প্রাচীন সভ্যতার মানুষের বিশ্বাস ছিল- পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দরী রমণীরা নাকি মানুষ না। আসলে তারা অর্ধেক মানুষ, আর অর্ধেক মাছ। ইংরেজিতে এদেরকে বলা হয় মারমেইড, যার বাংলা নাম মৎস্যকন্যা, আবার অনেকেই বলেন জল পরী। এই মৎস্যকন্যা নিয়ে রহস্যের কোন শেষ নেই। প্রায় সব দেশের গল্প, উপকথা আর রূপকথায় বার বার ঘুরেফিরে এসেছে মৎস্যকন্যাদের কথা। প্রচলিত মত অনুযায়ী, মৎস্যকন্যা এর দেহের উপরের ভাগ হয় মানুষের মতো আর নিচের অংশ থাকে মাছের মতো। মাথায় রয়েছে কোমর ছাপিয়ে যাওয়া বিশাল আকৃতির সোনালি চুল। আর তারা দেখতেও হয় অপরূপ সুন্দরী। তবে বাস্তবে সত্যিই এদের অস্তিত্ব আছে কি না, সে ব্যাপারে স্পস্ট কোন ধারনা পাওয়া যায়নি। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা এই মারমেইড বা মৎসকন্যা সম্পর্কে প্রচলিত ধারনা এবং এর পেছনে লুকিয়ে থাকা রাহস্যময় ঘটনাগুলো জানবো।
মৎস্যকন্যা এর ইতিকথা
মনে করা হয় মৎস্যকন্যাদের গল্প প্রথম শোনা গেছে প্রাচীন অ্যাসিরিও সভ্যতায়। এই গল্প অনুযায়ী দেবী অ্যাটারগেটিস নাকি একবার ভুল করে হত্যা করে ফেলেন তার একজন মানুষ বন্ধুকে। আর তারপরই তিনি দুঃখে এবং লজ্জায় দেবী থেকে পরিণত হন মৎস্যকন্যায়। প্রাচীন এই সভ্যতার অনেক নিদর্শনে তাদের এই বিশ্বাসের প্রতিফলন পাওয়া গেছে। পাহাড়ের গুহায় তাদের আঁকা ছবিতে দেখা গেছে মারমেইডরা সাগরে ভেসে যাচ্ছে আর মানুষ তাদের দিকে বর্শা ছুড়ে মারছে।
গ্রিক সাহিত্যে মৎস্যকন্যা
প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যে সাইরেন নামে এক ধরনের কাল্পনিক সামুদ্রিক প্রাণীর নাম শোনা যায়। অনেকে মনে করেন এই সাইরেনরাই হচ্ছে মৎস্য কন্য বা জলপরী। সাইরেনরা নাকি মৎস্যকন্যা বা সুন্দরী মেয়ে সেজে মাঝসমুদ্রে দারুণ মিষ্টি গলায় গান গায় আর ওই গানের আকর্ষণে নাবিকরা দিক ভুল করে পৌঁছে যায় অন্যদিকে। তখন তারা সেই জাহাজ ডুবিয়ে দেয় আর মানুষদের মেরে ফেলে, না হলে নিয়ে যায় সমুদ্রের তলায় থাকা তাদের প্রাসাদপুরীতে। গ্রিক সাহিত্যের এমন আরও আজব প্রানিদের সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন এই আর্টিকেলটি...
কলম্বাস কি আসলেও মৎস্যকন্যা দেখেছিলেন?
মৎস্যকন্যা দেখেছেন এমন মানুষের মধ্যে সবার আগে চলে আসে বিখ্যাত নাবিক কলম্বাসের নাম। ১৪৯৮ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করে পৃথিবীর ইতিহাসে আলাদা করে জায়গা করে নেওয়া কলম্বাসের লগবুকেও রয়েছে মৎস্যকন্যার উল্লেখ। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের লগ বুক অনুসারে তিনি যখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নাকি এক অর্ধমানবী অর্ধমাছকে সমুদ্রবেলায় বসে থাকতে দেখেছেন। এটিকে অনেকে উড়িয়ে দিলেও বিশ্বাসীরা একেই মানছেন মৎস্যকন্যাদের অস্তিত্বের সপক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ ।
মৎস্যকন্যা দেখেছে বলে যারা দাবি করে
আবার ১৮৪৭ সালের কথা। ৮০ বছর বয়স্ক একজন জেলে দাবি করেন তিনি নাকি উপকূল থেকে ২০ গজ দূরে এক মৎস্যকন্যা দেখেছিলেন। তার বর্ণনা অনুসারে মৎস্যকন্যা তখন গলদা চিংড়ির দাড়া দিয়ে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছিল। তবে খুব বেশিক্ষণ তাকানো যায়নি মৎস্যকন্যার দিকে। যখনই ওই মৎস্যকন্যা বুঝতে পারল কেউ তাকে দেখছে, ওমনি টুপ করে পানির মধ্যে তলিয়ে যায়।
সাম্প্রতিককালে মৎস্যকন্যা দেখা যাওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছে ইসরাইলের কিরইয়াট ইয়াম (Kiryat Yam) অঞ্চলে। দুজন বন্ধু পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র তীরে একটা পাথরের উপর মাছের মতো একটা প্রাণী বসে থাকতে দেখে। তারা অই প্রাণীর ভিডিও করতে শুরু করে। প্রাণীটি মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে। এবং পালিয়ে যায়। এই ভিডিওটি তারা ফেসবুকে আপলোড করার পর রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়।
মৎস্যকন্যা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে ঘটনা
তবে মৎস্যকন্যা দেখা যাওয়ার যে ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা ঘটেছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে, ভারতের দীঘার সমুদ্র উপকূলে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও ছবিতে এবং স্বল্প সময়ের এক ভিডিওতে দেখা গেছে অদ্ভুত এ প্রণীর অদ্ভুত শারীরিক গড়ন। এ প্রণীটির মাথা ছিল সম্পূর্ণ মাছের মতো। তবে গলা থেকে দেহের বাকি অর্ধেক ছিল হুবহু মানুষের মতো। তার হাত দুটি পেছনে বাঁধা ছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে প্রণীটি তখনও জীবিত ছিল। তবে এটি ঠিক কোন ধরনের প্রাণী বা এটির নাম কি তা কেউ এখন পর্যন্ত জানতে পারে নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণীটি বন্দর কর্তৃপক্ষের হেফাজতে ছিল।
ইতিহাসে এমন ঘটনার উল্লেখ প্রচুর পাওয়া যায়। এসব ঘটনার উপরে ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে অনেক মুভি-সিরিজ। লেখা হয়েছে অনেক গল্প উপন্যাস। কেউ কেউ মৎসকন্যর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন, আবার কেউ কেউ এর সত্যতা উড়িয়ে দেন। কিন্তু পরে থাকে শুধুই রহস্য, যার সমাধান আজও হয়নি।