What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মাল্টিটাস্কিংঃ কর্মদক্ষতা বাড়ায়, না হারায়? (1 Viewer)

ছোটভাই

Super Moderator
Staff member
Super Mod
Joined
Mar 4, 2018
Threads
775
Messages
51,102
Credits
371,053
Sunflower
T-Shirt
Sari
Sari
Thermometer
Tomato
26.jpg

অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল দেখছেন, হঠাৎ করেই আপনার ফোনটা বেজে উঠল বেরসিক সুরে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন, কলটা না ধরলেই নয়, তাই কলটা রিসিভ করলেন। ফাইলও দেখছেন, ফোনেও কথা চলছে। একসময় আপনি নিজেই অনুভব করতে শুরু করলেন, ফাইল হাতে নিয়ে বসে থাকাই সার- ফাইলের কাজও হচ্ছে না, অন্যদিকে ফাইলের টেনশনে ফোনে কথাটাও ঠিক প্রাণখুলে বলতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, কত কাজ করছেন, আদতে কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছে না।

ঠিক এই মুহূর্তে আপনি এই লেখাটি পড়ছেন। সম্ভাবনা খুবই বেশি যে আপনার ব্রাউজারে এই লেখার সাথে সাথে আরও অনেকগুলো দরকারি-অদরকারি ট্যাব খোলা আছে। এবং যখন ব্রাউজারটা বন্ধ করবেন, অন্য ট্যাবগুলোর দিকে না তাকিয়েই হয়তো ব্রাউজার বন্ধ করে দেবেন।
 
28.jpg

একসাথে অনেক কাজ মানেই ভালো?

গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং করে যাওয়া, টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া, একইসঙ্গে একাধিক ফোনে কথা চালিয়ে যাওয়া, সর্বোপরি একটা কাজের সাথে মিলিয়ে আরও একাধিক কাজ চালিয়ে যাওয়া। প্রচলিত ভাষায় একেই আমরা বলে থাকি- 'মাল্টিটাস্কিং'। বর্তমান সময়ে, যে যত বেশি মাল্টিটাস্কিং করতে পারে, ধরে নেওয়া হয় সে ততবেশি চৌকস ও দক্ষ। যে ক্রমাগত মাল্টিটাস্কিং করে যায়, তার মাঝেও 'একই সময়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে, তার মানে অল্প সময়ে বেশি কাজ হচ্ছে' গোছের একটা ভাবনা চলে আসে। বর্তমান সময়ে একজন সফল মানুষের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে এমন একটা মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, যে একই সময়ে অনেকগুলো কাজ একাই সমানতালে করে চলেছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। গবেষকদের মতে, এই যে আমাদের মাল্টিটাস্কিং করা- এটা আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো তো দূরে থাক, বরং প্রোডাক্টিভিটি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়, মনোযোগ হারিয়ে যায়, সেই সাথে কাজে বাড়িয়ে দেয় ভুলের মাত্রা।
 
29.jpg

মাল্টিটাস্কিংয়ে কাজের ফোকাস হারানোর ঝুঁকি প্রবল

কোনটা মাল্টিটাস্কিং, কোনটা নয়

মাল্টিটাস্কিং ঠিক ততটা ভালো নয়, যতটা আমরা ভাবি। এই বিষয়টি বোঝার আগে আমাদের বোঝা প্রয়োজন- কোনটাকে ঠিক 'মাল্টিটাস্কিং' বলা হচ্ছে।

কেউ চাইলে তার সারাদিনের সময়কে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে একাধিক কাজে যুক্ত থাকতে পারে, সেটা মাল্টিটাস্কিং নয়। একজন ব্যক্তি একইসাথে চাকরি আর পড়াশোনা চালাচ্ছে কিংবা এক ব্যক্তি একইসাথে সন্তান, সংসার, পড়াশোনা সামলাচ্ছে, কিংবা চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হচ্ছেন- এগুলো মাল্টিটাস্কিংয়ের উদাহরণ নয়।

মাল্টিটাস্কিং হলো একইসাথে অর্থাৎ একই সময়ে একাধিক কাজ করতে যাওয়া, নিজের বর্তমান মনোযোগকে একটা কাজে স্থির না রেখে বহুদিকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়া। মাল্টিটাস্কিং কিন্তু নতুন কোনো ধারণা নয়, এক কাজের সাথে মিলিয়ে আরেক কাজ করার প্রচলন তো অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এসে এ ধারণা প্রচণ্ড ব্যাপকতা লাভ করেছে। বর্তমান যুগে তথ্যবহুলতার ভালোর পাশাপাশি মন্দ দিকটা হলো- তথ্যবহুলতা আমাদের একাগ্রতা ব্যহত করে। আমাদের 'অ্যাটেনশন স্প্যান' এখন এমনিতেই অনেক কমে গেছে। তার মধ্যে যদি আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে মাল্টিটাস্কিংয়ের বাড়তি পরিশ্রম করাই, তাহলে তার কাজ করার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কমে আসবে।
 

প্রোডাক্টিভিটির ওপর প্রভাব কতটুকু?​

শুরুর মতো আবার একটা পরিস্থিতি কল্পনা করি, আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রিপোর্ট লিখতে বসেছেন কম্পিউটারে। তার সাথে ব্রাউজারে খোলা আছে অনেকগুলো ট্যাব, যার মধ্যে আছে আপনার মেইল, অনলাইন পত্রিকা, রিপোর্ট লেখার জন্য প্রয়োজনীয় আরও অনেকগুলো ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব ইত্যাদি। এখানেই শেষ নয়। পাশেই আছে আপনার স্মার্টফোনটা, যেখানে ওয়াইফাই বা মোবাইল ডাটা অন এবং টুংটাং ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশনের আওয়াজ আসার রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা। এরকম অবস্থায় ঠিক কতটুকু মনোযোগ দিয়ে আপনার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টটি লেখা সম্ভব?

আপনার ব্রাউজারে খোলা অনেকগুলো ট্যাব আপনার মনে হচ্ছে প্রয়োজন, কিন্তু আসলেই কি প্রয়োজন? সোশ্যাল মিডিয়ায় তখন লগইন না থাকলে তো বড় কোনো ক্ষতি নেই। সারা বিশ্বের সব খবর ঠিক সেই মুহূর্তে না জানলেও তো চলে। না-ই বা দেখলেন তখন সাম্প্রতিক ভাইরাল ভিডিওটা, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তো নয়।

লক্ষ্য করুন, এই তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকেও আমাদের চোখের সামনে রেখে আমরা আমাদের মনোযোগকে কয়েক জায়গায় ভাগ করে দিয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই মনোযোগ চলে যাচ্ছে অন্য ট্যাবগুলো কিংবা পাশের স্মার্টফোনের দিকে। ফলে মূল যে কাজটা তখন আমাদের করার কথা, স্বাভাবিকভাবেই সে কাজে পূর্ণ মনোযোগটা চাইলেও আমরা তখন আর দিতে পারি না।

আপনার মনে হতে পারে, সমস্যাটা কোথায়? আমার ‘মনোযোগ’ আমি আমার ইচ্ছামতো ভাগ করতেই পারি।

গবেষকরা বলেন, সমস্যাটা এখানেই। এমআইটির অধ্যাপক আর্ল মিলারের মতে, মানুষ একবারে একটা জিনিসেই মনোযোগ দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক গবেষণা এ-ও বলে, মাল্টিটাস্কিং আমাদের কর্মদক্ষতাকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

আমরা মূলত মাল্টিটাস্কিংয়ের নামে যা করি, তা মূলত এক কাজ থেকে অন্য কাজে খুব দ্রুত 'সুইচ' করে যাই। একে বলা চলে 'টাস্ক সুইচিং'। এভাবে দ্রুতগতিতে এক কাজ থেকে অন্য কাজে বারবার চলে যাবার ফলে কোনো কাজেই পূর্ণ মনোসংযোগ ধরে রাখা যায় না। ফলে কোনো কাজই পূর্ণ মনোযোগের সাথে সুসম্পন্ন করা যায় না। উপরন্তু, আমাদের মস্তিষ্কও এতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
30.jpg

খেতে খেতে কাজ নয়

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাল্টিটাস্কিং করে থাকে, তাদের কাজের মান তুলনামূলক খারাপ হয়। এর কারণ হচ্ছে, অনেকগুলো কাজ একই সময়ে করা হতে থাকলে মস্তিষ্কে অনেক অনেক তথ্য এসে জড়ো হয়, ফলে মূল কাজটাকে সেই তথ্যের মধ্য থেকে বের করে আনার জন্য মস্তিষ্ককে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়, কাজের মান ও গতি দুটোই কমে যায়।
 

একটা ছোট্ট পরীক্ষা

মাল্টিটাস্কিং নিয়ে এতসব তাত্ত্বিক আলোচনা যদি আপনার মনঃপুত না হয়, তাহলে আপনার জন্য 'দ্য মিথ অভ মাল্টিটাস্কিং' বইয়ের লেখক ডেভ ক্রেনশ'র ছোট্ট একটি পরীক্ষা রয়েছে। এ থেকে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, মাল্টিটাস্কিং কতটুকু ফলপ্রসূ।

দুটো কাগজ নিন, প্রতিটি কাগজে দুটো করে লাইন টানুন। এবার প্রথম কাগজটা নিন, উপরের লাইনে লিখুন-

“I am a Great Multitasker”

নিচের লাইনে ইংরেজিতে ১ থেকে ২০ পর্যন্ত লিখুন। ঘড়ি ধরে দেখুন, এ দুটো লাইন লিখতে আপনার কতক্ষণ সময় লাগল। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যেই কাজটা হয়ে গেল, তা-ই না?

এবার দ্বিতীয় কাগজটা নিন।


উপরের লাইনে লিখুন “I”, নিচের লাইনে লিখুন ‘1’,

আবার উপরের লাইনে লিখুন ‘a’, নিচের লাইনে লিখুন ‘2’

এভাবে করে উপরের লাইনে একটা করে অক্ষর আর নিচের লাইনে একটা করে সংখ্যা লিখে ঠিক প্রথম কাগজটার মতো লেখা শেষ করুন। এবার ঘড়ি দেখুন, কতক্ষণ সময় লাগল।

প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয়ক্ষেত্রেই আউটপুট কিন্তু একই, অর্থাৎ দুটো কাগজেই একই জিনিস লেখা হয়েছে। কিন্তু প্রথম কাগজে লিখতে যতক্ষণ সময় লেগেছে, দ্বিতীয় কাগজে একই জিনিস লিখতে সময় লেগেছে আরও অনেক বেশি, এবং মস্তিষ্কের পরিশ্রমও হয়েছে বেশি।

তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল, প্রথম ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যখন আমরা মনোযোগ দিয়ে একটা কাজই করছি, তখনই আউটপুট ভালো আসছে, কাজটাও সহজে হয়ে যাচ্ছে।
 

মনোসংযোগ আর একাগ্রতাই মূল​

যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রেই পূর্ণ সুফল পেতে হলে অন্যতম পূর্বশর্ত হলো একাগ্রতা আর মনোসংযোগ। আর এই মনোসংযোগকে ধরে রাখতে চাইলে একবারে একটা কাজেই মনোযোগ দিতে হবে। সেজন্য অবশ্যই মাল্টিটাস্কিং এড়িয়ে যেতে হবে।

মনোবিজ্ঞানীরা বর্তমানে মাইন্ডফুলনেস তথা মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে জোর দেয়ার কথা বলছেন। অর্থাৎ, আমাদের যাপিত জীবনের কাজগুলো যদি আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করি, তাহলেই জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে খাওয়ার সময়েও মোবাইল চেক করা, ফোনে কথা বলা বা টিভি দেখার মতো কাজ করতে থাকি। কিন্তু, অভ্যাস পরিবর্তন করে 'মাইন্ডফুল ইটিং'-এর চর্চা করলে, অর্থাৎ মনোযোগের সাথে নিজের খাবারটা খেলেই বদহজম, অতিরিক্ত খাওয়ার মতো বিষয়গুলো এড়ানো যায়। আর আপাতদৃষ্টিতে খাওয়ার মতো একটা সাধারণ কাজে যদি মনোযোগ দেয়াটা যদি এতটাই জরুরি হয়, তাহলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে মনোসংযোগ যে কতখানি প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য। আর মাল্টিটাস্কিং ঠিক এই একাগ্রতার জায়গাটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
 
31.jpg

মনঃসংযোগ কাজের মানকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়

মাল্টিটাস্কিং কি তবে একেবারেই পরিত্যাজ্য?​

আমাদের বর্তমান ব্যস্ত জীবনে চাইলেও মাল্টিটাস্কিংকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। দৈনন্দিন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজগুলো একটা একটা করে করার জন্য যে বাড়তি সময় দরকার, সেটা হয়তো অনেকের জন্যই বিলাসিতা। তাই কাজের গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- মাল্টিটাস্কিং করবেন কিনা।

যেমন, কানে হেডফোন লাগিয়ে আপনি ঘরের টুকটাক গোছানোর কাজ করতেই পারেন, তাতে হয়তো কোনো বিরূপ প্রভাব কাজের উপর পড়বে না। কিন্তু যখন আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, তখন মোবাইলে কথা বলা বা টেক্সট করার মতো 'চৌকসতা' না দেখানোই ভালো। কিংবা কর্মক্ষেত্রে জরুরি কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় নিজের মনোযোগকে সেই কাজে একীভূত না করে নিলে, কাজে বা সিদ্ধান্তগ্রহণে ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী।
 

পরিশেষে​

পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সব কাজ করাটা হয়তো সবসময় সবার জন্য সম্ভব হয় না। কিন্তু একটা কথা আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের পক্ষে একদফায় একদিকেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব। মানবমস্তিষ্কের এই সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে পারলে কাজটা অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়। একবার মাল্টিটাস্কিং বন্ধ করে একবারে একটা কাজে মনোযোগ দিয়ে দেখুন, আপনার মস্তিষ্কই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। যে মস্তিষ্ককে রোজ এতটা খাটাতে হয়, তার জন্য এটুকু উপকার তো করতেই পারেন।

মাল্টিটাস্কিংয়ে ভালো না বলে যদি আপনার মন খারাপ হয়ে থাকে, তবে আশা করা যায় এই লেখাটি পড়ার পর আপনি সেই অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
 
In my personal opinion, one should avoid multitasking at much as possible. Multitasking divides one's attention and he makes more mistakes. My personal strategy is to do one thing at a time with full attention.
 

Users who are viewing this thread

Back
Top