মৌমাছির চাষ ও মধুর উপকারিতা
মধু ও মৌমাছির কথা শোনেনি এমন লোক পৃথিবীতে বিরল। বাঙ্গালী সমাজে নবজাতকের মুখে একফোঁটা মধু দেওয়ার রেওয়াজ অতি প্রাচীন। মানব সভ্যতায় মধুর ব্যবহার প্রাগৈতিহাসিক। শুধু রোগবালাই নয়, দালানকোঠা নির্মাণসহ বহুবিধ কাজেও মধু ব্যবহার করা হ'ত। আগের দিনে এত অঢেল মধু পাওয়া যেত যে, দালানকোঠা নির্মাণে মজবুত গাঁথুনির জন্য চুন-সুড়কির সাথে মধু ব্যবহার করা হ'ত। চট্টগ্রামের অন্দরকিল্লায় এ ধরনের প্রাচীন দালান এখনও আছে। অতীতে ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশ থেকে নিজ দেশে মধু নিয়ে যেত । মধুর বহুবিধ ব্যবহারের কারণে এদেশে গড়ে ওঠে মৌয়াল সম্প্রদায়, যাদের পেশা ছিল মধু সংগ্রহ ও বিপণন। ফুলে ফলে শস্য শ্যামল বাংলাদেশ অতীতে মৌমাছির স্বর্গরাজ্য ছিল। অথচ আজ মৌমাছি ও মধু বিলুপ্তপ্রায়। জনসংখ্যা ও চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌমাছি ও মধু উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। ভেজাল মধু উৎপাদনের ফলে মধুর প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ ও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারের মধু সম্পর্কে মানুষের চরম অনীহা। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মধুর ব্যবহার হ্রাস পেলেও আয়ূর্বেদী, হোমিওপ্যাথি এবং এলোপ্যাথি চিকিৎসায় এর ব্যবহার এখনও বহাল আছে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আজ আমদানীকৃত মধুর ওপর নির্ভরশীল। অথচ আমাদের উৎপন্ন মধু নিজের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ বিদ্যমান।
সাধারণ মানুষ খাঁটি মধু পায় না বললেই চলে। চাপা কলা ও গুড় মিশিয়ে প্রস্ত্ততকৃত মধুতে মৌচাক ও মৌমাছি ডুবিয়ে হাটে-বাজারে প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি হ'তে দেখা যায়। যা পান করলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তাছাড়া বনবনানী হ'তে মৌয়ালদের সংগৃহীত মধু স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অসচেতনতা, অজ্ঞতা এবং নিয়মবহির্ভূত পন্থায় আহরণ করা হয় বলে সহজেই এর গুণগতমান হারিয়ে ফেলে। কারণ তারা মধু সংগ্রহের সময় মৌচাক হাতে চিপে নেয়। ফলে তাতে মৌমাছির ডিম, লার্ভা, মৌখাদ্য প্রভৃতি মধুর সঙ্গে মিশে গিয়ে মধু দূষিত হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে মৌচাক দেখলেই মধু সংগ্রহের জন্য আগুন লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অতি প্রকট। ফলে মৌমাছি নির্বিচারে ধ্বংস হয়। অন্যদিকে কীটনাশক, রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার, মিল-কারখানার বর্জ্য, ধোঁয়া প্রভৃতি মৌমাছিসহ উপকারী কীটপতঙ্গ, পশু-পাখি সর্বোপরি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।