সারারাত ফোন চার্জ দিয়ে রাখা কি অনুচিত? স্মার্টফোন পুনরায় চার্জ দেয়ার জন্য আপনার কি সম্পূর্ণ চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত? পাওয়ার সেভিং মুড কখন ব্যবহার করবেন? মোবাইল চার্জ দেয়ার সময় কি ফোন ব্যবহার করা উচিত? এরকম অনেকগুলো বিষয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে। চলুন দেখে নিই এরকম ১০টি ভুল ধারণা এবং সেগুলোর সঠিক তথ্যও জেনে নিই।
ভুল ধারণা ১ – সারারাত ফোন চার্জে লাগিয়ে রাখা অনুচিত।
সঠিক তথ্যঃ অনেকেই দিনে ফোন চার্জে দেয়ার সময় পাননা। তারা রাতে ঘুমানোর আগে স্মার্টফোনটি চার্জে রেখে দিতে পছন্দ করেন। সাধারণত এতে ফোনের ক্ষতি হওয়ার কিছু নেই। মোবাইল ফোনের স্মার্ট প্রযুক্তি আপনার ফোনে সম্পূর্ণ চার্জ হওয়ার পর এর ব্যাটারিতে আর চার্জ দেওয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেয়। যদি চার্জ কখনো একটু পড়ে যায়, তাহলে ফোন সেই চার্জটুকু চার্জার থেকে আবার পূরণ করে নেয়। আরেকটা কথা, ফোনে যদি কোনো সমস্যা থাকেই, তাহলে সেটা চার্জ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা না রাখলেও কয়েক মিনিটেও সেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য, ঘুমানোর সময় বিছানায় ফোন নিয়ে চার্জ না দেয়াই ভালো। তাহলে ফোনে আগুন লাগা বা এ জাতীয় দুর্ঘটনা থেকে নিজে অন্তত নিরাপদ থাকতে পারেন।
ভুল ধারণা ২ – ফোন সবসময় পাওয়ার সেভিং বা লো পাওয়ার মুডে ব্যবহার করা ভালো।
সঠিক তথ্যঃ পাওয়ার সেভিং বা লো পাওয়ার মুড আপনার ফোনে রাখা কোনো সফটওয়্যারের কোনো ক্ষতি করেনা, কিন্তু এই ফিচার চালু করলে আপনি ফোনের সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেননা। ফোনগুলো মূলত আপনাকে সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যখন আপনি ফোনের ব্যাটারি সেভিং মুড চালু করেন, তখন ফোনের বেশিরভাগ ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ হয়ে যায়। ডিসপ্লের আলো কমে যায়, যা আপনার দেখতে সমস্যা সৃষ্টি করে, ফোনের সাউন্ড ততটা জোড়ালো থাকেনা যতটা আপনি হয়ত পছন্দ করেন। নোটিফিকেশন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং আপনি তাৎক্ষণিক তথ্য পাবেননা। তাই ব্যাটারি/পাওয়ার সেভিং মুড শুধুমাত্র তখনই চালু করা উচিত যখন ফোনের চার্জ একদম কমে যায় এবং আপনি শীঘ্রই ফোনে চার্জ দিতে পারছেননা।
ভুল ধারণা ৩ – পাবলিক চার্জিং পয়েন্টে ফোন চার্জ দেয়ায় ক্ষতির কিছু নেই।
সঠিক তথ্যঃ পাবলিক চার্জিং পোর্ট ব্যবহার আপনার স্মার্টফোনে থাকা তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যে কর্ড আপনি রেস্টুরেন্টে বা এয়ারপোর্টের পাবলিক চার্জিং পয়েন্টে দেখে থাকেন, সেগুলো তথ্য আদান প্রদানে সমর্থ। এগুলোতে ফোন কানেক্ট করলে হ্যাকাররা আপনার ফোনে থাকা বিভিন্ন কনটেন্ট যেমন, ইমেইল, টেক্সট, ছবি প্রভৃতি নিয়ে নিতে পারে। যদি আপনার প্রায়ই বাইরে থাকা অবস্থায় ফোন চার্জ দিতে হয়, তবে পোর্টেবল চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখা আপনার জন্য ভালো উপায় হতে পারে।
ভুল ধারণা ৪ – নতুন ফোন/ফোনের ব্যাটারি ব্যবহারের পূর্বে ফোনকে টানা ৮ ঘন্টা চার্জ দেওয়া উচিত।
সঠিক তথ্যঃ আপনার ফোনে ইতোমধ্যেই কিছু চার্জ দেয়া আছে, এবং শুরুতে টানা ৮ ঘন্টা চার্জ দেয়ার ধারণাটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রে খাটেনা। তবে প্রথমবার ব্যবহারের আগে ফোনে ফুল চার্জ করে নেয়া ভালো, তাতে এটি সেটাপ করার জন্য আপনার আর মাঝপথে চার্জ দেয়ার দরকার হবেনা।
ভুল ধারণা ৫ – ফোনের চার্জ সম্পূর্ণ শেষ না হলে চার্জ দেওয়া উচিত না।
সঠিক তথ্যঃ আসলে আপনার উচিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চার্জ একদম শেষ হয়ে যাবার আগেই তা পুনরায় চার্জ দেওয়া। এধরনের ব্যাটারি তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেনা, এবং যখন চার্জ দেওয়া হয়, তখন পূর্বের মত চার্জ হয়না- বলেছেন স্যামসাংয়ে কর্মরত একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার সের্জিও ফ্লোরেস। বড় কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, কিন্তু এর পরও অনেক মডেলের ফোনে এই সমস্যা আছে।
ভুল ধারণা ৬ – একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যাটারির বেশি চার্জ খরচ করতে পারেনা।
সঠিক তথ্যঃ একটি অ্যাপও, যেমন ফেসবুক অ্যাপ, আপনার স্মার্টফোনের বেশিরভাগ শক্তি ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। এমনকি আপনি ব্যবহার না করলেও। এসব অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে পারে বা করে থাকে। কিছু ব্যবহারকারীর মতে, ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন আনইনস্টলের ফলে ফোনের অন্য অ্যাপ আরো ১৫ শতাংশ দ্রুত কাজ করে ও ফোনের চার্জ ২০ শতাংশ বেশি সময় থাকে।
ভুল ধারণা ৭ – ফোন বন্ধ করার কোনো দরকার নেই।
সঠিক তথ্যঃ অনেক ব্যবহারকারী কাজের পর অ্যাপ্লিকেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করেননা, এতে অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। যদিও সব অ্যাপ অনেক চার্জ নষ্ট করতে পারেনা কিন্তু যত চলতে থাকবে ততই ব্যাটারি লাইফ কমতে থাকবে। সপ্তাহে অন্তত একবার আপনি ফোনটি বন্ধ করে আবার চালু করুন, এটা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার- উভয়ের জন্যই ভাল।
ভুল ধারণা ৮ – চার্জে দেয়া অবস্থায় ফোন স্পর্শ করা উচিত না।
সঠিক তথ্যঃ আপনি নিশ্চিন্তে চার্জ দেবার সময় ফোন ব্যবহার করতে পারেন। স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ার ফ্লোরেসের ভাষ্যমতে, যদিও আপনি যখন আপনার ফোন চার্জ দিচ্ছেন, এটি সবসময়ের মত ব্যাটারির ক্ষমতা ব্যবহার করেনা (চার্জার থেকে আসা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে)। তবে ফলাফল এবং সার্কিটের কার্যক্ষমতা সবসময় একই হয়।
অবশ্য, চার্জের সময় চালু থাকা বিভিন্ন অ্যাপে বাড়তি কাজ হলে স্মার্টফোনে চার্জ ফুল হতে দেরি হবে। তাই আপনি যদি দ্রুত চার্জ পেতে চান তবে চার্জিং সময়ে ফোন ব্যবহার না করা উচিত।
ভুল ধারণা ৯ – চার্জিং পোর্ট মিলে গেলেই যেকোনো চার্জার ব্যবহার করা যায়।
সঠিক তথ্যঃ অনেকে শুধুমাত্র ফোনের চার্জিং পোর্ট মিলে গেলেই যেকোনো চার্জারে ফোন চার্জ করেন। কিন্তু এসব চার্জার ফোনের ক্ষতি করতে পারে। সকল চার্জারে ভোল্টেজের সামঞ্জস্যতার সঠিক মান থাকেনা। বিদ্যুৎ প্রবাহ কম-বেশি হতে পারে। এতে ফোনের ব্যাটারি, এমনকি সার্কিট বোর্ড/চিপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আপনার উচিত ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশকৃত চার্জার ব্যবহার করা।
ভুল ধারণা ১০ – একটানা ওয়াইফাই চালু রাখলে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে।
সঠিক তথ্যঃ স্মার্টফোনের ওয়াইফাই চালু রাখলে এটি আশেপাশের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে। এভাবে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক অনুসন্ধানে নিশ্চয়ই চার্জ ব্যবহৃত হয়, তবে লক্ষ্য করার মত অতটাওনা। আপনার ফোন যখন ওয়াইফাই সিগনাল অনুসন্ধান করে তখন এটি নিজের সিগনাল ব্যবহার করে জানে যে এখানে ওয়াই ফাই আছে কিনা। কিন্তু এর মানে এই না যে আপনাকে সবসময় ওয়াইফাই বন্ধ করে চলতে হবে। তবে চার্জ দেয়ার সুযোগ কম থাকলে ও ব্যাটারি খরচ কম করতে চাইলে অব্যবহৃত অবস্থায় ওয়াইফাই/মোবাইল ডেটা বন্ধ করে রাখা ভাল।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার কাজে লাগবে। আপনি কি এই তথ্যগুলো আগে জানতেন? কমেন্ট করার আমন্ত্রণ রইল!