billionbd2024
Member
মূল লেখক: সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী
আয়শা (রা) এর বয়স নিয়ে ২টি মত রয়েছে। ১. বিয়ের সময় ১৫/১৬ বছর ছিল ২. বিয়ের সময় ৬/৭ বছর ছিল। এই লেখাতে এই বিষয়ে ২য় মত নিয়ে আলোচনা করব। যদি ধরে নিই যে, হাদিসগুলো সঠিক তাহলেও এটা প্রমানিত হয় না যে, মুহাম্মাদ ﷺ যখন আয়েশা (রা) এর সাথে সহবাস করেন তখন আয়েশা (রা) এর বয়স ৯ বছর ছিল।
কিছু কথা না বললেই নয়, গত ১০০ বছর আগ পর্যন্ত কোন কাফের, মুশরিক, মুরতাদ, নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী তেমন কেউ এই রাসূল ﷺ ও আয়শা (রা) এর বিয়ে নিয়ে মহানবীর উপর কোন অভিযোগ করেনি। কারন গত ৫০ বছর আগেও দেশে-বিদেশে মেয়েদের ৭-১২ বছরের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দেওয়া একদম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পশ্চিমাদের তৈরি করা নতুন আইন বাল্যবিবাহের কারনেই মানুষ আস্তে আস্তে এটাকে সম্পুর্ণ ভয়ংকর খারাপ একটা জিনিস ভাবা শুরু করেছে। অথচ ইসলামে একজন মেয়ে বা ছেলে তখনই বালেগ হয়ে পড়ে যখন তারা বয়সন্ধিতে পৌছে যায়। ইসলামে এই সময়ের আগে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা যায়েজ নেই। বিভিন্ন যায়গায় এর তারতম্য দেখা যায়, সাধারনত মেয়েরা ৯-১৫ এর মধ্যে বয়সন্ধিতে পৌছে এবং ছেলেরা ১১-১৬ বছর বয়সে। যদিও মহানবী আয়শা (রা)-কে কম বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন, তারপরও কিন্তু তাদের সন্তান হয় নি। বর্তমানে অনেকেই তো অনেক রিসার্চ দেখিয়ে বলে কম বছর বয়সে বাচ্চা হলে মায়ের জন্য অনেক সমস্যার তৈরি হয়। কিন্তু আয়শা (রা) ও রাসূল ﷺ এর যেখানে বাচ্চা হয়নি সেখানে এই ধরনের কোন সমস্যা হওয়ারত কোন কথাই আসে না।
মূল লিখা
যাই হোক বিভিন্ন হাদিস দেখিয়ে দাবি করা হয়, যে আয়েশা (রা) বয়স যখন ৯ বছর ছিল তখন নবী ﷺ তাঁর সাথে সহবাস করেছিলেন। এহেন দাবি করে ইসলামের শত্রুরা নবী করিম ﷺ কে শিশুকামী (Pedophile) বলার স্পর্ধা দেখায় (নাউযুবিল্লাহ)। এই লেখাটিতে একটি ভাষাগত আলোচনার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষন করা হবে যে উক্ত হাদিসগুলোতে আসলেই এমন কিছু বলা হয়েছে, নাকি অন্য কিছু বোঝানো হয়েছে।
এই মর্মে যেই হাদিসগুলো দেখানো হয়, তার প্রায় সবগুলোরই মুল রুপ কিছুটা এরুপ:
"আয়েশা (রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন আমি যখন ৬ বছর বয়সী ছিলাম তখন রাসুল ﷺ আমাকে বিয়ে করেন, এবং আমি যখন ৯ বছর বয়সী ছিলাম তখন তিনি ﷺ আমার সাথে সহবাস (যেই অর্থটা প্রচার করা হয়) করেন।" বর্ননাটির কিছু সংস্করনে আয়েশা (রা) "তৃতীয় ব্যাক্তি" (Third person) হিসেবে এসেছেন, এবং বাচনভংগি ও শব্দের ছোটখাটো পার্থক্যের বিবেচনায় এই হাদিসটির একাধিক সংস্করন (version) রয়েছে … [1]
আবার এ সংক্রান্ত হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে 'Consumate' শব্দটি দেখেও অনেকে ধারণা করেন এখানে মূল আরবিতে সহবাসের কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, হাদিসগুলোর যেসব সংস্করন হতে দাবি করা হয় তিনি (রা) এ এখানে 'সহবাস' এর কথা উল্লেখ্য করেছেন, সেসব রেওয়ায়েতে 'البناء بِ' (আল-বানায়ু বি) এবং 'الدخول ب' (আদ-দুখুলু বি), এদুইটি কথা ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখিত البناء بِ কথাটির অর্থ যা, الدخول ب কথাটির অর্থ তাই, অর্থাৎ এ দুটি হলো একে অপরের "সমার্থক, পরিপুরক"।
জামালুদ্দিন আবুল-ফারাজ ইবনুল-যাওযি (রহ) তাঁর 'কাশফুল মুশকিল মিন হাদিসিস সাহিহাইন' গ্রন্থে লিখেছেন:
"وَالْبناء بِالْمَرْأَةِ: الدُّخُول بهَا" _ [2]
অর্থ: "একজন মহিলার সহিত আল-বানায়ু বি হয়া মানে হলো উক্ত মহিলার সহিত আদ-দুখুলু বি হয়া। "
এখন এই "الدخول ب" (আদ-দুখুল বি) কথাটির দুইটি অর্থ হয়। একটা হলো 'বিয়ে করে সহবাস করা' এবং এবং আরেকটা হলো 'নির্জনে সাক্ষাত করা'।
ড. আহমদ মুখতার আব্দুল-হামিদ উমার তাঁর অভিধান 'মুজামুল লুগাতিল আরাবিয়াতিল মুয়াসিরাহ' তে লিখেছেন:
"دخَل الزَّوجُ بفلانة/دخَل الزَّوجُ على فلانة: اختلى بها، تزوّجها وجامعها"_ [3]
অর্থ - স্বামী তার স্ত্রীর সহিত আদ-দুখুল বি করলো / আদ-দুখুল আলা করলো: সে তার (স্ত্রীর) সহিত নির্জনে সাক্ষাত করলো (প্রথম অর্থ), তাকে বিয়ে করে তার সাথে সহবাস করলো (দ্বিতীয় অর্থ) ।
আর পুর্বেই স্পষ্ট করা হয়েছে, যে الدخول ب ও البناء بِ একই অর্থ বিশিষ্ট যা একে অপরের সমার্থক।
সুতরাং, الدخول ب ও البناء بِ কথাদুটিসহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো দ্বারা দুটি বিষয় বুঝানো হয়ে থাকতে পারে, হয় এর দ্বারা নিছক 'নির্জনে সাক্ষাত করা' বোঝানো হয়েছে, আর না হয় এর দ্বারা 'সহবাস করা' করা বুঝানো হয়েছে। এই কথা দু'টিসহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো নিজেরা এটা স্পষ্ট করছেনা যে হাদিসে 'সহবাস' বোঝানো হয়েছে, নাকি 'নির্জনে সাক্ষাত করা' বোঝানো হয়েছে। এখানে উভয় অর্থের যেকোনটি সঠিক হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে অন্যান্য কিছু রেওয়ায়েতের সাহায্যে এটির স্পষ্টকরণ পাওয়া যায়, সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা যায় যে এখানে কোন অর্থ প্রযোজ্য হবে।
আলোচ্য হাদিসটির অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে ভিন্ন কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে, নিম্নে সেগুলো উল্লেখ্য করা হলো।
এক
আন-নাসাঈর বর্ণিত একটি, আল-বুখারীর বর্ণিত একটি, আবু-আওয়ানাহর বর্ণিত একটি, আত-তাবারানীর বর্ণিত চারটি, ইবন হাযমের বর্ণিত একটি, ইবন হিব্বানের বর্ণিত একটি অর্থাৎ সর্বমোট ৯ টি রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'الدخول علی' (আদ-দুখুলু আলা) কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। [4]
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর 'আল-মুজামুল ওয়াফী' (আরবি-বাংলা) অভিধানে الدخول علی এর অর্থ লিখেছেন: দেখতে যাওয়া, সাক্ষাত করা, পরিদর্শন করা [5] ।
দুই
মুসলিম, ইবন আবি-আসেম, আন-নাসাঈ, আবু-আওয়ানহ, আল-বাগভী, আল-বায়হাকী, আবু-নুয়াইম ও ইবন আবিদ-দুনিয়া এনাদের প্রত্যেকে একটি করে সর্বমোট ৮ রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। এই রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'زف' (যাফফুন) ব্যবহৃত হয়েছে। [৬]
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর অভিধানে 'زف' এর অর্থ লিখেছেন: কনেকে বরের কাছে পাঠানো, কন্যা সম্প্রদান করা, বউ নিয়ে আসা [৭]
তিন
আব্দুর-রাজ্জাকের দুইটি, আত-তাবারানীর একটি, আবু-নুয়াইমের একটি, অর্থাৎ তাঁদের সকলের বর্ণিত সর্বমোট ৪ টি রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'إهتداء إلی' (ইহতিদা ইলা) ব্যবহৃত হয়েছে [8] ।
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর অভিধানে إهتداء إلی এর অর্থ লিখেছেন: পথের সন্ধান পাওয়া,পথ পাওয়া,পথ অনুসরণ করা,পরিচালিত হওয়া,পেয়ে যাওয়া,আবিষ্কার করা,পৌঁছে যাওয়া [9]
অর্থাৎ, উক্ত হাদিসটির অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে এই তিনটি কথা الدخول علی ও زف ও إهتداء إلی বর্ণিত হয়েছে। বিকল্প হিসেবে বর্ণিত হয়া উক্ত তিনটি কথা উক্ত দুটি কথার সহিত অর্থের দিক দিয়ে খুবই কাছাকাছি, সাদৃশ্যপুর্ণ ও সামঞ্জস্য সাধনযোগ্য।
"আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" - এই তিনটি শব্দ হলো "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর ব্যাখ্যাস্বরুপ এবং অর্থ স্পষ্টকরনের সাহায্যকারী। কেননা এই তিনটি শব্দ একই হাদিসের অন্যান্য সংস্করনে "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর বিকল্প হিসেবে বর্নিত হয়েছে, উল্লেখিত হয়েছে।যেহেতু কিছু বর্ননায় "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর এর বদলে "আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" এসেছে। সেহেতু অবশ্যই "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর অর্থ এমন কিছু হতে হবে যা এই তিনটির সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্নতা রাখে। এক্ষেত্রে "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর দ্বিতীয় অর্থটি (স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া) "আদ-দুখুল আলা ","যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা " এর অর্থের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্ন। সুতরাং হাদিসে বর্নিত "আল-বানা বি" বা "আদ-দুখুল বি" দ্বারা "স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া" বুঝানো হয়েছে, "সহবাস" বুঝানো হয়নি।স্বামী-স্ত্রীর মাঝে নির্জনে প্রথমবার সাক্ষাত হয়ার অর্থই এটা না যে তারা উক্ত সময়ে সহবাস করেছে, বরং সহবাস ব্যাতিতও স্বামী স্ত্রীর মাঝে প্রথমবার নির্জনে সাক্ষাত হতে পারে।
মুহাদ্দিস ড. ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম একই হাদিসের জন্য রেওয়ায়েতভেদে রাবিদের বর্ণিত শব্দ বা বাক্যের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয়া প্রসঙ্গে লিখেছেন :
"الاختلاف بين الرواة له أسباب كثيرة، من أهمها فيما يتعلق بمتن الحديث: الرواية بالمعنى، إذ الأكثر على تجويزه، وهو الواقع في رواية السنة" _ [10]
অর্থ: "রাবিদের মাঝে বর্ণনার ভিন্নতা হয়ার প্রচুর কারণ রয়েছে, হাদিসের মতনের সহিত সম্পর্কিত ক্ষেত্রে সেসব কারণের মধ্যে অধিকতর তাৎপর্যপুর্ণ কারণটি হলো অর্থ অনুযায়ী বর্ণনা করা, কারণ অধিকাংশের নিকট ইহা যায়েয, এবং সুন্নাহ বর্ণনার ক্ষেত্রে ইহা সংঘটিত। "
যেহেতু বিকল্প হিসেবে বর্ণিত হয়া উক্ত তিনটি কথা উক্ত দুটি কথার সহিত অর্থের দিক দিয়ে খুবই কাছাকাছি, সাদৃশ্যপুর্ণ ও সরলভাবেই সামঞ্জস্যসাধনযোগ্য , সুতরাং এক্ষেত্রে অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে এই তিনটি কথা الدخول علی ও زف ও إهتداء إلی বর্ণিত হয়ার কারণ হলো রাবিদের 'অর্থ অনুযায়ী বর্ণনা করা '।
অর্থাৎ এই আলোচ্য হাদিসটির আলোচ্য অংশটির বর্ণনাকারী রাবিগন আলোচ্য অংশ হিসেবে প্রকৃতপক্ষে যা শ্রবণ করেছেন, হুবুহু তা বর্ণনা না করে অংশটির অর্থ বা মর্ম ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেন। আর একারণেই কিছু রেওয়ায়েতে البناء بِ, কিছু রেওয়ায়েতে الدخول ب, কিছু রেওয়ায়েতে الدخول علی, কিছু রেওয়ায়েতে زف এবং কিছু রেওয়ায়েতে إهتداء إلی বর্ণিত হয়েছে। এবং পাচটির সবগুলোই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ অর্থ বোঝানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, ভিন্নভাবে বললে এক্ষেত্রে সবগুলোই সমান অর্থের।
দেখা যাচ্ছে যে الدخول علی মানে হলো 'সাক্ষাত করা, পরিদর্শন করা '। زف মানে হলো 'কনেকে বরের কাছে পাঠানো'। إهتداء إلی মানে হলো 'পৌছে যাওয়া'। এই তিনটি অর্থ একটা সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করছে, এবং সেটা হচ্ছে 'বিবাহের পরে বউকে স্বামীর নিকট প্রেরণ করার মাধ্যমে তাদের মাঝে সর্বপ্রথম যথাযথ সাক্ষাত ঘটানো'।
পুর্বেই উল্লেখ্য করেছি যে الدخول ب ও البناء بِ এর দুটি অর্থ আছে, একটা হলো স্বামী স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া আর আরেকটা হলো বিয়ে করে সহবাস করা। এখন প্রশ্ন হলো এদুটি অর্থের মধ্যে কোনটি আলোচ্য হাদিসটির এ দুটি শব্দ বিশিষ্ট রেওয়ায়েতগুলোর জন্য প্রযোজ্য হয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযুক্ত?
যদি الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' ধরে নেই, তাহলে দেখা যাবে যে এদুটি কথা কর্তৃক নির্দেশীত মুল মর্মটা অপর তিনটি কথার অর্থসমুহ কর্তৃক নির্দেশীত সাধারণ মর্মটির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপুর্ণ। আবার যদি ধরে নেই যে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ 'বিয়ে করে সহবাস করা ', তাহলে তা ভাষার নিয়ম অনুযায়ী শতভাগ বিশুদ্ধ হবে, তবে এক্ষেত্রে তা অপর তিনটি কথার অর্থসমুহ কর্তৃক নির্দেশীত সাধারণ মর্মটির সাথে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' অর্থটির মুল মর্মের তুলনায় কম সাদৃশ্যপুর্ণ ও কম সামঞ্জস্যপুর্ণ হবে।
অতএব, যেহেতু এদুটি কথার অর্থ 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' হলে কথা দুটো অপর তিনটি কথার দ্বারা উদ্দেশ্যকৃত সাধারণ মর্মটির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপুর্ণ ও সর্বাধিক সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়, এবং উক্ত পাঁচটি কথার সবকটিই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, সুতরাং আলোচ্য রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' অর্থটিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
একইভাবে, যেহেতু এদুটি কথার অর্থ 'বিয়ে করা সহবাস করা ' হলে কথাদুটো অপর তিনটি কথার দ্বারা উদ্দেশ্যকৃত সাধারণ মর্মটির সাথে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' অর্থটির তুলনায় তুলনামুলক কম সাদৃশ্যপুর্ণ ও কম সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়, যেখানে কিনা উক্ত পাঁচটি কথার সবকটিই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, সুতরাং আলোচ্য রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'বিয়ে করে সহবাস করা অর্থটি' তুলনামুলকভাবে কম উপযুক্ত, কম গ্রহণযোগ্য।
এছাড়াও আরো বহু উপায়ে এ ব্যাপারটা অনুধাবন করা সম্ভব। যেমন : 'স্বামী স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' অর্থটি ধরলে দেখা যাবে যে, উক্ত পাঁচটি কথার সবকটাই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্ম ধারন করছে, আর সেটা হচ্ছে 'স্বামীর স্ত্রীর সাক্ষাত হয়া' বা 'বিবাহের পরে বউকে স্বামীর নিকট প্রেরণ করার মাধ্যমে তাদের মাঝে সর্বপ্রথম যথাযথ সাক্ষাত ঘটানো', যার ফলে এখানে সহজেই সামঞ্জস্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে 'বিয়ে করা সহবাস করা' অর্থটি ধরলে এ দুটি কথার অর্থে সম্পুর্ণ ভিন্ন এক ধরনের মাত্রা প্রকাশ পায়, যেই মাত্রাটি অপর তিনটি কথার অর্থের মধ্যে অনুপস্থিত, যার ফলে এখানে সহজে সামঞ্জস্যতা এসে যাচ্ছেনা। আর এদ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হওয়া ' অর্থটিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
অতএব, মুহাম্মাদ ﷺ আয়েশাহ (রা) এর সাথে যখন সহবাস করেন তখন আয়েশাহ (রা) এর বয়স ৯ বছর ছিল, এরুপ দাবি করাটা সঠিক নয় বরং ভুল।
এতক্ষন পর্যন্ত আমি যা বলেছি, তা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত কোনো তত্ত্ব নয় বরং এটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসদের বক্তব্য দ্বারা সমর্থিতও, নিম্নে এব্যাপারে কিছু মুহাদ্দিসদের উদাহরণ উল্লেখ্য করা হলো।
উপমহাদেশের একজন বড়মাপের মুহাদ্দিস 'খালিল আহমদ আস-সাহারানফুরী' উক্ত পাঁচটি কথা দ্বারা একটিমাত্র সাধারন অর্থ বা মর্ম উদ্দেশ্য হয়ার বিষয়টির প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছেন এবং উল্লেখ্য করেছেন যে الدخول ب, البناء بِ দ্বারা زف [স্বামীর ঘড়ে উঠা] বোঝানো হয়েছে। [11]
মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ ইবনুল-মালাক আর-রুমী আল-কারামানী' এবং মুহাদ্দিস 'মাযহারুদ্দিন আল-হুসাইন আয-যাইদানী আল-মুযহিরী' البناء بِ কথাটির অর্থ বলেছেন "(স্ত্রীকে) ঘরে তোলা ও স্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা " _ [12][13] । অনুরূপ বলেছেন প্রসিদ্ধ দুজন মুহাদ্দিস 'মোল্লা আলি আল-ক্বারী ' ও 'শারফুদ্দিন আল-হুসাইন আত-তাইবী'[14][15] ।
মুহাদ্দিস 'আবুল-আব্বাস ইবনু রাসালান আল-মাকদিসী' البناء بِ এর অর্থ বলেছেন 'সাক্ষাত করা' [16] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ আল-আমিন আল-হারারী' البناء بِ এর অর্থ বলেছেন 'সাক্ষাত করা, স্বামীর নিকট প্রেরীত হয়া, স্বামীর ঘড়ে (বউকে) উঠানো' [17] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ ফাওয়াদ আব্দুল-বাক্বী' সহিহ মুসলিমের টিকাতে البناء بِ এর ব্যাখ্যায় আল-হারারীর অনুরুপ বলেছেন। [18]
অনুরুপ ধরনের মত দিয়েছেন আরবি ভাষাবিদ 'আবু-নাসর আজ-জাওহারী' ও মুহাদ্দিস 'শামসুদ্দিন আল-বিরমাওই' [19] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ আল-আমিন আল-হারারী', দ্বিয়াউদ্দিন আল-মাকদেসী, খালিল আহমাদ আস-সাহারনপুরী সহ আরো অনেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে الدخول ب এর অর্থ বলেছেন "সাক্ষাত করা, স্বামীর নিকট প্রেরীত হয়া, স্বামীর ঘরে (বউকে) উঠানো" [20][17] ।
'আবুল-আব্বাস ইবনু রাসালান আল-মাকদিসী' الدخول ب এর জন্য ইবনু আব্দিল-বার এর একটি বক্তব্যের অংশ উল্লেখ্য করে ব্যাখ্যা করেছেন যে এর দ্বারা 'সংসার তৈরি করা' উদ্দেশ্য [21] । প্রসিদ্ধ বড়মাপের একজন আলেম 'আবুল-ফারাজ ইবনু কাইয়িমিল যাওযিয়াহ' পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করেছেন যে الدخول ب কথাটি 'সাক্ষাত করা' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে [22] ।
উল্লেখ্য, الدخول ب ও البناء بِ পরস্পরের সমার্থক, ঠিক যেভাবে 'লাউ' ও 'কদু' পরস্পরের সমার্থক, কাজেই এদুটির কোনো একটির জন্য যা প্রযোজ্য, তা একইসাথে উভয়েরই জন্য প্রযোজ্য, অর্থাৎ এদের কোনো একটির ব্যাপারে কোনো কিছু প্রযোজ্য তখন হবে যখন সেই বিষয়টি এদের উভয়ের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে। [23]
এসব কারণেই এই সংক্রান্ত হাদিসের বাংলা অনুবাদে 'বাসর হওয়া' কথাটি দেখা যায়। বাসর হওয়া দ্বারা বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম একাকী অবস্থান করাকে বোঝানো হয়। কিন্তু বাসর হওয়া মানেই যৌন সহবাস না।
عَنْ عُرْوَةَ تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَائِشَةَ وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ وَبَنٰى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعٍ وَمَكَثَتْ عِنْدَه" تِسْعًا.
অর্থঃ উরওয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী ﷺ 'আয়িশাহ (রা)-কে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর এবং নয় বছর তিনি নবী ﷺ-এর সঙ্গে জীবন কাটান। [24]
উপসংহারঃ
আমরা উপসংহারে বলতে পারি যে, আলোচ্য হাদিসগুলো দ্বারা এটি প্রমাণ হয় যে ৯ বছর বয়সে আয়েশা (রা.) স্বামীগৃহে গিয়েছেন, তাঁর স্বামী নবী করিম ﷺ এর সঙ্গে তাঁর বাসর হয়েছে, তাঁরা একত্রে একই ঘড়ে থাকা আরম্ভ করেছেন। কিন্তু এর দ্বারা মোটেও সন্দেহাতীতভাবে এটি প্রমাণ হয় না যে ৯ বছর বয়সেই নবী ﷺ তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। এটি এমন এক ব্যাপার যা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস এবং এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। আর এমনটি যদি প্রমাণিত হতোও তবু সেটিকে আমরা দোষনীয় কিছু মনে করি না বা এর দ্বারাই কেউ শিশুকামী প্রমাণ হয়ে যায় না। তবুও ইসলামবিরোধীদের লাগাতার অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে আমরা আলোচ্য হাদিসগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলাম।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে যদি তার সাথে ৯ বছরে সহবাস নাই করে থাকেন তাহলে এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারন কি? ব্যক্তিগতভাবে আমার (সম্পাদকের) কাছে এর উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ আদেশ করেছিলেন, মহানবী ﷺ ও আয়শা (রা) ও তাদের উভয়ের পরিবার রাজি ছিলেন তাই তিনি কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করেছেন। বিষয়টা এটা না, মূল বিষয়টা হচ্ছে তিনি কি আদো ৯ বছর বয়সী আয়শার সাথে সহবাস করেছিলেন কিনা সেটা।
বর্তমান যুগেত ১২/১৩ বছরের মেয়েরাও নিজের প্রেমিকের সাথে সেচ্ছায় সেক্স করে, আমাদের মুক্তমনারা যাদেরকে মনীষী ও আইডল হিসেবে ট্রিট করে তাদের অসংখ্যা মানুষ বাল্যবিবাহ করেছে, অনেকেত ১০ এর নিছে মেয়েকে বিয়ে করেছে। হিন্দু ধর্মে এমন অনেকই দেখা যায় যে অনেক দেবতা, মনীষীরা ১০ বছরের নিছে মেয়ের সাথে বিবাহ করেছে, সহবাস করেছে। এমনকি বাইবেলেও পাওয়া যায় কিছু। যাই হোক সেগুলা বাদ দিই, আমি কিন্তু এমন কোন যুক্তি দিচ্ছি না যে তারা করেছে বিধায় রাসূলও করেছে বা সেটা তারা করলে রাসূলও করতে সমস্যা নেই, আমি শুধু কিছু তথ্য দিলাম মাত্র। কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করার অনেক কারনই থাকতে পারে।
১. আল্লাহর আদেশ [25]
২. তাদের দুজনের অফুরন্ত ও অকৃত্রিম ভালোবাসা [26]
৩. আয়শা (রা) অনেক বেশি জ্ঞানী ছিলেন, অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন, অনেক মাসলার ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান দিতেন [27]
৪. আবু বকর (রা) এর সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালি করা
দেখাই যাচ্ছে তারা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসত, তাদের বিয়েতে আয়শা (রা) কোন আপত্তি ছিল না, মহানবী ﷺ এর আপত্তি ছিল না, আয়শা (রা) এর মা-বাবা, ভাই-বোনদের আপত্তি ছিল না, মহানবী ﷺ এর স্ত্রী ও সন্তানদের আপত্তি ছিল না তাহলে বর্তমানে ইসলামবিদ্বেষীদের এত সমস্যা কেন? তারাত বলে যে সম্মতিতে বিবাহ ও শারীরিক সম্পর্ক বৈধ তাহলে এই ক্ষেত্রে তাদের সেই নীতি কোথায় যায়?
অথচ উম্মুল মু'মিনিন মহিয়সী, হযরত আয়েশা (রা)-এর দাম্পত্য জীবন মধুময় ছিল। অথচ আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত, সেকুলার, নারীবাদি ও সংস্কৃতিমনা বেশীরভাগ নারীরাই পরকীয়া, ডিফোর্সী এবং অসুখী। সমস্যা আসলে বিয়ে নিয়ে নয় বরং তাদের সমস্যা ইসলাম নিয়ে, তাই শুধু ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ডের জন্য বাহানা খুজতে থাকে তারা।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল ৩৮/২১২-২১৮; আল-মুসনাদুল জামে ১৯/৭৮৮-৭৯২
[2] ইবনুল যাওযী, কাশফুল মুশকিল ৩/৪৯৪
[3] ড. আহমদ মুখতার, মুজামুল লুগাতিল আরাবিয়াতিল মুয়াসিরাহ ১/৭২৭
[4] সুনান আন-নাসাঈ (হা/৩৩৭৮), সহিহ আল-বুখারী (হা/৫১৩৩), মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৬৬), আল-মুজামুল কাবির (২৩/২১), আল-মুজামুল আওসাত (৭/৯৪) & (২/৩০১), হুজ্জাতুল ওইদা'আ (হা/৫০৬), সহিহ ইবন হিব্বান (হা/৩৪৫৪)
[5] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৪৬৫)
[6] সহিহ মুসলিম (হা/১৪২২), আল-আহাদ ওয়াল মাছানী (হা/৩০২৮), সুনানুন নাসাঈ আলকুবরা (হা/৫৫৪৪), মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৭১), শারহুস সুন্নাহ (৯/৩৫), সুনানুল বায়হাকী আল-কুবরা (১০/৩৭১), আল-মুসনাদুল মুস্তাখরাজ আলা সহিহ মুসলিম (হা/৩৩১২), আন-নুফকাহ আলাল ইয়াল (২/৭৫৫)
[7] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৫৩৬-৫৩৭)
[8] মুসান্নাফ আব্দুর-রাজ্জাক (হা/১১১৯১), আল-মুজামুল কাবির (২৩/১৭), মা'রেফাতুস সাহাবাহা (৬/৩২০৮)
[9] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/১৮৭)
[10] আল-লাহিম, মুক্বারানাতুল মারওইয়াত ১/৩৯১
[11] আস-সাহারানফুরী, বাযলুল মাজহুদ ফি হিল্লে সুনানে আবি-দাউদ ৮/৪৭
[12] ইবনুল-মালাক, শারহু মাসাবিহিস সুন্নাহ ৩/৫৬০
[13] আল-মুযহিরী,আল-মাফাতিহ ফি শারহিল মাসাবিহ ৪/৩৫
[14] আল-ক্বারী,মিরকাতুল মাফাতিহ শারহু মিশকাতিল মাফাতিহ ৫/২০৬৬
[15] শারহুল মিশকাহ (আল-কাশিফ আন হাক্বাইক্বিস সুনান) ৭/২৮৫
[16] ইবনু রাসালান, শারহু সুনানে আবি-দাউদ ১৯/১৮
[17] আল-আমিন, মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ ১১/৪২৫
[18] মুহাম্মদ ফাওয়াদ আব্দুল-বাক্বীর টিকাবিশিষ্ট: সহিহ মুসলিম ২/১৯৩৮
[19] আল-বিরমাওই, আল-লামিউস সাবিহ ১০/৪৬৬
[20] আল-আমিন আল-হারারী, আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ শারহু সহিহে মুসলিম আল-হাজ্জাজ ১৫/২৯৫; বাযলুল মাজহুদ (৮/৪৭); আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫); আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ (১৫/২৯৫); মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ (১১/৪২৫); আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫)
[21] ইবনু রাসালান, শারহু সুনানে আবি-দাউদ ৯/৪৩১
[22] ইবনু কাইয়িমিল যাওযিয়াহ, তাহযিবু সুনানে আবি দাউদ ১/৪৪৭-৪৪৮
[23] দ্রষ্টব্য : আরবি ভাষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটো পরস্পর সমার্থক শব্দ দুইটা ভিন্ন ভিন্ন আলাদা অর্থ বোঝানোর জন্য ব্যবহার হতে পারে, এবং সাধারনভাবে এব্যাপারটা البناء بِ ও الدخول ب ও প্রযোজ্য, এরা যেভাবে একে অপরের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় , ঠিক একইভাবে ক্ষেত্রবিশেষে এরা অসমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এই হাদিসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই সুযোগ নেই। কারণ এই হাদিসে البناء بِ ও الدخول ب একই অর্থ বোঝানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, البناء بِ ও الدخول ب অংশদুটি সহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো হচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট হাদিসেরই একাধিক রকমের রুপ, যাদের ব্যাহ্যিক শব্দ ও বাক্যে হালকা পাতলা পার্থক্য থাকলেও মুল অর্থে ও মর্মে কোনো পার্থক্য নেই।
[24] সহীহ বুখারি ৫১৫৮
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪১৮, ৫০৭৮
[26] বুখারি ২৭৩১, ৩৬৬২, ৩৮১৮, সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৬৪০, ৮৯৭; মুসলিম হাদিস ৩২১, ৫৭৯, ২৩৮৪, ২৪৩৫, ২৮১৫, সহিহ মুসলিম, ৪/১৮৯১; তিরমিযী ৩৮৯০, ৩৮৯৫; আবু দাউদ, হাদিস ২৫৭৮; নাসায়ি, হাদিস ৭০; ইবনু মাজাহ হাঃ ৬৪৩; মুসনাদে আহমদঃ ২৫৫, ২১৭, ৬/৬৪, ৬/২৫৮; সীরাতে আয়েশা-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী (রহ), পৃষ্ঠা-১৪৯
[27] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা- ৭৬৮; মুস্তাদরাক হাকিম, ৪/১১; তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৪৮৭; সুনানে তিরমিযী ৩৮৮৩, ৩৮৮৪; মিশকাত ৬১৯৪; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৮৫
আয়শা (রা) এর বয়স নিয়ে ২টি মত রয়েছে। ১. বিয়ের সময় ১৫/১৬ বছর ছিল ২. বিয়ের সময় ৬/৭ বছর ছিল। এই লেখাতে এই বিষয়ে ২য় মত নিয়ে আলোচনা করব। যদি ধরে নিই যে, হাদিসগুলো সঠিক তাহলেও এটা প্রমানিত হয় না যে, মুহাম্মাদ ﷺ যখন আয়েশা (রা) এর সাথে সহবাস করেন তখন আয়েশা (রা) এর বয়স ৯ বছর ছিল।
কিছু কথা না বললেই নয়, গত ১০০ বছর আগ পর্যন্ত কোন কাফের, মুশরিক, মুরতাদ, নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী তেমন কেউ এই রাসূল ﷺ ও আয়শা (রা) এর বিয়ে নিয়ে মহানবীর উপর কোন অভিযোগ করেনি। কারন গত ৫০ বছর আগেও দেশে-বিদেশে মেয়েদের ৭-১২ বছরের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দেওয়া একদম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পশ্চিমাদের তৈরি করা নতুন আইন বাল্যবিবাহের কারনেই মানুষ আস্তে আস্তে এটাকে সম্পুর্ণ ভয়ংকর খারাপ একটা জিনিস ভাবা শুরু করেছে। অথচ ইসলামে একজন মেয়ে বা ছেলে তখনই বালেগ হয়ে পড়ে যখন তারা বয়সন্ধিতে পৌছে যায়। ইসলামে এই সময়ের আগে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা যায়েজ নেই। বিভিন্ন যায়গায় এর তারতম্য দেখা যায়, সাধারনত মেয়েরা ৯-১৫ এর মধ্যে বয়সন্ধিতে পৌছে এবং ছেলেরা ১১-১৬ বছর বয়সে। যদিও মহানবী আয়শা (রা)-কে কম বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন, তারপরও কিন্তু তাদের সন্তান হয় নি। বর্তমানে অনেকেই তো অনেক রিসার্চ দেখিয়ে বলে কম বছর বয়সে বাচ্চা হলে মায়ের জন্য অনেক সমস্যার তৈরি হয়। কিন্তু আয়শা (রা) ও রাসূল ﷺ এর যেখানে বাচ্চা হয়নি সেখানে এই ধরনের কোন সমস্যা হওয়ারত কোন কথাই আসে না।
মূল লিখা
যাই হোক বিভিন্ন হাদিস দেখিয়ে দাবি করা হয়, যে আয়েশা (রা) বয়স যখন ৯ বছর ছিল তখন নবী ﷺ তাঁর সাথে সহবাস করেছিলেন। এহেন দাবি করে ইসলামের শত্রুরা নবী করিম ﷺ কে শিশুকামী (Pedophile) বলার স্পর্ধা দেখায় (নাউযুবিল্লাহ)। এই লেখাটিতে একটি ভাষাগত আলোচনার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষন করা হবে যে উক্ত হাদিসগুলোতে আসলেই এমন কিছু বলা হয়েছে, নাকি অন্য কিছু বোঝানো হয়েছে।
এই মর্মে যেই হাদিসগুলো দেখানো হয়, তার প্রায় সবগুলোরই মুল রুপ কিছুটা এরুপ:
"আয়েশা (রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন আমি যখন ৬ বছর বয়সী ছিলাম তখন রাসুল ﷺ আমাকে বিয়ে করেন, এবং আমি যখন ৯ বছর বয়সী ছিলাম তখন তিনি ﷺ আমার সাথে সহবাস (যেই অর্থটা প্রচার করা হয়) করেন।" বর্ননাটির কিছু সংস্করনে আয়েশা (রা) "তৃতীয় ব্যাক্তি" (Third person) হিসেবে এসেছেন, এবং বাচনভংগি ও শব্দের ছোটখাটো পার্থক্যের বিবেচনায় এই হাদিসটির একাধিক সংস্করন (version) রয়েছে … [1]
আবার এ সংক্রান্ত হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে 'Consumate' শব্দটি দেখেও অনেকে ধারণা করেন এখানে মূল আরবিতে সহবাসের কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, হাদিসগুলোর যেসব সংস্করন হতে দাবি করা হয় তিনি (রা) এ এখানে 'সহবাস' এর কথা উল্লেখ্য করেছেন, সেসব রেওয়ায়েতে 'البناء بِ' (আল-বানায়ু বি) এবং 'الدخول ب' (আদ-দুখুলু বি), এদুইটি কথা ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখিত البناء بِ কথাটির অর্থ যা, الدخول ب কথাটির অর্থ তাই, অর্থাৎ এ দুটি হলো একে অপরের "সমার্থক, পরিপুরক"।
জামালুদ্দিন আবুল-ফারাজ ইবনুল-যাওযি (রহ) তাঁর 'কাশফুল মুশকিল মিন হাদিসিস সাহিহাইন' গ্রন্থে লিখেছেন:
"وَالْبناء بِالْمَرْأَةِ: الدُّخُول بهَا" _ [2]
অর্থ: "একজন মহিলার সহিত আল-বানায়ু বি হয়া মানে হলো উক্ত মহিলার সহিত আদ-দুখুলু বি হয়া। "
এখন এই "الدخول ب" (আদ-দুখুল বি) কথাটির দুইটি অর্থ হয়। একটা হলো 'বিয়ে করে সহবাস করা' এবং এবং আরেকটা হলো 'নির্জনে সাক্ষাত করা'।
ড. আহমদ মুখতার আব্দুল-হামিদ উমার তাঁর অভিধান 'মুজামুল লুগাতিল আরাবিয়াতিল মুয়াসিরাহ' তে লিখেছেন:
"دخَل الزَّوجُ بفلانة/دخَل الزَّوجُ على فلانة: اختلى بها، تزوّجها وجامعها"_ [3]
অর্থ - স্বামী তার স্ত্রীর সহিত আদ-দুখুল বি করলো / আদ-দুখুল আলা করলো: সে তার (স্ত্রীর) সহিত নির্জনে সাক্ষাত করলো (প্রথম অর্থ), তাকে বিয়ে করে তার সাথে সহবাস করলো (দ্বিতীয় অর্থ) ।
আর পুর্বেই স্পষ্ট করা হয়েছে, যে الدخول ب ও البناء بِ একই অর্থ বিশিষ্ট যা একে অপরের সমার্থক।
সুতরাং, الدخول ب ও البناء بِ কথাদুটিসহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো দ্বারা দুটি বিষয় বুঝানো হয়ে থাকতে পারে, হয় এর দ্বারা নিছক 'নির্জনে সাক্ষাত করা' বোঝানো হয়েছে, আর না হয় এর দ্বারা 'সহবাস করা' করা বুঝানো হয়েছে। এই কথা দু'টিসহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো নিজেরা এটা স্পষ্ট করছেনা যে হাদিসে 'সহবাস' বোঝানো হয়েছে, নাকি 'নির্জনে সাক্ষাত করা' বোঝানো হয়েছে। এখানে উভয় অর্থের যেকোনটি সঠিক হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে অন্যান্য কিছু রেওয়ায়েতের সাহায্যে এটির স্পষ্টকরণ পাওয়া যায়, সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা যায় যে এখানে কোন অর্থ প্রযোজ্য হবে।
আলোচ্য হাদিসটির অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে ভিন্ন কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে, নিম্নে সেগুলো উল্লেখ্য করা হলো।
এক
আন-নাসাঈর বর্ণিত একটি, আল-বুখারীর বর্ণিত একটি, আবু-আওয়ানাহর বর্ণিত একটি, আত-তাবারানীর বর্ণিত চারটি, ইবন হাযমের বর্ণিত একটি, ইবন হিব্বানের বর্ণিত একটি অর্থাৎ সর্বমোট ৯ টি রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'الدخول علی' (আদ-দুখুলু আলা) কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। [4]
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর 'আল-মুজামুল ওয়াফী' (আরবি-বাংলা) অভিধানে الدخول علی এর অর্থ লিখেছেন: দেখতে যাওয়া, সাক্ষাত করা, পরিদর্শন করা [5] ।
দুই
মুসলিম, ইবন আবি-আসেম, আন-নাসাঈ, আবু-আওয়ানহ, আল-বাগভী, আল-বায়হাকী, আবু-নুয়াইম ও ইবন আবিদ-দুনিয়া এনাদের প্রত্যেকে একটি করে সর্বমোট ৮ রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। এই রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'زف' (যাফফুন) ব্যবহৃত হয়েছে। [৬]
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর অভিধানে 'زف' এর অর্থ লিখেছেন: কনেকে বরের কাছে পাঠানো, কন্যা সম্প্রদান করা, বউ নিয়ে আসা [৭]
তিন
আব্দুর-রাজ্জাকের দুইটি, আত-তাবারানীর একটি, আবু-নুয়াইমের একটি, অর্থাৎ তাঁদের সকলের বর্ণিত সর্বমোট ৪ টি রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে 'إهتداء إلی' (ইহতিদা ইলা) ব্যবহৃত হয়েছে [8] ।
ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তাঁর অভিধানে إهتداء إلی এর অর্থ লিখেছেন: পথের সন্ধান পাওয়া,পথ পাওয়া,পথ অনুসরণ করা,পরিচালিত হওয়া,পেয়ে যাওয়া,আবিষ্কার করা,পৌঁছে যাওয়া [9]
অর্থাৎ, উক্ত হাদিসটির অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে এই তিনটি কথা الدخول علی ও زف ও إهتداء إلی বর্ণিত হয়েছে। বিকল্প হিসেবে বর্ণিত হয়া উক্ত তিনটি কথা উক্ত দুটি কথার সহিত অর্থের দিক দিয়ে খুবই কাছাকাছি, সাদৃশ্যপুর্ণ ও সামঞ্জস্য সাধনযোগ্য।
"আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" - এই তিনটি শব্দ হলো "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর ব্যাখ্যাস্বরুপ এবং অর্থ স্পষ্টকরনের সাহায্যকারী। কেননা এই তিনটি শব্দ একই হাদিসের অন্যান্য সংস্করনে "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর বিকল্প হিসেবে বর্নিত হয়েছে, উল্লেখিত হয়েছে।যেহেতু কিছু বর্ননায় "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর এর বদলে "আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" এসেছে। সেহেতু অবশ্যই "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর অর্থ এমন কিছু হতে হবে যা এই তিনটির সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্নতা রাখে। এক্ষেত্রে "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর দ্বিতীয় অর্থটি (স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া) "আদ-দুখুল আলা ","যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা " এর অর্থের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্ন। সুতরাং হাদিসে বর্নিত "আল-বানা বি" বা "আদ-দুখুল বি" দ্বারা "স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া" বুঝানো হয়েছে, "সহবাস" বুঝানো হয়নি।স্বামী-স্ত্রীর মাঝে নির্জনে প্রথমবার সাক্ষাত হয়ার অর্থই এটা না যে তারা উক্ত সময়ে সহবাস করেছে, বরং সহবাস ব্যাতিতও স্বামী স্ত্রীর মাঝে প্রথমবার নির্জনে সাক্ষাত হতে পারে।
মুহাদ্দিস ড. ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম একই হাদিসের জন্য রেওয়ায়েতভেদে রাবিদের বর্ণিত শব্দ বা বাক্যের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয়া প্রসঙ্গে লিখেছেন :
"الاختلاف بين الرواة له أسباب كثيرة، من أهمها فيما يتعلق بمتن الحديث: الرواية بالمعنى، إذ الأكثر على تجويزه، وهو الواقع في رواية السنة" _ [10]
অর্থ: "রাবিদের মাঝে বর্ণনার ভিন্নতা হয়ার প্রচুর কারণ রয়েছে, হাদিসের মতনের সহিত সম্পর্কিত ক্ষেত্রে সেসব কারণের মধ্যে অধিকতর তাৎপর্যপুর্ণ কারণটি হলো অর্থ অনুযায়ী বর্ণনা করা, কারণ অধিকাংশের নিকট ইহা যায়েয, এবং সুন্নাহ বর্ণনার ক্ষেত্রে ইহা সংঘটিত। "
যেহেতু বিকল্প হিসেবে বর্ণিত হয়া উক্ত তিনটি কথা উক্ত দুটি কথার সহিত অর্থের দিক দিয়ে খুবই কাছাকাছি, সাদৃশ্যপুর্ণ ও সরলভাবেই সামঞ্জস্যসাধনযোগ্য , সুতরাং এক্ষেত্রে অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়েতে الدخول ب ও البناء بِ এর বদলে এই তিনটি কথা الدخول علی ও زف ও إهتداء إلی বর্ণিত হয়ার কারণ হলো রাবিদের 'অর্থ অনুযায়ী বর্ণনা করা '।
অর্থাৎ এই আলোচ্য হাদিসটির আলোচ্য অংশটির বর্ণনাকারী রাবিগন আলোচ্য অংশ হিসেবে প্রকৃতপক্ষে যা শ্রবণ করেছেন, হুবুহু তা বর্ণনা না করে অংশটির অর্থ বা মর্ম ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেন। আর একারণেই কিছু রেওয়ায়েতে البناء بِ, কিছু রেওয়ায়েতে الدخول ب, কিছু রেওয়ায়েতে الدخول علی, কিছু রেওয়ায়েতে زف এবং কিছু রেওয়ায়েতে إهتداء إلی বর্ণিত হয়েছে। এবং পাচটির সবগুলোই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ অর্থ বোঝানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, ভিন্নভাবে বললে এক্ষেত্রে সবগুলোই সমান অর্থের।
দেখা যাচ্ছে যে الدخول علی মানে হলো 'সাক্ষাত করা, পরিদর্শন করা '। زف মানে হলো 'কনেকে বরের কাছে পাঠানো'। إهتداء إلی মানে হলো 'পৌছে যাওয়া'। এই তিনটি অর্থ একটা সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করছে, এবং সেটা হচ্ছে 'বিবাহের পরে বউকে স্বামীর নিকট প্রেরণ করার মাধ্যমে তাদের মাঝে সর্বপ্রথম যথাযথ সাক্ষাত ঘটানো'।
পুর্বেই উল্লেখ্য করেছি যে الدخول ب ও البناء بِ এর দুটি অর্থ আছে, একটা হলো স্বামী স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া আর আরেকটা হলো বিয়ে করে সহবাস করা। এখন প্রশ্ন হলো এদুটি অর্থের মধ্যে কোনটি আলোচ্য হাদিসটির এ দুটি শব্দ বিশিষ্ট রেওয়ায়েতগুলোর জন্য প্রযোজ্য হয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযুক্ত?
যদি الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' ধরে নেই, তাহলে দেখা যাবে যে এদুটি কথা কর্তৃক নির্দেশীত মুল মর্মটা অপর তিনটি কথার অর্থসমুহ কর্তৃক নির্দেশীত সাধারণ মর্মটির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপুর্ণ। আবার যদি ধরে নেই যে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ 'বিয়ে করে সহবাস করা ', তাহলে তা ভাষার নিয়ম অনুযায়ী শতভাগ বিশুদ্ধ হবে, তবে এক্ষেত্রে তা অপর তিনটি কথার অর্থসমুহ কর্তৃক নির্দেশীত সাধারণ মর্মটির সাথে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' অর্থটির মুল মর্মের তুলনায় কম সাদৃশ্যপুর্ণ ও কম সামঞ্জস্যপুর্ণ হবে।
অতএব, যেহেতু এদুটি কথার অর্থ 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' হলে কথা দুটো অপর তিনটি কথার দ্বারা উদ্দেশ্যকৃত সাধারণ মর্মটির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপুর্ণ ও সর্বাধিক সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়, এবং উক্ত পাঁচটি কথার সবকটিই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, সুতরাং আলোচ্য রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া ' অর্থটিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
একইভাবে, যেহেতু এদুটি কথার অর্থ 'বিয়ে করা সহবাস করা ' হলে কথাদুটো অপর তিনটি কথার দ্বারা উদ্দেশ্যকৃত সাধারণ মর্মটির সাথে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' অর্থটির তুলনায় তুলনামুলক কম সাদৃশ্যপুর্ণ ও কম সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়, যেখানে কিনা উক্ত পাঁচটি কথার সবকটিই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্মকে নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, সুতরাং আলোচ্য রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'বিয়ে করে সহবাস করা অর্থটি' তুলনামুলকভাবে কম উপযুক্ত, কম গ্রহণযোগ্য।
এছাড়াও আরো বহু উপায়ে এ ব্যাপারটা অনুধাবন করা সম্ভব। যেমন : 'স্বামী স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হয়া' অর্থটি ধরলে দেখা যাবে যে, উক্ত পাঁচটি কথার সবকটাই একটা নির্দিষ্ট সাধারণ মর্ম ধারন করছে, আর সেটা হচ্ছে 'স্বামীর স্ত্রীর সাক্ষাত হয়া' বা 'বিবাহের পরে বউকে স্বামীর নিকট প্রেরণ করার মাধ্যমে তাদের মাঝে সর্বপ্রথম যথাযথ সাক্ষাত ঘটানো', যার ফলে এখানে সহজেই সামঞ্জস্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে 'বিয়ে করা সহবাস করা' অর্থটি ধরলে এ দুটি কথার অর্থে সম্পুর্ণ ভিন্ন এক ধরনের মাত্রা প্রকাশ পায়, যেই মাত্রাটি অপর তিনটি কথার অর্থের মধ্যে অনুপস্থিত, যার ফলে এখানে সহজে সামঞ্জস্যতা এসে যাচ্ছেনা। আর এদ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে রেওয়ায়েতগুলোতে الدخول ب ও البناء بِ এর অর্থ হিসেবে 'স্বামী-স্ত্রীর নির্জনে সাক্ষাত হওয়া ' অর্থটিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
অতএব, মুহাম্মাদ ﷺ আয়েশাহ (রা) এর সাথে যখন সহবাস করেন তখন আয়েশাহ (রা) এর বয়স ৯ বছর ছিল, এরুপ দাবি করাটা সঠিক নয় বরং ভুল।
এতক্ষন পর্যন্ত আমি যা বলেছি, তা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত কোনো তত্ত্ব নয় বরং এটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসদের বক্তব্য দ্বারা সমর্থিতও, নিম্নে এব্যাপারে কিছু মুহাদ্দিসদের উদাহরণ উল্লেখ্য করা হলো।
উপমহাদেশের একজন বড়মাপের মুহাদ্দিস 'খালিল আহমদ আস-সাহারানফুরী' উক্ত পাঁচটি কথা দ্বারা একটিমাত্র সাধারন অর্থ বা মর্ম উদ্দেশ্য হয়ার বিষয়টির প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছেন এবং উল্লেখ্য করেছেন যে الدخول ب, البناء بِ দ্বারা زف [স্বামীর ঘড়ে উঠা] বোঝানো হয়েছে। [11]
মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ ইবনুল-মালাক আর-রুমী আল-কারামানী' এবং মুহাদ্দিস 'মাযহারুদ্দিন আল-হুসাইন আয-যাইদানী আল-মুযহিরী' البناء بِ কথাটির অর্থ বলেছেন "(স্ত্রীকে) ঘরে তোলা ও স্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা " _ [12][13] । অনুরূপ বলেছেন প্রসিদ্ধ দুজন মুহাদ্দিস 'মোল্লা আলি আল-ক্বারী ' ও 'শারফুদ্দিন আল-হুসাইন আত-তাইবী'[14][15] ।
মুহাদ্দিস 'আবুল-আব্বাস ইবনু রাসালান আল-মাকদিসী' البناء بِ এর অর্থ বলেছেন 'সাক্ষাত করা' [16] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ আল-আমিন আল-হারারী' البناء بِ এর অর্থ বলেছেন 'সাক্ষাত করা, স্বামীর নিকট প্রেরীত হয়া, স্বামীর ঘড়ে (বউকে) উঠানো' [17] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ ফাওয়াদ আব্দুল-বাক্বী' সহিহ মুসলিমের টিকাতে البناء بِ এর ব্যাখ্যায় আল-হারারীর অনুরুপ বলেছেন। [18]
অনুরুপ ধরনের মত দিয়েছেন আরবি ভাষাবিদ 'আবু-নাসর আজ-জাওহারী' ও মুহাদ্দিস 'শামসুদ্দিন আল-বিরমাওই' [19] । মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ আল-আমিন আল-হারারী', দ্বিয়াউদ্দিন আল-মাকদেসী, খালিল আহমাদ আস-সাহারনপুরী সহ আরো অনেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে الدخول ب এর অর্থ বলেছেন "সাক্ষাত করা, স্বামীর নিকট প্রেরীত হয়া, স্বামীর ঘরে (বউকে) উঠানো" [20][17] ।
'আবুল-আব্বাস ইবনু রাসালান আল-মাকদিসী' الدخول ب এর জন্য ইবনু আব্দিল-বার এর একটি বক্তব্যের অংশ উল্লেখ্য করে ব্যাখ্যা করেছেন যে এর দ্বারা 'সংসার তৈরি করা' উদ্দেশ্য [21] । প্রসিদ্ধ বড়মাপের একজন আলেম 'আবুল-ফারাজ ইবনু কাইয়িমিল যাওযিয়াহ' পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করেছেন যে الدخول ب কথাটি 'সাক্ষাত করা' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে [22] ।
উল্লেখ্য, الدخول ب ও البناء بِ পরস্পরের সমার্থক, ঠিক যেভাবে 'লাউ' ও 'কদু' পরস্পরের সমার্থক, কাজেই এদুটির কোনো একটির জন্য যা প্রযোজ্য, তা একইসাথে উভয়েরই জন্য প্রযোজ্য, অর্থাৎ এদের কোনো একটির ব্যাপারে কোনো কিছু প্রযোজ্য তখন হবে যখন সেই বিষয়টি এদের উভয়ের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে। [23]
এসব কারণেই এই সংক্রান্ত হাদিসের বাংলা অনুবাদে 'বাসর হওয়া' কথাটি দেখা যায়। বাসর হওয়া দ্বারা বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম একাকী অবস্থান করাকে বোঝানো হয়। কিন্তু বাসর হওয়া মানেই যৌন সহবাস না।
عَنْ عُرْوَةَ تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَائِشَةَ وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ وَبَنٰى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعٍ وَمَكَثَتْ عِنْدَه" تِسْعًا.
অর্থঃ উরওয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী ﷺ 'আয়িশাহ (রা)-কে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর এবং নয় বছর তিনি নবী ﷺ-এর সঙ্গে জীবন কাটান। [24]
উপসংহারঃ
আমরা উপসংহারে বলতে পারি যে, আলোচ্য হাদিসগুলো দ্বারা এটি প্রমাণ হয় যে ৯ বছর বয়সে আয়েশা (রা.) স্বামীগৃহে গিয়েছেন, তাঁর স্বামী নবী করিম ﷺ এর সঙ্গে তাঁর বাসর হয়েছে, তাঁরা একত্রে একই ঘড়ে থাকা আরম্ভ করেছেন। কিন্তু এর দ্বারা মোটেও সন্দেহাতীতভাবে এটি প্রমাণ হয় না যে ৯ বছর বয়সেই নবী ﷺ তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। এটি এমন এক ব্যাপার যা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস এবং এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। আর এমনটি যদি প্রমাণিত হতোও তবু সেটিকে আমরা দোষনীয় কিছু মনে করি না বা এর দ্বারাই কেউ শিশুকামী প্রমাণ হয়ে যায় না। তবুও ইসলামবিরোধীদের লাগাতার অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে আমরা আলোচ্য হাদিসগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলাম।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে যদি তার সাথে ৯ বছরে সহবাস নাই করে থাকেন তাহলে এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারন কি? ব্যক্তিগতভাবে আমার (সম্পাদকের) কাছে এর উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ আদেশ করেছিলেন, মহানবী ﷺ ও আয়শা (রা) ও তাদের উভয়ের পরিবার রাজি ছিলেন তাই তিনি কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করেছেন। বিষয়টা এটা না, মূল বিষয়টা হচ্ছে তিনি কি আদো ৯ বছর বয়সী আয়শার সাথে সহবাস করেছিলেন কিনা সেটা।
বর্তমান যুগেত ১২/১৩ বছরের মেয়েরাও নিজের প্রেমিকের সাথে সেচ্ছায় সেক্স করে, আমাদের মুক্তমনারা যাদেরকে মনীষী ও আইডল হিসেবে ট্রিট করে তাদের অসংখ্যা মানুষ বাল্যবিবাহ করেছে, অনেকেত ১০ এর নিছে মেয়েকে বিয়ে করেছে। হিন্দু ধর্মে এমন অনেকই দেখা যায় যে অনেক দেবতা, মনীষীরা ১০ বছরের নিছে মেয়ের সাথে বিবাহ করেছে, সহবাস করেছে। এমনকি বাইবেলেও পাওয়া যায় কিছু। যাই হোক সেগুলা বাদ দিই, আমি কিন্তু এমন কোন যুক্তি দিচ্ছি না যে তারা করেছে বিধায় রাসূলও করেছে বা সেটা তারা করলে রাসূলও করতে সমস্যা নেই, আমি শুধু কিছু তথ্য দিলাম মাত্র। কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করার অনেক কারনই থাকতে পারে।
১. আল্লাহর আদেশ [25]
২. তাদের দুজনের অফুরন্ত ও অকৃত্রিম ভালোবাসা [26]
৩. আয়শা (রা) অনেক বেশি জ্ঞানী ছিলেন, অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন, অনেক মাসলার ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান দিতেন [27]
৪. আবু বকর (রা) এর সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালি করা
দেখাই যাচ্ছে তারা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসত, তাদের বিয়েতে আয়শা (রা) কোন আপত্তি ছিল না, মহানবী ﷺ এর আপত্তি ছিল না, আয়শা (রা) এর মা-বাবা, ভাই-বোনদের আপত্তি ছিল না, মহানবী ﷺ এর স্ত্রী ও সন্তানদের আপত্তি ছিল না তাহলে বর্তমানে ইসলামবিদ্বেষীদের এত সমস্যা কেন? তারাত বলে যে সম্মতিতে বিবাহ ও শারীরিক সম্পর্ক বৈধ তাহলে এই ক্ষেত্রে তাদের সেই নীতি কোথায় যায়?
অথচ উম্মুল মু'মিনিন মহিয়সী, হযরত আয়েশা (রা)-এর দাম্পত্য জীবন মধুময় ছিল। অথচ আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত, সেকুলার, নারীবাদি ও সংস্কৃতিমনা বেশীরভাগ নারীরাই পরকীয়া, ডিফোর্সী এবং অসুখী। সমস্যা আসলে বিয়ে নিয়ে নয় বরং তাদের সমস্যা ইসলাম নিয়ে, তাই শুধু ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ডের জন্য বাহানা খুজতে থাকে তারা।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল ৩৮/২১২-২১৮; আল-মুসনাদুল জামে ১৯/৭৮৮-৭৯২
[2] ইবনুল যাওযী, কাশফুল মুশকিল ৩/৪৯৪
[3] ড. আহমদ মুখতার, মুজামুল লুগাতিল আরাবিয়াতিল মুয়াসিরাহ ১/৭২৭
[4] সুনান আন-নাসাঈ (হা/৩৩৭৮), সহিহ আল-বুখারী (হা/৫১৩৩), মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৬৬), আল-মুজামুল কাবির (২৩/২১), আল-মুজামুল আওসাত (৭/৯৪) & (২/৩০১), হুজ্জাতুল ওইদা'আ (হা/৫০৬), সহিহ ইবন হিব্বান (হা/৩৪৫৪)
[5] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৪৬৫)
[6] সহিহ মুসলিম (হা/১৪২২), আল-আহাদ ওয়াল মাছানী (হা/৩০২৮), সুনানুন নাসাঈ আলকুবরা (হা/৫৫৪৪), মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৭১), শারহুস সুন্নাহ (৯/৩৫), সুনানুল বায়হাকী আল-কুবরা (১০/৩৭১), আল-মুসনাদুল মুস্তাখরাজ আলা সহিহ মুসলিম (হা/৩৩১২), আন-নুফকাহ আলাল ইয়াল (২/৭৫৫)
[7] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৫৩৬-৫৩৭)
[8] মুসান্নাফ আব্দুর-রাজ্জাক (হা/১১১৯১), আল-মুজামুল কাবির (২৩/১৭), মা'রেফাতুস সাহাবাহা (৬/৩২০৮)
[9] ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/১৮৭)
[10] আল-লাহিম, মুক্বারানাতুল মারওইয়াত ১/৩৯১
[11] আস-সাহারানফুরী, বাযলুল মাজহুদ ফি হিল্লে সুনানে আবি-দাউদ ৮/৪৭
[12] ইবনুল-মালাক, শারহু মাসাবিহিস সুন্নাহ ৩/৫৬০
[13] আল-মুযহিরী,আল-মাফাতিহ ফি শারহিল মাসাবিহ ৪/৩৫
[14] আল-ক্বারী,মিরকাতুল মাফাতিহ শারহু মিশকাতিল মাফাতিহ ৫/২০৬৬
[15] শারহুল মিশকাহ (আল-কাশিফ আন হাক্বাইক্বিস সুনান) ৭/২৮৫
[16] ইবনু রাসালান, শারহু সুনানে আবি-দাউদ ১৯/১৮
[17] আল-আমিন, মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ ১১/৪২৫
[18] মুহাম্মদ ফাওয়াদ আব্দুল-বাক্বীর টিকাবিশিষ্ট: সহিহ মুসলিম ২/১৯৩৮
[19] আল-বিরমাওই, আল-লামিউস সাবিহ ১০/৪৬৬
[20] আল-আমিন আল-হারারী, আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ শারহু সহিহে মুসলিম আল-হাজ্জাজ ১৫/২৯৫; বাযলুল মাজহুদ (৮/৪৭); আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫); আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ (১৫/২৯৫); মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ (১১/৪২৫); আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫)
[21] ইবনু রাসালান, শারহু সুনানে আবি-দাউদ ৯/৪৩১
[22] ইবনু কাইয়িমিল যাওযিয়াহ, তাহযিবু সুনানে আবি দাউদ ১/৪৪৭-৪৪৮
[23] দ্রষ্টব্য : আরবি ভাষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটো পরস্পর সমার্থক শব্দ দুইটা ভিন্ন ভিন্ন আলাদা অর্থ বোঝানোর জন্য ব্যবহার হতে পারে, এবং সাধারনভাবে এব্যাপারটা البناء بِ ও الدخول ب ও প্রযোজ্য, এরা যেভাবে একে অপরের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় , ঠিক একইভাবে ক্ষেত্রবিশেষে এরা অসমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এই হাদিসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই সুযোগ নেই। কারণ এই হাদিসে البناء بِ ও الدخول ب একই অর্থ বোঝানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, البناء بِ ও الدخول ب অংশদুটি সহ বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো হচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট হাদিসেরই একাধিক রকমের রুপ, যাদের ব্যাহ্যিক শব্দ ও বাক্যে হালকা পাতলা পার্থক্য থাকলেও মুল অর্থে ও মর্মে কোনো পার্থক্য নেই।
[24] সহীহ বুখারি ৫১৫৮
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪১৮, ৫০৭৮
[26] বুখারি ২৭৩১, ৩৬৬২, ৩৮১৮, সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৬৪০, ৮৯৭; মুসলিম হাদিস ৩২১, ৫৭৯, ২৩৮৪, ২৪৩৫, ২৮১৫, সহিহ মুসলিম, ৪/১৮৯১; তিরমিযী ৩৮৯০, ৩৮৯৫; আবু দাউদ, হাদিস ২৫৭৮; নাসায়ি, হাদিস ৭০; ইবনু মাজাহ হাঃ ৬৪৩; মুসনাদে আহমদঃ ২৫৫, ২১৭, ৬/৬৪, ৬/২৫৮; সীরাতে আয়েশা-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী (রহ), পৃষ্ঠা-১৪৯
[27] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা- ৭৬৮; মুস্তাদরাক হাকিম, ৪/১১; তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৪৮৭; সুনানে তিরমিযী ৩৮৮৩, ৩৮৮৪; মিশকাত ৬১৯৪; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৮৫