মাস্কের মাধ্যমে সৃজনশীল ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) শিক্ষার্থীরা। মাস্কের নকশায় এই সময়ের পৃথিবী নিয়ে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোর্সটির অধীনে শিক্ষার্থীরা মাস্কের নকশা করেছেন, তার নাম ফাউন্ডেশনস ইন আর্ট, ডিজাইন অ্যান্ড স্পেশাল প্র্যাকটিসেস: ডিজাইন অ্যান্ড স্কেয়ারসিটি। এই কোর্সের অংশ হিসেবে এমআইটি ফিউচার হেরিটেজ ল্যাব ও এমআইটি প্রোগ্রাম ইন আর্ট, কালচার অ্যান্ড টেকনোলজি শিক্ষার্থীদের মাস্কের নকশা করার আমন্ত্রণ জানায়। কোর্স শিক্ষক আজরা আকসামিজার নির্দেশনা ছিল—শিক্ষার্থীরা চারপাশে যা দেখছে, এবং এসব তাঁদের মনে যা প্রভাব ফেলছে, সেটিই মাস্কের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
যা প্রকাশিত হয়েছে মাস্কে
করোনার এই সময় পৃথিবীর অন্য অনেক শিক্ষার্থীর মতো এমআইটির ছাত্রছাত্রীরাও এক অনিশ্চিত সময় কাটাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ তাঁদের স্বজন হারিয়েছেন। এ ছাড়াও নানা বৈশ্বিক সমস্যা তাঁদের মনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বর্ণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ। শরণার্থী হিসেবে ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি দিনে দিনে আরও প্রকট হচ্ছে। অস্থির এই পৃথিবীর নানা চিত্র শিক্ষার্থীরা তাঁদের মাস্কের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। উঠে এসেছে তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বড় বড় নানা সংকটের কথা।
কোর্সের শিক্ষক আকসামিজা বলেছেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, কোভিড মহামারি আমাদের নতুন করে পথ দেখিয়েছি। বৈশ্বিক এই সংকটে নতুনভাবে সবাইকে এক হতে পথ দেখাচ্ছে।’
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ডিয়েগো ইয়ানেজ-লাগুনা ‘আমেরিকান ড্রিম’ নামে এই মাস্কটির নকশা করেছেন, ছবি: এমআইটি এসিটি
নতুন করে দেখার সুযোগ
প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে অংশ নেন। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ডিয়েগো ইয়ানেজ-লাগুনা ‘আমেরিকান ড্রিম’ নামে একটি মাস্কের নকশা করেন। এ সম্পর্কে ডিয়েগোর ভাষ্য, ‘মাস্কের মাধ্যমে আমি আমেরিকান ড্রিম ও শরণার্থীদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দূরত্ব ফুটিয়ে তুলেছি। একদিকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি সুযোগের কথা বলছে, অন্যদিকে কাঁটাতার বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ক্যালেব আমানফু ব্যান্ডেজের মাধ্যমে ‘সিন’ নামের একটি মাস্ক তৈরি করেছেন। তিনি সামাজিক বৈষম্যকে মাস্কের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। ক্যালেব বলেন, ‘এই মাস্কের মাধ্যমে আমি সামাজিক সংকট ও বৈষম্যের প্রভাব সম্পর্কে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। সমাজের নানা বাধা আমাদের কথা বলতে দিচ্ছে না।’ এ ছাড়াও ব্লেজন মাস্কের মাধ্যমে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেনিস জান মাস্ক পরিধানকারীদের মনের চাপকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ক্যালেব আমানফু ব্যান্ডেজের মাধ্যমে ‘সিন’ নামের একটি মাস্ক তৈরি করেছেন, ছবি: এমআইটি এসিটি
মন ও জগতের সম্পর্ক
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে মানসিক প্রভাবকে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ পান। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফেলিক্স লি ভাঙা সিরামিক দিয়ে মাস্কের নকশা করেন। চীনা বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী লি পূর্বপুরুষের সঙ্গে তাঁর সংযোগকে ফুটিয়ে তুলেছেন। কমিউনিটির দুঃখকে তিনি মাস্কে ফুটিয়ে তোলেন। পলিমার ক্লের মাধ্যমে ‘ক্লিন’ নামের একটি মাস্ক তৈরি করেন ইভা স্মিরেকাঞ্চ। ইটিং ডিজঅর্ডার বা খাবার নিয়ে রোগের প্রভাব দেখা যায় তাঁর নকশা করা মাস্কে।
পলিমার ক্লের মাধ্যমে ‘ক্লিন’ নামের একটি মাস্ক তৈরি করেন ইভা স্মিরেকাঞ্চ, ছবি: এমআইটি এসিটি
ওশেন ব্লু নামের একটি মাস্ক তৈরি করেন ইজি ওয়েটজ, ছবি: এমআইটি এসিটি
ওশেন ব্লু নামের একটি মাস্ক তৈরি করেন ইজি ওয়েটজ। ১০টি ভিন্ন মাস্ক সেলাই করে এই নকশা করেছেন তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘এই সিনথেটিক পণ্য ৪৫০ বছর পর্যন্ত প্রকৃতিতে টিকে থাকবে, যার কারণে সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ভাবনা প্রকাশের এই ভিন্নমাত্রাকে ১৭তম আন্তর্জাতিক আর্কিটেকচার এক্সিবিশন ভেনিস আর্কিটেকচার বায়েনাল ২০২১-এ উপস্থাপন করা হয়েছে, ছবি: আজরা আকসামিজা
শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ভাবনা প্রকাশের এই ভিন্নমাত্রাকে ১৭তম আন্তর্জাতিক আর্কিটেকচার এক্সিবিশন ভেনিস আর্কিটেকচার বায়েনাল ২০২১-এ উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক সংকটের এই ভিন্নমাত্রিক উপস্থাপনা সবাইকে নতুন করে ভাবনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
* এমআইটি নিউজ অবলম্বনে