মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী শাহেদুল ইসলাম সিফাত গত ১০ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে জামিন পান। এরপর থেকে সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সিফাতের মুখ থেকে পুরো ঘটনা জানার জন্য। কিন্তু সিফাত ও সিনহার ডকুমেন্টারিতে কাজ করা আরেক সহযোগী শিপ্রা গত দু সপ্তাহের দুঃসহ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে উঠতে দেশবাসীর কাছে সময় চান। তারা জানান মানসিকভাবে কিছুটা স্বাভাবিক হলেই তারা সকল সত্য সবার সামনে তুলে ধরবেন। ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা সিফাতের সাক্ষী এই হত্যা মামলায় অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইতিমধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশকটি ফোনালাপ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওসি প্রদীপ কুমার দাস, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ও এসআই লিয়াকতের সেসব ফোনালাপ থেকে ঘটনার চিত্র সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া গেলেও সিফাতের বক্তব্য মিলছিল না। আজ ১২ আগস্ট পুলিশি হেফাজতে সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশি জেরায় সিফাত পুরো ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। সিফাতের ভাষ্য অনুযায়ী পুরো ঘটনাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে-
শামলাপুরের পুলিশ চেকপোস্টের কর্তব্যরত অফিসাররা প্রথমে সিনহা এবং সিফাতের পরিচয় পেয়ে তাদের ছেড়ে দেন। সিনহা গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে চলে যাবেন ঠিক এমন সময় এসআই লিয়াকত সেখানে এসে আবার তাদের পরিচয় জানতে চান। লিয়াকত মেজর সিনহার পরিচয় শোনা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে একটি ড্রাম এনে সিনহার গাড়ির সামনে দেন। এবং পিস্তল তাক করে তাদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন।
প্রথমে সিফাত গাড়ি থেমে নেমে পেছনে হাঁটা শুরু করেন, মেজর সিনহাও দু’হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামতে উদ্যত হন এবং “Calm down! Calm down!” বলে পিস্তল তাক করে রাখা এসআই লিয়াকতকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
গাড়ি থেকে নামার সময় সিনহাকে কিছুটা ঝুঁকতে হওয়ায় ঠিক সে সময় সিনহার পদক্ষেপ কি ছিল সেটি সিফাত পরিস্কারভাবে দেখতে পাননি, তবে সিনহা দু’হাত যে উঁচু করে নামছিলেন এটি সিফাত স্পষ্টভাবে জিজ্ঞাসাবাদে উল্লেখ করেছেন।
“সিনহা স্যার যখন গাড়ি থেকে নামে আমি তখন দেখেছি পিস্তলটা গাড়ির ভেতরে রেখেছেন। আমি এতটুকু দেখেছি উনি দু’হাত তুলে বের বের হচ্ছিলেন দরজা খুলে। পরে আমি পেছনে ছিলাম, উনি একটু নিচু ছিলেন। গাড়ির জন্য উনার পদক্ষেপটা আমি দেখতে পারি নি।”
এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই সিনহাকে গুলি করে বসেন লিয়াকত। সিফাত প্রথমে মনে করেছিলেন, লিয়াকত হয়তো ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছেন আর সিনহা নিজেকে বাঁচাতে শুয়ে পরেছেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সিফাত বুঝতে পারেন, সিনহা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
সিফাত আরও উল্লেখ করেন, তাদের হাতে ট্রাইপড ছিল, খুব সম্ভবত পুলিশরা এটা ভুল বুঝতে পারেন। পাহাড় থেকে নামার সময়ও তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। এছাড়া ঘটনাস্থলে ৪-৫ জন পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকান্ডটি ঘটার সময়ে সেখানে তেমন কোন ভিড় ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে সিফাত জানান, মেজর সিনহার পালানোর মতো কোন উদ্দেশ্য ছিল না। পালানোর ইচ্ছা থাকলে তিনি সিফাতকে গাড়ি থেকে নামতে দিতেন না।