আমার পৈতৃক বাড়ি ভোপালে, কর্ম সুত্রে এখন চেন্নাইয়ে থাকি। হঠাত একদিন আমার বাবা একটি বিশেষ দরকারে ভোপালে সত্তর চলে আসতে বললেন। আমি সেই মত office এর সব কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি সব জিনিস গুছিয়ে railway station এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্য অত্যন্ত ভীড়, তাই রিজার্ভেসন পেলাম না । সামনের platform এ grand trunk express দাড়িয়ে। কোনও চিন্তা না করে ভীড় ঠেলে একটি second class sleeper কামরায় উঠে পড়লাম। ভেতরেও একই অবস্থা। কোনও মতে ভীড় ঠেলে ঢুকে দেখলাম সাইড বার্থ এ এক ভদ্রলোক শুয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, - ' আমি কি এই কোনে একটু বসতে পারি?' ।
ভদ্রলোক স্মিত হাসিমুখে বললেন-' বসুন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম।
ট্রেন চলা শুরু করল এবং গতি বর্ধিত হয়ে চলল গন্তব্যর দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীরা নিজের নিজের বার্থ এ গুছিয়ে বসে যে যার খাওয়ার বের করে খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন। পুরো কামরাটা সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত খাওয়ার গন্ধে ভরে উঠল। আমি ভদ্রলোককে নিজের পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করলাম--
'আমার নাম অলোক। ইসরো তে একজন বৈজ্ঞানিক। বাড়িতে একটা জরুরী কাজে হঠাত যেতে হচ্ছে। কোনও রিজার্ভেশন না পেয়ে sleeper coach এই যেতে হচ্ছে, অন্যথা আমি AC ছাড়া travel করিনা'।
----' বাঃ ইসরো তে বৈজ্ঞানিক, সে আমার co-passenger সে তো দারুন ব্যাপার, -ভদ্রলোক বললেন,-- আমার নাম জগন্নাথ রাও। ওয়ারান্গাল যাচ্ছি। এর কাছের একটি গ্রামে আমার বাড়ি আছে। মাঝে মধ্যেই সময় পেলে যাই। এবার ভদ্রলোক ব্যাগের থেকে টিফিন বাক্স বের করলেন। আমায় জিজ্ঞেস করলেন চলবে? বাড়ির তৈরি। আমি ইতস্তত করে না বললাম এবং নিজের টিফিন থেকে খাওয়া শুরু করলাম।
বার বার ভদ্রলোকের নাম টা খুব পরিচিত মনে হলো কিন্ত কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।
যাক, ইতিমধ্যে অন্যান্য যাত্রীদের খাওয়ার পাট চুকেছে। সকলেই শোয়ার জন্য ব্যাস্ত।আমার সামনেই একটি পরিবার যাচ্ছে,বাবা-মা ও তাদের দুজন বয়স্ক ছেলে । আমি আমার মোবাইল ঘাটা শুরু করেছি।
ট্রেন ছুটে চলেছে speed বাড়িয়ে। হঠাত আমি দেখলাম আমার উল্টোদিকের এক যাত্রী 55-57 বছরের হবে, প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, মুখ দিয়ে ফ্যানা বেরুচ্ছে। তার পরিবারের লোকেরা ভীত। জলও খেতে পারছেনা। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম এট একটা এমারজেন্সির ব্যাপার। এখনই ডাক্তার দরকার।
কিন্ত sleeper coach এ কোথায় ডাক্তার? পরিবারের লোকেরা তখন হতভম্ব। তখনই জগন্নাথ রাও ( পাশেই শুয়ে ছিলেন) কি হয়েছে? আমি ঘটনা টি বলাতে জগন্নাথ রাও নিজের স্যুটকেস থেকে stethoscope বের করে অসুস্থ ভদ্রলোকের বুকে রেখে heartbeat শুনলেন। এবার জগন্নাথ রাও চেহারায় চিন্তার ভাঁজ দেখলাম। স্যুটকেস থেকে injection বের করে বুকে push করলেন। এবার বুকে চাপ দিয়ে রোগীর মুখে রুমাল দিয়ে নিশ্বাস দেওয়া শুরু করলেন। এভাবে কয়েক মিনিট CRP* দেওয়ার পর দেখলাম রোগীর ব্যাথার উপশম হলো ।
জগন্নাথ রাও আরও কিছু ওষুধ স্যুটকেস থেকে বের করে রোগীর ছেলে কে বললেন, চিন্তা কোরোনা। তোমার বাবার massive heart attack হয়েছিল,কিছুক্ষণ আগেও ওনার জীবন খুবই বিপদজনক ছিল। কিন্ত আমি যা করার করেছি উনি আপাতত বিপদ মুক্ত। আরও কিছু ওষুধ দিয়ে দিলাম।
এবার ছেলেটি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, ' কিন্ত আপনি কে '?
"আমি একজন ডাক্তার। আমি আপনার বাবার case history এবং prescription লিখে দেব। আপনি সামনের স্টেশনে নেমে আর বাবা কে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যান"।
যখন ডাক্তার নিজের letterpad এ লিখেছিলেন তখন pad এর প্রথম লাইন এর লেখা দেখে হঠাত সব কিছুই মনে পড়ে গেল আমার। লেখা ছিল--
Dr. Jagannath Rao,Cardiologist, Apollo Hospital, Chennai.
এবার আমার মনে পড়ল কিছু দিন আগে যখন বাবাকে নিয়ে চেক আপের জন্য গিয়েছিলাম, তখন ডা.রাও এর কথা শুনে ছিলাম। তিনি একজন নাম করা Cardiologist. ওনাকে দেখাতে হলে এক মাসের আগে appointment নিতে হয়। আমি অবাক হয়ে তাকয়ে থাকলাম ওনার দিকে। এমন একজন স্বনামধন্য ডাক্তার sleeper class এ travel করেন আর আমি সাধারণ একজন scientist হয়ে গর্ব করে AC তে যাত্রার কথা বলছিলাম। এমন একজন মানুষ একজন সাধারণ মানুষের মত ব্যাবহার। যত ভাবছিলাম অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম।
পরের স্টেশনে রোগী কে নিয়ে পুরো পরিবারটি নেমে পড়ল TTE এবং মেডিক্যাল টিমের সাহায্যে ।
ট্রেন আবার চলতে শুরু করল। আমি কৌতুহল না চেপে এবার ডাক্তার কে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, ' আপনি এত কষ্ট না করে AC তে travel করতে পারেন তো' ।
ডাক্তার মৃদু হেসে বললেন,- আমি ছোট বেলায় যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখতাম ট্রেনে কোনও ডাক্তারের ব্যবস্থা ছিল না বিশেষ করে second class এ। সেজন্য আমি যখনই কোথাও যাই second class এই যাই । আমার প্রয়োজন কারও লাগতেও পারে। কে জানে কারও হয়ত আমার প্রয়োজন হতে পারে। এই কারণেই আমি চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছি যাতে লোকের সেবা করতে পারি। আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে কি হবে যা দিয়ে কারও কোনও কাজে লাগবে না?
এরপর আরও অনেক কথা হল ডাক্তারের সাথে,যা শুনে আমি যেন কেমন হারিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। অতঃপর ভোর চারটে। ট্রেন ওয়ারান্গাল স্টেশন পৌছল। ডাক্তার নেমে গেলেন। আমার বাকি যাত্রাটি কেটে গেল তার বসার জায়গার দিকে তাকিয়ে...কেমন যেন অদ্ভুত একটি সুগন্ধ ভরিয়ে তুলছিল...ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম ঐ জায়গা থেকে,কিছুক্ষণ আগে যেখানে বসেছিলেন, একজন মানুষ যিনি কিভাবে মানুষের দুঃখ কষ্টে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
এবার আমি বুঝতে পারলাম এই ভীড়েও এরকম সুগন্ধ কি ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ট্রেনের কামরায। সুগন্ধ টি ছিল একটি মানবতার, একটি পূণ্য আত্মার,যা ঝাঁকুনি দিয়ে গিয়েছে আমার জীবন এবং চিন্তা ধারা কে.....
....তাই আমরা পরিবর্তিত হলে সময়ও পরিবর্তিত হবে....
গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্য অত্যন্ত ভীড়, তাই রিজার্ভেসন পেলাম না । সামনের platform এ grand trunk express দাড়িয়ে। কোনও চিন্তা না করে ভীড় ঠেলে একটি second class sleeper কামরায় উঠে পড়লাম। ভেতরেও একই অবস্থা। কোনও মতে ভীড় ঠেলে ঢুকে দেখলাম সাইড বার্থ এ এক ভদ্রলোক শুয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, - ' আমি কি এই কোনে একটু বসতে পারি?' ।
ভদ্রলোক স্মিত হাসিমুখে বললেন-' বসুন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম।
ট্রেন চলা শুরু করল এবং গতি বর্ধিত হয়ে চলল গন্তব্যর দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীরা নিজের নিজের বার্থ এ গুছিয়ে বসে যে যার খাওয়ার বের করে খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন। পুরো কামরাটা সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত খাওয়ার গন্ধে ভরে উঠল। আমি ভদ্রলোককে নিজের পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করলাম--
'আমার নাম অলোক। ইসরো তে একজন বৈজ্ঞানিক। বাড়িতে একটা জরুরী কাজে হঠাত যেতে হচ্ছে। কোনও রিজার্ভেশন না পেয়ে sleeper coach এই যেতে হচ্ছে, অন্যথা আমি AC ছাড়া travel করিনা'।
----' বাঃ ইসরো তে বৈজ্ঞানিক, সে আমার co-passenger সে তো দারুন ব্যাপার, -ভদ্রলোক বললেন,-- আমার নাম জগন্নাথ রাও। ওয়ারান্গাল যাচ্ছি। এর কাছের একটি গ্রামে আমার বাড়ি আছে। মাঝে মধ্যেই সময় পেলে যাই। এবার ভদ্রলোক ব্যাগের থেকে টিফিন বাক্স বের করলেন। আমায় জিজ্ঞেস করলেন চলবে? বাড়ির তৈরি। আমি ইতস্তত করে না বললাম এবং নিজের টিফিন থেকে খাওয়া শুরু করলাম।
বার বার ভদ্রলোকের নাম টা খুব পরিচিত মনে হলো কিন্ত কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।
যাক, ইতিমধ্যে অন্যান্য যাত্রীদের খাওয়ার পাট চুকেছে। সকলেই শোয়ার জন্য ব্যাস্ত।আমার সামনেই একটি পরিবার যাচ্ছে,বাবা-মা ও তাদের দুজন বয়স্ক ছেলে । আমি আমার মোবাইল ঘাটা শুরু করেছি।
ট্রেন ছুটে চলেছে speed বাড়িয়ে। হঠাত আমি দেখলাম আমার উল্টোদিকের এক যাত্রী 55-57 বছরের হবে, প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, মুখ দিয়ে ফ্যানা বেরুচ্ছে। তার পরিবারের লোকেরা ভীত। জলও খেতে পারছেনা। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম এট একটা এমারজেন্সির ব্যাপার। এখনই ডাক্তার দরকার।
কিন্ত sleeper coach এ কোথায় ডাক্তার? পরিবারের লোকেরা তখন হতভম্ব। তখনই জগন্নাথ রাও ( পাশেই শুয়ে ছিলেন) কি হয়েছে? আমি ঘটনা টি বলাতে জগন্নাথ রাও নিজের স্যুটকেস থেকে stethoscope বের করে অসুস্থ ভদ্রলোকের বুকে রেখে heartbeat শুনলেন। এবার জগন্নাথ রাও চেহারায় চিন্তার ভাঁজ দেখলাম। স্যুটকেস থেকে injection বের করে বুকে push করলেন। এবার বুকে চাপ দিয়ে রোগীর মুখে রুমাল দিয়ে নিশ্বাস দেওয়া শুরু করলেন। এভাবে কয়েক মিনিট CRP* দেওয়ার পর দেখলাম রোগীর ব্যাথার উপশম হলো ।
জগন্নাথ রাও আরও কিছু ওষুধ স্যুটকেস থেকে বের করে রোগীর ছেলে কে বললেন, চিন্তা কোরোনা। তোমার বাবার massive heart attack হয়েছিল,কিছুক্ষণ আগেও ওনার জীবন খুবই বিপদজনক ছিল। কিন্ত আমি যা করার করেছি উনি আপাতত বিপদ মুক্ত। আরও কিছু ওষুধ দিয়ে দিলাম।
এবার ছেলেটি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, ' কিন্ত আপনি কে '?
"আমি একজন ডাক্তার। আমি আপনার বাবার case history এবং prescription লিখে দেব। আপনি সামনের স্টেশনে নেমে আর বাবা কে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যান"।
যখন ডাক্তার নিজের letterpad এ লিখেছিলেন তখন pad এর প্রথম লাইন এর লেখা দেখে হঠাত সব কিছুই মনে পড়ে গেল আমার। লেখা ছিল--
Dr. Jagannath Rao,Cardiologist, Apollo Hospital, Chennai.
এবার আমার মনে পড়ল কিছু দিন আগে যখন বাবাকে নিয়ে চেক আপের জন্য গিয়েছিলাম, তখন ডা.রাও এর কথা শুনে ছিলাম। তিনি একজন নাম করা Cardiologist. ওনাকে দেখাতে হলে এক মাসের আগে appointment নিতে হয়। আমি অবাক হয়ে তাকয়ে থাকলাম ওনার দিকে। এমন একজন স্বনামধন্য ডাক্তার sleeper class এ travel করেন আর আমি সাধারণ একজন scientist হয়ে গর্ব করে AC তে যাত্রার কথা বলছিলাম। এমন একজন মানুষ একজন সাধারণ মানুষের মত ব্যাবহার। যত ভাবছিলাম অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম।
পরের স্টেশনে রোগী কে নিয়ে পুরো পরিবারটি নেমে পড়ল TTE এবং মেডিক্যাল টিমের সাহায্যে ।
ট্রেন আবার চলতে শুরু করল। আমি কৌতুহল না চেপে এবার ডাক্তার কে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, ' আপনি এত কষ্ট না করে AC তে travel করতে পারেন তো' ।
ডাক্তার মৃদু হেসে বললেন,- আমি ছোট বেলায় যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখতাম ট্রেনে কোনও ডাক্তারের ব্যবস্থা ছিল না বিশেষ করে second class এ। সেজন্য আমি যখনই কোথাও যাই second class এই যাই । আমার প্রয়োজন কারও লাগতেও পারে। কে জানে কারও হয়ত আমার প্রয়োজন হতে পারে। এই কারণেই আমি চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছি যাতে লোকের সেবা করতে পারি। আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে কি হবে যা দিয়ে কারও কোনও কাজে লাগবে না?
এরপর আরও অনেক কথা হল ডাক্তারের সাথে,যা শুনে আমি যেন কেমন হারিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। অতঃপর ভোর চারটে। ট্রেন ওয়ারান্গাল স্টেশন পৌছল। ডাক্তার নেমে গেলেন। আমার বাকি যাত্রাটি কেটে গেল তার বসার জায়গার দিকে তাকিয়ে...কেমন যেন অদ্ভুত একটি সুগন্ধ ভরিয়ে তুলছিল...ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম ঐ জায়গা থেকে,কিছুক্ষণ আগে যেখানে বসেছিলেন, একজন মানুষ যিনি কিভাবে মানুষের দুঃখ কষ্টে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
এবার আমি বুঝতে পারলাম এই ভীড়েও এরকম সুগন্ধ কি ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ট্রেনের কামরায। সুগন্ধ টি ছিল একটি মানবতার, একটি পূণ্য আত্মার,যা ঝাঁকুনি দিয়ে গিয়েছে আমার জীবন এবং চিন্তা ধারা কে.....
....তাই আমরা পরিবর্তিত হলে সময়ও পরিবর্তিত হবে....