ভিড়রে বাবা। তবে...বেশ ভালো লাগলো…” জানি বোকা বোকা ক্যাপশন, কিন্তু এছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না। উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম “চলিয়ে। যেখান থেকে আমাকে উঠিয়েছিলে সেখানেই গিয়ে আবার আমাকে ছেড়ে দাও।” ট্যাক্সির ড্রাইভার যে এই গরমে বেশ বিরক্ত হচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ট্যাক্সির মিটার যা উঠেছে সেটা দেখেই বোধহয় মুখে কিছু বলছে না। হোটেলের কিছু আগেই আমি ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিলাম। তবে যাত্রা শেষে যখন ট্যাক্সির ভাড়াটা মেটাচ্ছিলাম তখন মনে মনে বললাম সর্দারজি, বোধহয় সারা সপ্তাহের সওয়ারির ভাড়া আজ এক বেলাতে পেয়ে গেলে। একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখ টান দিতে দিতে বড় রাস্তা ধরে হেঁটে চললাম কলেজের দিকে। হোটেল থেকে কলেজ পায়ে হেঁটে খুব বেশী হলে ১০ মিনিট। আমার হাঁটতে খারাপ লাগে না। আর গরম যতই বেশী হোক না কেন, এই গরম আর ঘাম সহ্য করার যথেষ্ট অভ্যেস আমার আছে। এখানে রিক্সা ধরার কোনও মানে নেই। তবে আমি একটু তাড়াতাড়ি হাঁটি। তাই দশ মিনিটের রাস্তাটা যেতে আমার লাগলো ঠিক সাড়ে চার মিনিট।

সোজা চলে গেলাম কলেজের অ্যাঁকাউন্টস সেকশনে। কাউন্টার খালি দেখে কলেজ ফি জমা দিয়ে রসিদ নিয়ে, আমার ডিপার্টমেন্টে এসে ফর্ম ফিল আপ করে সব মিটিয়ে যখন ক্লাসে পৌছালাম তখন সেকন্ড হাফের ফার্স্ট ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। প্রায় পনের মিনিট পরে ক্লাসে আসায় আর তাও প্রথম দিন, স্যার যারপরনাই বিরক্ত হলেন সেটা আর বলে দিতে লাগে না। “এত লেট কেন? আর প্রথম দিনেই এই অবস্থা। তোমার তো লেজ গজাতে বেশী সময় লাগবে না হে। মনে রেখো পাশ ফেল এখানে সব আমাদের হাতে। “ আমি মাটির দিকে মুখ নামিয়ে রেখে ওনার সব তিরস্কার সহ্য করলাম। অবশ্য এখানে একটা কথা বলে রাখি, তাড়াহুড়ায় বলতে ভুলে গেছিলাম। সব ব্যাপার মিটিয়ে ক্লাসে আসার ঠিক আগে বাথরুমে গেছিলাম। সেখানে একটা আনঅকুপাইড ল্যাট্রিনের কেবিনে ঢুকে দরজা দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা ধবধবে সাদা ফুল হাতা শার্ট আর কালো ফরম্যাল প্যান্ট বের করে চেঞ্জ করে নিলাম। শু পরেই বেড়িয়ে ছিলাম। পরনের স্টাইলিশ জিন্স আর টি শার্ট টা ব্যাগে চালান করে দিলাম। এরকম জিন্স আর টি শার্ট পরে এখানকার ছেলে মেয়েরা কলেজে আসতে পারে, কিন্তু আমার রুচিতে সেটা বাঁধে। যাইহোক স্যারের তিরস্কার শেষ হলে মাটির দিকে তাকিয়েই খুব নরম কিন্তু পরিষ্কার ভাবে বললাম “স্যার, ভুল হয়ে গেছে। আসলে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসছি। ট্রেন অনেকক্ষণ লেট ছিল। এই পৌছালাম। কোনও মতে একটা ধর্মশালায় জিনিস রেখে রিক্সা ধরে এসেছি। আর এখানকার অ্যাঁকাউন্টসেও যা লাইন…” স্যারের বোধহয় একটু মায়া হল, “ঠিক আছে, যাও। পরের দিন থেকে লেট হলে অ্যাঁটেনড্যান্স পাবে না। নাম কি?” বললাম । স্যার একটা হুম মতন শব্দ করলেন শুধু। আমি চুপ চাপ গিয়ে একটা খালি সিট দেখে বসে পড়লাম। দরজা থেকে সিট অব্দি একবারও মাটির ওপর থেকে চোখ তুলিনি। ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর পেন বের করে রেডি হলাম। স্যার বললেন “তোমার রোল হল ছাব্বিশ।” উঠে দাঁড়িয়ে বললাম “ওকে স্যার।” বসে পড়লাম। এত ভদ্রতা বোধহয় এখানকার শহুরে ছাত্র দের কাছ থেকে স্যারেরা এক্সপেক্ট করেন না। আমার হাবভাব দেখে বোধহয় এরা সবাই আমাকে একটা গাইয়া ভুত বলেই ধরে নিয়েছে। তাতে আমার কি বা এলো গেলো। ক্লাসে তেমন কিছুই হল না। কারণ এখন শুধু সিলেবাস দিচ্ছে। খেয়াল করলাম আমি যেমন আড়চোখে মোটামুটি সবাইকে একবার দেখে নিলাম, তেমনি অনেকেই আমাকেও ঘুরে ঘুরে আড়চোখে লক্ষ্য করছে। কারণ বোধহয় একটাই, এরকম ভদ্র ভাবে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আর কেউ আসেনি। ভাগ্যিস আসার আগে মাথায় তেল ঢেলে স্নান করে আসিনি, তাহলে আর দেখতে হত না। এখানে একটা কথা বলে রাখি, গোপালবাজার না বলে উত্তরপ্রদেশ বলার কারণ একটাই। গোপালবাজার কোলকাতার তাও কাছে। বলা যায় না যদি আমারই মতন সেখান থেকে কেউ ট্রেনে এসে থাকে। তাহলে কেস খেয়ে যাব। উত্তর প্রদেশ থেকে কেউ এসেছে সেটা বিশ্বাস হয় না। আশা করছি স্যার টিকিট দেখতে চাইবেন না কোনও দিনও। চাইলে বলব চেকারের কাছে দিয়ে দিয়েছি ষ্টেশন ছাড়ার আগে।

ক্লাস শেষ হওয়ার পর মিনিট পাঁচেক সময় পেয়েছিলাম। এইবার একটু সাবলীল ভাবে সবার মুখের উপর দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। বেশ কয়েকজনের সাথে সরাসরি চোখাচুখিও হল। সবার কথা বলার এখন কোনও মানে নেই। তবে দু একটা জিনিস চোখে পড়ল। ক্লাসে মোটামুটি একটা গ্রুপ আছে খুব বড়লোক ছেলে মেয়ের। তাদের বেশভূষাই সে কথার জানান দিচ্ছে। গ্রুপ বললাম কারণ তাদের মধ্যে এই প্রথম দিনেই যে রকম ইয়ার্কি ফাজলামি হচ্ছে আর তাও বেশ জোড়ে জোড়ে সেটা থেকে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে এরা হয় আগে থেকেই নিজেদের চেনে, অথবা, একই গোত্রীয় রক্ত বলে প্রথম দিনেই এদের মধ্যে একটা ভাব হয়ে গেছে। যাদের বেশ ভুষা সাধারণ, তারা কেমন একটা সিটিয়ে আছে প্রথম দিন বলে। আর দুই তিন জন ছেলে আর মেয়ের মুখে বেশ একটা দাদা দিদি মার্কা ভাব...মানে ইতিমধ্যে ওরা নিজেদেরকে ক্লাসের লিডার বলে ধরে নিয়েছে। পরের ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমার পাশে বসা ছেলেটা আমার সাথে আলাপ করল যেচে। যদিও আমি প্রয়োজন ছাড়া কারোর সাথে কথা বলি না, তবুও একসাথে পড়তে গেলে কিছু অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে বই কি। আর সেটা খুব দরকারিও বটে। ওকে আমি আগেই লক্ষ্য করেছি। পরনে একটা ঢিলা ফতুয়া মার্কা শার্ট আর জিন্স। একদম সাধারণ বেশ ভুষা। কথা বার্তাও সরল। চোখে মুখে একটা সারল্য আছে। সোজাসুজি আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল “আমার নাম কুন্তল রাহা।” আমার নামটা এই ক্লাসের সকলের ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে। ও ভীষণ গলা নামিয়ে কথা বলছে, যেন একটা ভীষণ ভয় ওকে চেপে ধরে রেখেছে। বলল “একা এসেছ?” বললাম “হ্যাঁ। বাবা গোপালবাজারে থাকে। কিন্তু এখনও দেখা হয় নি। ওর কাজের চাপ চলছে।” ও বলল “ইউপির কোথায় বাড়ি?” বললাম “মিরাট।” বলল “ সেকন্ড হাফে এসে ভালোই করেছ। টিফিনের সময় যা হল সেটা বলার নয়।” বললাম “কিরকম?” বলল “র্যাগিং।” হ্যাঁ এইটাও আমার অজানা নয়। আর এই ব্যাপারটা কি সেটা দেখার জন্য আমার ভীষণ কৌতূহলও আছে। বলল “কাল আবার হবে। টানা এক মাস ধরে হবে। “ ওর মুখটা সরল আর গোলগাল, বেশ একটু মোটার দিকেই পড়ে, শরীরটা বেশ ভারী, কারণ বেঞ্চের ওপর যখন নড়াচড়া করছে তখন প্রায় পুরো বেঞ্চটাই যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। আর বুঝতে পারলাম কেমন জানি একঘরে হয়ে রয়েছে ছেলেটা। কারণ এই ক্লাসরুমে বেঞ্চে দুজন করে বসার জায়গা। ও বসে আছে থার্ড রো তে , কিন্তু ওর পাশে আমার আগে এসে কেউ বসে নি। কেন কে জানে। হতে পারে ভুল্লু টাইপের ছেলের সাথে যেচে পড়তে কেউ আলাপ করতে চায় না। তবে ছেলেটাকে আমার খারাপ মনে হল না। তবে আর একটু আলাপ জমানোর আগেই স্যার এসে উপস্থিত হলেন। তবে এই স্যার বেশ মিশুকে আর ভালো। সবার নাম ধাম একে একে জিজ্ঞেস করলেন। আগে কোথায় পড়তাম, কি হবি সব একে একে জিজ্ঞেস করলেন। বাড়িতে কে কে আছে, বাবা মা ভাই বোন দাদা বৌদি, এমনকি ঠাকুরদা ঠাকুমা কারোর ব্যাপারেই খোঁজ নিতে উনি বাকি রাখলেন না। এতে আমার দুটো লাভ হল। সবার বাড়ির হাঁড়ির খবর আমার জানা হয়ে গেল। একটু আগে আমার সহপাঠীদের দিকে তাকিয়ে আমার যে ধারণাটা হয়েছিল সেটা যে একদম ঠিক সেটা বুঝতে পারলাম। আর তাছাড়া খবর জোগাড় করে রাখা সব সময়ই ভালো, বলা তো যায় না কখন কোন খবরটা কাজে লেগে যায়। এই “বিশেষ” লাভটা ছাড়াও আরেকটা লাভ হল আর সেটা প্রায় অবিশ্বাস্য। পৃথিবী যে গোল সেটা যে বলেছিল সে খুব ভুল বলেনি। আর গোল মানে পুরো গোল সেটা বুঝতে পারলাম যখন আমার পাশে বসে থাকা কুন্তল ওর পরিচয় দিল। “স্যার, আমার নাম কুন্তল রাহা। বাবার নাম বিনয় রাহা। মার নাম রাধিকা রাহা। বাবা শরীর ভেঙ্গে যাওয়ায় রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিয়েছেন। এখন একটা মুদির দোকান দিয়েছেন। আগে কলকাতা দমকল বিভাগে ছিলেন। মা হোম মেকার। এক দিদি আছে। নাম মালিনী রাহা। বিয়ে হয়ে গেছে। দিদি একটা বড় হোটেলে কাজ করে। হবি ছবি আঁকা আর গল্পের বই পড়া। এন্ট্রান্সে র্যাঙ্ক…” স্যার অবশ্য ওকে জিজ্ঞেস করলেন যে “ কেমন ধরণের গল্পের বই পড়ার অভ্যেস। ইংরেজি না বাংলা। “ এরকম আরও কিছু। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে দিদির নাম মালিনী রাহা, বড় হোটেলে চাকরি করে। এটা কি সংযোগ না অন্য কিছু। হয়ত পরে জানতে পারব ওর দিদির বিয়ের পর পদবী হয়েছে ব্যানার্জি বা মুখার্জি। ব্যস তাহলেই হয়ে গেল। আর হোটেলের নামও বোধহয় অন্য। তাও এটা একবার বাজিয়ে দেখা দরকার। ওকে স্যার বললেন তোমার আঁকা ছবি আমি অবশ্যই একবার দেখব। ও বসল আর আমি উঠে দাঁড়ালাম। “নাম সংকেত রায়।” সাথে সাথে প্রশ্ন এলো, “কিসের সংকেত।” এই প্রশ্ন শুনে শুনে আমি বোর হয়ে গেছি। হেঁসে বললাম “স্যার মুক্তির সংকেত।” স্যার বললেন “কিসের থেকে মুক্তি?” বললাম “ তা জানি না কারণ সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে আমার জন্মের পর আমার মায়ের বাতের ব্যথা ছেড়ে গেছিল। তো…” সবাই হেঁসে উঠল। বললেন “বেশ বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির সংকেত!” বললাম “শুধু তা কেন, খারাপ জিনিস থেকে মুক্তি। বাবার নাম…” আমার পর্বও শেষ হল। অনেকের হাঁড়ির খবর মাথায় ছেপে গেছে আমার। কিন্তু আমি এখন বিশেষ ভাবে ইন্টারেস্টেড এই কুন্তলের দিদির ব্যাপারে জানতে। ক্লাস শেষ হতেই সবাই প্রায় হুড়মুড় করে বেড়িয়ে গেল। কারণটা অবশ্য বুঝতে বাকি নেই আর। র্যাগিং এর ভয়। পাছে কোনও সিনিওরের সামনে পড়ে গিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে নাকাল হতে হয়।

আমি হেঁটেই হোটেলে ফিরব। কুন্তল একটা বাস ধরবে। আমি ওর সাথেই বেড়িয়ে এসেছি। রাস্তায় বেড়িয়ে ও যেন কেমন একটা মুক্তি লাভের দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বুঝলাম এই বেচারার ওপর দিয়ে আজ র্যাগিঙ্গের নামে অনেক ঝড় ঝাঁপটা বয়ে গেছে। তবে কয়েকজনের মধ্যে দেখলাম বেশ ঢিলেঢালা ভাব। পরে অবশ্য এই দুরকম অবস্থার কারণ বুঝতে পেরেছিলাম। যাই হোক, রাস্তায় বেড়িয়ে ও আমাকে বলল “দুপুর থেকে কিছু খাওয়া হয়েছে?” বললাম “না।” ও কলেজের গেট থেকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে কাঁধের শস্তা ব্যাগটা খুলে একটা টিফিন বক্স বের করল। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই বক্সটা খুলে ফেলল। দেখলাম ভেতরে চারটে হাতে করা রুটি আর তার সাথে একটা বেগুন ভাজা আর অল্প আলুর তরকারি। টিফিন বক্সটা খুলতেই একটা বাসী খাবারের গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা মারল। ও এক টুকরো মুখে পুড়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “যাক নষ্ট হয়ে যায় নি। যা গরম পড়েছে। ভাগ্যিস ফ্রেশ ফ্রেশ বানিয়ে দিয়েছিল। এই নে…সরি নাও...” আমার দিকে টিফিন বাক্সটা এগিয়ে দিল। আমি ওকে বললাম “না তুইই ঠিক আছে। তুমিতে আমারও আপত্তি, তাও যখন একই ক্লাসে পড়ি। কিন্তু তুই এতক্ষন খাস নি কেন?” বলল “র্যাগিঙ্গের সময় খাওয়া যায় নাকি? আর তাছাড়া চারপাশে সবাই এমন সব টিফিন নিয়ে এসেছে, মানে বুঝতেই তো পারছিস, পিজ্জা, চাউমিন, ফ্রাইড রাইস, আরও কত কি। সেখানে বসে বাড়ির রুটি খেতে একটু লজ্জা লাগে আর কি?” একটু বিরক্ত হয়েই বললাম “তাতে কি হয়েছে? এটাও তো খাবার। খেয়ে দেখলে হয়ত দেখা যাবে এতে যা ফুড ভ্যালু আছে সেটা ওই খাবার গুলোতে নেই। আর সবাই নিশ্চই ওই রকম দামী দামী খাবার নিয়ে আসেনি। “ কথাটা মুখে বললাম বটে তবে আমি জানি ও কি বলতে চেয়েছে। এটাকে বলে কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্স যা বুঝেছি তিন ধরণের। এক নিজেকে ছোট বা গরীব ভাবার কমপ্লেক্স, দুই, নিজেকে অন্যের থেকে বড় ভাবার কমপ্লেক্স, আর তিন কোনও কিছুই গা না করার কমপ্লেক্স। আমি অবশ্য নিজে তৃতীয় দলে পড়ি কারণ আমার কারোর কোনও কিছুতেই কিছু এসে যায় না। আমি আছি আমার মতন। কোথাও ডাল গললে ভালো, আর না গললে অপেক্ষা করব পরের বার ডাল গলানোর জন্য। বললাম “ট্রেনে অনেক খেয়েছি। তুই ই খেয়ে নে। তোর মা এত কষ্ট করে বানিয়েছে।” ও বোধহয় ভাবতে পারে যে আমি এই সাধারণ খাবার খেতে চাইছি না, তাই দুই টুকরো রুটি আর একটু আলুর তরকারি মুখে দিয়ে বললাম “কাল থেকে আর বাসী করিস না। আমাকে এখানে রেঁধে খাওয়ানোর মতন কেউ নেই। এইভাবে খাবার নষ্ট করার থেকে আমাকে দিয়ে দিস। আমি পিজ্জার পাশের টেবিলে বসে আনন্দে খেয়ে নেব তোর টিফিন। “ বাকিটা ও খেয়ে নিল চক্ষের নিমেষে, বুঝলাম ওর খুব ক্ষিদে পেয়েছিল, শুধু ভদ্রতার খাতিরে আমাকে অফার করেছিল।

একটু ধীরে সুস্থে বললাম “তোর বাড়ি এখান থেকে কত দূর?” বলল “এই তো বাস ধরে দুটো স্টপ। কেন বল তো?” একটু ভেবে বললাম “একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম আজ। “ দেখলাম ও জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। হেঁসে বললাম “আরে দূর তেমন কিছু নয়… মনে হয় কোইন্সিডেন্স। তবু জিজ্ঞেস করছি, তোর দিদির কি যেন নাম বললি তখন?” বলল “মালিনী।” বললাম “বিয়ের পর তো আর মালিনী রাহা নেই? না কি আছে?” ও হেঁসে বলল “আরে, এই কথা , বিয়ের পর মালিনী সরকার।” আমি হেঁসেই ফেললাম। ও যেন একটু ঘাবড়ে গেল। বললাম “তোর দিদি কি বাই এনি চান্স প্যারাডাইস ইনন এ চাকরি করে?” ও যেন অবিশ্বাসের শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে। বললাম “তোর দিদির কি নাইট শিফট থাকে?” ওর বিস্ময় আর এক ধাপ উঠে গেল। বুঝলাম ওর মুখ দিয়ে কথাই বেরোচ্ছে না। বললাম “এখন কি বাড়ি ফিরবি? না কি দিদির সাথে দেখা করে তবে ফিরবি? তোর দিদির শিফট শুরু হয় কখন?” আমতা আমতা করে বলল “রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টা। তবে, পরের শিফটের লোক না আসা অব্দি ওয়েট করতে হয়। তবে নেক্সট উইকে দিদির নাইট শিফট নেই। এক সপ্তাহ করে থাকে।” বললাম “তো এই সপ্তাহে তো আছে। তো যাবি না কি দেখা করতে?” ও একটু অবিশ্বাসের সুরেই বলল “দূর জানি না তুই আমার দিদিকে কি ভাবে চিনিস। তবে হোটেলটা খুব একটা দূরে নয়। তবে সেখানে গেলে ডিউটির সময় বাড়ির লোক অ্যাঁলাউ করে না।” বললাম “ চল চল, কোথাও গিয়ে বসে একটু চা খাওয়া যাক। আমারও একটু ক্ষিদে পেয়েছে। একটু ঝালমুড়ি গোছের কিছু খাওয়া যাক। তারপর এদিকে ওদিক একটু ঘুরে আটটার দিকে হোটেলে ঢুকব।” ও বলল “তোকে হোটেলে ঢুকতে দেবে? হোটেলেটা নেহাত ছোট খাটো ধর্মশালা নয়। “ ওহ এইবার বুঝলাম, সেই যে বলেছিলাম ধর্মশালায় মাল রেখে এসেছি, কুন্তল এখনও সেখানেই পড়ে আছে। ওর ভুল ভাঙানোর কোনও মানে হয় না এখন। কুন্তল ছেলেটা ভীষণই যে সরল সেটা ওর সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলেই বুঝতে পারলাম। ওর দিদির পারিবারিক অশান্তির কথাও আমাকে বলে দিল। ওর জামাইবাবু কাথিতে পোস্টেড। বিমা কোম্পানির এজেন্ট। অনেকবার ট্র্যান্সফারের জন্য বলেছে কিন্তু পায় নি। সপ্তাহে শনিবার করে আসে, দিয়ে সোমবার ফিরে যায়। কিন্তু সেই সময় যদি ওর দিদির নাইট শিফট চলে, মানে যেটা এক সপ্তাহ অন্তর চলে, তাহলে বাড়িতে ভীষণ অশান্তি হয়। কারণ সেই সময় দিদি জামাই বাবুকে সময় দিতে পারে না। মনে মনে হেঁসে ফেললাম, সপ্তাহে দুই দিন চোদার জন্য পায়, আর সেই দুদিন যদি বউ বাড়ি না থাকে তো হতাশা আসতে বাধ্য। বললাম “হুম বুঝলাম। কিন্তু তোর দিদি তো কাথিতে গিয়ে থাকতে পারে।” ও গলা নামিয়ে বলল “জামাই বাবু খুব সিনিওর কিছু নয়। জুনিয়র এজেন্টের কাজ করে। দিদির এখানে একটা ফিক্সড ইনকাম আছে। যেই মাসে জামাই বাবুর তেমন ক্লায়েন্ট জোটে না তখন বাড়িতে ভালোই টানাটানি চলে। আর কাথিতে তো জামাইবাবু একটা মেসে থাকে। দিদি থাকবে কোথায়। এখানে দিদি কোনও মতে একা চালিয়ে নেয় একটা ছোট মেয়েদের মেসে থেকে। বিয়ের পর তো আর বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে পারে না। “ বুঝলাম মেয়েটার সম্মান বোধ ভালোই। ও কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে ওর দিদির কথা বলতে বলতে, তার পর একটু দুঃখী দুঃখী গলায় বলল “ এখন ওদের সম্পর্ক ভালো নয়। ওদের কথা চিন্তা করে আমার বাবার একবার হার্ট অ্যাঁটাক হয়ে গেছে। জামাইবাবু অলরেডি ডিভোর্সের ভয় দেখিয়েছে। বুঝতেই পারছিস আমাদের মতন ছাপোষা পরিবারে এইসব শুনলে কত ভয় পেয়ে যাবে। তবে আমি জানি তেমন কিছু হবে না। কারণ দিদিকে খোরপোষ দেওয়ার মতন টাকা জামাইবাবুর নেই। আর তাছাড়া দিদি অনেকবার জামাইবাবুকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। তবে হ্যাঁ, দিদি, খুব মন খারাপ করে থাকে সব সময়। বাড়িতে অশান্তি থাকলে আর কি করবে বল? সারা সপ্তাহ বরকে কাছে পায় না, আর যেদিন পায় সেদিন নাইট শিফট থাকুক না থাকুক অশান্তি লেগেই আছে। “ একটু থেমে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এই তুই কিন্তু কাউকে এইসব কথা বলতে যাস না। আর দিদিকে তুই চিনিস কিভাবে সেটাই তো বললি না। আর দিদির সাথে দেখা করতে হলে ওই যে বললাম হোটেলের সিকিউরিটির ঝামেলা। সেটা ভেবে দেখেছিস? “ আবারও আমি এই কথার কোনও উত্তর দিলাম না। পকেট থেকে ক্লাসিক সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে ওর সামনে এগিয়ে ধরলাম। ও সিগারেট খায় না। সুতরাং আমি নিজেই একটা লম্বা সিগারেট ঠোঁটে ধরে তাতে অগ্নি সংযোগ করে একটা সজোরে টান মারলাম। বললাম “সে দেখা যাবে। চাইলে আমি যেতে পারি না এমন জায়গা খুব কম আছে। তবু তোর দিদির যখন ব্যাপার তখন আজই একটা চেষ্টা দেখতে হচ্ছে, তবে রেখে ঢেকে আর হোটেলের সব নিয়ম কানুন মেনে। “ [/HIDE]
 
[HIDE]কলেজ থেকে বেড়িয়ে যে দিকে হাঁটলে হোটেলে পৌঁছানো যায় আমরা তার উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছি। আমি নিজে একা থাকলে বোধহয় হোটেলে পৌঁছাতে খুব বেশী সময় লাগতো না, কিন্তু কুন্তল ওর ভারী শরীরটা নিয়ে যে স্পীডে হাঁটছে, তাতে আর বেশী এগোনো ভালো নয়। এখনই উল্টো দিকে হাঁটা দেওয়া ভালো। আমি মুখ বুজে হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। ও আমার পিছু নিল। বললাম “একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না। (একটু থেমে বললাম) তবে কিছু মনে করিস না তোর পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাচ্ছি বলে। আমার আসলে এইরকম মানুষ স্টাডি করতে বেশ ভালো লাগে। তাই কৌতূহল আর কি। তোর জায়গায় অন্য কেউ যদি তার প্রবলেম শেয়ার করত, তাহলেও আমি খুঁটিনাটি জানতে চাইতাম। তবে আমার প্রশ্নটা খুব সাধারণ। তুই বললি তোর জামাইবাবু সপ্তাহে এক দিন আসে, আর তোর দিদি এখানে থাকে মেসে। আর তোর বাড়ির সাথে তোর জামাইবাবুর সম্পর্ক একদম ভালো নয়। তাহলে ওই দুদিন এসে তোর জামাইবাবু থাকে কোথায়? এখানে ওর নিজের বাড়ি থাকলে তোর দিদিকে নিশ্চই এইভাবে মেসে পড়ে থাকতে হত না। “ ও কিছুক্ষণ কি বলবে ভেবে পেল না। তারপর অনেকক্ষণ ভেবে শুরু করল। বুঝলাম নিজের মনের মধ্যে চিন্তা ভাবনাগুলো কে গুছিয়ে নিল। “ দেখ, এটা যেন ক্লাসের কেউ না জানে। তবে জানাজানি হবেই। সে তুই বলিস বা নাই বলিস...” আমি চুপ করে রইলাম। ও বলল “ দেখ জামাইবাবুর এখানে একটা বাড়ি আছে। মানে জয়েন্ট ফ্যামিলি। ওর এক জেঠু আর ওর নামে বাড়ি। মানে ওর বাবা মারা যাবার পর বাড়িটা হয়েছে ওর নামে। কিন্তু এখানে সমস্যা আছে। ওর বাবার একটা ব্যবসা ছিল, সেটায় লোকসান হওয়ায়, ওর বাবা ওর জেঠুর কাছ থেকে অনেক টাকা ধার করেছিল। ওর বাবা মারা যাবার পর, ও নিজেও বেশ কয়েকদিন ব্যবসাটা চালানোর চেষ্টা করেছিল কারণ ধার দেনা ভালোই ছিল। তখন ও নিজেও ওর জেঠুর কাছ থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিল। কিন্তু এইবার ওর জেঠু ওকে দিয়ে লেখা পড়া করিয়ে নিয়েছিল। ব্যাপারটা এরকম, ওর ভাগের সম্পত্তিটা জেঠু লিখিয়ে নিয়েছে। আমি আইনি মার প্যাঁচ জানি না। তবে এইটুকু জানি যে, এখনও আইনত ওর জেঠু বাড়িটা পায় নি। যদিও বিস্তর ধার বাকি। আর সেই জন্যই তো জামাই বাবুর ইনকামের বেশির ভাগটাই ওই ধার শোধে চলে যায়। আর ক্লায়েন্ট না জুটলে তো বিপদ, তখন দিদির কাছে এসে হাত পাতে। সমস্যা হল, ওই ভদ্রলোক খুব সুবিধের নয়। আইনের দিক থেকে এখনও বাড়ির মালিকানা পায় নি বটে, কারণ এসব হতে হতে অনেক সময় লাগে, আর জামাইবাবু কিছু কিছু টাকা করে এখনও শোধ করে যাচ্ছে। কিন্তু পাড়ায় লোক জানাজানি হয়ে গেছে। একবার দুই একজন গুণ্ডার মতন ছেলে এসে ধার শোধ করার জন্য শাসিয়েও গেছে। “ বললাম “বলিস কি?” বলল “নয় তো আর কি বলছি। জামাই বাবু নিজে এসেই ওই বাড়িতে থাকতে চায় না। গুণ্ডার ভয়। তারপর সারাক্ষন ওই দিক থেকে ওর জেঠুর বাড়ির লোকেরা যাতা বলে যাচ্ছে। এই পরিবেশে থাকা যায়? আর আমার জামাইবাবু যখন এখানে নেই তখন ওই পরিবেশে দিদি একা গিয়ে থাকবে কি করে্? আর তাছাড়া ওর জেঠুর সল্ট লেকে দু দুটো বড় বড় দোকান আছে ওষুধের। মাস গেলে ভালো লাভ। অনেক বড় বড় লোক চেনা শুনা আছে। বুঝতেই পারছিস যে কি বিপদের মধ্যে আছে। “ বললাম “ভ্যালিড পয়েন্ট। কিন্তু তাহলে তোর জামাইবাবু এসে থাকে কোথায়? আর হ্যাঁ, তুই বেকারই ভয় পাচ্ছিস, ক্লাসের কাউকে আমি এই কথা বলতেই বা যাব কেন?” বলল “ আমাদের ডান দিকে একটা বেঞ্চ পেছনে একটা ছেলে বসেছিল দেখেছিস?” আমি চোখ বন্ধ করে একবার শুধু মাথার ভেতরটা দেখে নিলাম। বললাম “ফর্সা না গায়ের রঙ চাপা?” বলল “ চাপা।” বললাম “ সুনীল সরকার। বাবার নাম প্রশান্ত সরকার, মায়ের নাম তনিমা সরকার। বাবার ওষুধের বিজনেস আছে…আর তোর দিদি হল গিয়ে মালিনী সরকার...হুম এইবার দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পারছি।” ও বলল “বাপরে বাপ, তোর মেমোরি তো হেভি শার্প। আমি তো এখন কারোর নাম বলতেই পারব না। ওকে চিনতাম বলে জানি।” আমি একটু অন্যমনস্ক ভাবেই বললাম “হুম। মেমোরি ব্যাপারটা অভ্যাসের ব্যাপার। সেটা ছাড়। তো তাহলে এখন তোর জামাইবাবু এসে থাকে কোথায়?” বলল “ সেই কথাই তো বলছি এইবার। দিদি নিজের ম্যানেজারকে বলে সপ্তাহে দুটো দিন একটা রুমের ব্যবস্থা করে ওই হোটেলেই। জামাইবাবু এসে ওখানেই থাকে। তবে জানিস তো…” আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম “ এরকম একটা হোটেলে তোর দিদিকে পার্সোনাল ইউসের জন্য একটা ম্যানেজার ঘর দেবেই বা কেন সেটা নিয়েই সন্দেহ... তাই তো? তোর জামাইবাবু ভাবে যে ওই ম্যানেজার আর তোর দিদির মধ্যে কিছু একটা আছে। আর যদি খুব ভুল না করি সেটাও একটা অশান্তির কারণ। আচ্ছা সত্যিই কি তোর দিদি আর ওই ম্যানেজারের মধ্যে কিছু আছে?” এক দিকে ও যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কারণ আমি ওর গোপন জায়গাটা অনুমান করে নিজেই বুঝে নিলাম আর ওকে ওই নিয়ে কিছু বলতে হল না, কিন্তু অন্য দিকে এরকম সরাসরি একটা অশ্লীল প্রশ্ন শুনে বোধহয় ব্যথিত হয়েছে। ঘাবড়েও গেছে। আমি আশ্বাসের স্বরে বললাম “দেখ যদি থেকেও থাকে তাহলেও আমি কিছু ভাবব না। কারণ এখানে তোর দিদির আমি কোনও দোষ দেখছি না। তবে যা মনে হচ্ছে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেক্ষেত্রে এরকম ভাবে রুম ইউস করতে দিচ্ছে কেন? আর সেক্ষেত্রে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, যদি সেই সপ্তাহের শেষে কোনও ঘর খালি না থাকে তো কি হবে?” ও গলা নামিয়ে বলল “ আমি তোর কথায় কিছু মনে করিনি। কারণ এইটা প্রথম বার শুনে আমার বাবাও প্রচুর চেচিয়েছিল। আর ওই প্রশান্ত সরকারের বাড়ি থেকেও আমার দিদির চরিত্র নিয়ে অনেক কথা শোনানো হয়ে গেছে। তবে, আমি জানি আমার দিদি তেমন কিছু করে নি কোনও দিন। যদিও জামাই বাবু দিদিকে সন্দেহ করে। তবে আসল কথাটা হল, ম্যানাজারের নিজের জন্য বরাদ্দ একটা ঘর আছে। ম্যানেজারের অনেক বয়স হয়েছে। ওর বাড়ি হুগলীতে। ও নিজেও শুধু উইক এন্ডে ওখানে যায়। তাই ওর জন্য বরাদ্দ করা ঘরে ওই উইক এন্ডে আমার দিদি আর জামাইবাবু থাকে। তবে দিদির ডিউটি থাকলে অন্য ব্যাপার। তখন শুধু জামাইবাবু থাকে। ডিউটি অফ হলে দিদিও... “ হোটেল এখনও আমাদের থেকে অনেকটা দূরে। তবু বাকি রাস্তাটা আমি আর কোনও কথা বললাম না। হোটেলের একদম সামনে এসে ও আমাকে ফিসফিস করে বলল “ শোন এত কথা যে আমি তোকে বলেছি সেটা কখনও কাউকে বলবি না। কারোর সামনে না। তবে ওই সুনীলের এখানে অনেকগুলো বন্ধু জুটে গেছে। সব বড়লোক বাপের ছেলে। আজ সারা দিন ও এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল যে কি বলব। আবার র্যাগিং করতে যে সিনিওর গুলো এসেছিল তাদেররও বোধহয় কয়েক জন কে ও বা ওরা চেনে। আমাদের অনেক র্যাগিং হয়েছে। ওদের তেমন কিছুই হয় নি। আমি সিওর যে ও আমার দিদির নামে কলেজে কেচ্ছা রটাবে। তখন কি করে যে আমি কাউকে মুখ দেখাব কে জানে। “ আমি ওর দিকে ফিরে বললাম “ সে যেদিন কেচ্ছা রটাবে সেদিন দেখা যাবে। আগে থেকে এত ভেবে লাভ নেই। আমি তো আছি। আর বিশ্বাস কর আমি যে ধাতুতে গড়া, সেটা কেমিস্ট্রিতে পি এইচ ডি করা নোবেল বিজয়ীরও অজানা । হয়ত দেখ এরকম করার সাহসই করবে না কেউ যত দিন আমি এখানে আছি। অবশ্য আমি চলে যাওয়ার পর্…(ও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম) এখন তুই ভেতরে যা। কেউ ধরলে বলবি আমার বন্ধুর সাথে এসেছি। দিদির সাথে দেখা করতে আসিনি। সিগারেট কিনে নিয়ে আসছি। “ আমি আর দাঁড়ালাম না। এত কমপ্লেক্সের চাপে বেচারার মেরুদণ্ড একদম ভেঙ্গে গেছে বলে বোধ হচ্ছে। একটু এগিয়ে দিয়ে দেখাই যাক না কেমন রেজাল্ট করে। আমি সিগারেটের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দু প্যাকেট ক্লাসিক কিনে গেটের দিকে হাঁটা দিলাম। এই দোকানটা সকালে বন্ধ ছিল। পরে জেনেছিলাম যে এর মালিক নাকি নিজে চাকরি করে, চাকরি ছুটির পর বিকেলে এসে দোকান দেয়।

ছোট মোবাইলে দেখে নিলাম সময় আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। গেটে পৌঁছে বুঝতে পারলাম যে কুন্তলকে সিকিউরিটি আটকেছে। আর সিকিউরিটির সামনে দাঁড়িয়ে ও যেন কাঁপছে। অবশ্য আমাকে আসতে দেখেই সিকিউরিটি স্যালুট ঠুকল। এ আমার দেখা সকালের সেই সিকিউরিটি। সিকিউরিটির সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞেস করলাম “ ওকে ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার কারণ?” লোকটা বলল “ দেখুন, ও আগেও এখানে এসেছে ওই মালিনী ম্যাডামের সাথে দেখা করতে। কাজের সময় এইসব হলে খুব সমস্যা হয়। “ আমি ওকে থামার সুযোগ না দিয়েই বললাম “ আজ ও কি বলেছিল? মানে এখানে আসার কারণ?” বলল “ বলেছে একজন বন্ধুর সাথে এসেছে, দিদির সাথে দেখা করতে আসেনি।” আমি সাথে সাথে তীরের মতন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম “আপনাদের কোনও এমপ্লয়ীর আত্মীয় বা আত্মীয়া যদি কোনও গেস্টের ফ্রেন্ড হয় আর সে যদি সেই গেস্টের সাথে দেখা করতে আসে তখনও কি আপনারা তাকে ঢুকতে দেবেন না? সেক্ষেত্রে আমার অভিযোগ হল, আপনারা আপনাদের গেস্টদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন। “ লোকটা একটা হাঁটুর বয়সী ছেলের কাছ থেকে এহেন প্রশ্ন শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছি। ও আমতা আমতা করে বলল “ না তেমন আমরা করি না।” আমি সাথে সাথে আবার জিজ্ঞেস করলাম “ এই ছেলেটার নাম কুন্তল রাহা। ও এসেছে সংকেত রায়ের সাথে দেখা করতে। এতে মালিনী সরকার আসছে কোথা থেকে? আপনারা কি আমার মতামত টা ভেরিফাই করেছেন? ” ওনার আমতা আমতা ভাবটা বেড়েই চলেছে। “না মানে। আমরা ঢুকতে দিতাম। কিন্তু তার আগে ভেরিফাই করতাম যে সত্যি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে কি না।” আমার পাল্টা প্রশ্ন “ সেক্ষেত্রে আপনাদের কাছে আমার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। ওনাকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে এইভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ? ভেতরে নিয়ে গিয়ে রিসেপশনে যে আছে তাকে দিয়ে, এমনকি মালিনী সরকার থাকলে তাকে দিয়েও কি ব্যাপারটা ভেরিফাই করা যেত না? ” ও আর কিছুই বলতে পারছে না। বলে চললাম “ দেখুন মিস্টার, আমার গেস্টের অপমান আমার অপমান বলেই আমি ধরি। ম্যানেজারকে গিয়ে এই ইনসাল্টের ব্যাপারে আমি অভিযোগ জানাব। আপনাদের খাতায় যে গেস্টরা এসে ভুরি ভুরি তথ্য ফিল আপ করে তার মধ্যে মোবাইল নম্বরও থাকে। একটু চেষ্টা করলেই এই সব অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে আপনিও মুক্তি পেতে পারেন আর কুন্তলের মতন লোকেরাও মুক্তি পেতে পারে। আসছি।” কুন্তলকে নিয়ে আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। নাহ, ম্যানেজারের কাছে গিয়ে এই গরীব লোকটার ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর কোনও ইচ্ছেই নেই আমার, কিন্তু তাও এই ধরণের ব্যবহার বদলানো উচিৎ। আজকে যা হল তার ভয়ে যদি একটু মানুষ হয় আর কি। সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল এই যে ও জানে মালিনীর পরিবারের অবস্থা কেমন, দুজনের যে অবস্থা মোটামুটি প্রায় একই সেটা অজানা থাকার কথা নয়, কারণ কার্যক্ষেত্রে সবাই সবার হাঁড়ির খবর পেয়েই যায়। কিন্তু অদ্ভুত হল তবুও কুন্তলের সাথে এহেন ব্যবহার করতে ওর কোনও দ্বিধা বোধ হয় না। অবশ্য হতে পারে আগে হয়ত কুন্তলকে ঢুকতে দিয়ে ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে কড়া কড়া কথা শুনতে হয়েছে। যাই হোক এ নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই। রিসেপশনে এখন অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। আর যে মেয়েটি ডেস্কের পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁসি মুখে সবার সমস্যা সমাধান করছে সে আমার প্রিয় মালিনী মাগী নয়। মনে মনে মেয়েদের ব্যাপারে কথা বললে আমি মাগী ইত্যাদি বলে থাকি। কিন্তু সামনে যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানি না। আমি ওই মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনও রকম ভনিতা না করে বললাম “১০৭”। কি নিয়ে বললাম “চল।” তারপর মেয়েটার দিকে ঘুরে বললাম “ মালিনী এলে যেন একবার আমার রুমে কল করা হয়। বলে দেবেন। বিশেষ দরকারি। “ আমি জানি শুধু মেয়েটা কেন চারপাশের সব বেয়ারাই বুঝেছে কেন কল করতে বলেছি, কারণ কুন্তলকে এখানকার সবাই চেনে। কিন্তু কিছু করতে পারবে না এই ক্ষেত্রে, অন্তত আমি যত দিন এখানে আছি। হ্যাঁ মেয়েটার নাম ওর বুকের ওপর বাঁদিকে আটকানো ব্যাচ থেকে দেখে নিয়েছি। নাম মেঘনা। বয়স আন্দাজ...। আর বলে কি হবে। এখন আমার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। তবে হোটেলের এই রিসেপশনে বসা মাগীগুলোর কথা বলতে গেলে, এখন শুধুই মালিনী। মেয়েটার মুখটা সত্যি খুব মিষ্টি ছিল। এখন ওর দুঃখের কথা শুনে দুটো চিন্তা মাথায় এসেছে। মেয়েটা সত্যি ভালো, আর তাই মেয়েটাকে কেমন যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও নিজের করে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে। না না, ভুল কিছু বলছি না। কেন? ভালো মেয়েদের নিজের করে পেতে ইচ্ছে করতে পারে না? এতে খারাপের কি হল। সে হোক না যৌন ক্ষুদা। কিন্তু তাও কিছুক্ষণ তো কাছে পাব। আর দুই, মেয়েটার লাইফে অনেক প্রবলেম। এইসব ক্ষেত্রে মেয়েদের যদি একটু অমৃতের বা বৈচিত্রের স্বাদ দেওয়া যায় তো অনেক সময় মেয়েরা ঢলে পড়ে। তবে ভালো কথা, যদি বলি সব মেয়েদের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি তাহলে সেটা তস্য বোকামি হবে। কারণ সাংসারিক সমস্যা থেকে অনেক মেয়ে খিটখিটে হয়ে যায়, কেউ কেউ আবার পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে যায়, আবার “অনেক অনেক” মেয়ে এমনও আছে যারা যতই সমস্যায় থাকুক না কেন, কোনও অবস্থাতেই পর পুরুষের দিকে ঝুঁকবে না, তা সে যতই সুখের হাতছানি থাকুক না কেন উল্টো দিকে। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি। পয়সা তো কিছু যাচ্ছে না। ক্ষতিও কিছু নেই। অবশ্য কুন্তল যদি ওর দিদির ব্যাপারে আমার নোংরা চিন্তাগুলো পড়তে পারে তো আজই সম্পর্ক ছেদ হয়ে যাবে। তবে মনে হয় না ও কিছু বুঝতে পেরেছে।

ঘরে গিয়ে বসে চায়ের অর্ডার দেওয়া হল। কুন্তল মদও খায় না। আমি অবশ্য চারটে স্ট্রং বিয়ারের বোতলের অর্ডার দিলাম। দাম বড্ড চড়া। বাইরে থেকে কিনে আনলে অনেক শস্তা পড়ে। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। কোথায় মদের দোকান সেটা কাল খুঁজে বার করতে হবে। একা থাকলে আমি প্রায় রোজই গলা ভেজাই। আমি একটা ব্যাপারে খুশি যে ধর্মশালার ঢপ আর এই হোটেলের ব্যাপারে ও আর কোনও বোকা বোকা প্রশ্ন করেনি। যা বোঝার বুঝে চুপ মেরে গেছে। চা এলো। সাথে এলো স্ন্যাক্স। আর আমার বিয়ার। বিয়ারে দুটো চুমুক দিয়েছি কি দেই নি, এমন সময় ঘরের ফোনটা বেজে উঠল। তুলতেই ওপার থেকে গলা ভেসে এলো “রিসেপশন থেকে মালিনী কথা বলছি। আমাকে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। কি ব্যাপার জানতে পারি?” বললাম “ ঘরে ছারপোকা ঢুকেছে। নাম কুন্তল। যদি ইচ্ছে হয় আসতে পারেন। নইলে কাটিয়ে দিন। “ ও দিক থেকে উত্তর এলো “ ধন্যবাদ যোগাযোগ করার জন্য। দেখছি কিছু করা যায় কি না। তবে সময় লাগবে। একটু অপেক্ষা করতে হবে।” বললাম “ নো ইস্যু।” কুন্তলের উশখুশ ভাব দেখে ওকে বলে দিলাম “আসবে। একটু পরে। বাই দা ওয়ে। এখান দিয়ে লাস্ট বাস যায় কখন?” ও বলল সে রাত বারোটায়ও বাস পাওয়া যায়। বললাম “তাহলে বসে থাক।” ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই অবশ্য একটা জিনিস আমার চোখ এড়ায় নি। ঘরের এক কোনায় পরিষ্কার মেঝের উপর দুটো গোলাপি রঙের ক্যাম্বিসের ব্যাগ রাখা আছে। আমি কুন্তল কে বললাম “তোর তো স্মার্ট ফোন আছে। একটা দুজনের সেলফি তুলে আমাকে মেইল কর না। ও বাক্য ব্যয় না করে আমাদের দুজনের একটা সেলফি তুলে আমার মেইল এ পাঠিয়ে দিল। বলল “শালা এত বড় হোটেলে থাকিস একটা ভালো ফোন নিতে পারছিস না?” বললাম “শালা কয়েকদিন আগেই মোবাইল হারিয়েছি। এখন বাড়িতে বলতে গেলে পুঁতে রেখে দেবে। ধীরে ধীরে বলতে হবে। “ আরও অনেকক্ষণ ওয়েট করেও দেখলাম মালিনী এলো না। আমার ভেতরে কোনও উশখুশ ভাব না থাকলেও বুঝতে পারলাম যে কুন্তলের ভেতরে উশখুশ ভাবটা বেড়েই চলেছে। সেটা স্বাভাবিক, বরং বলা ভালো সেটা না হলেই আমি আশ্চর্য হতাম, ধরে নিতাম যে ও আমারই মতন একটা কমপ্লেক্স ছাড়া হৃদয়হীন প্রাণী। [/HIDE]
 
এখনো গল্পের ভিতরে ধুক্তে পারি নাই।

অনেক বড় গল্প, আশা করি রেগুলার আপডেট দিবেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top