মনে পড়ে , পি. কে. দে সরকারের ইংরেজী গ্রামার ?
সেই ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি পি কে দে সরকারের গ্রামার বই আমরা আজও পড়ে চলেছি ৷ আমার মা -বাবারাও পড়েছেন ৷ এই বই লেখার ইতিহাস টা কি জানা যাক ৷
আসলে অপমানের জ্বালা মেটাতে লেখা হয়েছিল এই পাঠ্যবই ৷ অবাক হচ্ছেন তো? না, এটা সত্যি ঘটনা ৷ আসুন, তথ্যটা জেনে নি ৷
মার্টিন বার্ন সংস্থার এক লাইব্রেরিয়ান নিজের অজান্তেই বড় উপকার করে গেছেন আপামর বাঙালির ৷ কাজের মধ্যে তিনি নিজের কর্তব্য পালন করেছিলেন ৷ ব্রিটিশ শাসনে থেকে পালন করেছিলেন নিয়ম ৷ অফিসের লাইব্রেরিতে ঢুকতে দেননি এক বাঙালিকে ৷ কারণ‚ যতই তুমি কর্মী হও না কেন‚ লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারবেন শুধু ব্রিটিশরাই ৷
তো সেই যুবক তো আর এমনি বাঙালি নন ৷
এক্কেবারে গোঁয়ার বাঙাল ৷ অফিসের লাইব্রেরিতে ঢুকতে না পেরে ‘ধুত্তেরি !’ বলে ছেড়েই দিলেন চাকরি ৷ তিনি প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ সঙ্কল্প করলেন বাঙালিকে ইংরেজি শিখিয়েই ছাড়বেন ৷
কাজের সুবিধের জন্য চাকরি নিলেন স্কুলে ৷ দিনরাত এক করে লিখতে শুরু করলেন ইংরেজি ব্যাকরণ বই ৷ একদিকে শিক্ষকতা করে বুঝে নিতে লাগলেন বাঙালি ছাত্রদের দুর্বলতা ৷ তারপর সেটা মাথায় রেখে চলল বই লেখা ৷ দীর্ঘ অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে ভূমিষ্ঠ হল তাঁর মানস-সন্তান ৷
১৯২৬ সালে প্রকাশিত হল A Text Book of Higher English Grammar , Composition And Translation ৷ লেখক রাজশাহী ভোলা বিশ্বেশ্বর হিন্দু অ্যাকাডেমির শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ সংক্ষেপে পি কে দে সরকার ৷ ক্রমে দুষ্পাচ্য নেসফিল্ডকে সরিয়ে সহজপাচ্য এই বই হয়ে উঠল বাঙালিদের ইংরেজি শেখার বাইবেল ৷
সম্প্রতি কলকাতায় পালিত হয়ে গেল এই বই প্রকাশের ৯০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান ৷ এখনকার শিক্ষাব্যবস্থায় অতটা গুরুত্ব পায় না ব্যাকরণ ৷ করতে হয় না পাতার পর পাতা ট্রান্সলেশন ৷ তবুও এখনও প্রতি বছর অন্তত ২০ হাজার কপি বিক্রি হয় এই বই ৷ দাবি দে সরকার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের ৷
দেশভাগের পরে ১৯৪৮ সালে প্রফুল্ল কুমার সপরিবারে চলে আসেন কলকাতায় ৷ কিন্তু কোনও চাকরি করেননি ৷ বইয়ের রয়ালটিতে হেসেখেলে চলে যেত ৷ পাবলিশারদের জন্য টুকটাক কাজ করেছেন বটে ৷ কিন্তু বিনা পারিশ্রমিকে ৷ সাম্মানিক হিসেবে নিতেন শুধু ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট ৷
১৯৭৪ সালে ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হন প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ প্রতি বছর তিনি নিজের বইয়ে কিছু না কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন বা সংস্কারসাধন করতেন ৷ যাতে সেই পাঠ্যবই চলতে পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৷
আপামর বাঙালিকে ইংরেজি শিখিয়েছেন বটে ৷ তবে পি কে দে সরকারের চার সন্তানের কেউ ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা করেননি ৷ তাঁর দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এবং দুই মেয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন মাইক্রো বায়োলজিতে ৷
কেশবচন্দ্র নাগ বয়সে প্রফুল্ল কুমার দে সরকারের থেকে এক বছরের বড় ছিলেন ৷ দুজনের বইও প্রকাশিত হয় কয়েক বছর আগে পরে ৷ ১৯২৬ সালে পি কে দে সরকারের ব্যাকরণ বই এবং তার কয়েক বছর পরে কে সি নাগের নব গণিত মুকুল ৷ পাঠ্যপুস্তক প্রণেতারা কি লেখকের মর্যাদা পেতে পারেন ? যদি পান তাহলে ভেবে দেখুন তো এঁদের পাঠকের সংখ্যাকে কিছু মহান লেখক ছাড়া কেউ টেক্কা দিতে পারবেন কি না ?
প্রশ্নটা আপনাদের জন্য রেখে এবং এই মহান বাঙালি ইংরেজি শিক্ষককে আমার শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানিয়ে এই পোস্ট শেষ করছি ৷
(শিবাজী গাঙ্গুলী)
সেই ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি পি কে দে সরকারের গ্রামার বই আমরা আজও পড়ে চলেছি ৷ আমার মা -বাবারাও পড়েছেন ৷ এই বই লেখার ইতিহাস টা কি জানা যাক ৷
আসলে অপমানের জ্বালা মেটাতে লেখা হয়েছিল এই পাঠ্যবই ৷ অবাক হচ্ছেন তো? না, এটা সত্যি ঘটনা ৷ আসুন, তথ্যটা জেনে নি ৷
মার্টিন বার্ন সংস্থার এক লাইব্রেরিয়ান নিজের অজান্তেই বড় উপকার করে গেছেন আপামর বাঙালির ৷ কাজের মধ্যে তিনি নিজের কর্তব্য পালন করেছিলেন ৷ ব্রিটিশ শাসনে থেকে পালন করেছিলেন নিয়ম ৷ অফিসের লাইব্রেরিতে ঢুকতে দেননি এক বাঙালিকে ৷ কারণ‚ যতই তুমি কর্মী হও না কেন‚ লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারবেন শুধু ব্রিটিশরাই ৷
তো সেই যুবক তো আর এমনি বাঙালি নন ৷
এক্কেবারে গোঁয়ার বাঙাল ৷ অফিসের লাইব্রেরিতে ঢুকতে না পেরে ‘ধুত্তেরি !’ বলে ছেড়েই দিলেন চাকরি ৷ তিনি প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ সঙ্কল্প করলেন বাঙালিকে ইংরেজি শিখিয়েই ছাড়বেন ৷
কাজের সুবিধের জন্য চাকরি নিলেন স্কুলে ৷ দিনরাত এক করে লিখতে শুরু করলেন ইংরেজি ব্যাকরণ বই ৷ একদিকে শিক্ষকতা করে বুঝে নিতে লাগলেন বাঙালি ছাত্রদের দুর্বলতা ৷ তারপর সেটা মাথায় রেখে চলল বই লেখা ৷ দীর্ঘ অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে ভূমিষ্ঠ হল তাঁর মানস-সন্তান ৷
১৯২৬ সালে প্রকাশিত হল A Text Book of Higher English Grammar , Composition And Translation ৷ লেখক রাজশাহী ভোলা বিশ্বেশ্বর হিন্দু অ্যাকাডেমির শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ সংক্ষেপে পি কে দে সরকার ৷ ক্রমে দুষ্পাচ্য নেসফিল্ডকে সরিয়ে সহজপাচ্য এই বই হয়ে উঠল বাঙালিদের ইংরেজি শেখার বাইবেল ৷
সম্প্রতি কলকাতায় পালিত হয়ে গেল এই বই প্রকাশের ৯০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান ৷ এখনকার শিক্ষাব্যবস্থায় অতটা গুরুত্ব পায় না ব্যাকরণ ৷ করতে হয় না পাতার পর পাতা ট্রান্সলেশন ৷ তবুও এখনও প্রতি বছর অন্তত ২০ হাজার কপি বিক্রি হয় এই বই ৷ দাবি দে সরকার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের ৷
দেশভাগের পরে ১৯৪৮ সালে প্রফুল্ল কুমার সপরিবারে চলে আসেন কলকাতায় ৷ কিন্তু কোনও চাকরি করেননি ৷ বইয়ের রয়ালটিতে হেসেখেলে চলে যেত ৷ পাবলিশারদের জন্য টুকটাক কাজ করেছেন বটে ৷ কিন্তু বিনা পারিশ্রমিকে ৷ সাম্মানিক হিসেবে নিতেন শুধু ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট ৷
১৯৭৪ সালে ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হন প্রফুল্ল কুমার দে সরকার ৷ প্রতি বছর তিনি নিজের বইয়ে কিছু না কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন বা সংস্কারসাধন করতেন ৷ যাতে সেই পাঠ্যবই চলতে পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৷
আপামর বাঙালিকে ইংরেজি শিখিয়েছেন বটে ৷ তবে পি কে দে সরকারের চার সন্তানের কেউ ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা করেননি ৷ তাঁর দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এবং দুই মেয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন মাইক্রো বায়োলজিতে ৷
কেশবচন্দ্র নাগ বয়সে প্রফুল্ল কুমার দে সরকারের থেকে এক বছরের বড় ছিলেন ৷ দুজনের বইও প্রকাশিত হয় কয়েক বছর আগে পরে ৷ ১৯২৬ সালে পি কে দে সরকারের ব্যাকরণ বই এবং তার কয়েক বছর পরে কে সি নাগের নব গণিত মুকুল ৷ পাঠ্যপুস্তক প্রণেতারা কি লেখকের মর্যাদা পেতে পারেন ? যদি পান তাহলে ভেবে দেখুন তো এঁদের পাঠকের সংখ্যাকে কিছু মহান লেখক ছাড়া কেউ টেক্কা দিতে পারবেন কি না ?
প্রশ্নটা আপনাদের জন্য রেখে এবং এই মহান বাঙালি ইংরেজি শিক্ষককে আমার শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানিয়ে এই পোস্ট শেষ করছি ৷
(শিবাজী গাঙ্গুলী)