করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় সংক্রমণ এড়াতে প্রায় সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। তবে দীর্ঘ সময় মাস্ক ব্যবহারে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন মাস্কে ঢেকে থাকা মুখের অংশে চর্মরোগ, চশমা ঘোলা হওয়া, মুখের চারদিকে কিংবা চোখে জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। মাস্ক–সংশ্লিষ্ট চোখের শুষ্কতাও এ রকম একটি সমস্যা। এটা চোখের পানিস্বল্পতার জন্য হয়ে থাকে।
উপসর্গ
চোখে কাঁটা কাঁটা অনুভূতি হওয়া, চোখে জ্বালাপোড়া করা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, আলোক–সংবেদনশীলতা।
কারণ
মাস্ক ব্যবহারে শ্বাসপ্রশ্বাসে নির্গত বাতাস চোখের উপরিভাগের অংশগুলো থেকে চোখের পানিকে অতিরিক্ত বাষ্পায়িত করে চোখকে শুষ্ক করে ফেলে। এ ছাড়া মাস্কের আশপাশের ফাঁকগুলো বন্ধ করতে গিয়ে অনেকে চোখের নিচের পাতা পর্যন্ত ঢেকে ফেলেন। এতে চোখের পাতার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, চোখের পাতার গ্রন্থিগুলোর স্বাভাবিকতা নষ্ট হয় এবং চোখের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়। তবে চোখের শুষ্কতার অন্য কারণও আছে। যেমন বিভিন্ন ওষুধের ব্যবহার, চোখে লেজার চিকিৎসা, বাতাসের শুষ্কতা, ধোয়া ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণেও চোখের শুষ্কতা বেড়ে যেতে পারে।
করোনায় চোখের সমস্যা
করোনার সংক্রমণেও চোখের কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন চোখের সাদা কিংবা কালো অংশে প্রদাহ , চোখের শুষ্কতা। আরও কিছু সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে চোখে একটি জিনিস দুটি দেখা এবং ডায়াবেটিসের কারণে চোখের পেছনের অংশের সমস্যা অন্যতম। চোখের এই সমস্যার একটি উদাহরণ হচ্ছে ভিট্রিয়াস হেমোরেজ বা রক্ত জমাট বাঁধা। ফলে অন্ধত্ব, দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যা, চোখ বাঁকা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।
মাস্ক–সংশ্লিষ্ট চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধে করণীয়
*মাস্ক পরার সময় তা নাকে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যেন চোখের নিচের পাতায় তা না লাগে।
*গরম ভাপ নিতে হবে, যাতে চোখের পাতার গ্রন্থিগুলো সতেজ হয় এবং কার্যক্ষমতা বাড়ে।
*চিকিৎসকের পরামর্শে জেল–জাতীয় চোখের ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
*জলাধারযুক্ত চোখের গগলস ব্যবহার করা যেতে পারে।
*তরলপূর্ণ গ্যাস পারমিয়েবল কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
*ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং ভিাটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার চোখের শুষ্কতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া ভিটামিন ডি, কপার ও ম্যাগনেশিয়াম চোখের শুষ্কতা কমায়।
*মুখমণ্ডলের সঙ্গে খাপ খায়, এমন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যেন তার আশপাশে কোনো ফাঁক না থাকে।
*শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কম সময় থাকতে হবে।
*নিয়মিত চোখের চিকিৎসকের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে।
*মুঠোফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ব্যবহারে ২০-২০-২০ ফর্মুলা ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ মুঠোফোন বা কম্পিউটার প্রতি ২০ মিনিট ব্যবহারের পর ২০ সেকেন্ড সময় ধরে ২০ ফিট দূরে তাকানো। ২ ঘণ্টা পর ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী সময়ে আবার কম্পিউটার উপরিউক্ত নিয়মে ব্যবহার করা যেতে পারে।
*** অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ: চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা ***